নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

আল ইমরানের জন্য গভীর দুঃখ অনুভব করছি

০৯ ই জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১০


প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যামে পড়ে কিছুক্ষণ দেরী হওয়ায়- এক ছাত্রীকে স্কুলে প্রচণ্ড ধমক, অপমান সহ স্কুল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। আকস্মিক শক সইতে না পেরে বেচারি প্রচণ্ড জ্বরে ভোগে- হাসপাতালে ভর্তি হয়। তিনদিন হাসপাতালে থেকে ঘরে ফিরে। কয়েকদিন আগে দেখলাম ছোট এক শিশুকে মাদ্রাসায় বেত দিয়ে মেরে বাচ্চাটির পীট লাল করে দেয়া হয়েছে। সমস্ত পীটে তার কালশীটে দাগ । আল ইমরান নামের ১১ বছরের এই শিশুকে ক্লাসে অন্যমনস্ক থাকায়- শ্রেণী শিক্ষক হাতের বেত ছুঁড়ে দেন। বেতটি উড়ে এসে শিশুটির ডান চোখে লাগে। প্রায় এক সপ্তাহ চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর শিশুটি চিরদিনের জন্য চোখ হারিয়ে আজ ঘরে ফিরে। কিন্তু সরকারী নির্দেশ আছে- বেত নিয়ে শ্রেণীকক্ষে যাওয়া যাবেনা। বাংলাদেশের প্রতিটি দাবী দাওয়া এখন ফেসবুকের ভাইরাল হওয়া সংবাদের ওপর নির্ভর করে। যার ভাগ্য ভালো সে ভাইরাল হয়ে বিচার পায়। আর যার দূর্ভাগ্য তার চোখ হারানোর ঘটনাও নানা সংবাদের ভিতর চিরতরে হারিয়ে যায়।

একবার চোখ বন্ধ করলেই দেখবেন- আপনার -আমার জীবনে একজন ভালো শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম। স্রষ্টা পৃথিবী বানিয়েছেন। আর পৃথিবীবাসীকে শিক্ষিত বানিয়েছেন কোনো না কোনো শিক্ষক। কিন্তু মেরে ধরে জোর জবরদস্তি করে শিক্ষা-ভয়ানক হতে পারে। যেমন- হয়েছে- এগার বছরের আল ইমরানের। বেচারাকে অন্ধ এক চক্ষু নিয়ে এখন সারা জীবন পার করতে হবে। ছফা বলেছিলেন-জন্তু জানোয়ারের সাথে জবরদস্তি করা যায়। কিন্তু মানুষের সাথে নয়। করলে সে বিদ্রোহ করতে পারে।

এডিশন গণিতে খারাপ করে ঘরে ফিরে মাকে বললো- মা আমি ফেল করেছি।
মা বললেন- একি কথা। তিনি এডিশনের সমস্ত শরীরে হাত বুলিয়ে বললেন- এই "তুমি" ফেল করলা কীভাবে। "তুমি" ফেল করোনি। অংকটাই ফেল করেছে। জীবন তুমি শুরুই করলেনা - ফেল করবা কেমন করে। জীবনতো শুধু একটা অংক খাতানা বাবা।
কিন্তু সবাইতো আর এডিশনের মা কে পায়না।
কেউ বাবা-মা দুজনের একজনকেও পায়না। কেউ এতিমখানায় লালিত পালিত হয়।

আমার এক প্রফেসর বন্ধু ট্রেনে করে আটলান্টা যাচ্ছেন। উনার পাশের সীটে বসা একজন অনিকেত মানুষ।
গৃহহীন মানুষটি নানা কথার পর বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করে - আপনি কি করেন?
আমি একটা স্কুলে পড়াই।
এটা শুণার পরই- লোকটির বিক্ষুদ্ধ জবাব। আজকে আমার এ দূর্দশার জন্যতো আপনারাই দায়ী।
বন্ধুটি অবাক। এ কেমন কথা।
আমি তখন ফোর্থ গ্রেডে পড়ি। টীচার বললেন- একটা অংক করতে । পারলাম না।
এরপর টিচার-আমাকে প্রচণ্ড ধমক দিয়ে বললেন- খামোখা স্কুলে আসা -যাওয়া করিস। জীবনে তোর দ্বারা কিছুই হবেনা।
টিচারের কথাতো আর অবিশ্বাস করতে পারিনা। ছোট ছিলাম। বাবা-মা নেই- এতিম খানায় থাকি। সুতরাং শিক্ষকের কথাগুলোই মনের ভিতর ঢুকে গেলো। ভাবলাম-আমার দ্বারা যেহেতু কিছুই হবেনা। তাই খামোখা স্কুলে গিয়ে লাভ কি? সেই যে স্কুল ছাড়লাম। আমার আর স্কুলে যাওয়া হলোনা।

