নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রথম চাকরী’র স্মৃতি...

১৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে (বর্তমান ফিন্যান্স বিভাগ) আমাদের ৪র্থ ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন হয়েছিল ১লা জুলাই ১৯৯৮ ইং সে অনুষ্ঠানে স্যার/ম্যাডাম’রা অনেক কথা বলেছিল; আমাদের জীবন আর ভবিষ্যৎ নিয়ে। সে যাই হোক তার পরের দিন মানে ২লা জুলাই ১৯৯৮ ইং ঢাবি’তে আমাদের প্রথম বিবিএ ক্লাস শুরু হয়। সে সময় দেশের নামী দামী চাকুরী বলতে বুঝাতো, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ইত্যাদি।

মনেপড়ে বিবিএ’র শেষ ক্লাস হয়েছিল ১লা ডিসেম্বর ২০০২ ইং তারপর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছিল ৩০শে ডিসেম্বর ২০০২ ইং। তার মানে ৪ বছরের অনার্স কোর্স শেষ করতে আমাদের লেগেছিল ৪ বছর ৬ মাস। সারে ৪ বছর পড়াশুনা করে একদিন দেখি আমার হাতে তেমন কোন কাজ নেই...!? যখন নিজেকে বেকার বেকাল লাগছিল; তখন একদিন সূর্যসেন হলের ৫১০ নাম্বার রুমে বসে উত্তরের জানালা দিয়ে নারিকেল গাছের পাতার ফাঁকে পাখিদের কোলাহল দেখছিলাম, আর ভাবছিলাম কি করা যায়...?

সে সময় আমার কাজ বলতে ছিল, সন্ধ্যায় একটা টিউশনি। বাকী সময়টা আমি আজিজ মার্কেটে গিয়ে গল্প/কবিতার বই খুঁজতাম/কিনতাম আর রুমে এসে একা একা পড়তাম। চারুকলায় গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতাম আর পেইন্টিং দেখতাম। পাবলিক লাইব্রেরীর হলে কিছু ছবির প্রদর্শনী হতো সেগুলো দেখতাম। আর মাসের শুরুতে হাতে টাকা থাকলে, বন্ধুদের সাথে পুরান ঢাকার বিসমিল্লাহ, হাজীর বিরিয়ানি, নান্নার মোরগ-পোলাও, রাজ্জাক আর নীরব হোটেল নিয়ে উৎসাহী থাকতাম। আমার সূর্যসেন হলের বন্ধুদের সাথে মানে আজাদ, নাজমুল, পলাশ, জাহাঙ্গীর, মাহবুব, তারেক ওদের সাথে আড্ডা আর আলোচনা হতো রাতের খাবার টেবিলে। (আহ! কি দিন ছিল আলোচনা আর সমালোচনার...!!)

যাই হোক, ২০০৩ সাল শুরু হয়ে গেলো, সূর্যসেন হলে শীতের রাতে আড্ডা চলছিল রাত ১২.০০ টা পর্যন্ত। আবার কুয়াশা ঘেরা সকালে আমরা হলের গেটে ভাপা পিঠা দিয়ে ব্রেক-ফাস্ট করছিলাম।

একদিন বিকেলে আমার সহপাঠী বন্ধু মাসুদ ফোন করে বলল, চলো বন্ধু সি.পি.ডি. (Center for Policy Dialogue) যাই। আমি বললাম কেন? ও বলল, চলো একটা ইন্টারভিউ আছে। তারপর আমি আর মাসুদ হন্তদন্ত হয়ে নীলক্ষেত গিয়ে ছবি আর সিভি তৈরি করে রিক্সায় রওনা হলাম সি.পি.ডি. (Center for Policy Dialogue)। সেখানে ডাঃ অনন্য রায়হান (অর্থনীতিবিদ) আমাদের ইন্টারভিউ নিলেন তার ডি-নেট (http://dnet.org.bd/) নামক এন.জি.ও.(Non-Government Organization) তে কাজ করার জন্য।
পরের দিন সকালে মাসুদ আর আমি ফার্মগেট গেলাম, সেখানকার DataSoft Systems BD Ltd নামক অফিসে আমাদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস নিলেন মাহবুব জামান স্যার (DataSoft এর এমডি)। একটা মানুষ যে কি অসাধারণভাবে অনুপ্রেরণা দিতে পারেন সেটা তার কথায় বুঝলাম।

