নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দিনযাপনের পদাবলী

কিবরিয়াবেলাল

কবিতা ভালবাসি ,ভালবাসি মানুষ আর প্রকৃতি ।

কিবরিয়াবেলাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানবীয় সম্পর্কের স্বরূপ ও মানব জীবনে এর প্রভাব

১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৬:৩৫

মানুষ পারষ্পরিক এক জটিল সম্পর্কের জালে আবদ্ধ । মানুষের এই সম্পর্ক প্রধানত দুই ধরনের ; একটি রক্তের , অন্যটি আত্মার ।সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই সম্পর্কের প্রভাব অপরিসীম ।এদের প্রভাবের স্বরূপ জানা থাকলে যথার্থভাবে সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টি করা ও তার সন্মান রক্ষা করা সহজ হবে ।

এক আদমের রক্ত সমগ্র বিশ্বমানবের শরীরে প্রবাহিত ।তবুও আমরা এখানে রক্তের সম্পর্ককে একটি বিশেষ সীমায় বাঁধছি ।এখানে রক্তের সম্পর্ক দাদার ও নানার পক্ষের নিকট উত্তরসূরিদের বুঝাবে ।কারণ , নিকটতম রক্তসম্পর্কীয় ব্যক্তিগণ হচ্ছেন দাদা, দাদি এবং নানা , নানি এবং তাদের সন্তানেরা ।ব্যক্তি তার জন্মের জন্য তার মা-বাবার কাছে ঋণী ।রক্তের সম্পর্কীয় নিকটতম ব্যক্তি হচ্ছেন ব্যক্তির মা-বাবা । এরা শিশুকালথেকে ব্যক্তিকে লালন-পালন করে বড় করে তোলে ; এজন্য ব্যক্তি তার জন্মঋণ এবং সেবাদানের জন্য মাতাপিতার নিকট দায়বদ্ধ ।অন্যদিকে আত্ম-সম্পর্কীত ব্যক্তির বিস্তার বিশ্বব্যাপী ।রক্তের সম্পর্কীত ব্যক্তিগণ এক অলিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ ; যা তাদের ঐক্যবদ্ধ চেতনার কারণ ।আত্ম-সম্পর্কীত ব্যক্তিগণ চুক্তির মাধ্যমে স্বার্থগত ঐক্যের কারণে কিংবা পারষ্পরিক সম্পর্কের টানে পরস্পরের নিকটবর্তী হয় এবং ধীরে ধীরে সৃষ্টসম্পর্কের ভীত মজবুত হয় ।আসলে এক অবিচিন্ন স্বার্থের মোলিক এক্য আত্মসম্পর্কের মূল কারণ ।উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় , একজন অচেনা আমেরিকান যুবকের সাথে একজন বাংলাদেশির আত্মসম্পর্ক সৃষ্টি হতে পারে ; যদি তাদের মধ্যে মানসিক ঐক্য বিদ্যমান থাকে ।শিকাগোর শহীদ শ্রমিকের স্মরণে তাবৎ পৃথিবীর শ্রমিক শোক প্রকাশ করে , একই শ্লোগানে এগিয়ে যায় ।এ জন্য বলা যায় , আত্মসম্পর্ক দেশ-কাল-ধর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত ।এই দুই সম্পর্কের সূত্র ধরেই মানুষ কাজ করে ; বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে । আর এর মাধ্যমে মানুষের জীবন যাত্রায় গতি আসে ।এ গতির যৌক্তিক রূপ জীবনে স্বস্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অনিবার্যও বটে ।কারণ , ব্যক্তি সামাজিক জীব হিসাবে বেড়ে ওঠার জন্য সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ঋণী ।
রক্ত-সম্পকে কোন প্রকার রহস্যম্যতা নেই ; ফলে তা সহজে বোঝা যায় , ব্যাখ্যাও করা যায় ।আত্মার সম্পর্ক আত্মার সাথে আত্মার সম্পর্ক ; এই সম্পর্ক ব্যক্তির পুরো ব্যাক্তিত্বের উপর নির্ভরশীল ।ব্যাক্তিত্বের পার্থক্যের কারণে এটা ব্যক্তি নিরেপেক্ষ ।কিন্তু এই সম্পর্কের মৌলিক স্বরূপ একই ।
রক্তের সম্পর্ক অনিবার্য ; বংশ পরম্পরায় চলে ।এখানে না আছে সাধ-সাধ্য – না আছে সাধনা ।আত্মসম্পর্ক অনিধার্য , তাই এর সবটুকুই অর্জনের বিষয় ।রক্তসম্পর্কে পরিমাণগত দিকে মাপা যায় ; গুনগত দিকে বিচার করা যায় ।কিন্তু আত্মসম্পর্ককে পরিমাণগত অথবা গুণগতিকে বিচার করা কঠিন ।এ দিকটা অনিবর্চনীয় বোধে আক্রান্ত । আত্মসম্পর্ককে নাবোধক বাক্যে যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা যায় ।