নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বয়সী বটের ঝিলিমিলি পাতা

কিটক্যট

নিতান্ত নগণ্য

কিটক্যট › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন ড্রোন ড্রাইভার ও আত্নহনন

১০ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:১০

I'm waiting in my cold cell, when the bell begins to chime.

Reflecting on my past life and it doesn't have much time.

'Cause at 5 o'clock they take me to the Gallows Pole,

The sands of time for me are running low.

গান বাজতেছে অবিরত । কেমন যেন একটা ফ্যাকাশে ভাব তার চেহারায়। নাহ, গান টাউ স্টপ করে দিলো । কেন যেন মনে হয় তার, এ পৃথিবীতে তার থাকা না থাকাতে বিশেষ কোন বিশেষত্ব নেই। মাঝেমাঝে সে থমকে দাঁড়ায়। ভাবনার জগতে আবিষ্ট থেকে অর্থহীন ভেবে ভেবেই তার দিন এর অনেক খানি পার হয়ে যায়। কাজ বলতে তার তেমন কিছু নেই । মাঝে মাঝে একটু সুপার কম্পিউটারে চোখ রাখা । আর গান শোনা বা গেইম খেলা । কিন্তু এতে কি , একজন মানুষের আল্টিমেট জীবন গ্রন্থিত হতে পারে? সে জানে, তার এসবে মাথাব্যথা হলেউ কিছু যায় আসে না কর্তৃপক্ষের। তার কাজ তাকে করতেই হবে । কারণ,এটাই তার সাথে চুক্তি হয়েছিল আজ থেকে ৫ বছর আগে।

২৬ বছর বয়সী এই যুবকটির নাম পিক্সেল । ইউএসএ এর স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি করেছে। ভার্সিটি লাইফ থেকেই রোবট ও কুয়াডকপ্টার বানানোতে অনেক নাম করেছিল সে । এরপর তাকে খুঁজে নেয় ইউ এস আর্মি । তাকে ড্রোন ড্রাইভার হিসেবে জব অফার করা হয়। তার আনন্দ আর ধরে না সে সময়। আজও তার সেই দিন গুলি মনে পড়ে। এখন মনে হয়, সেদিন চুক্তিতে সাইন করেই সে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুলটি সুনিপুণভাবে করেছে। এইতো কয়েকদিন আগে ইউএস ফোর্স ইরাকে হামলা চালালো। সেখানের কয়েকটা ড্রোন পিক্সেল একা কন্ট্রোল করেছে ।



এরপর বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেছে । আবারো ইরাকের আরেক শহরে পিক্সেল এর হামলা করার দায়িত্ব পড়লো। সে আবার তার ড্রোন নিয়ে প্রস্তুত হয়ে গেলো । সে যেন কেমন হয়ে গেছে । কোন কিছুতেই তার কিছু মনে হয় না । তার মনে born for kill এরকম একটা মনোভাব এসে গেছে । এবং সেই সাথে একগাদা ফ্রাস্ট্রেশন । কারণ, তার ঐ এপার্টমেন্ট ছাড়া আর মাঝে মাঝে ইউএস আর্মির পার্টি এবং মিটিং ছাড়া আর কিছুই নেই তার জীবনে ।

আজ সেই যুদ্ধের দিন । তার ড্রোন ইরাকে যাওয়ার জিও লোকেশন কমান্ড প্রাপ্ত হলো। এরপর বেশ খানিকটা সময় অপেক্ষা এবং তারপরেই সে কন্ট্রোল বক্স এর উপর একেরপর একে কমান্ড চাপতে লাগলো। তার দক্ষ কন্ট্রোলে ড্রোন থেকে নিক্ষিপ্ত বোমা / গুলি বর্ষণে মারা গেছে হাজারো নিরীহ নারী-পুরুষ-শিশু ।ধ্বংস হয়েছে অজস্র প্রতিষ্ঠান,বিল্ডিং । সৃষ্টি করেছে ধংসস্তুপ। একদিনের সাঁড়াশি আক্রমণেই বলা যায় ইরাকের সেই শহর এর ৮০% ধংস হয়ে গেছে ।



এতে ইউএস আর্মি অনেক প্লিস্ট নিজেদের যোদ্ধার উপর । তারা প্রতিটা ড্রোনের ইন্টিগ্রেটেড ক্যামেরা থেকে ভিডিও কালেক্ট করে হত্যা ও ধ্বংস এসব measure করে সেরা ড্রোন ড্রাইভার কে পুরষ্কৃত করলো। সেখানে নাম ঘোষণা হলো পিক্সেল এর । তারপর যথারীতি রাতের পার্টি । তারপর আবার যুদ্ধে নামতে হবে । তাদের অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি এবং বিচক্ষণ সব এক্সপার্টাইজ আছে বলে সবাই এইয় যুদ্ধ কে নেহায়াত অগ্রাহ্য করে পার্টি তে মনোনিবেশ করলো । কিন্তু তার আগে কৌতুহল বশত পিক্সেল ডেটা সার্ভার থেকে তার দুই ড্রোনের ক্যামেরা থেকে প্রাপ্ত ভিডিও কালেক্ট করার জন্য আবেদন করলো চিফ এর কাছে । affirmative আন্স তার ট্যাবলেটের চ্যাটার বক্সে ভেসে উঠলো। জানিয়ে দেওয়া হলো, তার স্কাই ড্রাইভে দেওয়া হয়ে গেছে ।

