নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

গৃহবন্দি না গৃহমুক্তি

০২ রা মে, ২০২০ রাত ১১:০৫

গৃহবন্দি কথাটি ভুল। কথাটি হবে গৃহমুক্তি। গৃহকে জেলখানা মনে করা সুন্দর সংসার তৈরিতে বাঁধা। যে মেয়েটি সকাল সাতটা থেকে রাত সাতটা পর্যন্ত গার্মেন্টেসে কাজ করে-সেটাই হলো আসল বন্দিত্ব। যখন সে গার্মেন্টস থেকে বের হয় -তখনই সে মুক্তি পায়। কিন্তু সংসার চালানোর জন্য এই বন্দিত্ব জীবন সে স্বেচ্ছায় বেছে নেয়। চল্লিশ বছরে গার্মেন্টস মালিকের জীবনের পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু খুপড়ি ঘরে থেকে কোনো রকমে জীবন ধারণ করা ছাড়া লাখো গার্মেন্টেস নারীর জীবনের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। তাদের বানানো একটা পোষাকের ট্যাগের মূল্য তাদের জীবনের মূল্যের চেয়েও বেশি। লক্ষ লক্ষ কর্মক্ষম পুরুষ বেকার। রাস্তায় রাস্তায় মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে গুলতানি মারছে। পরিবারের ভারসাম্যের জন্য নারীর পরিবর্তে এই বিশাল পুরুষদেরকে কি গার্মেন্টেসে কাজ দেয়া যেতোনা। কেউ যদি মনে করে-পুরুষরা কাপড়ে বুননে ভালো না। কথাটি ভুল। গ্রাম থেকে শহরে অগণিত পুরুষরা দর্জি হিসাবে কাজ করে। কিন্তু এদেরকে দেয়া হবেনা। কারণ- সব পুরুষকে কর্মসংস্থান হয়ে গেলে- নেতার পেছন পেছন ঘুরবে কে? নেতার পেছনে দলে দলে দাঁড়িয়ে নেতার পেশি শক্ত করবে কে? দলে দলে নেতার সাথে গিয়ে ধান ক্ষেত নষ্ট করবে কে?

প্রতিটি নারীই হলো প্রতিটি গৃহের আসল ইন্জিন। ফুয়েল পুরুষে দেয় কিন্তু নারীই মূলতঃ সংসারটি চালায়। কিন্তু যে নারীকে নিজের ঘর না চালিয়ে অন্যের মুনাফা তৈরিতে জীবন দিতে হয়- তার সংসারের ইন্জিনে মরচে পড়ে। সে জানেনা তার অবর্তমানে গৃহে রেখে যাওয়া সন্তানের জীবন কোন দিকে মোড় দিচ্ছে। কথায় বলে- সন্তানকে যতটুকু সময় দেয়া হবে ঠিক ততটুকু সময় সে ফিরিয়ে দিবে। পিতামাতা সন্তানকে সময় না দিলে -সন্তান একেবারে গ্যারান্টি অন্য কোনোদিকে সে সময় দিবে। কথাগুলো বলছিলেন- বুয়েট থেকে পাশ করা এক আপা। স্বামী ডাক্তার। স্ত্রী প্রকৌশলী। দুজনেই বাইরে ব্যস্ত। নানা স্ট্রেচের ভিতর দুজনেরই সময় যায়। ঘরে এসে দুজনেই ক্লান্ত। সারাদিনের পর সন্তান পিতামাতার সান্নিধ্য চায়। আবার পিতামাতা ঘরে এসে একটু অবসর চায়। এখন, কে কাকে সময় দিবে। এদিকে, কাজের মানুষই যদি সন্তানকে বড় করার, সুশিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে, কাজের মানুষ বা তার সন্তানেরাই নিজেই সুশিক্ষিত হতো। কাজের মানুষের প্রতি কোনো অশ্রদ্ধা নয়। শুধু বিষয়টি বুঝার জন্য বলা হচ্ছে।

উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ঘরে থাকাকে অনেকেই মনে করে- এই নারীর জীবনে আর কিছুই করা হলোনা। এতো পড়ালেখা তার বৃথা গেলো। একটা সুন্দর সংসারের বিনির্মান করা কি নারীর জন্য বৃথা যাওয়া? নারী যখন মা হয়- তখই তাঁর জীবনের বিনির্মাণ হয়ে যায়। পৃথিবী পায় সবচেয়ে সুন্দরতম উপহার। বীজ থেকে যে চারাগাছটির জন্ম নিলো। এখন দরকার তার নিবিড় পরিচর্যা। সঠিক পরিচর্যা না হলে- এই গাছ বড় হবে ঠিকই। কিন্তু গাছ কাঠ টোকরার গর্ত হবে। গাছে আগাছা জন্ম নিবে। গাছে নানা রকমের কীটপতঙ্গের বাসা হবে।

কর্মজীবনে এক সফল দম্পত্তি দেখেছি। এখন বয়োবৃদ্ধ। তিনটি সন্তানই কর্মে সফল। কিন্তু বয়োবৃদ্ধ পিতামাতার সাথে যে যোগাযোগ- তা হলো- কেবল উৎসবীয়। ঈদে,জন্মদিনে একটু হাই-হ্যালো হয়। ব্যস এতোটুকুই। কারণ- হলো- পিতামাতা শিক্ষক দিয়েছেন, কোচিং দিয়েছেন, ভালো স্কুল, খাবার, পোষাক দিয়েছেন। কিন্তু শৈশবে সন্তানের মন যখন নরম- তখন যে নিবিড় সান্নিধ্য আর সময় দেয়ার কথা ছিলো- সেটা দেয়া হয়নি। এখন, সন্তানরা যতই বড় আর কর্মক্ষেত্রে সফল হয়েছে- মাতা পিতার কাছ থেকে ততই দূরত্ব বেড়েছে। হয়তো বৃদ্ধ পিতা মাতা ঘরে মরে পড়ে থাকবে- সন্তানরা কয়েকদিন পর তার খবর পাবে। এরকম অসংখ্য পরিবারের গভীর বেদনাবোধ আমি নিজ চোখে দেখেছি।

সফল পিতামাতার সন্তানদের কর্মক্ষেত্রে এরকম সফলতা যেমন দেখেছি। দেখেছি সফল পিতামাতার একেবারে বকে যাওয়া সন্তানদের। বাবা-মা দুজনেই চমৎকার ভালো মনের মানুষ। একেবারে উচ্চপদে কর্মরত সফল দম্পত্তি। কিন্তু সন্তানরা চূড়ান্তভাবে বখে গেছে। কারণ- ঐ যে সময়। পিতামাতা যখন বড় কোম্পানীর প্রফিট তৈরি করছেন-নিজ সন্তানেরা তখন কোনো দিকে যাচ্ছে- খেয়ালই রাখেন নি। বুঝতে পারেন নি- স্কুল ছুটির পর সন্তানের কোথায় যাচ্ছে। কার সাথে মিশছে। কাড়ি কাড়ি টাকা আসছে । সেই টাকা চলে যাচ্ছে- ক্লাবে, বারে, কু আড্ডায়, কু সঙ্গে। এক মেয়ে বিয়ে করেছে কালো ছেলেকে। এটা বলায় দয়া করে রেসিজম কার্ড নিয়ে তেড়ে আসবেন না। বছরের মাথায় উথাল পাতাল প্রেমের সংসার আর নেই। অন্য দু সন্তানেরও ফ্রি স্টাইল লাইফ। ফ্রি স্টাইল লাইফের মুক্ত চর্চার পক্ষে যতই লজিক দেয়া হোক না কেন- যে বাবা-মায়ের বুকে হাহাকার তৈরি হয়েছে সেই বুঝে এর বেদনা। নিজের ঘর না পোড়া পর্যন্ত আগুনের যে দহন সেটা অনুধাবন করা যায়না।

