নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নুজ্জাত জেরিন

যাহরা আফরিন

নুজাত জেরইন

যাহরা আফরিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চেতনার পরিবর্তন

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:২৮

একটা সময় ছিল যখন আমি ছেলেদের জীবন যাপন পদ্ধতি কে ভীষণ হিংসে করতাম। মনে হতো “ইশ, ছেলেদের জীবনটা কত বৈচিত্র্যময়! কি অবাধ স্বাধীনতা!! যা ইচ্ছা পরতে পারে, যেখানে ইচ্ছে যেতে পারে!! তাদের কত সুযোগ সুবিধা, সব জায়গাই তাদের priority। ছেলেদের কে সবাই ভালোবাসে, কত আরামের জীবন তাদের! বাসায় তাদের কোন কাজ করতে দেয়া হয়না, কত সম্মান তাদের সব জায়গায়! আর মেয়েদের কত কষ্ট, সব জায়গাই তারা পরাধীন! ছেলেরা যা করে মেয়েদের তা করতে দেয়া হয়না...” ইত্যাদি ইত্যাদি। মনে পড়ে একদিন মাঝরাতে আমার বাচ্চাকে ঘুম পারাতে গিয়ে আমি যখন হয়রান হচ্ছিলাম এবং আমার স্বামীকে তার আরামের ঘুম নিয়ে হিংসামুলক কথা বলছিলাম, সে তখন আমাকে বলেছিল, “তুমি কি জানো তুমি কতটা নেকী অর্জন করছো? যেই নেকীর বিন্দুমাত্র অর্জন আমার দ্বারা সম্ভব না, উল্টো আমারই উচিৎ তোমাকে হিংসে করা” এখন মনে পড়লে হাসি পায়, সাথে লজ্জিতও হই। কত অজ্ঞ আমি! এখনো যে কত কিছু জানার আছে!! জানার পিপাসা যেন দিন দিন বাড়ছে। সে যাই হোক। আমার এই ধারণার পিছনে অবশ্যই সমাজের কিছু ভুমিকা ছিল! আমাদের সমাজও যে আমার মতই অজ্ঞ! সমাজ তো আর বদলায়না একদিনে! তবে আমার ভ্রান্ত ধারনা বদলেছে অনেকখানি। সেই সাথে বেড়েছে স্রষ্টার প্রতি আস্থা দ্বিগুন। এই সমাজ আমাকে মেয়েমানুষ/ নারী হিসেবে যতই অবমাননা করুক না কেন, আমার স্রস্টা তা করেননি। সেই সাথে আমি লজ্জিত “কেন আমাকে মেয়ে বানিয়েছেন” বলে কতবার স্রস্টার কাছে নালিশ জানিয়েছি একসময়। আমার স্বাধীনতা, আমার মুক্তি, আমার অধিকার যে অন্য জায়গায় তা আগে বুঝিনি!!
রাসূল(সাঃ)-এর একজন সাহাবী একটা শহরে ইসলামের বাণী প্রচার করতে গিয়ে খুব সুন্দরভাবে তার বক্তব্যকে উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি তোমাদের দাসের দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে দাসের প্রভুর দাসত্বের কাছে নিয়ে যেতে এসেছি।”
এই কথার মাঝেই এক মূল্যবান সম্পদ লুকানো আছে। এই কয়টা শব্দের মাঝে ক্ষমতার চাবিকাঠি ও মুক্তির একমাত্র সঠিক পথকে বলে দেয়া হয়েছে।
দেখুন, ঠিক যে মুহূর্তে আপনি বা আমি, স্রষ্টাকে ছাড়া অন্য যে কোন কিছুকে আমাদের সাফল্য, ব্যর্থতা, সুখ-দুঃখ কিংবা আমাদের মূল্য নির্ধারণের মানদণ্ড বানাই, আমরা এক নীরব কিন্তু ধ্বংসাত্মক দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ হয়ে পড়ি। যে জিনিসটা আমার আত্মমর্যাদা, সাফল্য, ব্যর্থতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে তা তখন আমাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। আর এটাই হয়ে ওঠে আমার প্রভু।
