নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাকিবুল ঘুমাচ্ছেন!

কাজী রাকিবুল ইসলাম

কাজী রাকিবুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিঠি // রাকিবুল রকি

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৬


এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ। মাঠ মাঠ সময় এখন আবীরের হাতে। পড়াশোনার চাপ নেই। ইংরেজির স্যার নেই, অঙ্কের স্যার নেই, বাংলা নেই, সমাজ নেই। সকাল-সন্ধ্যা যা খুশি কর, আম্মু বকবে না, আব্বু খাবার টেবিলে বলবে না, কিরে পড়াশোনা করছিস তো ঠিকমতো? কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়! পরীক্ষার সময় বন্ধ কাটানোর নানা রকম প্ল্যান-পরিকল্পনা করলেও এখন তা কিছুই করা হচ্ছে না। ডাবলু তো পরীক্ষার সময় একটা তালিকাই তৈরি করে ফেলেছিল, ঢাকার কোথায় কোথায় যাওয়া হবে! সেখানে কোনো গার্জিয়ান থাকবে না, শুধু বন্ধুরা থাকবে। তা ছাড়া ওরা যেহেতু এখন বড় হচ্ছে, নিজে নিজে অনেক কিছু করা উচিত। আর গার্জিয়ান সাথে থাকলে বলবে, এটা কোর না, ওটা কোর না, এটা ধোর না, ওটা খেয়ো না। সে মস্ত হ্যাপা! ওদের প্ল্যানের একটি অংশ হল, ঘোরার সময় ইচ্ছেমতো আইসক্রিম আর ফাস্টফুড খাওয়া। মুরব্বি থাকলে তা আর হওয়ার জো আছে? একটার বেশি আইসক্রিম তো খেতেই দেবে না। তা ছাড়া যদি সুযোগ পায় তা হলে একদিন সবাই মিলে কুমিল্লা-ময়নামতি চলে যাবে। সোনার গাঁ-ও ঘুরে আসা যেতে পেরে। ঢাকা থেকে নাকি সরাসরি এ সব জায়গায় বাস যায়। তাই নো আব্বু-আম্মু, নো গার্জিয়ান। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হতে দেরি এত সাধের প্ল্যান পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে দেরি হল না।
প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার দিন ডাবলু এসে বলল, ওরা নাকি সপরিবারে রাঙামাটি যাচ্ছে। সেখান থেকে বান্দরবন, কক্সবাজার হয়ে সেন্ট মার্টিন। সেন্ট মার্টিন হুমায়ূন আহমেদের সমুদ্র-বিলাস বাড়িতে নাকি ওদের জন্য সিট বুকিং করা আছে। হুমায়ূন আহমেদের বউ শাওন ওদের কেমন লতায়-পাতায় আত্মীয় হয়। তাই সহজেই নাকি বুকিং পাওয়া গেছে। ওইখানে নাকি কোন ছবির শুটিং হবে। ডাবলুদের এই ফ্যামিলি ট্যুর সপ্তাহ দুইয়ের আগে শেষ হচ্ছে না। ডাবলুর কথা শুনে মেজাজটাই খিঁচে গেল আবীরের। পরে দেখা গেল আসিফ, আদর, ব্রিটেন সবারই বিভিন্ন জায়গায় ফ্যামিলি ট্যুর আছে।কারও দাদার বাড়ি, কারও নানার বাড়ি, কারও বা অন্য কোথাও। আবীরই শুধু বাসায় বসে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু সিরিজ পড়তে লাগল। তারপরেও দুদিন না যেতেই কেমন পানসে পানসে লাগছে ছুটিটা।
