কবি আর কবিতার দ্বন্দ্ব।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৩৮

একজন লেখক যেসব অনুভুতি তার শরীর ও মনে অনুভব করতে চায়, কিন্তু পারে না, তাই তুলে ধরে তার টেবিলে অথবা বিছানায় পড়ে থাকা কাগজে।

আমার এক মেয়ে বন্ধুকে দেখলাম, কবি আর সাহিত্যিকদের প্রতি প্রচন্ড মাত্রায় ক্ষুব্ধ। কারণ জানতে চাইলে, সে বলে তাদের মনে আরেক আর কাজে আরেক। তখন আমি তাকে কিছু কথা বললাম।

দেখো, কবিও একজন মানুষ। কবির কাজ হচ্ছে সে সব সূক্ষ্ম ও লুক্কায়িত সৌন্দর্য বোধের সাথে নিজেকে পরিচয় করানো যা আমরা- আমাদের সমাজ খালি চোখে দেখতে পাই না। ভাবনাটা মাথায় আসার আগ পর্যন্ত, কবি একজন সাধারণ মানুষ। কবির কাজ ভাল জিনিস নিজের মধ্যে ধারণ করা না। বরং ঐ অনুভুতির সাথে পরিচয় করে দেয়ায় কবির কাজ। সুক্ষ্ম রাগ, ভালোবাসা,ঘৃনা,অভিমান তুলে ধরায় কবির কাজ। নিজেকে সাধু হিসেবে তুলে ধরা কবির কাজ না।



কবি যখন লিখে একটি পথশিশুকে নিয়ে, তখন সেই কবি নিজের সত্ত্বার সাথে বিদ্রোহ করছে। তার সত্তাকে বাধ্য করছে ঐ শিশুটির কথা ভাবতে। সমাজের দুঃখের অনুভুতি দূর করতে নিজের অক্ষমতা থেকেই তার লিখার শুরু। অনেকটা কন্যাদায় গ্রস্ত পিতার মত, মেয়ের বিয়ের সুরাহা করতে না পেরে আল্লাহ এর কাছে নিষ্ফল প্রার্থনা। কবি যখন দেশপ্রেম নিয়ে লিখে, হয়তো সে দেশকে তখনো ভালবাসে না। কিন্তু যেই মুহুর্তে লিখছে, তখন সে তখন তার ভিতরের সেই ঘুণে ধরা সত্তার সাথে তার সমস্ত অনুভুতি দিয়ে যুদ্ধ করছে দেশকে ভালবাসার গভীর প্রত্যয়ে।

কবি চায়, সেই সব অনুভুতির সাথে নিজেকে পরিচয় করাতে যা সাধারন্যের কাছে অপরিচিত। কবিরা প্রতারক নই, কবিরা মনে এক কাজে ভিন্ন, এমন কেউও নয়। বলতে পারো- কবিরা দুর্বল। তবে কবিরা নিজের অনুভুতি লিখার মত সাহসী। পাঠকের কথা ভেবে কবিরা লিখে না। কবি লিখে নিজের জন্য।



কবি সমাজসেবক নই। কবি রাজনীতি করে না। কবির কাজ সমাজের ভুলটা অনুভব করা, ভুল সংশোধন নই। কবিকে ভালবাসতে হবে এমন কোন কথা নেই। তবে কবির লেখাকে ভালবাসতে হবে।



কবি আর কবিতা???? আমি কবিতাকেই বেছে নিব। আমি নিজে যখন আমার লিখা কবিতা পড়ি তখনও আমি কবি আমি এর চেয়ে কবিতার আমিকে বেশি ভালবাসি।



(পড়ে কোন মন্তব্য বা অন্যকিছু মাথায় আসলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন)

২ টি +১/-০