![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।
পর্বঃ-০২ (আমাদের গ্রাম)
----------------------------
আবারও একটু ভুমিকা করে নেই। আপনাদের নিশ্চয়ই আমার মতো দাদার বাড়ী, নানার বাড়ী আর বাবার চাকরীর জন্য সরকারী বাসা নিয়ে অনেক শৈশব স্মৃতি আছে!? এখনো নিশ্চয়ই আপনাদের শৈশবকে খুব মনেপড়ে, আপনাদের ইচ্ছে করে শৈশবকে শক্ত করে বুকের কাছে ধরে রাখতে...।
আমি স্কুলের ছুটিতে গ্রামে দাদার বাড়ীতে বেড়াতে গেলেও বড়চাচাকে তেমন একটা পেতাম না। বড়চাচা আমার বাবার চাইতে বয়সে প্রায় ১৭ বছরের বড় (তিনি এখনো জীবিত আছেন আর তার সাথে আমার মাঝে মধ্যেই ফোনে কথা হয়!)। আমার বাবা চাকরীতে চলে যাবার আরও অনেক আগে বড়চাচা আমাদের গ্রামেই বিয়ে করে নতুন বাড়ীতে চলে যান, বড় চাচার নতুন বাড়ীটা চাচীর বাবার বাড়ীর ঠিক দক্ষিন দিকে। আমাদের গ্রামের পূর্ব-দক্ষিন দিকের সেই বাড়ীতে বড়চাচা তার পরিবার নিয়ে এখনো বসবাস করছেন।
সেই সময়, রোজী আপা আর আমি বিকেল হলেই বড়চাচার বাড়ী বেড়াতে যেতাম। বড়চাচার দুইছেলে আর দুইমেয়ে। তার ছোটমেয়ে (নাম কানিজ) আমার দুই বছরের ছোট। তাছাড়া বাকী দুইছেলে আর একমেয়ে আমার বড়বোন আর আমার চাইতেও বয়সে বড়।
বড়চাচার সাথে আমার সম্পর্ক বন্ধুর মতো। তিনি কথা বলতে খুব পছন্দ করেন। তিনি আমাকে আমাদের গ্রাম আর আমাদের পূর্ব পুরুষ সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছেন...।
আমাদের গ্রামটা আসলে যমুনা নদীর পাড়ে ভেসে উঠা একটা চর। বহুদিন আগে সম্ভবতঃ এই গ্রামের কোন অস্তিত্বই ছিল না। আমাদের পূর্ব পুরুষরাও এই গ্রামে ছিলনা। টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর থানার চর গাবসারা এলাকা থেকে আমার দাদা ব্রিটিশ আমলে কদিম হামজানি গ্রামে আসেন।
সেই ব্রিটিশ আমলে চর গাবসারা এলাকায় গ্রামবাসীর জমি-দখল, পাল্টা-দখল কিংবা অন্য কোন কারনেই হোক এক ব্যক্তির অপমৃত্যু হয়। গ্রামের একপক্ষের লোকেরা অন্যপক্ষের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ পুলিশের থানায় (ময়মনসিংহ কিংবা টাঙ্গাইল হবে) অভিযোগ দায়ের করে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল তাদের মধ্যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে দাদার বাবার নামটাও ছিল।
যাই হোক, সেই সময় ব্রিটিশ পুলিশ ছিল মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। কেউ অভিযোগ করলে, বিবাদী পক্ষ থানা-পুলিশ কিংবা উকিলের কাছে না গিয়ে, পালিয়ে থাকার পথটাই বেছে নিতো। আমার দাদার বাবা সেই সময় পালিয়ে থাকার পথটা বেছে নিয়ে গভীর রাতে একমাত্র ছেলে-সন্তান আর স্ত্রীকে রেখে আসামে পালিয়ে যায়। (তারপর তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি...!?)
এদিকে নাবালক ছেলে (আমার দাদা) আর তার গৃহিণী মা উপার্জনের কোন পথ না পেয়ে চরম আর্থিক সমস্যায় পড়ে যায়। অন্যদিকে দাদার বাবার আসাম চলে যাওয়াতে সে গ্রামে তাদের টিকে থাকাও দিন দিন অসম্ভব হয়ে ওঠে। দাদার মায়ের ভাগ্যে কি ঘটেছিল...!? (সেটা আমি জানতে পারি নাই...!?)
দাদা তার নাবালক বয়সেই একদিন ক্ষুধার জ্বালায় দু’চোখ যেদিকে যায় হাটতে থাকেন...। হাটতে হাটতে যমুনা নদীর পাড়ে কদিম হামজানি গ্রামে চলে আসেন। এক কৃষক তার বাড়ীর ফেরার পথে ক্লান্ত, অভুক্ত একটি নাবালক ছেলেকে (দাদাকে) দেখে মায়ায় পড়ে যায়। সেই কৃষক দাদাকে তার বাড়ীতে নিয়ে যায়, খাবার খাওয়ায় আর আশ্রয় দেয়। দাদা সেই বাড়ীতে সেই কৃষকের সাথেই সুদীর্ঘ বারোটা বছর থাকেন আর কৃষি কাজ করে যান...।
একসময় সেই কৃষক আর তার স্ত্রী আমার দাদার সততা, কঠোর পরিশ্রম আর সহজ সরল জীবন-যাপন দেখে দেখে একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যায়। কৃষকের একমাত্র মেয়েকে তারা অন্য বাড়ীতে বিয়ে দিতে গিয়ে আর এগিয়ে যেতে পারেন না; কোথায় যেন একটা পিছুটান খুঁজে পান...। তারা মনে মনে এমন একটা মানুষকে খুঁজতে থাকেন, যে আসলে তাদের মেয়েকে তাদের অবর্তমানে সুখে-শান্তিতে রাখবে। এক সময় তারা তাদের নিজের ঘরের অনাথ ছেলেটাকেই একমাত্র মেয়ের বর হিসেবে চিন্তা করেন...। তারপর দাদার সাথে সেই কৃষকের একমাত্র মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়...! দাদা বিয়ের মাধ্যমেই কদিম হামজানি গ্রামে চিরদিনের জন্য স্থায়ী হয়ে যান...।
২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৫৫
খোরশেদ খোকন বলেছেন: দাদার মায়ের ভাগ্যে কি ঘটেছিল...!? (সেটা আমি জানতে পারি নাই...!?
আপা, বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের জীবন খুব অসহায় ও ভয়াবহ।
আমি মনে হয় কোন দিনই জানতে পারবো না, তার ভাগ্যে কি ঘটেছিল। আমি সত্যিই দুঃখিত। লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:২৫
এস কাজী বলেছেন: ভাল লাগল। আমরা বাবার বড় ভাইকে জেঠা বলি। আপনাদের ওইদিকে কি চাচা বলে?
২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৫৯
খোরশেদ খোকন বলেছেন: কাজী ভাই, আমাদের টাঙ্গাইলে বড়চাচা (মুসলমানরা) কিংবা বড়কাকা (হিন্দুরা) বলে।
লেখাটা পড়েছেন জেনে ভাল লাগছে। শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:০১
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনার দাদার মায়ের কথা খুব জানতে ইচ্ছে করছে।