নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক অলৌকিক তীর্থযাত্রা

০২ রা জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪২

লিও তলস্তয়ের লেখা এক অমর গল্প। উনার প্রতিটি লেখাই শুধু চিন্তাশীল করেনা বরং মানুষের ভাবনাকে আরো সমৃদ্ধ করে। পৃথিবীর নানা দেশে তাঁর এ গল্পটি পড়ানো হয়।

দুজন তীর্থযাত্রী। একজন খুবই ধনী ইফিম এবং আরেকজন অতিশয় গরীব ইলাইশা। ধনীর ঈশ্বর ছাড়া সবকিছুই আছে- তাই তার এখন ঈশ্বর দরকার। আর গরীবের ঈশ্বর ছাড়া কিছুই নেই- তাই তারও ঈশ্বর দরকার। দুজনে চিন্তা করেন নিজ দেশ থেকে অনেক দূরে পবিত্র ভূমি জেরুজালেমে তীর্থ যাত্রায় যাবেন। ধনী ইফিম মানুষকে ঠকিয়ে, অনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্য করে , সুদ -ঘুষের কারবারে-বেশ বিত্তশালী হয়েছেন। এখন অতীতের সমস্ত পাপমোচনের জন্য-তার একবার পরিব্রজ্যা করা দরকার।
আর অতি দরিদ্র ইলাইশা- তার বলতে গেলে কিছুই নেই। কোনো রকমে দিনযাপন। নেই কোনো সন্চয়। কিন্তু পবিত্র ভূমে যাওয়ার তারও ইচ্ছে। ইলাইশা কাজ বাড়িয়ে দেয়। বিশ্রাম নাই। অনেক কষ্টের পর-তার কিছু সন্চয় হয়। সে খোঁজ খবর নিয়ে জানে- জমানো অর্থে সে কোনো রকমে তীর্থে পৌঁছাতে পারবে। সে এও জানে- তার উপার্জন যদি পূণ্যের না হয় সে অর্থে পবিত্র ভূমিতে গিয়ে কোনো লাভ নেই।

একদিন শুরু হয় ধনী ইফিম আর দরিদ্র ইলাইশার দূর্গম তীর্থযাত্রা। প্রখর রোদ। দুজনেই ক্লান্ত। একটা ছায়াতরু তাদের বিশ্রাম দেয়। বিশ্রাম নেয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই ধনী ইফিম ঘুমিয়ে পড়েন। ইলাইশা দেখে তার পানির পাত্রটা একেবারেই খালি। সে চিন্তা করলো দুজনের জন্য কিছু পানি যোগাড় করা দরকার।ইফিমকে ঘুমে রেখে ইলাইশা পানির সন্ধানে বের হয়।