মাহবুব জামান স্যার প্রথমে আমাদের দেশের অর্থনীতির অবস্থা বোঝালেন, তারপর বললেন গত ২০০০ বছরে বাঙ্গালীরা পৃথিবীর কোথায় কোথায় কোন কোন বিষয়ে কি কি অবদান রেখেছে। তারপর বললেন, একটি জীবন আপনারা ইচ্ছে করলে স্বার্থপরের মতো কাটিয়ে দিতে পারবেন, সেই মেধা আপনাদের আছে। কিন্তু একবার চিন্তা করে দেখুন, এই আপনার মতো একজন স্বার্থপর মানুষকে বড় করার জন্য দেশের এতোগুলো লোক গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজারে, গৃহে-প্রবাসে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন আর রক্ত পানি করছেন...!? আমি অভিভূত হয়ে গেলাম...!!!

তারপর আসলো কাজের বিষয়, আমাদের কাজটা ছিল ক্ষুদ্র-ঋণ কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট। যেখানে ১ দিন ঢাকায় ওরিয়েন্টেশন, Microcredit নিয়ে দিন-ব্যাপি কর্মশালা, সবার সাথে পরিচিত হওয়া আর খাবার দাবার শেষে আমাদের দুজনকে সিলেট এলাকার ৪টি জেলার এন.জি.ও.(Non-Government Organization) এর ক্ষুদ্র-ঋণ কার্যক্রম পরিদর্শন করে তাদের আর্থিক অবস্থা আর সাহায্যের বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছিল।

আমাদের ক্ষুদ্র-ঋণ কার্যক্রম পরিদর্শন প্রতিবেদন ডি-নেট (http://dnet.org.bd/) কর্তৃক আয়োজিত, ডাঃ অনন্য রায়হান (অর্থনীতিবিদ) এর ব্যবস্থাপনায়, World Bank এর অর্থায়নে পরিচালিত হয়েছিল।

যাই হোক, দিন-ব্যাপি কর্মশালার দ্বিতীয় দিন মাসুদ আর আমি প্রথম অফিসের কাজে আমাদের জীবনের প্রথম সিলেট ভ্রমণ শুরু করলাম। মাসুদ আর আমি কমলাপুর রেলষ্টেশন থেকে সিলেট রওনা হলাম। আমাদের সীটের সামনের সিটে বসেছিল, নিপুন নামের এক ম্যাডাম, যার ছিল তিন/চার বছরের একটি মেয়ে। সে আমার সাথে দুষ্টামি করতে করতে বার বার চকোলেট, বিস্কিট, চিপস আর ফলমুল সিটের পেছনে (আমার দিকে) ফেলে দিচ্ছিল...!!

নিপুন ম্যাডাম, আমাকে বলল, তোমার নাম কি? আমি বললাম। সে বলল, কি করো? আর কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, আমি আর মাসুদ ঢাবি থেকে ফিন্যান্স বিভাগে বিবিএ পরীক্ষা শেষে একটা এনজিও’র কাজে হবিগঞ্জের মিরপুর যাচ্ছি। নিপুন ম্যাডাম, বলল, তার নাম নিপুন, তিনি ৩ বছর আগে ঢাবি থেকে ভুগোল বিভাগে পড়াশুনা শেষ করেছেন। তার স্বামীর নাম মামুন কাদের, ডেপুটি ম্যানেজার, চাঁদপুর চা বাগান (ডানকান কোম্পানি), চুনারু ঘাট, হবিগঞ্জ। তার জন্য গাড়ি রেলষ্টেশনে অপেক্ষায় আছে আমি আর মাসুদ তার বাসায় গিয়ে দুপুরে খেয়ে, বিকেলে চা বাগান দেখে, তারপর হবিগঞ্জের মিরপুর যেতে পারি। তার বাসা থেকে আমাদের এনজিও’র অফিস কাছেই। এমন সুযোগ কি হাত ছাড়া করা যায়...!!! মাসুদ আর আমি রাজি হয়ে গেলাম।

