![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কদিন আগে ক্যাম্পাসে মামার টঙ দোকানে বসে লেবু চা পান করছিলাম। এর মধ্যে কোত্থেকে যেন হঠাৎ গুরুদেবের আগমন। গুরুদেব মানে আমাদের বিশ্বকবি “রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর”। লম্বা আলখাল্লা, চুল দাড়ি সব আগের মতই ঠিকঠাক, কিন্তু হাতে একটা লম্বা মাঠা বাঁশ। আমি বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। কি বলব না বলব ভেবে শেষে বসতে বললাম। আরো এক কাপ চা অর্ডার করে আমি গুরুদেব কে জিজ্ঞেস করলাম,
-তা গুরুদেব আপনি হঠাৎ এখানে, এই অবস্থায় ? আপনাকে তো বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। কোনো সমস্যা ?
আমার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগে তিনি মামাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-হ্যারে হারাধন, চায়ে একটু চিনি কম দিস। সকাল থেকে টেনশনে সুগারটা একটু বেড়েছে।
এরপর আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
-গুরুদেব বললেন না যে, আপনার হঠাৎ আগমনের হেতু। তাছারা টেনশনই বা কিসের আপনার? ওখানে তো বেশ ভালোই থাকার কথা।
তিনি বললেন,
-ওখানে আর ভালো থাকি ক্যামনে রে। তোরা ভালো থাকতে দিলি কই !
-কেন গুরুদেব, কী হয়েছে?
-(আওয়াজ উচু করে) কী হয়েছে; কী হয়নি সেটা বল ! রোজকার মত আজ সকালেও প্রাকৃতিক কাজ কম্ম সেরে ল্যাপটপ টা নিয়ে বসলুম। ভাবলুম একটু ইউটিউবে ঢুকে দু’চারটে গান-টান শুনি। কিন্তু না, তা আর হল কই। এক ভিডিওতে দেখলুম, কোথাকার কোন এক ছোকরা চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সে ঘোরাঘুরি করছে। তার সাথে একজ ক্যামেরা ম্যানও আছে।
- হ্যা, তো কী হয়েছে? শুটিং টুটিং করবে হয়তো।
-আরে না, শুটিং টুটিং কিচ্ছু না। ও গিয়েছে সাক্ষাতকার নিতে। আর সাক্ষাতকার নিতে গিয়ে কী বলছে জানিস ?
-কী বলছে?
-বলছে, “আমি একজন রবীন্দ্র গবেষক। তাঁর লেখা গানগুলোর উপর আমি একটা গবেষণা চালাচ্ছি।”
-হ্যা, ঠিকি তো আছে গুরুদেব। আপনার লেখা নিয়ে তো দেশে বিদেশে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে। এ তো আপনার ভালো লাগার কথা।
-হ্যা, তা বটে। কিন্তু ঐ হতচ্ছারা কী করছে জানিস, ও বিভিন্ন লোকজনের কাছে যাচ্ছে আর জিজ্ঞেস করছে, “আপনি কি রবীন্দ্রনাথের ‘রয়েছি নিশির পানে চাহিয়া’ গানটি শুনেছেন ?” আর লোকজনও তাতে বেশ সায় দিচ্ছে। অনেকে বলছে, ‘রয়েছি নিশির পানে চাহিয়া’ গুরুদেবের তো বেশ বিখ্যাত গান। কেউ আবার বলছে, ‘রয়েছি নিশির পানে চাহিয়া’ তো আমার খুঊব খুঊব খুঊব প্রিয় গান, ওটা না শুনলে তো রাতে আমার ঘুমই আসেনা। আর একজন তো গানটা গেয়েই শোনাল,
“রয়েছি নিশির পানে চাহিয়া
তুমি মেলিয়া রাখ গো হিয়া”।
-হ্যা তো গুরুদেব, ঠিকিই তো আছে। ঐ গানটা তো বেশ ভালো, আর কথাগুলোও কি চমতৎকার লিখেছেন। সত্যিই আপনি বসস ।
-তুইও বলছিস সে কথা ? শেষ পর্যন্ত তুইও ওদের কাতারে চলে গেলি !
