নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

গভীর ১৯

১৩ ই মে, ২০২০ রাত ২:৩৯

দুনিয়ার মানুষ যতই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুক না কেন। পুরো দুনিয়াটাই এখন রোগী। কারণ হলো একটি চুলের ডগাকে ৪৫০০০ দিয়ে ভাগ করে যে ক্ষুদ্রতম অংশ হয় - সেই অতি ক্ষুদ্র ভাইরাস। প্রতিটি দুর্যোগ মানুষকে একেক রকমের শিক্ষা দিয়ে যায়। "কোভিড ১৯" থেকে পাওয়া এই শিক্ষা হলো "গভীর ১৯"।

১) জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাস্থ্য এটা গভীরভাবে উপলব্ধি করা।
২) সংক্ষিপ্ত এই জীবন চালানোর জন্য বেশি কিছুর প্রয়োজন হয়না।
৩) পঁচিশ -ত্রিশ বছরের পড়ালেখার সাথে দশ-বিশ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন ডাক্তার যদি মারা যায়-তবে একজন ডাক্তারের অকাল মৃত্যু মানেই চিকিৎসাক্ষেত্রে চল্লিশ পয়তাল্লিশ বছরের ক্ষতি। আবার, চিকিৎসার জন্য চাইলেও বাইরের দেশে যাওয়া যাচ্ছেনা। তাই, নিজ দেশ উন্নতমানের চিকিৎসা ব্যবস্থার গুরুত্ব যে কতখানি তা গভীরভাবে উপলব্ধি করার সময় এসেছে।
৪) মহাকাশ জয় করার গর্ব করলেও ক্ষুদ্র ভাইরাসের কাছে ঘটছে মানুষের পরাজয়। তাই, আদতে মানুষের গর্ব করার কিছুই নেই। মানুষ খুবই অসহায়।
৫) শুধুই অসহায় না। খুবই একা। " ইয়া নাফসি"- কি জিনিস। মানুষ এবার বাস্তবিকভাবেই প্রত্যক্ষ করেছে। কারো পাশেই কেউ নেই।
৬) বাঁচার ক্ষেত্রে মানুষ কত স্বার্থপর হতে পারে করোনা ভাইরাস সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছে।
৭) মানুষ নানা পরিকল্পনা করতে পারে। কিন্ত আসলেই কাল কি হবে তা কেউ জানেনা।
৮) মানুষ মানুষের শত্রু না। সব মানুষের কমন শত্রু হলো রোগ আর ক্ষুধা।
৯) সমস্যা একার না। সমস্যা সবার। তাই যেকোনো সমস্যা সম্মিলিতভাবেই মোকাবিলা করা দরকার।
১০) আগে জীবন। তারপর সব রকমের বিনোদন।
১১) একটি ছোট ভ্যান্টিলেটর যে জীবন বাঁচাতে পারে। একটা বিশাল জাহাজও তা পারেনা। এক সিলিন্ডার অক্সিজেন যে জীবন বাঁচাতে পারে। পুরো রাজপ্রাসাদও তা পারেনা।
১২) ক্ষুদ্র করোনা ভাইরাসের কাছে মানুষের জীবন বিপন্ন। তাই, মানুষের কাছে অকারণে ক্ষুদ্র পিঁপড়ার জীবনও যেন বিপন্ন না হয়।
১৩) পৃথিবীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য প্রকৃতি আর মানুষকে পাশাপাশি ঠিকে থাকতে হবে। মানুষ বিহীন পৃথিবী সুন্দর না। অনেক অজানা , অচেনা গ্রহ আছে। তাতে মানুষের কিছুই আসে যায়না।
১৪) মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞান। ঠিক তেমনি মানুষের কল্যানেই ধর্ম। মৃত অবস্থায় একটা লাশ রাস্তাঘাটে ফেলে রাখা যায়না। হাসপাতালেও দান করা যায়না। মানবতার কল্যানে সবাই যদি মৃত লাশ হাসপাতালে দান করা শুরু করে হাসপাতালতো তখন মর্গে পরিণত হবে। তাই, যে হাসপাতাল আপনার চিকিৎসা দেয় সেটা হলো বিজ্ঞান। আর যে নিয়মে লাশটা কবরে দাফন করা হয়- সেটাই হলো ধর্ম।