একজন নারীর মূল্যনির্ধারণকারী প্রভু সময়ের সাথে সাথে নানা রূপ নিয়েছে। নারীর মূল্য নির্ধারণের জন্য যে মানদন্ডগুলো গ্রহণ করা হয়েছে তার মাঝে সবচেয়ে প্রচলিতটি হলো পুরুষের মানদণ্ড। কিন্তু আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে, স্রষ্টা নারীকে যে সম্মান দিয়েছেন তা তাঁর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সাথে সম্পর্কিত – পুরুষের সাথে নয়। অথচ একজন নারী বাধ্য হয়েছে নিজের মুল্য নির্ধারণ করার জন্য পুরুষকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে। আর এটা করতে গিয়ে তার মধ্যে কিছু ভ্রান্ত ধারণা ঢুকে গিয়েছে। সে মেনে নিয়েছে যে পুরুষ হচ্ছে মানদণ্ড – আর তাই একজন নারী ততক্ষণ পর্যন্ত একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে অবিকল একজন পুরুষের মতো হচ্ছে।
যখন একজন পুরুষ তার চুল ছোট করে কাটছে, সেও চাইছে তার চুল ছোট করে কাটতে। যখন একজন পুরুষ সিগারেট টানছে বা মদ পান করছে, সেও চাইছে সিগারেট টানতে বা মদ পান করতে। বেশিরভাগ সময়ই এমনটি করতে চাওয়ার একমাত্র কারণ হলো সেই “মানদণ্ড”।
সে যা বুঝতে পারেনি তাহলো স্রষ্টা নারী ও পুরুষ উভয়কেই মর্যাদা দিয়েছেন তাদের স্বতন্ত্রে – তাদের অভিন্নতায় নয়। যখন আমরা পুরুষকে মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করে নেই তখন অনন্যভাবে মেয়েলি বিষয়গুলোকে নিকৃষ্ট মনে করতে শুরু করে দেই। স্পর্শকাতর হওয়া হয়ে যায় অপমানজনক, চাকরি-বাকরির পাশাপাশিই হোক বা সার্বক্ষনিকই হোক, মায়ের দায়িত্ব পালন করা হয়ে যায় তখন – অমর্যাদাকর । সুখে-দুঃখে নির্বিকার থাকা (যাকে পুরুষালি বলা হয়) ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা (যাকে মেয়েলি বলা হয়)– এই দুইয়ের যুদ্ধে প্রথমটাই আধিপত্য বিস্তার করে।
যখন আমরা মনে করি পুরুষের যা কিছু আছে ও তারা যা করে তা-ই শ্রেষ্ঠতর, তখন আমরা তা করতে অস্থির হয়ে উঠি। চিন্তা করি, যদি পুরুষদের এটা থাকে তাহলে আমরাও এটা চাই। কারও পার্থিব নেতৃত্বের অবস্থান আল্লাহর সাথে তার নৈকট্যকে ইঙ্গিত করে – এমন একটা ধারণাকে আমরা মেনে নিয়েছি।
কিন্তু একজন মুসলিম নারীর নিজেকে এভাবে ছোট করার প্রয়োজন নেই। তার জন্য আছে স্রষ্টার মানদণ্ড। তাকে মূল্য দেয়ার জন্য স্রষ্টা আছেন; তাকে মূল্য দেয়ার জন্য তার কোন পুরুষের প্রয়োজন নেই।
নারী হিসেবে আমাদের বিশেষ অধিকার দেয়ার পর যদি আমরা যা নই তা হতে চেষ্টা করি তবেই আমরা নিজেদের অপমানিত করব। নারী হিসেবে আমরা কখনোই সত্যিকার স্বাধীনতা অর্জন করতে পারব না যদি আমরা পুরুষদের অনুকরণ করা বন্ধ না করি, এবং আমাদের স্রষ্টা-প্রদত্ত স্বতন্ত্র সৌন্দর্যের মূল্য না দেই।
ছাড়াও, সমাজে আর এক “প্রভু” বিদ্যমান যা নারীদের মূল্য নির্ধারণ করে। আর তা হচ্ছে তথাকথিত সৌন্দর্যের মানদণ্ড। একদম ছোটবেলা থেকেই নারী হিসেবে সমাজ আমাদের এক স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেয়। আর সেটা হচ্ছেঃ “স্লিম হও। আবেদনময়ী হও। আকর্ষণীয় হও। আর তা না হলে … তুমি কিছুই না।”