আলেকজান্ডার বলেছিলেন- আমি পেয়েছিলাম-পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মালিকে -যার নাম এ্যারিস্টটল। যিনি আমার জীবনে সুবাস ছড়িয়েছেন। পিতামাতা আমাকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে এনেছিলেন। আর শিক্ষাগুরু আমাকে পৃথিবী থেকে স্বর্গে যাওয়ার পথ তৈরি করে দিয়েছেন।

হ্যারি পটারের বৃটিশ লেখিকা জে কে রাউলিং একটা চমৎকার কথা বলেছেন। পড়ালেখায় কেন শিশুদের মনোযোগ হয়না।
কারণ- শিশুদের পাঠের প্রতি তৃষ্নার্ত করা যায়না। শিক্ষকের কাজ হলো- একজন ছাত্রকে ঘোড়ার মতো তৃষার্ত বানিয়ে তাকে নদীর পাশে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়া। ডিভাইসগুলো মনোযোগ তৈরি করতে পারে বলেই শিশুরা ডিভাইসের দিকে যায়। বই মনোযোগ তৈরি করতে পারলে শিশুরা বইয়ের দিকেই যেতো। তিনি আরো বলেন- টেস্ট ক্রিকেট কয়জনেই বা দেখে। কারো মনোযোগ থাকেনা। কিন্তু মনে করেন- এক বলে এক রান দরকার। উইকেটও আছে একটি। তখন- মনোযোগটা কেমন হবে। এই বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালের দিন খেলার প্রতি মানুষের মনোযোগ কেমন হয়েছিলো??? শিক্ষার কাজ হলো-ছাত্রদের মাঝে এই মনোযোগটাই তৈরি করা। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, মেরে-ধরে এই মনোযোগ তৈরি করা যাবেনা।

মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ হেগডের মতে- শিক্ষকের কাজ হলো- মিডওয়াইফের মতো। মিডওয়াইফ যেমন যত্ন, পরিচর্যা করে মাতৃগর্ভ থেকে সন্তানকে বের করে নিয়ে আসেন। শিক্ষকের কাজটিও ঠিক তাই।

খুব ছোট একটা অনুগল্প দিয়ে শেষ করছি। গল্পটি ছোট । কিন্তু এ গল্পের গভীরতা অনেক বেশী।
হাতুড়ি চাবিকে বলছে- আমি এতো শক্তিশালী। কঠিন লোহা দিয়ে তৈরী । কিন্তু তালা খুলতে পারিনা। অথচ তুমি সামান্য একটা হালকা পাতলা জিনিস তুমি কত সহজেই তালা খুলে ফেলতে পারো।
চাবি বলে- তার কারণ হলো। তুমি শুধু মাথায় আঘাত করো। আর আমি হৃদয়ের গভীরে স্পর্শ করি।
কোনো কিছু খুলতে চাইলে হৃদয়ের গভীরেই স্পর্শ করতে হয়।
সেটা প্রেম হোক, প্রীতি হোক। শিক্ষা হোক, দীক্ষা হোক । বন্ধুত্ব অথবা ভালোবাসা হোক।
শুধু হাতুড়ি দিয়ে পিটালেই হবেনা। হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতেও হবে।

দরিদ্র রং মিস্ত্রি ইদ্রিস আলীর এক চোখ হারানো ছেলে আল ইমরানের জন্য গভীর দুঃখ অনুভব করছি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.