আবীরের নানি অনেকদিন থেকে আবীরদের বেড়াতে যেতে বলছিল। কিন্তু আবীরের পরীক্ষার জন্যই যাওয়া হয়নি এতদিন। তাই বন্ধের ছুটিতে আবীরের মা আবীরকে নিয়ে বাবার বাড়ি বেড়াতে এলেন। আবীর যেন কিছুটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। নানীবাড়িতে বেড়াতে আবীরের খুব ভালো লাগে। নানীবাড়ি রসের হাঁড়ি, আবীর ভাবে এ কথাটি যিনি প্রথম বলেছেন, তাঁর নানীবাড়ি নিশ্চয় আবীরের নানীবাড়ির মতোই ছিল। এ বাড়িতে আবীরকে বকে না কেউ, অনেক দুষ্টুমির জন্য আম্মু যদি কিছু বলে, তা হলে আম্মুকেই সবাই বকতে থাকে। তবে এ কারণেই শুধু নানীবাড়ি ভালোবাসে তা কিন্তু না। আবীর দুষ্টুমি করে, তা ঠিক, কিন্তু তাকে পেশাদার দুষ্টু কিছুতেই বলা যাবে না। তা ছাড়া অপরিচিত কেউ দেখলে, আবীরকে লক্ষ্মী ছেলে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারবে না। অবশ্য আবীরকে লক্ষ্মী ছেলে ভাববার পেছনে ওর মায়াবী মুখটাও অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
যাই হোক আবীরের কাছে নানীবাড়ি ভালো লাগার সবচেয়ে বড় কারণ হলো, মামার লাইব্রেরি। ওর মামা দর্শনের অধ্যাপক, তা ছাড়া অল্প-বিস্তর লেখালেখিও করেন। যতক্ষণ তিনি বাড়িতে থাকেন, সারাক্ষণ বই নিয়ে বসে থাকেন। তাঁর লাইব্রেরিতে প্রচুর বই, প্র-চু-র। আবীর যতই দুষ্টুমি করুক না কেন, পড়তে ভীষণ ভালোবাসে ও, সবাই বলে, আবীর বড় হয়ে মামার মতো জ্ঞানী হবে। মামার লেখা কিছু বইও আছে লাইব্রেরিতে। কিন্তু আবীর পড়তে নিয়ে সেগুলোর কিছুই বোঝে নি।
মামা বলেছে, বড় হও, তখন পড়ে বুঝতে পারবে।
আবীর নানীবাড়িতে এলেই মামার কিছু বই পড়ে বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু নাহ্, যেই লাউ, সেই কদু। পড়ে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। আবীর মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, ওর বোধহয় কখনও বড় হওয়া আর হবে না, অন্তত মামার বই পড়ে বোঝার মতো বড়!
তবে লাইব্রেরিতে আরও অনেক বই আছে, যেগুলো খুব ভালো লেগেছে আবীরের। মামা ওকে লাইব্রেরির আরও বেশ কিছু বই দেখিয়ে বলেছে পড়ার জন্য।
আবীররা আসার কারণে আজ তেলের পিঠা বানানো হচ্ছে। পিঠার ঘ্রাণে ভরে গেছে পুরো ফ্ল্যাট। আবীর ঘ্রাণে ঘ্রাণে গিয়ে দাঁড়ালো রান্না ঘরের দরজার সামনে। কিন্তু বিধি বাম, আম্মু কোন কারণ ছাড়াই ধমক দিয়ে বলল, যাও এখান থেকে, বিরক্ত কোর না। আবীর কিছুই করে নি। আম্মুর ধমক খেয়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আম্মুটা এত পচা! নানী তখন রান্নাঘরে ছিল না। থাকলে তখনই মাকে বকে দিত। আজ সে পিঠাই খাবে না, নানী যতোই সাধাসাধি করুক না কেন, কিছুতেই পিঠা খাবে না। নানী তখন আম্মুকে এর জন্য বকাবকি করবে, বেশ ভালো হবে তখন, হুম।
আবীর মন খারাপ নিয়ে এসে ঢুকল মামার লাইব্রেরিতে। ঘুরে ঘুরে বই দেখতে দেখতে এক বইয়ের উপর চোখ আটকে গেল। হুমায়ুন আজাদের কিশোর রচনা সমগ্র। আরে হুমায়ুন আজাদের একটি প্রবন্ধ তো অষ্টম শ্রেণিতে ওদের পাঠ্য ছিল। “বাংলা ভাষার জন্মকথা”। প্রবন্ধটি একটু কঠিনই ছিল। অনেকেই ঠিকমতো এই অধ্যায়টি পড়ে নি। তবে আলমগীর অন্য একটি কারণে পড়ে নি। সে একদিন স্কুলে এসে বলল, এই প্রবন্ধ আমি পড়ব না।
না পড়ার কারণ জিজ্ঞেস করতেই বলল, আমার ভাইয়া বলেছে, হুমায়ুন আজাদ একজন নাস্তিক। আল্লাহ বিশ্বাস করে না। হুমায়ুন আজাদের বই পড়লে আমিও নাস্তিক হয়ে যাবো।