তাই আমাদের বলা হয় মেক-আপ নিতে ও সুন্দর সুন্দর জামাকাপড় পড়তে, ফ্যাশন সচেতন হতে! সুন্দর হওয়ার জন্য আমাদের জীবন, আমাদের শরীর, আমাদের মর্যাদা বিলিয়ে দিতে শেখানো হয়। আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করি যে আমরা যত যা-ই করিনা কেন, আমাদের মূল্য শুধু ততখানিই যতখানি আমরা পুরুষদের সন্তুষ্ট করতে ও তাদের কাছে সুন্দর হতে পারি।
আমরা দাস হয়ে রই, কিন্তু তারা আমাদের বোঝায় যে এটাই স্বাধীনতা। আমরা হয়ে পড়ি মূল্যহীন কিন্তু তারা বলে যে এটা আমাদের সাফল্য। কারণ তাদের মতে, তোমার জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেকে প্রদর্শন করা, পুরুষদের কাছে, সবার কাছে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করা ও তাদের আকর্ষণ করা।
কিন্তু তোমার শরীর, তোমার প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে আরও মহৎ কিছুর জন্য। আরও অনেক মহৎ কিছুর জন্য।
আল্লাহ কোরআনে বলেছেনঃ ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন।’ (কোরআন ৪৯:১৩)
তাই তুমি সম্মানিত।
কিন্তু পুরুষদের মতো হওয়ার বা তাদের সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে না। নারী হিসেবে তোমার মূল্য তোমার কোমরের মাপ বা কতজন পুরুষ তোমাকে পছন্দ করে তার দ্বারা নির্ধারিত হয়না। মানুষ হিসেবে তোমার মূল্য আরও উঁচু মানদণ্ডে মাপা হয়ঃ সৎকর্ম ও তাকওয়ার মানদণ্ডে। তোমার জীবনের উদ্দেশ্য শুধু পুরুষের কাছে সুন্দর হওয়া থেকেও আরও মহিমান্বিত।
আমাদের সম্পূর্ণতা আসে আল্লাহর কাছ থেকে ও তার সাথে আমাদের সম্পর্ক থেকে। কিন্তু তারপরও, আমরা যখন একদম ছোট তখন থেকেই আমাদের শেখান হয় যে একজন পুরুষ এসে আমাদের সম্পূর্ণ না করা পর্যন্ত আমরা সম্পূর্ণ হব না। আমাদের শেখানো হয় যে আমরা নিরুপাই। যতক্ষণ পর্যন্ত না সিন্ডারেলার গল্পের মতো একজন রাজপুত্র এসে আমাদের উদ্ধার করছে। আমাদের শেখানো হয় যে আমাদের জীবন পুরোপুরি শুরু হবে না যতক্ষণ না স্লিপিং বিউটির কাহিনীর মতো কোনো প্রিন্স চার্মিং এসে আমাদের হাত ধরছে। কিন্তু বিষয় হচ্ছে কোন রাজপুত্র আমাদের সম্পূর্ণ করতে পারবে না। কোন বীর এসে আমাদের উদ্ধার করতে পারবে না। শুধু স্রষ্টা পারবে।
তোমার রাজপুত্র শুধুই একজন মানুষ। স্রষ্টা হয়ত তাকে তোমার সঙ্গী হিসেবে পাঠিয়েছে – কিন্তু তোমার রক্ষাকর্তা হিসেবে না। তোমার চোখের প্রশান্তি হিসেবে পাঠিয়েছে – তোমার ফুসফুসের অক্সিজেন হিসেবে না। তোমার অক্সিজেন আল্লাহর হাতে। তোমার মুক্তি ও পূর্ণতা তাঁর নৈকট্যের মাঝে – কোন সৃষ্ট জীবের নৈকট্যের মাঝে না। কোন রাজপুত্রের নৈকট্যের মাঝে না, কোন ফ্যাশন, সৌন্দর্য বা স্টাইলের মাঝে না।
তাই আমি আমার প্রিয় বোনদের বলব, উঠে দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে বল যে তুমি ফ্যাশন, সৌন্দর্য্য, তথাকথিত সমাজ বা পুরুষের দাস নও। তুমি শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র স্রষ্টারই দাস। আমি তোমাদের বলব তুমি জানিয়ে দাও যে তুমি শুধু পুরুষদের সন্তুষ্ট করতে আসনি; তুমি এখানে এসেছ স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করতে।
