নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙ্গালের ফাঁদ

০৫ ই মে, ২০১৯ রাত ১০:৪৪

"বাঙ্গালের ফাঁদ"

গতকাল এক পাগলা বন্ধুর খপ্পড়ে পড়েছিলাম। গাড়ি ঐ চালাচ্ছিলো। গন্তব্য প্যাটেল ব্রাদার্স।
প্যাটেলে ঢুকার ক্রস রাস্তায় একজন গাড়ি নিয়ে ল্যাম্পপোস্টের মতো স্থির দাঁড়িয়ে আছে প্রায় পাঁচ মিনিট। কোনো নড়ন চড়ন নাই। পেছনে গাড়ীর লাইন লেগেছে।
ব্লাকহোলের আশে পাশে যেমন ফিজিক্সের কোনো নিয়মই কাজ করেনা। ঠিক তেমনি- দেশীয় এসব জায়গায়ও ট্রাফিকের কোনো নিয়ম চলেনা।
আমি বললাম- নিশ্চয়ই দক্ষিণ ভারতের কেউ অথবা কোনো চায়নীজ হবে। কারণ- একমাত্র ইনারাই এই দুনিয়ায় এমনভাবে গাড়ী চালান-যাতে পেছন দুনিয়ার আর কোন খবরই থাকেনা। ধারণা ঠিক। জনৈক ভারতীয় দাদা ফোনে ব্যস্ত। ভাব দেখে মনে হলো-গাড়িতে না মনে হয় নিজ গৃহের ড্রয়িংরুমে বসে আছেন। হর্ণ দেয়া এ দেশে একেবারে নাই বললেই চলে। বাধ্য হয়েই বন্ধু বেশ জোরে একটা হর্ণ দিলো। আর্থকুইক ভেবে আচমকা তিনি ধরফড় করে যেন ঘুম থেকে জেগে ওঠলেন । গাড়ি সরলো। রাস্তা ক্লীয়ার হলো।

হর্ণ দেয়াটা দাদার একদম ভালো লাগেনি। তবে, খুব ইগুতে লেগেছে।
একটা মাত্র পার্কিং স্পেস ফাঁকা ছিলো। উনি মিঃ বিনের স্টাইলে আমাদের হটিয়ে তাঁর গাড়ি পার্ক করে প্যাটেল ব্রাদারসের দিকে হনহন করে রওয়ানা দিলেন। আমরাও কয়েক চক্কর ঘুরে বেশ দূরে আরেক জায়গায় গাড়ী পার্ক করে প্যাটেলে এসে দেখি একটা হুলুস্থুল অবস্থা। রমজান উপলক্ষে জনমানবে টুইটুম্বুর। বাজার করার জন্য একখানা শপিং ট্রলিও আর অবশিষ্ট নাই।

দোকানের ভিতর ভারতীয় বন্ধুবর তখনো ফোনে ব্যস্ত। এদিক ওদিক ঘুরছেন। মনে হয় কোনো খালি শপিং ট্রলির সন্ধানে আছেন।
এ যেন-এ্যাভেন্জারস ছবির টিকেট পাওয়ার মতো অবস্থা । একটা খালি হলেই একসাথে চৌদ্দজনের দৌড় ।