আবীর আর কিছু বলে নি। অনেকদিন ভেবেছে, বাংলা ভাষার জন্মকথা পড়লে ও নিজেও কি নাস্তিক হয়ে যাবে? কিন্তু এখানেতো আল্লাহকে অবিশ্বাস করার কথা নেই, তা হলে?
তবে প্রবন্ধটি খুব ভালো লেগেছিল আবীরের। নির্মলা ম্যাডাম কত সুন্দর ভাবেই না পড়িয়েছিল এই প্রবন্ধটি। ভাষা নদীর মতো। নদী যেমন চলতে চলতে বেঁকে যায়, ভাষাও তেমনি বদলে যায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। ম্যাডাম প্রাচীন কালে এই দেশের মানুষ কী ভাবে কথা বলত তাও শুনিয়েছেন। প্রাচীন বাংলা শুনে ক্লাসের সবাই হেসে উঠেছে। কথার অর্থ কিছুই বুঝেনি প্রথমে। পরে অবশ্য ম্যাডাম বুঝিয়ে দিয়েছেন। প্রাচীনকালের ভাষার নিদর্শন নাকি “চর্যাপদ” বইতে আছে।
আবীর মাঝে মাঝে ভাবতো, এখন যদি প্রাচীন কালের কোন বাঙালি আসে, তাহলে তো তার কথা কিছুই বুঝবে না আবীর। অথচ দুজনই বাংলা ভাষায় কথা বলবে।
হুমায়ুন আজাদের বইয়ের নামগুলোও খুব ভালো লেগেছিল ওর কাছে, ভারী মিষ্টি নাম, লালনীল দীপাবলী, কত নদী-সরোবর।
আবীর শেলফ থেকে বই নামিয়ে পড়তে বসলো। তারপর দুইদিন যা ঘটলো, আশ্চর্যজনক ঘটনাই বলা যেতে পারে। নাওয়ার ঠিক নেই, খাওয়ার ঠিক নেই; শুধু পড়া, পড়া আর পড়া। পড়তে পড়তে কখনও ওর জানালার পাশের শিরীষ গাছটার কথা মনে পড়ল; কখনও মনে পড়ল একদিন দুপুরে হঠাৎ করে ডেকে ওঠা নাম না জানা পাখির কথা। পথের পাশে সবুজ ঘাসে ফুটে থাকা ছোট ছোট নীলফুলের কথা, আকাশের কথা। পড়তে পড়তে আবীর কতবার একা খলখলিয়ে হাসল আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছেও বেশ কিছুক্ষণ। আবীর যখন সবটুকু পড়ে বইটি রেখে দিল, মনে হলো বইয়ের চমৎকার চমৎকার লাইনগুলো ওর মাথার ভিতরে গুণগুণ করে গান গাইছে। পরীদের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, উড়ে বেড়াচ্ছে। হরেক রঙের ছবি আঁকছে। এত ভালো বই কেন যে ও এতদিন পড়ে নি! বলা যায় আফসোস-ই করতে লাগলো আবীর। বইটি হাতে নিয়ে শেষ ফ্ল্যাপে লেখা হুমায়ুন আজাদের পরিচিতিটুকু পড়ল কয়েকবার। কী ভেবে যেন বার দুয়েক হুমায়ুন আজাদের ছবির উপর হাত বুলোল। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল, জলদি একটি চিঠি লিখবে হুমায়ুন আজাদের কাছে। মনের ভিতর অনেক কথা জমে উঠেছে আবীরের। কিন্তু তিনি তো বেঁচে নেই। তাতে কী? আকাশের ঠিকানায় চিঠি পাঠাবে ও।
মামা বলেছে, মানুষ মারা যাবার পর আকাশে চলে যায়। সেখান থেকে নক্ষত্র হয়ে আমাদের দেখে।
কোন নক্ষত্রটা হুমায়ুন আজাদ, ইস, রাতে যদি বোঝা যেত! ভাবে আবীর।
আবীর মামার টেবিলে কাগজ-কলম নিয়ে বসল। অন্য কেউ মামার জিনিসপত্র ধরলে মামা বকা দিত। কিন্তু আবীরকে কিছু বলবে না। চিঠি শুরু করতে গিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল আবীর। হুমায়ুন আজাদকে কী বলে সম্বোধন করবে আবীর? বেশ কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে ভাবলো। তারপর লিখতে শুরু করলো–
প্রিয় হুমায়ুন আজাদ,
একজন মানুষের খুব বেশি পরিচয় দেয়ার নেই, থাকেও না। কিন্তু আপনার ছিল। আপনি ছিলেন সব্যসাচী এক মানুষ। নানা পরিচয়ের বিভা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আপনি। যার সবই ছিল সৌন্দর্যময়, প্রজ্ঞাসমৃদ্ধ।
