![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চুপ , প্রকৃতি বিরক্ত হচ্ছে
বিরাম চিহ্ন বা যতি-চিহ্ন কি ?
যে-কোন ভাষায় লেখ্য রূপে যতিচিহ্ন অপরিহার্য। মুখে কথা বলার সময় কখনোই কেউ তাড়াতাড়ি হুড়মুড় করে সব বলে ফেলে না। দম নেয়ার জন্যে তাকে মাঝে মধ্যে থামতে হয়; সেই
থামায় আবার রকমফের আছে - কখনো বেশিক্ষণ থামতে হয়,
কখনো বা অল্পক্ষণ। “গলার স্বরের ওঠানামায় বা বলার ঢঙে বক্তার (যে বক্তৃতা বা কথা বলে) তার মেজাজ ধরা পড়ে। অবাক হওয়া বা প্রশ্ন (Question) করা, অনুরোধ করা বা ধমক দেওয়া ইত্যাদি সবই ফুটে ওঠে কথা বলার ভঙ্গিমার ভেতর দিয়ে।
বিরাম চিহ্নের সংজ্ঞা :
বাক্যের বিভিন্ন ভাব সার্থকভাবে প্রকাশের জন্যে কণ্ঠস্বরের ভঙ্গির তারতম্য বোঝাতে বর্ণের অতিরিক্ত যে-সব চিহ্ন ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে বলে বিরাম (Punctuation) চিহ্ন।
বিরাম চিহ্নের পরিচয় -
ছক ১
ছক ২
১.কমা
বাংলায় কোনো কিছু লিখতে গিয়ে যত ধরণের বিরাম চিহ্ন আমারা ব্যবহার করি তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি
কমা (,) । অর্থাৎ বাক্যটি যদি বড়ো হয় তা হলে দম নেয়ার জন্যে থামার দরকার জড়তে পারে, বক্তব্য একাধিক হলে স্পষ্টতা আনার জন্য থেমে-থেমে পড়তে হতে পারে , সর্বোপরি
অল্পক্ষণ বিরামের জন্যে কমার ব্যবহার হয় । এখানে ‘এক’ উচ্চারণ করার সমান সময় থামতে হয় ।
*বাক্যে একই পদের একাধিক শব্দ পাশাপাশি ব্যবহৃত হলে
তাদের মধ্যবর্তী একটি বা একাধিক কমা ব্যবহার করে এক
জাতীয় পদকে পৃথক করা হয়। কমা বসে দুই বা ততোধিক
পদ, পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশে । যেমন -
বিশেষ্য পদ : সালাম, বরকত, রফিক , জব্বার।
সর্বনাম পদ : সে, তুমি , আমি : আমরা ।
ক্রিয়া পদ : এলাম, দেখলাম , জয় করলাম (সিজার জুলিয়াস)
*এক জাতীয় একাধিক বাক্য বা বাক্যাংশ পাশাপাশি ব্যবহৃত
হলে কমা প্রয়োগে তাদের আলাদা করতে হয়।
যেমন - সে ক্লাসে ঢুকল, বই নিল, ব্যাগে রাখল, তারপর
বেরিয়ে গেল।
*সম্বোধনের পর কমা বসে । যেমন - ছাত্ররা, মনোযোগ দিয়ে
শোন।
*নামের শেষে ডিগ্রি থাকলে কমা বসে। যেমন- ডক্টর মুহম্মদ
শহীদুল্লাহ, এম.এ , পিএইচ.ডি।
*উদ্ধৃতিচিহ্নের আগে কমা বসে । যেমন - ভিটগেনস্টেইন (বারট্রেন্ড রাসেল এর শিষ্য) মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, “আমি এক অসাধারণ জীবন-যাপন করেছি।”
২.সেমিকোলন-চিহ্ন ( ; )
সেমিকোলন বা অর্ধচ্ছেদ হচ্ছে বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত এক ধরণের বাক্যান্তগত চিহ্ন। মনোভাব প্রকাশের বেলায় একটা
ভাব একটিমাত্র বাক্যে শেষ হয়ে সন্নিহিত ভাবের নতুন বাক্য
শুরু করতে চাইলে একটু বেশি থামতে হয়। একাধিক বাক্যের
মধ্যে অর্থের নিকট-সম্বন্ধ থাকলে বাক্যগুলোকে একটু বেশি থামার চিহ্ন দিয়ে ভাগ করতে হয়। এর জন্যে সেমিকোলন বসে।