ঘরে থেকে একজন উচ্চশিক্ষিতা মা চারটি কাজ করেন। নিজ সন্তানকে সময় দেন, সুশিক্ষা দেন, খারাপ সময় , খারাপ সংঘ থেকে সন্তানকে দূরে রাখেন। সায়েন্স ডেইলির প্রতিবেদন অনুযায়ী- যে মাতা সন্তানকে বেশি সময় দিয়েছেন। সেই সন্তান শুধু একাডেমিকলি সফল হয়েছে তা নয়- বরং একজন ভালো মনের মানুষ হয়েছে। কারণ- প্রতিটি পিতামাতাই যখন সন্তানকে সময় দেয়- সে তার ভালো সময়টুকুই দেয়। সব পিতামাতাই চায়- তার সন্তান যেন একজন ভালো মানুষ হোক। চাইল্ড কেয়ার, ডে কেয়ারে যে সময়টুকু দেয়া হয়- এটার সাথে আর্থিক লেনদেন থাকে। কিন্তু পিতামাতা যে সময়টুকু দেন- এটা একেবারেই নিঃস্বার্থ।

আমাদের সমাজে কর্মজীবী মহিলাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়। আর মহিলা শুধু সংসারজীবী হলে তাকে বড় অবহেলা করা হয়। তাকে শুনতে হয়- "ও আপনি কিছুই করেন না।" ভুলে যাই, এই কিছুই করেন না'র ভিতরে প্রতিটি মূহুর্তে তারা সংসারে একেকজন মানবিক নক্ষত্র তৈরি করে তোলছেন। প্রতিটি সংসারে শুধু সুখের জন্য যুগ যুগ ধরে শ্রম দিয়ে যাওয়া এইসব নক্ষত্র দায়িত্রী নারীদের প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা। এইসব মায়েরা গৃহবন্দি নন বরং গৃহমুক্তির অঙ্গীকার। সুন্দর, শান্তিময় সংসার বিনির্মানের এক মহান সূতিকাগার।


মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মে, ২০২০ রাত ১১:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: প্রতিটি নারী ঘরের আসল ইঞ্জিন। কথা ঠিকই বলেছেন। তবে সেই নারীকে বুদ্ধিমতি হতে হবে।

২| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ১২:২০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে। পুরাতন প্রবাদ

৩| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ১২:৩১

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: কিছু বছর আগে একটা বিতর্ক করেছিলাম, This house regrets the glorification of mother hood.
আপনার লেখাটি পড়ে মনে পড়লো। আপনি সঠিক বলেছেন, উচ্চশিক্ষিত নারী কিছু না করলে মানুষ কথা শোনায়। অনেকে স্বামী সন্তানের জন্য নিজের অর্থনৈতিক মুক্তিকে বিসর্জন দেন।
কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, কর্মজীবী নারীরা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার তুলনামূলক কম হন। এই সময়েও আদতে গৃহিণী নারীরা কতটুকু আর্থিক স্বাধীনতা ভোগ করে সেটাই চিন্তার বিষয়, যেহেতু স্বামীর উপার্জনের উপরই অনেককিছু নির্ভর করে।
ধন্যবাদ

৪| ০৩ রা মে, ২০২০ সকাল ৯:৩৪

জাফরুল মবীন বলেছেন: "সঠিক পরিচর্যা না হলে....... নানা রকমের কীট পতঙ্গের বাসা হবে" একদম সত্যি কথা।আর এর বাস্তব ফল সমাজে প্রকটভাবে দৃশ্যমান।আপনার লেখাতে নিজের মনের কথাগুলোর প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগল।ধন্যবাদ।শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

৫| ০৮ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:২০

অন্তরন্তর বলেছেন: আরিফ ভাই আপনার কথা ধরেই বলি এটা আসলেই গৃহ মুক্তি। চমৎকার লিখেছেন যদিও আপনার লিখা বরাবরই খুব খুব ভাল। শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.