ভাগ্য ভালো। একটা খালি ট্রলি পেয়ে গেলাম। বন্ধুকে বললাম- একটা কিছু তাড়াতাড়ি ট্রলিতে রাখো। না হলে কোন ফাঁকে এটাও বেদখল হয়ে যাবে।
আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো ইলিশ মাছ কেনা।
দেখি, ইলিশ মাছ আছেও মাত্র একখান।
বন্ধু তাড়াতাড়ি ইলিশটি নিয়ে ট্রলিতে রাখলো । সাম্রাজ্য দখলের মতো- আমরা ট্রলিখানা দখলে নিলাম। তারপর, একপাশে রেখে বিজয়ীর বেশে অন্যান্য গ্রোসারি কিনতে অন্য দিকে এগোলাম।
ওমা সেকেণ্ডের মধ্যেই পেছনে ফিরে দেখি- সেই ভারতীয় বন্ধুবর খুব সুন্দর করে ইলিশ মাছটা সেলফে রেখে আমাদের দখলকৃত ট্রলিখানা নিয়ে মহা আনন্দে হাসতে হাসতে অন্য দিকে রওয়ানা দিয়েছেন। আর ফোনে কাকে যেন বলছেন- দুই বাঙ্গালকে একেবারে একচোট নিয়েছি। অযথা, হর্ণ দেয়ার একটা শিক্ষা আজকে দিয়ে দিলাম।
আমি বন্ধুকে বললাম- ট্রলি গেলে ট্রলি পাওয়া যাবে। কিন্তু এই যুদ্ধের বাজারে ইলিশ গেলে আর ইলিশ পাওয়া যাবেনা।
ট্রলি বাদ দাও। তুমি তাড়াতাড়ি উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার ভূমিকায় অবতীর্ণ হও।
তুমি আগে ইলিশখানা দ্রুত উদ্ধার করো।
হারানো ইলিশ উদ্ধার করতে বন্ধু যেইনা শেলফ খুলেছে। কিন্তু তার আগেই এক বউদি ঈগল যেভাবে মুরগীর ছানা কব্জা করে, বউদিও ঠিক তেমনি মাছখানা কব্জা করে নিয়েছেন।
আমাদের মুসা ইব্রাহীম ইভারেস্ট জয়ের পর যেমন দুহাতে পতাকা উঁচু করে ধরে ছবির পোজ দিয়েছিলেন। বউদিও ঠিক তেমনি ইলিশ মাছখানা দুহাতে উঁচু করে ধরে বিজয়ের আনন্দে কাকে যেন চীৎকার করে বলছেন- ওগো দেখছো। পেয়েছি গো পেয়েছি-একেবারে পদ্মার ইলিশ পেয়ে গেছি।

ইলিশ আর ট্রলি দুটোই হারিয়ে আমার কমলকান্ত বন্ধুর চেহারা হয়েছে একেবারে কেবলাকান্তু। রাগে গজগজ করে বলতে লাগলো- ধূর!!
আজকে আর কোনো গ্রোাসারিই করবোনা।
তাহলে কী করবা?
দেখো না কি করি। আজকে একটা হুলুস্থুল কাণ্ড হবে।

প্যাটেল ব্রাদার্সের ভিতর মিনিট পাঁচেক ঘুরলাম। দেখি ভারতীয় দাদা নানা আইটেমে উনার শপিং ট্রলিখানাকে মোটামুটি একটা ছোটখাটো গ্রোসারির দোকান বানিয়েছেন। এবার, ট্রলি এক পাশে রেখে কী একটা আইটেম খুঁজতে উনি অন্য দিকে গেলেন।

বন্ধু বললো- এমন সুযোগ আর আসবেনা বন্ধু । যা করার তা খুব দ্রুত করতে হবে। এটুকু বলেই-ঝড়ের বেগে ভারতীয় দাদার বেগুনের ব্যাগ তোলে রাখলো অন্য জনের ট্রলিতে, অন্য জনের মুড়ির প্যাকেট দাদার ট্রলিতে। চিনির প্যাকেট রাখলো দোকানের সেলফে, লবণের প্যাকেট ভরে দিলো দাদার ট্রলিতে। এর জিনিস ওর ট্রলিতে। অদল-বদল চলতেই লাগলো :) :) আমি কয়েক সেকেণ্ডের মাঝে যেন দেখলাম এক দক্ষ ম্যাজিশিয়ানের মন্ত্রমুগ্ধ হাত সাফাইয়ের কারিশমা।

