নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

পবিত্র জুমাবারের স্ট্যাটাস- কার ওয়াশ

২২ শে মে, ২০২০ রাত ১:২৮

পবিত্র জুমাবারের স্ট্যাটাস

কোয়ারেনটাইনের কারণে অনেকদিন গাড়ি পরিষ্কার করা হয়নি। প্রায় দু সপ্তাহ আগে সাহস করে "কার ওয়াশে" গেলাম। অটোমেশিনে গাড়ির বাহির বেশ ভালোই পরিষ্কার হলো। কিন্তু ভিতর পরিষ্কার করতে হলে হাত লাগাতেই হয়।
দ্বিধা লাগলো গাড়ি থেকে নামবো কিনা। আশেপাশে বেশ ফাঁকা দেখে গাড়ী পার্ক করলাম।

ঠিক এমন সময়- একজন আফ্রিকান আমেরিকান লোক দৌড়ে আসলো। সামান্য ভয় পেয়ে গাড়ির দরজাটা দ্রুত বন্ধ করি।
প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার লোকটি গাড়ীর জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অনুরোধ করলো- গ্লাসটা একটু খোলার জন্য। কথা বলতে চায়।

দেখি, লোকটির পাশে ছোট একটা শিশু এসেও দাঁড়িয়েছে।

বড় মানুষকে দেখে যে সাহস হারিয়েছিলাম। এবার ছোট শিশুকে দেখে সেই সাহস ফিরে পেলাম।

মুখে মাস্ক পরে জানালা খুললাম।
বললো- অনেকদিন কাজ নেই। ছোট শিশুটিকে দেখিয়ে বললো- সে এই ছেলেকে নিয়ে কয়েকদিন থেকে হোটেলে আছে। আজকে যদি চল্লিশ ডলার যোগাড় করতে না পারে তবে হোটেল ছেড়ে দিতে হবে। কোথাও কোনো কাজ নেই। দুপুরের খাবারও কিছু খায়নি।

সে আমার কাছ থেকে ভিক্ষা চায়না। আমি যদি তাকে মানবিক সাহায্য করি । তবে সে আমার গাড়ির ভিতরটুকু ভ্যাকুয়াম করে খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিবে।

জানিনা, তার কথাগুলো সত্য কিনা। সত্য মিথ্যা যাচাই করতেও চাইনা। একজন মানুষ নিজ থেকে বলছে- বিপদে পড়েছে। সাহায্য করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট । তাছাড়া, রোজা রেখে আমিও বেশ দূর্বল। কেউ যদি কাজ করে কিছু সাহায্য নিতে চায়-তবেতো দুজনেরই লাভ।

আমি বললাম, ঠিক আছে। আপনি পরিষ্কার করেন। তবে, চল্লিশ ডলার আপনাকে দিতে পারবোনা। আমি বিশ ডলারই দিবো।
হ্যাঁ। আরেকটি কথা। আমার কাছে কোনো ক্যাশ নেই। ব্যাংকের এটিএম মেশিনে গিয়ে ডলার তোলে নিয়ে এসে আপনাকে দিতে হবে।

কি যেন চিন্তা করে- উনি গাড়ি পরিষ্কার করা শুরু করলেন। আমি একপাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
এর মাঝে আরেকটি গাড়ি এসে থেমেছে। আমার গাড়ি পরিষ্কার করা বন্ধ করে লোকটি ঐ গাড়ির মালিকের সাথেও কথা বলে আসলো এবং খুব দ্রুত আমার গাড়িটা পরিষ্কার করলো।

প্রায় পাঁচমিনিট দূরে ব্যাংক। ড্রাইভ করে যেতে হবে। গাড়ির সীটে এসে বসলাম।
লোকটি এবার দ্বিধায় ভুগছে। বিশ ডলার অনেক টাকা।
আমি যদি গাড়ি নিয়ে চলে যাই আর ফিরে না আসি। তাঁর বিশ ডলার লস।
আমাকে বারবার বলছে- দেখো তুমি আবার ফিরে আসবেতো?
আমি বললাম - কেনো আসবোনা। আমিতো নিজের গাড়ি নিজেই পরিষ্কার করতে এসেছিলাম। আপনাকেও বলিনি- আমার গাড়ি পরিষ্কার করে দিতে হবে। আপনিই নিজ থেকে এসেছেন। সুতরাং কেন আমি আপনাকে ঠকাবো। সত্যিই আমি ফিরে আসবো।

লোকটি এবার আমার নাম জানতে চাইলো।
নাম বললাম।
এবার লোকটি আমার নামের শেষে মাহমুদ শুনে বললো- ও তুমি মুসলমান?
আমি বললাম- জ্বি আমি মুসলমান।

এবার এই হোমলেস, কর্মহীন সাধারণ লোকটি যে কথা বললো- আমার অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিলো। আমার চোখে পানি এসে গেলো।

লোকটি বললো- আমার আর কোনো চিন্তা নেই। আপনি যান। আমি জানি-আপনি ফিরে আসবেন।
আমি বললাম, এখন, হুট করে কেন আপনার মনে হলো- আমি ফিরে আসবো?

লোকটি বললো - কারণ-আপনি মুসলমান। মুসলমানরা কোনোদিন কাউকে ঠকায় না।

আমি শিউরে ওঠলাম। অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দেয়ার মতো এই যে এক অজানা, অচেনা মানুষের মুসলমানদের ওপর এমন বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসের মর্যাদা আমরা মুসলমান জাতিরা আজ কতটুকু দিতে পেরেছি? সে কি জানে দূর্যোগ যত বাড়ে- এর সাথে পাল্লা দিয়ে দূর্নীতিও আমাদের তত বাড়ে, ঘুষের টাকা পকেটে নিয়ে আমরা ওযু করি , নামাজ পড়ি, হজ্ব করি, খাদ্যে ভেজাল মিশাই, খাদ্য মজুদ করে মুনাফা করি, ঘুষ ছাড়া আমাদের বেশীরভাগ অফিসে কোনো কাজ হয়না, মুসলমান নাম নিয়ে মানুষকে ঠকাতে ঠকাতে আমরা দিন শুরু করি এবং ঠকাতে ঠকাতেই জীবন পার করে কবরে চলে যাই। তারপরও আমাদের ঠকানো শেষ হয়না। ঘুষ না নেয়ার জন্য, মানুষকে না ঠকানোর জন্য দেশের একজন শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলীকে খুন করে সুবজ ঘাসের ওপর আমরা ফেলে রাখি।

ভর দুপুরের খা খা রোদে আটলান্টার আকাশ পুড়ছে। আর গাড়িতে বসে আমার অন্তর পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.