সুতরাং, কোথায় ও কিভাবে একজন নারী ক্ষমতায়নের সন্ধান পাবে এই প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পেয়েছি আমাদের রাসূল(সাঃ)-এর সাহাবীর উক্তির মাঝে।
আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, সত্যিকারের স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়ন নিহিত রয়েছে নিজেকে আর সব প্রভুর থেকে, আর সব মানদণ্ড থেকে মুক্ত করার মাঝে। যেখানে আমাদের স্রষ্টা আমাদের কে সব রকম অধিকার দিয়েছেন (শিক্ষা, অর্থ, সম্পত্তি, নিজ পছন্দ অনুযায়ী জীবনসঙ্গী নির্বাচন, স্ব-উপার্জন ক্ষমতা এবং স্ব-উপার্জিত অর্থ ব্যয়ের স্বাধীনতা আরো কত কি... যতই পড়ছি ততোই অবাক হচ্ছি আমার এতোদিনের মূর্খতার কথা ভেবে!)
মুসলিম নারী হিসেবে এই নীরব দাসত্ব থেকে আমাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। আমাদের মূল্য নিরূপণ করার জন্য সৌন্দর্য বা ফ্যাশনের মানদণ্ডের প্রয়োজন আমাদের নেই। সম্মানিত হওয়ার জন্য অবিকল পুরুষের মতো হওয়ার প্রয়োজন আমাদের নেই, এবং আমাদের রক্ষা করবে বা সম্পূর্ণ করবে এই আশায় কোন রাজপুত্রের অথবা সমাজের আর দশটা মানুষের অপেক্ষায় থাকার দরকার আমাদের নেই। আমাদের মূল্য, আমাদের সম্মান, আমাদের মুক্তি, আমাদের পূর্ণতা দাসের মাঝে নিহিত না।বরং, দাসের প্রভুর মাঝে নিহিত। দেরীতে হলেও আমি তা বুঝতে পেরেছি and I am proud to be an woman

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৭

অবনি মণি বলেছেন: দেরীতে হলেও আমি তা বুঝতে পেরেছি and I am proud to be an woman

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:২২

যাহরা আফরিন বলেছেন: চেতনার উদয় হোক

২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৮

জোয়ান অব আর্ক বলেছেন: আসলেই, মেয়েরা কেবল তাদের দায়িত্ব পালন করেই স্রষ্টার দেয়া সম্মান অর্জন করতে পারে, বাড়তি কোন বোঝা কাঁধে নিতে হয়না।

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:২৬

যাহরা আফরিন বলেছেন: হায়!! সেটাই বা ক'জন বুঝতে পারি যথাসময়ে!!

৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৫০

খায়রুল আহসান বলেছেন: চেতনার এই পরিবর্তন ইতিবাচক। + +
I am proud to be an woman -- :)

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:২৭

যাহরা আফরিন বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভাশিস রইলো :)

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:২৭

যাহরা আফরিন বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভাশিস রইলো :)

৪| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৯

রায়হানুল এফ রাজ বলেছেন: শুভ বুদ্ধি উদয়ের জন্য শুভকামনা।

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:২০

যাহরা আফরিন বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.