সেমিকোলন বিরামের অনুপাত কমার (,) দ্বিগুণ।
*একাধিক স্বাধীন বাক্যকে একটি বাক্যে লিখলে সেগুলোর মাঝখানে সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন- তিনি শুধু তামাশা
দেখিতেছিলেন; কোথাকার জল কোথায় গিয়া পড়ে।
*দুটি বা তিনটি বাক্য সংযোজক অব্যয়ের সাহায্যে যুক্ত না হলে
সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন - আগে পাঠ্য বই পড়; পরে
গল্প-উপন্যাস ।
*সেজন্যে , তবু তথাপি , সুতরাং ইত্যাদি যে-সব অব্যয় বৈপরীত্য বা অনুমান প্রকাশ করে তাদের আগে বা দুটি সন্নিহিত
হলে সেমিকোলন বসে। যেমন - সে ফেল করেছে; সেজন্য সে মুখ দেখায় না। মনোযোগ দিয়ে পড়; তাহলেই পাশ করবে।
৩.দাঁড়ি
বাক্য সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেলে দাঁড়ি বসে। বাক্যের সমাপ্তি এবং
নতুন বাক্যের সূচনায় নির্দেশ করে দাঁড়ি। দীর্ঘতম বিরামের প্রতিরুপ হয় দাঁড়ি। যেখানে একটি পূণবাক্য বা প্রসঙ্গ শেষ হয় সেখানে দাঁড়ি বসে। দাঁড়ি চিহ্নের বিরামের (থামার) সময়
১ সেকেন্ড।
৪.প্রশ্নচিহ্ন (?)
*বাক্যের মধ্যে সোজাসুজি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন- তোমার নাম কী ? তুমি সেখানে যাবে ?
*সন্দেহ বোঝাতে বাক্যের মধ্যে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে। যেমন-
এটা তোমার বই? ঠিক তো ?
৫.বিস্ময়চিহ্ন (!)
*অবাক বা বিস্ময়ের ব্যাপার বোঝাতে প্রধানত বাক্যের শেষে
বসে। যেমন - অবাক কান্ড ! ঠিক আধ মিনিট আগে পকেটে টাকা ছিল, এখন নেই । অবিবিশ্বাস্য হাতসাফাই !
*আবেদন , ভর্তি, হতাশা, আনন্দ ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশের ক্ষেত্রেও বিস্ময়চিহ্ন বসে ।
*বাক্যের মধ্যে বন্ধনীর মধ্যে , প্রয়োজন হলে বিস্ময় চিহ্নবসে।
৬.উদ্ধৃতিচিহ্ন ( ‘-’ অথবা “-”)
ইংরেজীতে একে কোটেশন মার্ক বলে। ইংরেজী ভাষা থেকেই এদের আমদানি করা হয়েছে , কারণ বাংলায় এ-ধরণের চিহ্ন ছিল না। একে উদ্ধৃতিচিহ্ন বা উদ্ধারচিহ্ন বলে , বাংলাতে।
*অন্যের কথা উদ্ধৃত করতে হলে কিংবা কোনো কথায় পাঠকের দাবি করতে হলে উদ্ধৃতিচিহ্নের প্রয়োজন পড়ে।
*উদ্ধতিচিহ্ন দু রকমের হয়ে থাকে : এক-উদ্ধতি ( ‘ ) বা সিঙ্গল কোটেশন এবং জোড় বা দুই উদ্ধৃতি ( “ ) বা ডাবল
কোট্ ।
৭.এক-উদ্ধতি ( ‘ ’) বা সিঙ্গেল কোট্ :
*কথোপকথন ও সংলাপে উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন -
পা টিপে টিপে দুপুরবেলা উকিলউদ্দিন এসে হাজির।
*নির্দিষ্ট শব্দে মনোযোগ আকর্ষণের জন্যে উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন - তার নাম ছিল লালু। হিন্দিতে ‘লাল’ শব্দটার অর্থ
হচ্ছে ‘প্রিয়’ । সে সকলের প্রিয় ছিল ।
৮.জোড় উদ্ধৃতি ( “ ”) বা ডাবল কোট্
*যেখানে কেবল এক ধরণের উদ্ধৃতিচিহ্নের-ই প্রয়োজন বা দরকার যেখানে এক-উদ্ধৃতিচিহ্ন বা জোড়-উদ্ধৃতিচিহ্ন যেকোন