-কেন গুরুদেব, আমি আবার কী দোষ করলাম ? আমি তো আপনার অনেক বড় ফ্যান।
-তুইও ওদের মত বলছিস আর বলছিস কী দোষ করলাম !
ওরে হতচ্ছারা, ‘রয়েছি নিশির পানে চাহিয়া’ শিরোনামের কি কোনো গান আমি লিখেছি ? বাপের জম্মেও তো আমি ঐরকম কোনো গান লিখিনি।
-অ্যা ! সেকি গুরুদেব, লিখেন নি ? তাহলে সবাই যে বলছে...?
-ওরা সবাই গুল মারছে। মিথ্যে বলে নিজেকে বাঙালি সংস্কৃতি মনা হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করছে। আসলে ঐ শিরনামের কোনো গানই আমার নেই।
-তাইলে ঐটা কার গান ?
-হ্যা, আমিও খুজছিলুম ঐটা কার গান। শেষমেশ গুগলে সার্চ দিয়ে জানতে পারলুম, ঐটা একটা ইংরেজি গানের বাংলা অনুবাদ।
-কোন গানটা গুরুদেব ?
-ঐ যে, ‘জরিনার সোকেছ’ না ‘জেনিফার লোপেজ’ নামক মেয়েটার গানটা, “Waiting for tonight” এর বাংলা ভার্সন “রয়েছি নিশির পানে চাহিয়া”।
আমি সাথে সাথে জিহব্বায় কামর দিলাম। আমি কখনই ভাবিনি অন্যদের সুরে সুর মিলিয়ে এভাবে গুরুদেবের হাতে ধরা খাব। সাথে সাথে গুরুদেবের কাছে ক্ষমা চাইলাম। আর বললাম,
-গুরুদেব আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি সত্যিই আপনার অনেক বড় একজন ফ্যান। আমি আপনার সবগুলো রচনাই পড়ার চেষ্টা করছি।
এবার গুরুদেব আমার দিকে আর চোখে তাকালেন আর বললেন,
-সত্যিই তুই যদি আমার অনেক বড় ফ্যান হোস, তাহলে লেখাটার শুরুতেই আমার নাম লিখতে ভুল করেছিস কেন ? রবীন্দ্রনাথের জায়গায় “রবিন্দ্রনাথ” লিখেছিস কেন ? তোর এই লেখাটা যারা পড়ল, শুরুতেই তো তোকে কয়েক ডজন ......দিয়েছে রে হতচ্ছারা। নে, এবার হজম কর। অবশ্য, সবার মাথায় সেটা খেলবেও না।
গুরুদেব এবার ঝারলেন (বিরক্ত হয়ে), তোরা কবে ভালো হবি বল তো ? সবসময় চাপার উপর থাকিস, নিজেকে জ্ঞানী বলে জাহির করার চেষ্টা করিস। আমি কী করিনি তোদের জন্য বল ! বাংলাটাকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে গেলুম। ভাবলুম আমার দায়ীত্ব এবার শেষ। প্রথম নোবেলটা পর্যন্ত এনে দিলুম। সেটাও তোরা চুরি করে খেলি !
আমি মাথা নিচু করে রইলাম। কারণ মাথা উচু করে রাখার মত অবস্থা তখন ছিল না আমার। অনেকক্ষন নীরব রইলাম আমি। মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরুলো না। অবশেষে গুরুদেবই নিরবতা ভেঙ্গে দিলেন আর বললেন,
“এবার তবে আসলুম রে, দেখি ঐ হতচ্ছারাটাকে খুজে পাই কি না।”
এই বলে গুরুদেব হাতের বাঁশটাকে শক্ত করে ধরলেন আর যেতে যেতে একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বিরবির করে বললেন,
“ষোলো কোটি জনগনের হে মুগ্ধ জননী
রেখেছো ডিজিটাল করে, মানুষ কর নি”।
.........................................................