অর্থাৎ এ সম্পর্কের ফলে কী হয় না তা বলা যায় ; কিন্তু কী হয় তা বলা দুঃসাধ্য । রক্তের সম্পর্ক গতিশীল রাখবার ক্ষেত্রে যে যুক্তি তা আবেগ নির্ভর ও সার্বজনীন ; কিন্তু অখণ্ডনীয় এবং অপরিবর্তনশীল ।আত্মসম্পর্ক সৃষ্টি ও জীবন্ত রাখবার ক্ষেত্রে আবেগ ও যুক্তির যুগপৎ উপস্হিতি প্রয়োজন ।মূলত , আত্মসম্পর্ক সার্বজনীন নয় ; বরং বলা যায় সর্বজনীন ।রক্তের সম্পর্ক উন্নয়নে ও মজবুত রাখায় বস্তুত উপাদানই প্রাথমিক পর্যায়ে প্রধান ভূমিকা পালন করে ।পরিবারকে কেন্দ্র করে রক্তসম্পর্কের জগত গড়ে উঠে ।মানুষকে মা-বাবা, ভাই-বোন , সন্তান নিয়ে সমাজে বেঁচে থাকতে হয় ।বেঁচে থাকার জন্য খেতে পরতে হয় ।এর সংস্হান দেয় পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ।তিনি যদি নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন তাহলে তিনি পরিবারের সদস্যদের সমর্থন হারান ।
সাফল্যের সাথে পরিবার প্রতিপালন করা রক্তসম্পর্কিত পরিবার প্রধানের দায়িত্ব আর নির্ভরশীল সদস্যদের দাবী ও অধিকার ।এ দাবী আর অধিকার পূরণে ব্যর্থ হলে ব্যক্তির সাথে পরিবারের সম্পর্কের দৃঢ়তায় টান পড়ে ।অন্যদিকে , আত্মসম্পর্ক ধরে রাখার জন্য চাই সময় । এখানে লক্ষ্যনীয় যে আত্মার চাহিদা বেশী এবং ব্যপক ।অর্থকে আমরা জয় করতে পারি শরীরের উদ্যমতায় , ধরে রাখতে মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে , মানি ব্যাগে , ব্যাগে কিংবা পুস্তকের ভিতরে ।কিন্তু সময় ! তাকে শাসন করার , ধরে রাখার সাধ্য কারো নেই ।এজন্য আত্মসম্পর্কের স্হায়িত্ব রক্ত সম্পর্কের চেয়ে বেশি কার্যকর ।
রক্ত সম্পর্ককে এড়িয়ে যাওয়া যায় কিন্তু অস্বীকার করা যায় না ; এড়িয়ে গেলে ব্যক্তি সমাজে দূর্বলদের দলভুক্ত হবে – অস্বীকার করলে শত্রু দ্বারা পরিবেষ্ঠিত হবে, জীবন হয়ে উঠে দূর্বিসহ ,শান্তিহীন , স্বস্তিহীন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ।এড়িয়ে গেলে চোখের জ্যোতি কমে যায় , চেহারার কমনীয়তা হ্রাস পায় , রাত্রিকাটে নিদ্রাহীন দূর্ভাবনায় ।
রক্তের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে জবাবদিহি করতে হয় সমাজের কাছে । আত্মসম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে জবাবদিহি করতে হয় নিজের কাছে ।রক্তের সম্পর্ক চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হলে একঘরে হবার সম্ভাবনা থাকে ।অন্যদিকে
আত্মসম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমাজ আপনাকে একঘরে করবেনা বটে ; কিন্তু আপনি নিজের ভুবনে একঘরে হয়ে পড়বেন ; যে একাকীত্ব বড়ই নির্মম আর বেদনাবিদূর ।
কখনো কখনো রক্তসম্পর্কীয়দের সাথে আত্মসম্পর্কীয়দের তীব্র দ্বন্ধ সৃষ্টি হয় ।ব্যক্তিকে তখন একটিকে অগ্রাধিকার দিতে হয় ।ঐ অবস্হায় ব্যক্তিকে
রক্তসম্পর্কীয়দের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত ।কারণ , আত্মসম্পর্ক কোন কালেই ধ্বংস বা বিচ্ছিন্ন হয় না ।একথা সত্য যে আত্মসম্পর্ক সৃষ্টি হলে সহজে ধ্বংস হয়না । যেহেতু তার সৃষ্টি বহুদিনের সাধনায় ।
রক্তের সম্পর্ক আমাদের মধ্যে সমাজ চেতনার সৃষ্টি করে ।সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার সূত্রপাত করে ।আত্মসম্পর্ক সৃষ্ট সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় পরিপক্কতা আনে ।এ পর্যায়ে ব্যক্তি পারিবারিক গণ্ডির বাহিরে এসে নতুন পরিচয়ে পরিচিত হয় ।জানাজানির নতুন ক্ষেত্রে পা দেয় , নবতর কর্তৃপক্ষের অধীনতা মেনে নেয় - যা পরিচিত পারিবারিক নিয়ম ও নীতির চাঁচের উপর নতুন কিছু ।অতএব বলা যায় , রক্ত সম্পর্কের ভিত্তির উপর আত্মসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত ।চূড়ান্ত পরিণতির ক্ষেত্রে আত্মসম্পর্ক রক্ত সম্পর্কের অনুগামী নয় ; সহগামী ।অবশ্যই এটা জানা আবশ্যক যে , বহুক্ষেত্রে আত্ম-সম্পর্কের শক্তিশালী রূপ রক্তসম্পর্কীয়দের মাঝে দেখা যায় ।