যাই হোক, পার্টি শেষে ঢুলুঢুলু চোখে ড্রাইভ করে বাসায় ফিরে এলো। এরপর কতক্ষন ঘুমায় সে জানে না ।ঘুম থেকে উঠে এক মগ কফি হাতে ভিডিও গুলা তার সামনের এক্স-রিয়েলিটি ডিস্প্লে তে প্লে করলো । সে প্রথম মিনিট পাঁচেক বেশ উদ্যম নিয়ে দেখছিলো। হঠাৎ দেখলো, ৪ বা ৫ বছর বয়সী এক বাচ্চাকে তার ড্রোন থেকে নিক্ষিপ্ত বোম মুহুর্তেই ছিন্ন ভিন্ন এক কংকালে পরিণত করলো । এই দৃশ্য দেখে সে আঁতকে উঠলো। তার মনে একটা প্রশ্ন মুহুর্তেই ঘুরপাক খেতে লাগলো, এ আমি কী করলাম !! তারপর সে এক দৃষ্টিতে তার কৃত ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে লাগলো । স্কুল ড্রেস পরিহিত শিশু থেকে শুরু করে বাচ্চা সহ মা কেউ ই পার পায় নি তার হত্যাকান্ড থেকে । সে সব কিছু দেখার পর নিজের কাছে নিজেকে চরম জঘন্য এক অপরাধী বলে মনে করতে থাকলো । ফুটেজ দেখার আগের ও পরের মানুষের মাঝে বিস্তর ফারাক । তার নিজেকে মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে । সামনে থাকা বিশাল কন্ট্রোলারে আঘাত করলো ।



এভাবে দুইদিন কেটে গেলো । সে ডিসিশন নিয়েছে, ড্রোন কন্ট্রোলার এর চুক্তি থেকে সরে আসবে । চিফ কে জানালে ,চিফ তার কথা রিফিউজ করে দেন। এরকম এক জন এক্সপার্টাইজ তার টিম থেকে বাদ যেন না পড়ে সে জন্য উনি দৃঢ সংকল্পিত। উপায়ান্তর না দেখে , পিক্সেল গা ঢাকা দিল । সে জানে, তাকে খুঁজে পাওয়া ওদের জন্য কানামাছি খেলা না । সে চায় না, আবার সে তার এই বিষাক্ত জীবনে ফিরে যাক ।কিন্তু তার কাছে মনে হলো, নিয়তি তাকে আবার সেখানে ফিরিয়ে নিতে যাচ্ছে । উপায়ন্তর না দেখে সে তার পকেট থেকে নাইটহক টা বের করে একটা হেডশট দিয়ে নিজেকে সারাজীবনের মতো ড্রোন ড্রাইভারের অভিশপ্ত জীবন থেকে সরিয়ে দিলো । আগে থেকেই তার পকেটে লিখা ছিলো একটী সুইসাইডাল নোটঃ

আমি একটি মানুষ, যা মনে করতেই আমার নিজের কাছে আমার বিবেক একরাশ ঘৃণা ছুড়ে মারে । আমার কর্ম এর জন্য আজ আমার সত্তা তার নিজেকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখান করেছে । আমার আফসোস, আমি চেয়েছিলাম এ পথ থেকে সরে আসতে । কিন্তু পারি নি। আমাকে পারতে দেওয়া হয় নি। বেঁচে থেকে এই কাজ করলে প্রতি মুহুর্তে আমি একবার করে ভিতরে ভিতরে মরতে থাকবো । জানি, কাজটা ঠিক হচ্ছে না । তবুও হয়তো আরেকটা ভুল এবং খারাপের দিকেই পা বাড়ালাম। জানি, ঠিক হচ্ছে না । হয়তো ঈশ্বর এর বিরাগভাজন হবো। কিন্তু , আমি থাকলে আমার হাতে আরো লক্ষ লক্ষ লোক মারা যেত । জানি না, এই নোট কয়জন দেখবে । কিন্তু আমার লিখা তখনই স্বার্থক হবে যখন অন্তত একজন আমার মতো হতবুদ্ধি এটা পড়ে নিজেকে ড্রোন ড্রাইভার বানানোর ইচ্ছা থেকে শতমাইল দূরে থাকবে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.