নিপুন ম্যাডামের বাসায় গিয়ে বুঝলাম, সে কেনো আমাদের এতো খাতির করলেন...? যারা চা বাগানে থাকেন তাদের কোন প্রতিবেশি নেই, চারপাশে আদিবাসি যারা থাকে তাদের সাথে তারা মেশেন না। চা বাগান দেখা আর ভাল খাবার ছাড়া কোন বিনোদনের ব্যবস্থা তাদের নেই (তখন চা বাগানে মোবাইল নেটওয়ার্ক আর ডিস টিভির ব্যবস্থা ছিলো না)।

মাসুদ আর আমি নিপুন ম্যাডামের বাসার গিয়ে রীতিমত বোকা হয়ে গেলাম, একটি পরিবার আমাদের দেশের মতো গরীব দেশে এতো জমিদারের মতো থাকে...! ৬/৭ জন কর্মচারী সারাদিন বাসার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, খাবার দাবার আর অন্যান্য কাজ করতে ব্যাস্ত...! দুপুরে খাবার খেয়ে সামান্য বিশ্রাম নিলাম তারপর চা বাগানের বাড়ীটাকে ঘুরে ঘুরে দেখলাম...! বিকেলে নিপুন ম্যাডামের স্বামী মামুন ভাইয়ের সাথে চা বাগান ঘুরে দেখলাম, ছবি তুললাম, সে আমাদের বাস ষ্টেশনে পৌঁছে দিলো, আবার দেখা হবে বলে বিদায় নিলাম...। যেখান থেকে রিক্সায় আমরা আমাদের এনজিও’র অফিসে চলে গেলাম।

এনজিও’র নামটা ছিল সম্ভবত মিরপুর যুব উন্নয়ন সমিতি (মিযুউস) সেখনে রাতে থাকলাম, শীতের সকালে সিলেটের গ্রাম দিয়ে হাটা হাটি করলাম। সকাল ১০.০০টার পর সাইট ভিজিটে গেলাম, ক্ষুদ্র-ঋণ কার্যক্রম দেখলাম, গরীব ক্ষুদ্র-ঋণ গ্রহীতাদের সাথে কথা বললাম, তাদের বাড়ী/ঘর দেখলাম, চিকিৎসা/শিক্ষার খোঁজ নিলাম। তারপর এনজিও‘র প্রধান কর্মকর্তা (ইডি) আর প্রধান ঋণ কর্মকর্তার সাথে কথা বলে প্রতিবেদনের তথ্য লিখে নিলাম।

যাই হোক, অফিসের কাজ মানেই ক্ষুদ্র-ঋণ কার্যক্রম দেখা, এনজিও‘র প্রধান কর্মকর্তা (ইডি) আর প্রধান ঋণ-কর্মকর্তার সাথে কথা বলে প্রতিবেদনের তথ্য লিখে নেওয়া। সেই সময় আমরা আরও যে এনজিও ভ্রমণ করেছিলাম তার একটার নাম ছিল শাপলা, একটার নাম ছিল ভারড (VARD), আমরা ছাতকের একটা এনজিওতে গিয়েছিলাম, নাম মনে পড়ছে না...!?