একটু থামলো আবীর। “প্রজ্ঞা” শব্দটি লিখলেও এর অর্থটা ঠিক মনে করতে পারছেনা ও। আসলে শব্দটি কীভাবে যেন লেখায় এসে পড়েছে। যদিও এর অর্থ আগে জানতো আবীর। টেবিলের এক পাশে রাখা বাংলা অভিধান হাতে নিল। তারপর শব্দের অর্থ খুঁজতে খুঁজতে “প” বর্ণে গেল। ‘প’, ‘প্র’,‘প্রজা’, ‘প্রজায়িনী’, ‘প্রজ্ঞা’। এইতো প্রজ্ঞার বেশ কিছু মানে দেওয়া আছে। ১ উৎকৃষ্ট জ্ঞান। ২ প্রগাঢ় জ্ঞান; তত্ত্বজ্ঞান। আবীর দেখলো প্রজ্ঞা শব্দের ভুল ব্যবহার করেনি।
আবীরের ভিতরে একের পর এক শব্দ, কথা এসে গুঞ্জন শুরু করেছে। ওকে প্রায় অস্থিরই করে তুলেছে বলা যায়। তাই সে অভিধানটা এক পাশে রেখে আবার লিখতে শুরু করল।
অধ্যাপক-লেখক পরিচয় ছাড়াও আপনি একজন চাঁদের আলো বিক্রেতা, ভাই হারানো বেদনায় ভারাক্রান্ত এক বড় ভাই কিংবা মা এবং মাতৃভূমিকে প্রচণ্ড রকমে ভালোবাসাকারী মানুষ। আপনি যখন বলেন
ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো।
ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো।
ভালো মেঘ, মিটি মিটি তারা
ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতার
ভালো থেকো চর, ছোট কুঁড়েঘর, ভালো থেকো।
ভালো থেকো চিল, আকাশের নীল, ভালো থেকো।
তখন তো আমারও সঙ্গে সঙ্গে এই কথাগুলোই বলার কথা ছিল, এই অদ্ভুত ছন্দের তালে নেচে ওঠার কথা ছিল, অথচ তা হয় নি। যখন হোল, তখন আপনি চলে গেছেন বহুদূরে, দূর নক্ষত্রের দেশে। সেখানে কোনও এক নক্ষত্র হয়ে দেখে যাচ্ছেন আমাদের। পৃথিবীর নিয়মই এই, সবাই চলে যায়। তবে… তবে কিছু কিছু চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না।
আপনি সব সময় সৌন্দর্য চেয়েছেন, তীব্র আলোর ঝলকানি চেয়েছেন, কারণ কিছু অন্ধকার মুছে ফেলতে চেয়েছিল ফুলের সৌরভ, পাখির গান। তাইতো আপনি বলেছেন-
বকুল তুমি ভালো নেই?
মুকুল তুমি ভালো নেই?
মৌমাছিরা ভালো নেই?
এটা কেমন দিন এলো।
সকাল তুমি ভালো নেই?
বিকেল তুমি ভালো নেই?
পিঁপড়েরাও ভালো নেই?
এটা কেমন দিন এলো।
দোয়েল তুমি ভালো নেই?
কোয়েল তুমি ভালো নেই?
ডালিম ফুল ভালো নেই?
এটা কেমন দিন এলো।
আপনি অবশ্য জানতেন, শিশু-কিশোররা অন্ধকারে থাকতে চায় না। ওরা অন্ধকার ভয় পায়, ওরা আলো চায়, তাই তো বুকপকেটে জোনাকি পোকা বইতে আপনি চাঁদের আলো, চাঁপা ফুলের গন্ধ, গোলাপ ফুলের রূপের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন এই সব কোমলমতি শিশু-কিশোরদের কাছে বিক্রি করার জন্য, শুনিয়েছেন মহৎ বারেক কৃপণের কথা, কথা কী ভাবে কবিতা হয়, শব্দে কী ভাবে ছবি আঁকা যায়, কত সহজ করেই না আপনি বলেছেন। কত গভীরভাবে-ই না ভালোবাসতেন আমাদের, ভালোবাসতেন বলেই তো শৈশব-কৈশোরের মুগ্ধতার গল্প, ফুলের গন্ধে কেন ঘুম আসে না সেই দুঃখ জাগানিয়া গল্প শুনিয়েছেন ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না উপন্যাসে।
