নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

"গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার"।

২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৩

"গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার"।

প্রিয় সন্তানেরা,
তোমরা দেখছো আমি দিন দিন বুড়ো হচ্ছি। এখন, একই কথা যদি আমি বারবার বলি। দয়া করে বলোনা- বাবা-এই একই কথাটি তুমি কতবার বলবে? আমার প্রতি সদয় হয়ো। আর মনে রেখো- তুমি যখন ছোট ছিলে- একই গল্প আমি রাতের পর রাত তোমাকে শুনিয়েছি। যতক্ষণ না পর্যন্ত তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো।

যদি আমি স্নান করতে না যাই। রাগ করোনা। মনে রেখো তোমাকে একবার স্নান করাবার জন্য আমাকে শতবার নানা অজুহাত তৈরি করতে হয়েছিলো।

খাবারের সময় আশপাশে খাবার ছড়িয়ে নোংরা করে রাখলে- ধৈর্য্যচ্যুত হয়োনা। শুধু মনে রেখো, এক চামচ খাবার আমি ঘন্টা দুয়েক সময় নিয়ে তোমার মুখে তোলে দিয়েছিলাম।

আমি কিছু বুঝে ওঠতে না পারলে- বিরক্ত হয়োনা। একটা পাখিকে যখন তুমি সহস্রবার এটা কি , এটা কি- বলেছিলে। তোমার শৈশবে প্রতিবারই আমি আনন্দচিত্তে তার জবাব দিয়েছিলাম। আমার এই বার্ধ্যককে তুমি তোমার শৈশব মনে করো।

নতুন কোনো টেকনোলজি বুঝতে না পারলে আমাকে অজ্ঞ মনে করে অবহেলা করোনা। কয়েকটি অক্ষর শিখাতে শত শত ঘন্টা আমি তোমার সাথে ব্যয় করে পুলকিত হয়েছিলাম।

কোনো কারণে যদি আমার শরীর পরিষ্কার না থাকে। দুর্গন্ধ তোমার মনোকষ্টের কারণ হয়- সেজন্য আমি লজ্জিত। শৈশবে তোমাকে পরিষ্কার করে তোমার শরীরে যেমন খুশবু ছড়িয়ে ছিলাম- সেটুকু করার দরকার নেই। নিজ তাগিদে শুধু এতোটুকু খেয়াল রেখো-আমার বাথরুমে যাওয়া দরকার কিনা? আমার শুয়ে থাকার বিছানাটা পরিষ্কার কিনা?

দ্রুত হাঁটতে না পারলে অবহেলা করোনা। সময় আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। অকস্মাৎ মারা গেলে মুক্তি। কিন্তু বেঁচে থাকলে এই পথ থেকে কারো মুক্তি নেই। শুধু মনে রেখো- তোমার এক এক পা করে হাঁটার সময় আমি আমার দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।

কিছু মনে রাখতে না পারলে রাগ করোনা। শুধু মনে রেখো- কিছু মনে থাক বা না থাক। হৃদয়ে তোমরা আছো। তোমরা মনের মাঝে সবসময় বিরাজ করছো। সন্তান পিতা মাতার নিকট যে কি তা কোনোদিনই অনুধাবন করতে পারবেনা। যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজে পিতা-মাতা হয়েছো।

ধন, সম্পদ, বাড়ি , গাড়ি কোনো কিছুই এখন আর তৃপ্তি দেয়না। শুধু তৃপ্তি দেয় তোমাদের সাহচর্য্য। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও যদি কাছে থাকো তবে একটু পাশে এসে বসো। আর যদি দূরে থাকো- তবে ফোনে একটিবার সময় করে কথা বলো। পিতামাতার কথা শুণতে না পারার শূণ্যতা কি - যারা হারিয়েছে। তারাই শুধু বুঝেছে।

দিন যত যাচ্ছে আমি দূর্বল থেকে আরো দূর্বলতর হবো। বিধাতার সবচেয়ে বড় দান হলো সন্তান। আমি হয়তো বুঝতে পারবোনা-আমার নিজের অবস্থা। কিন্তু তুমি আমার অবস্থা বুঝতে পারলেই হবে। তাই, অবহেলা না বরং জীবনের এই শেষ যাত্রায় তোমাদের ভালোবাসা নিয়েই পৃথিবী ছাড়তে চাই। এই কথাগুলো বলার আর সুযোগ পাবোনা। তাই, স্মরণশক্তি ফুরিয়ে যাওয়ার আগে, বাকশক্তি কমে যাওয়ার আগে, ইচ্ছেশক্তি দমে যাওয়ার আগেই বলে রাখলাম।

- ইতি তোমাদের বাবা-মা।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এরকম একাটা লেখা আগেও কোথায় যেনো একবার পড়েছিলাম।
সেটার লেখককি আপনিই ছিলেন?
যে যাই হোক কোন ছেলেই এই কথাটা মানতে চাইবেনা যে
সেও একদিন এরকম ছিলো, অসহায় ছিলো। আমিও অনুভব
করিনাই আমিও তেমন ছিলাম হয়তো কেউই করেনা। তবে যখন
মাথার উপর থেকে পিতার স্বর্গীয় হাত খানি চলে যায় তখন আমরা
পিতার যায়গা দখল করে নেই। আর সেই সময়ে আমাদের মাঝে
বাসা বাধে মৃত্যু ভয়। অসহায় হয়ে যাই বলেই সন্তানদের কাছে
প্রত্যাশা করি ফেবৎ পেতে যা তাদের ছোট বেলায় অযাচিত ভাবে
দিয়েছি। কেউ পায় কেউ পায়না। যে পায় সে ভাগ্যবন কেউবা
সব্ থাকতেওন বৃদ্ধাশ্রেমে ঠাই করে নেয়।

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: মন ছুয়ে গেল।

৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:০৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।+

৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৩৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: Excellent

৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: আমি এতই চিন্তা ভাবনা করি যে আমার মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে।

৬| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: গভীর চিন্তা করতে গেলেই সমস্যা। প্রেসার বাড়ে। প্রেসার থেকে স্ট্রোক।

৭| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫০

করুণাধারা বলেছেন: ভালো লিখেছেন। তবে আমি একটা বৃদ্ধাবাস বানাবার কথা ভাবছি... নিঃশর্ত দান করেছি, কোন প্রতিদানের আশা করে নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.