সেই ভ্রমণের সময় মাসুদের এক আত্মীয় (চাচাতো/খালাতো বোন হবে) থাকতো জাফলং শহরে। সে আত্মীয় বাড়ীতে মাসুদের সাথে বেড়াত গেলাম। জীবনের প্রথম তামাবিল সীমান্ত আর জাফলং দেখলাম। মাসুদের কাজিনের স্বামী ছিল জাফলং শহরের একটি স্কুলের শিক্ষক। সেই স্কুলের পেছন দিয়ে বয়ে গেছে সে বিখ্যাত জাফলং-ডাউকি পয়েন্টের দিকে পিয়াইন (Piyain River) নদী। সে নদীতে মাসুদ, মাসুদের বোনের স্বামী আর আমি স্নান করেছিলাম। ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পানিতে সেদিন আরও স্নান করেছিল, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিখ্যাত খাসি উপজাতি ছেলেমেয়েরা। সেই শীতের দুপুরে শীতল স্বচ্ছ পানিতে স্নান করার আনন্দ ছিল ...একটা উৎসবের মতো... !!!

এখনও প্রতিবছর যখন সিলেট যাই তখন মাসুদকে মনে পড়ে। মাসুদের সাথে সিলেট ভ্রমণ ছিল আমার জীবনে প্রথম সিলেট ভ্রমণ আর চাকরীটা ছিল প্রথম চাকরী। সেই ০২ ডিসেম্বর ২০০৯ সালের ঈদের ছুটিতে মাসুদ গ্রামের বাড়ি নারিন্দা থেকে স্কুটারে টাঙ্গাইল যাবার পথে এক্সিডেন্টে মারা গেছে (ইন্না নিল্লাহি...রাজিয়ুন)।

এখনও আমার বন্ধুরা যখন আমার সাথে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলে, চাকরী জীবনের স্মৃতি নিয়ে কথা বলে, আমার ভীষণ একা লাগে...। বার বার জীবনে প্রথম বার সিলেট ভ্রমণ আর মাসুদের কথা, মনে পরে...।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:১৫

সুমন কর বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণ পড়লাম এবং আপনার বন্ধু মাসুদের জন্য খারাপ লাগল।

তা এখন কোথায় আছেন?

২০ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৭

খোরশেদ খোকন বলেছেন: সুমন কর ভাই, স্মৃতিচারণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এখন আমার ৭ নাম্নার চাকরী চলছে... হা হা হা।
আমি ইউসিবিএল ব্যাংকে কাজ করছি। ভাল থাকবেন, শুভেচ্ছা।

২| ২১ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৬

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারনমুলক পোস্ট। প্রাঞ্জলভাবে লিখেছেন। আপনার বন্ধুর কথা জেনে খারাপ লাগছে। আল্লাহ উনাকে বেহেস্ত নসীব করুক।


আপনি মিয়া ইউসিবিএল ব্যাংকে আছেন, আমাদের জন্য টিকিট কাটার একটা ভালো ব্যবস্থা করে দিতেন!! :P :P

২১ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:০৭

খোরশেদ খোকন বলেছেন: কাল্পনিক_ভালোবাসা ভাই আপনি আমার লেখা পড়েছেন জেনে ভাল লাগছে। ধন্যবাদ।
হ্যা, আমি মাসুদকে খুব মিস করি।
হ্যা আমি ইউসিবিএল ব্যাংকে সারে তিন বছর যাবত আছি।
আমি কিন্তু ঢাকার বাইরে চাকরী করি...!
আমার পরিবারের জন্য আমি নিজেই টিকিট সংগ্রহ করতে পারি নাই ;(
ভাল থাকবেন।

৩| ২১ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৫

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আপনার প্রথম চাকুরীর এই চমৎকার স্মৃতিচারণ মনছুঁয়ে গেল। আপনার সাবলীল বর্ণনা করার ক্ষমতা দারুণ লেগেছে।

আপনার বন্ধুর অকাল প্রয়াণ ব্যাথিত করেছে। আল্লাহ্‌ তাকে জান্নাত নসীব করুন।

ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।

২১ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:০৯

খোরশেদ খোকন বলেছেন: বোকা মানুষ বলতে চায়, ভাই আপনি আমার লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন জেনে আনন্দ লাগছে। শুভেচ্ছা।
জি, আমি মাসুদকে খুব মিস করি।
আপনিও ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.