আপনার লেখা পড়তে পড়তে চোখের সামনে ভেসে উঠেছে গ্রাম-বাংলার সবুজ শ্যামল দৃশ্য। মনে হয়েছে যেন আপনি হেঁটে যাচ্ছেন, দৌড়ে যাচ্ছেন আমার সামনে দিয়ে। কখনও কখনও মনে হয়েছে, ইস! আমি কেন জন্ম নিলাম না গ্রামে, বাংলার এই সবুজ প্রকৃতির কোলে, রূপালী নদীর ধারে!
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে যেসব অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীন করেছিল, সেইসব দেবদূতের কথা বর্ণনা করেছেন আমাদের শহরে একদল দেবদূত উপন্যাসে। লাল নীল দীপাবলি বা বাংলা সাহিত্যের জীবনী বা কত নদী সরোবর বা বাংলা ভাষার জীবনী বইতে রাতের বেলা চাঁদের আলোয় উঠানে মাদুর পেতে গল্প বলার মতো শুনিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের জীবনী, বাংলা ভাষার জীবনী; সত্যি বলছি আপনার এই বইগুলো পড়ে এতই রোমাঞ্চিত হয়েছি, মুগ্ধ হয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এই বইগুলো পড়ে বোঝা যায় শিশু-কিশোরদের প্রতি আপনার হৃদয়ে কত ভালোবাসা ছিল। দূর প্রবাসে বাংলাদেশি বাবা-মার নিঃসঙ্গ সন্তান, যারা অনেকেই বাংলাদেশ দেখেনি শুধু বাংলাদেশের নাম শুনেছে, তাদের জন্য লেখা আওয়ার বিউটিফুল বাংলাদেশ বই পড়ে বোঝা যায় তাদের জন্য আপনার মনে কত মমতা, কত গভীর টান।
শ্রদ্ধেয় কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, যারা একদিন আপনার পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করে আমার, আমাদের কাছ থেকে দূরে সড়িয়ে রেখেছিল, রেখেছে, জানি, তারাই আপনাকে এই পৃথিবীতে আপনার প্রিয় বাংলাদেশে, বাংলার আলো- হাওয়ায়, মাটি, জলে বেশি দিন বাঁচতে দেয়নি, তাতে কী? জন্মালে তো মরতে হবেই। দৈহিক মৃত্যুর পরও আপনি বেঁচে আছেন আপনার সৃষ্টিকর্মে, সৌন্দর্যে, ভালোবাসায়।
আপনার কবিতা একটু পরিবর্তন করে আপনাকে স্মরণ করছি–
ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো।
ভালো থেকো চাঁদ, হুমায়ুন আজাদ, ভালো থেকো।
ইতি
আবীর।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৯

মাকড়সাঁ বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫২

কাজী রাকিবুল ইসলাম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ!

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫০

কাজী মেহেদী হাসান। বলেছেন: হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে এমন লেখা খুব কমই চোখে পড়েছে আমার। বলতেই হচ্ছে দারুন

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩

কাজী রাকিবুল ইসলাম বলেছেন: অনেক ভালোবাসা

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৬

গ্রিন জোন বলেছেন: হুমায়ুন আজাদের প্রতি ভালবাসা। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৬

কাজী রাকিবুল ইসলাম বলেছেন: যথার্থ বলেছেন!!!

৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৪

আমি মাধবীলতা বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন :)

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৭

কাজী রাকিবুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.