যেসব দেশ বা রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে সফল বলে প্রচার করা হয় – সেসব রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে রক্ত সম্পর্ককে আত্মসম্পর্কের মমতায় বাঁধার প্রবণতা হ্রাস পায় ।আধুনিক রাষ্টকাঠামোয় নগরায়নের ব্যপক প্রসারের ফলে মানুষের মধ্যে আত্ম-সম্পর্কের দৃঢ়তার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে ; যার মূলে রয়েছে একক পরিবার গঠনের প্রবণতা, আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা ও কর্মের অযৌক্তিক বিস্তার ।পূর্বে পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্য পরিবার প্রতিপালনের ভার গ্রহণ করত এবং দায়িত্ব পালনে একধরনের নৈতিকতাবোধ কাজ করত ; সাথে সাথে ঐতিহ্য ও প্রথাগত দায়বদ্ধতাও ছিল ।বর্তমানে নির্ভরশীল জনগণের বিশেষ করে বৃদ্ধদের দায়িত্ব রাষ্ট গ্রহণ করায় রাষ্টের সাথে জনগণের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ।এর ফলে ঐসব রাষ্টীয় ব্যবস্হা অধিকাংশ জনগণের সমর্থন পাচ্ছে ।কিন্তু এক্ষেত্রে রাষ্টীয় ব্যবস্হার একটা মৌলিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে ; যাতে দেখা যায় , রাষ্ট নির্ভরশীল ব্যক্তির মানসিক প্রয়োজন মেঠাতে ব্যর্থ ।এখানে ব্যক্তি একা নিতান্ত একা ।রাষ্টযন্ত্রে আছে আইন – যেখানে মনের ভার বইবার সুযোগ নেই।এ সীমাবদ্ধতা ব্যক্তিকে বার্ধক্যে স্পষ্টত নিরাপত্তাহীন করে দেয় ।ব্যক্তি তখনই নিরাপ্ততাহীনতার বোধ থেকে মুক্ত হবে যখন সে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে আত্মিক সম্পর্কের উদারতা অনুভব করবে এবং তাতে রক্ত সম্পর্কের প্রথাগত দায়বদ্ধতা যুক্ত হবে । কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষে তা করা অসম্ভব ।এ সমস্যা থেকে উত্তরণে আমার সুপারিশ হচ্ছে ‌- মানসিক শান্তি ও স্বস্তি যদি গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে যৌথ পারিবারিক কাঠামো বিকল্পহীন ।
সেবাদান আর গ্রহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবী এগিয়ে চলছে । এ প্রক্রিয়ার সাফল্যের মাত্রাই অগ্রগতির মাপকাঠি । এই সাফল্যের জন্য , সমাজে মানুষের মত বেঁচে থাকার জন্য রক্ত সম্পর্কের দায়বদ্ধতাকে আত্মসম্পর্কের দৃঢ়তায় , মমতায় বেঁধে রাখতে হবে ।তাহলে মানুষের আবাসস্হল হিসাবে পৃথিবী হয়ে উঠবে আরও সুন্দর - আরও আকর্ষনীয় ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৭:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


"এক আদমের রক্ত সমগ্র বিশ্বমানবের শরীরে প্রবাহিত । "

এখান থেকে যে ভাবনার শুরু, সেই ভাবনার শেষ কোথায়?

১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:১৬

কিবরিয়াবেলাল বলেছেন: এক সুসম সমন্বয়ের প্রত্যাশা যত দিন না পূর্ণ হয় । ধন্যবাদ সুন্দর অনুভূতির জন্য ।

২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৭

প্রামানিক বলেছেন: আধুনিক রাষ্টকাঠামোয় নগরায়নের ব্যপক প্রসারের ফলে মানুষের মধ্যে আত্ম-সম্পর্কের দৃঢ়তার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে ; যার মূলে রয়েছে একক পরিবার গঠনের প্রবণতা, আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা ও কর্মের অযৌক্তিক বিস্তার ।

বাস্তবতার নিরীখে অনেক সুন্দর লেখা। ধন্যবাদ

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৯

কিবরিয়াবেলাল বলেছেন: আপত রসহীন লেখাটি পড়ার জন্য কৃতজ্ঞ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.