আমি বললাম- কাজটি কিন্তু একেবারেই ভালো হচ্ছেনা।
আমাদের ট্রলি গেলো , ইলিশ গেলো, সম্রাট গেলো, সাম্রাজ্য গেলো। আর তুমি বলছো কাজটা ভালো হচ্ছেনা ?
আমরা প্যাটেল থেকে বের হয়ে আসার সময় ক্যাশ রেজিস্ট্রারের সামনে দেখি- এক বিশাল কেয়াস লেগে গেছে।
সবাই নিজের ট্রলির জিনিস নিজেই দেখে কনফিউজড। এরটা ও হাতাচ্ছে, এ ওর দিকে কটমট করে চেয়ে আছে।
ম্যানেজার ছুটে এসেছেন। রেজিস্ট্রারের সামনে বিশাল একখানা জটলা সৃষ্টি হয়েছে।
কে কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। কীভাবে কি হয়ে গেলো। যার জিনিস তার ট্রলিতে নাই। দোকানের ভিতর যেন ছোটখাটো একটা ফনীর ঝড় ওঠেছে।
আমি হাসতে হাসতে লুটোপুটি।
বন্ধু বললো- কাম শেষ । চলো তবে এবার এখান থেকে ফুটি :) :) :)

দোকানের বাইরে আসলাম।
কিন্তু তাকদীর খারাপ। দেখি, ভুল জায়গায় গাড়ী পার্কিং করায় পার্কিং এনফোর্সমেন্ট অফিসার টিকেট কেটে গাড়ীর উইণ্ডশীল্ডের ওপর আটকাচ্ছেন।
বন্ধুটি গজগজ করতে করতে দ্রুত অফিসারের দিকে এগিয়ে গেলো।
শুরু হলো দুজনার তুমুল তর্ক।
বন্ধুটি যত বেশী তর্ক করে- অফিসার গাড়ীর ট্যাগ দেখে নতুন আরেকটি টিকেট লিখে গাড়ীর উইন্ডশিল্ডের ওপর রাখেন।
বন্ধুটির তর্কও চলছে- টিকেটের সংখ্যাও বাড়ছে।
একসময় বৃষ্টি থামার মতো তর্কও থামলো। অফিসারের টিকেট লেখাও বন্ধ হলো।

প্রায় এক গাদা টিকেট উইণ্ডশিল্ডে গুজে দিয়ে অফিসার এবার অন্য গাড়ীর দিকে রওয়ানা দিলেন।
আমরাও আমাদের গাড়ীর দিকে যেতে যেতে বললাম-
পুলিশ অন্যজনের গাড়িতে টিকেট দিচ্ছে। কিন্তু তুমি খামোখা উনার সাথে এমন স্টুপিডের মতো তর্ক করতে গেলে কেনো?
যার গাড়ি সে বেচারা এখন একখানা টিকেটের পরিবর্তে আরো কয়েকখানা পেলো। ব্যাপারটা কি খুব ভালো হলো?

শুধুই ভালো হলোনা। অতি চমৎকার হলো। এটাইতো আসল প্রতিশোধ। এমন সৌভাগ্য জীবনে কমই আসে। বেটা ঘুঘু দেখেছে -ঘুঘুর ফাঁদ দেখেনি। বেটা আজ বাঙ্গালের ফাঁদ দেখবে।
আমি বললাম- তার মানেটা কি? কে কীসের ফাঁদ দেখবে?
তুমি ভালো করে চেয়ে দেখো- অফিসারের টিকেট দেয়া এই গাড়িটি আসলে কার ?
আমি বলি-ওমা, এ তো দেখি মিঃ বিনের মতো ভুল জায়গায় গাড়ি পার্ক করা আমাদের ট্রলি ছিনতাইকারী সেই ভারতীয় দাদার।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৩

কিশোর মাইনু বলেছেন: হা হা হা।
একদম ঠিক হয়ছে।

২| ০৬ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৫:১৬

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: :D B-)) =p~

৩| ০৬ ই মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৪

করুণাধারা বলেছেন: এমন চিকন বুদ্ধি বাঙাল ছাড়া আর কার হবে!

++++

৪| ০৬ ই মে, ২০১৯ রাত ৯:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: প্রতিশোধ নেওয়া ভালো না।

৫| ০৮ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১২:১৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হাহাহাহা জিতছেন ভাই :)

৬| ০৮ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১২:১৯

জাহিদ অনিক বলেছেন:
হা হা হা হা !
কাহিনী মজার লেগেছে জব্বর
শান্তিপ্রিয় বাঙালী আজ অশান্ত হয়ে গেছে!

৭| ১৩ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৩:৩২

অজ্ঞ বালক বলেছেন: হা হা হা। দারুন দিলেন ভাইডি যাকে বলে আইক্কা বাঁশ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.