ইফিম একসময় ঘুম থেকে জাগে। দেখে, ইলাইশা নেই। কিছু সময় অপেক্ষার পর সে চিন্তা করে- আর বেশীক্ষণ বসে থাকা যায়না। তাকে ঘুমে রেখে হয়তো ইলাইশা আগেই তীর্থ পথে রওয়ানা হয়েছে। ইফিম ঘাটে আসে । দেখে ইলাইশা নেই। সে একাই নদী পার হয়। নতুন এক শহর। সেখানেও ইলাইশা নেই। ইফিম সেই শহরও অতিক্রম করে। কোথাও ইলাইশা নেই। ইফিমের রাগ হয়। ধনে তার সাথে প্রতিযোগিতায় কেউ পারেনি। তাই , ইলাইশা তীর্থে আগে পৌঁছে যশ-খ্যাতি কামিয়ে পূণ্যে তাকে হারাতে চায়। সে সবাইকে বুঝাতে চায়- ইলাইশা সবার আগে পবিত্র ভূমে পৌঁছে ছিলো। এসব ভাবতে ভাবতে ইফিম এক সময় জেরুজালেম পৌঁছে। সেখানে নানা রঙের-নানা চরিত্রের, নানা জাতের, নানা রকমের মানুষ। হঠাৎ ইফিম দেখে- পবিত্র গৃহের একেবারে সন্নিকটে ইলাইশা দাঁড়িয়ে। সে তাকে কয়েকবার ডাকে। কিন্তু এতো মানুষের ভীড়ে, এতো মানুষের কোলাহলে কে শুণে কার কথা। ইফিম ইলাইশার কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সে আবার হারিয়ে যায়। ইফিম কিছুক্ষণ পর আবার দেখে পবিত্র গৃহের ছায়ায় দাঁড়িয়ে কী সুন্দর স্বর্গীয় হাসিতে উদ্ভাসিত এক পবিত্র মুখ। এ পবিত্র মুখটি আর কারোনা। এটা ইলাইশার।
তীর্থযাত্রা একসময় শেষ হয়। ইফিম রাশিয়া ফিরে এসে আরো বড় একটা ধাক্কা খায় যখন দেখে ইলাইশা এখানেও তার আগে পৌঁছে গেছে।
ইফিম ইলাইশাকে ভর্তসনা করে বলে- এমন না করলেও পারতে। তুমি সবার আগে পবিত্র ভূমিতে গেলে। সবার আগে ফিরেও আসলে।
ইলাইশা বলে- নাতো। আমার বড় আফসোস। আমি বড় হতভাগা। আমি সেখানে পৌঁছাতেই পারিনি।
মিথ্যা বলোনা। আমি তোমাকে বেশ কয়েকবার পবিত্র গৃহের খুব সন্নিকটে দেখেছি। একেবারে সূর্যের মতো স্পষ্ট। তবে, সূর্য দেখেও যেমন কেউ তার কাছে যেতে পারেনা। ঠিক তেমনি আমিও তোমার কাছে যেতে পারিনি।
সত্যি, আমি যাইনি। কারণ-সেখানে পৌঁছানোর জন্য যা অর্থ ছিলো- তার সবকিছু আমার আগেই খরচ হয়ে গেছে।
কীভাবে , কেমন করে? তুমি কি কোনো জুয়াড়ির দলে ভীড়ে গিয়েছিলে?
না। তোমাকে ঘুমে রেখে আমি এক লোকালয়ে পানির সন্ধানে যাই । গিয়ে দেখি ছোট এক পর্ণকুটির থেকে গোঙ্গানীর শব্দ আসছে। ঘরের দরজা খুলে দেখি-এক অসুস্থ মহিলা আর তার এক ক্ষুধাতুর শিশু । আশেপাশে আর কেউ নেই। জ্বরে পুড়ছে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। মহিলার একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী সেই যে যুদ্ধে গেছে, তারপর আর ফিরেনি। মহিলা জানেনা-সে বিধবা কিনা। পুত্র জানেনা সে পিতৃহীন কিনা। আমিও জানিনা তাদের ধর্ম কি, বর্ণ কি, জাতীয়তা কি? শুধু জানি- এ অসহায় মানুষ দুটোর সেবা করা খুব জরুরী। আমার যা অর্থ ছিলো তা দিয়ে খাবার কিনে এনে তাদের খেতে দিলাম। তাদের সেবা করলাম। কিছুদিন পর তারা ধীরে ধীরে সুস্থ হতে লাগলো। অসুস্থ শিশুর মুখে স্বর্গীয় হাসি ফিরে এলো। তারপরও আমার যা টাকা ছিলো- তা দিয়ে তীর্থে পৌঁছাতে পারতাম। কিন্তু আমি ওদের জীবন চালানোর কোনো ব্যবস্থা না করে কেমনে তীর্থে যাই। আমি গৃহে ফিরে এলাম। আমার বড় দূর্ভাগ্য। স্রষ্টার সান্নিধ্য পেলাম না। আমার আর তীর্থযাত্রা হলোনা।

গল্প এখানেই শেষ। কিন্তু গল্পের মূল ভাবনা মানুষের মনে এক গভীর ঐশ্বরিক চিন্তা জাগিয়ে দেয়। যখন তলস্তয় প্রশ্ন করেন-
কে "আসল তীর্থে" পৌঁছে ছিলো?
কে আসলে তীর্থে পৌঁছে ছিলো?
কে পেয়েছিলো স্রষ্টার সান্নিধ্য?

এটা এবার আপনাদেরই মীমাংসা।
ধনী ইফিম নাকি দরিদ্র ইলাইশা?

মূল গল্পের নাম 'টু পিলগ্রিমেজ' আর আমার ভাবনায়- "এক অলৌকিক তীর্থযাত্রা"।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি কোথা থেকে শুনেছেন এই গল্প? আসল গল্পের সাথে বেশ কিছুটা গরমিল আছে, মনে হয়। মুল ভাবনা ঠিক আছে

০২ রা জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: মূল গল্পের নাম- টি প্রিলগিমেজ
আমার ভাবনায়- এক অলৌকিক তীর্থযাত্রা..
মূল থিমটার সাথে মিল রেখে ভাবনা গল্প।
অন্য কোনো দেশের গল্প সরাসরি অনুবাদ করলে সেটা হয়না।

২| ০২ রা জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন। দূর্দান্ত।

৩| ০৩ রা জুন, ২০১৯ দুপুর ২:৫৩

মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: দরিদ্র ইলাইশা প্রকৃত তীর্থৈ পৌছেছিলো,কারন মানবসেবাই প্রকৃত ধর্ম। আল্লাহকে কাছে পাওয়ার আরেকটি অন্যতম মাধ্যম হলো মানবসেবা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.