১৫) পৃথিবীতে ৩২২৮ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে শত শত ল্যাবের প্রচেষ্টা এখনো একটি ক্ষুদ্র ভাইরাস মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই বিজ্ঞানকেই একমাত্র অবলম্বন ভাবার কিছুই নেই। আবার বিজ্ঞান কিছুই করতে পারবেনা-বলা তাও ঠিকনা। বিজ্ঞানের নানা অবদানের ভিতরেই মানুষ বেঁচে আছে ।

১৬) ২.৩ বিলিয়ন খৃষ্টান, ১.৯ বিলিয়ন মুসলমান, ১.১ বিলিয়ন হিন্দু , ১৪ মিলিয়ন ইহুদি সহ নানা ধর্মের মানুষেরা নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী ব্যক্তিগত, সম্মিলিত দোয়া, প্রার্থণা করেছে। কাজ হয়নি। দোয়া কবুল হওয়ার মতো কোনো ধর্মেরই একজন মানুষও কি আর পৃথিবীতে নেই। এটা- গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। অথবা, রব মানুষের দোয়া কোন সময় কবুল করবে -সেটা হয়তো মানুষ জানেনা। ভাইরাস বুঝিয়ে দিয়েছে- অতীত, আর বর্তমানেই মানুষের সীমাবদ্ধতা। ভবিষ্যত জানার সব জ্ঞান মানুষকে দেয়া হয়নি।

১৭) ফাদার, পেস্টর, রাবাই, ইমাম, গুরু যেখানে উপস্থিত থাকেন- সেটা প্রার্থনালয় নয়। যেখানে রব উপস্থিত থাকেন সেটাই প্রার্থণালয়। এই পেনডেমিকে ইট, পাথরের তৈরি প্রার্থনালয়ের চেয়ে নিজের রক্ত, মাংসের তৈরি আত্মালয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়ার সময় এসেছে। পবিত্র ধর্মালয়ের ভিতর মানুষের অপবিত্র আত্মায় রব থাকেন না।

১৮) মৃত্যু শয্যায় পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ কি চিন্তা করে। দুনিয়ার কোনো মানুষই কি চিন্তা করে- কেন আরেকটু সম্পদ বাড়ালাম না, কেন আরেকজনের হক আরো বেশী করে লুন্ঠন করলাম না, কেন আরেকটু বেশি দূর্নীতি, জুূলুমাবাজি, মিথ্যা কথা বললাম না, কেন আরেকটু বেশি করে ক্ষমতার চর্চা করলাম না, কেন আরেকটু দম্ভ , অহঙকার করে মাটির ওপর হেঁটে বেড়ালাম না, কেন ধরাকে সরাজ্ঞান করলাম না, কেন নানা রকমের অপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে ঘর ভর্তি করে রাখলাম না, কেন মনটাকে কলুষিত করলাম না। না এসব চিন্তা কেউ করেনা।

১৯) মৃত্যুশয্যায় প্রতিটি মানুষ চিন্তা করে- কেন প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে আরেকটু বেশি সময় কাটালাম না, কেন আরেকটু বেশি মানুষের প্রতি দয়াপরবশ হলাম না। ক্ষমতাহীন হয়েও কেন মানুষের আরেকটু ভালোবাসা পেলাম না, কেন আরেকটু বেশি নিরহংকারি, বিনয়ী হলাম না, সুস্থ থাকতে কেন রবের আরেকটু বেশি ইবাদত করলাম না। তাই, জীবনের অন্তিম মুহুর্তে যে কাজগুলো করলে অনুশোচনা বাড়ে সুস্থ সবল থাকা অবস্থায় সেই কাজগুলো এড়িয়ে চলা আর যে কাজগুলো করলে অনুশোচনা কমে-সুস্থ -সবল থাকা অবস্থায় মানুষের সেই কাজগুলোই বেশি করে করা দরকার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.