একটি ব্যবহার করলেই চলে।
কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে দু-জাতীয় উদ্ধৃতিচিহ্ন-ই দরকার পড়ে সে-সব জায়গায় দু-একটি নিয়ম অনুসরণ না করলে চলে না।
নিচের উদাহরণ থেকে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করা যাক।
১.এই “ভারতবর্ষ” কাগজেই অনেক দিন আগে ডাক্তার শ্রীযুক্ত
নরেশবাবু বলিয়াছিলেন ‘না জানিয়া শাস্ত্রের দোহাই দিয়ো না।’
২.হৈম ব্যথিত হইয়া প্রশ্ন করিল “কেহ যদি বয়স জিজ্ঞাসা করে কী বলিব “ বাবা বলিলেন, “মিথ্যা বলিবার দরকার নাই,
তুমি বলিয়ো, ‘আমি জানি না - আমার শাশুড়ি জানেন’।”
*এক জনের বক্তব্যের ভিতরে যদি ভিন্ন বক্তব্য উদ্ধৃত হয় তা
হলে প্রধান বক্তব্যের ক্ষেত্রে জোড়-উদ্ধৃতিচিহ্ন এবং তার অন্তর্গত উদ্ধৃতিতে এক-উদ্ধৃতিচিহ্নে লাগবে। (দ্র: উদাহরণ ১)
৯.কোলন ( : )
বাংলায় কোলন চিহ্নের ব্যবহার খুব বেশি দিনের নয়, বড়জোর
৫০-৬০ বছরের। আগে যে সব ক্ষেত্রে ড্যাশ বা কোলন ড্যাশ দেওয়া হত , আজকাল সে-সব ক্ষেত্রে কোলন ব্যবহৃত হয়। লক্ষ করা দরকার, কোলন কখনোই দেখতে বিসর্গ (ঃ)-এর
মত নয়; কোলনের মাঝখানে কোনো ফাঁক নেই।
*বাক্যে কোনো প্রসঙ্গ অবতারণার আগে কোলন বসে। যেমন-
শপথ নিলাম: জয় করবো ।
*কোনো বিবৃতিকে সম্পুর্ণ করতে দৃষ্টান্ত দিতে হলে কোল ব্যবহার করা হয় । যেমন- পদ পাঁচ প্রকার: বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয়, ও ক্রিয়া ।
*উদাহরণ, তালিকা , ব্যাখ্যা , বিশদ মন্তব্যর আগে কোলন
বসে। যেমন - বাড়িতে যে সব জিনিস নিতে হবে : আম, চাল, ডাল , তেল ও দুই গজ সাদা সুতি কাপড়।
*কটা বেজে কত মিনিট তা সংখ্যায় প্রকাশ করতে -
৮:২০; ১১:৪৫ ...
*চিঠিপত্র ও বিভিন্ন রকমের ফরমে ভুক্তি, উপভুক্তির পরে কোলন বসে। যেমন - নাম: , পিতার নাম: , বিষয়:, ঠিকানা: ,
তারিখ ...
*গণিতে অনুপাত বোঝাতে কোলন বসে । যেমন- ফেলের হার
৩:৮৯।
*প্রশ্ন রচনায় কোলন বসে। যেমন - টীকা লেখ: । ব্যাখ্যা লেখ:।
সূত্র : ভাষা শিক্ষা, ড. হায়াৎ মামুদ
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১২
Kawsar Siddiqui বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্য’র জন্য ঘুড্ডির পাইলট
২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৪০
ডানাহীন বলেছেন: ব্লগেও বাংলা ব্যাকরণের কবলে পড়তে হইল !
১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১১
Kawsar Siddiqui বলেছেন: ধন্যবাদ “ডানাহীন” আমার ব্লগে আসার জন্য এবং পড়ার জন্য
৩| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:২৭
নীল আকাশ বলেছেন: অনেক পরে আসলাম তবে চমৎকার পোষ্ট। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৩
ঘুড্ডির পাইলট বলেছেন: এতো দেহি পুরাই বাংলা গ্রামার পোষ্ট