এরপর সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই নাস্তা সেরে আমি সোজা চলে গেলাম বইয়ের দোকানগুলোর দিকে। গিয়ে প্রমিত বাংলা বানানের একটা বই কিনে নিয়ে আসলাম। আজ হতে শুদ্ধ বাংলা চর্চার অভিজান শুরু হল আমার।
এ যাত্রায় তো গুরুদেবের হাত থেকে বেচে গেলাম। ভবিষ্যতে যেন গুরুদেবের বাঁশের কবলে পরতে না হয়।
১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৪৯
অন্তু নীল বলেছেন: লেখাটি ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল।
লেখাটি সেরকম একটি ভিডিও থেকেই অনুপ্রাণিত ।
আসলে ইংরেজি মাধ্যমের ফালতু যাতাকলে পরে বাংলাটার চর্চা হয়নি বললেই চলে।
তাই বাংলা বানান চর্চার অভিজানে নামা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে পুলহ।
২| ১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৫০
মহা সমন্বয় বলেছেন: খাইসেরে!! এইডা কি দেক্লাম
তা গুরুদেবের ফেসবুক আইডিটা একটু দিন, রিকুয়েস্ট পাঠাই।
১১ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:১১
অন্তু নীল বলেছেন:
চিপায় পরলাম দেহি.........
গুরুদেবের অনুমতি ছাড়া ফেসবুক আইডি দেওন নিষেধ।
৩| ১১ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮
কল্লোল পথিক বলেছেন:
আমদেরও একটু দেখা করনের সুযোগ কইরা দেন ভাই।
১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:০৯
অন্তু নীল বলেছেন: গুরুদেবের নিষেধ আছে.......
ধন্যবাদ কল্লোল পথিক ভাই।
ভালো থাকবেন।
৪| ১১ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:১৪
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: গুরুদেব এর সঙ্গে আপনার কথোপকথন বেশ ভাল্লাগলো ।
ভ্যাবাচ্যাকা বানানটা ঠিক করে নিন ।
১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:১৬
অন্তু নীল বলেছেন: ধন্যবাদ লেখাটা ভালোলাগল দেখে।
ভ্যাবাচ্যাকা বানানটা তারাতারি লিখতে গিয়ে এরিয়ে গেছে। আবারো ধন্যবাদ শুধরে দেবার জন্য।
আর বাকি বানানগুলোও অবশ্যই দেখব। বানানে আমার একটু দূর্বলতা আছে।
ভালো থাকবেন।
৫| ১১ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৩০
সুমন কর বলেছেন: রম্য ভালো হয়েছে। শেষটা ভালো।
১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:১৮
অন্তু নীল বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনাদের মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা।
ভালো থাকবেন।
৬| ১২ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৬:৫৭
শায়মা বলেছেন: আমারও রবি ঠাকুরের আইডি দরকার ভাইয়া।
১৩ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:২৫
অন্তু নীল বলেছেন: ওরে আল্লা..............শায়মা আপুনি......
গরীবের বাড়িতে হাতির পা !!!!!!!!
আমি যে আপনারও ফ্যান আপুনি।
আর ফেবু আইডি গুরুদেবের আজ্ঞা না পেলে যে দেওয়া নিষেধ.।
৭| ১৩ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:৩০
শায়মা বলেছেন: গুরুদেবের আজ্ঞা চাও!!!!!!!!
১৩ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:৪২
অন্তু নীল বলেছেন: হুম.....গুরুদেবের যেদিন মর্জি হয়.....
৮| ১৩ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:১৪
গেম চেঞ্জার বলেছেন: আমি আজ সকালে গুরুদেবের কাছে ছিলাম। আমার বেনসন হাত থেকে টান দিয়ে নিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেললেন। হুঁকোটায় একটান দিয়ে তিনি বিড়বিড় করে বলেছিলেনঃ
অন্নপায়ী বঙ্গবাসী স্তন্যপায়ী জীব
জন-দশেকে জটলা করি তক্তপোশে ব’সে।
ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো, পোষ-মানা এ প্রাণ
বোতাম-আঁটা জামার নীচে শান্তিতে শয়ান।
দেখা হলেই মিষ্ট অতি মুখের ভাব শিষ্ট অতি,
অলস দেহ ক্লিষ্টগতি গৃহের প্রতি টান।
তৈল-ঢালা স্নিগ্ধ তনু নিদ্রারসে ভরা,
মাথায় ছোটো বহরে বড়ো বাঙালি সন্তান।
ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুয়িন!
চরণতলে বিশাল মরু দিগন্তে বিলীন।
ছুটেছে ঘোড়া, উড়েছে বালি,
জীবনস্রোত আকাশে ঢালি
হৃদয়তলে বহ্নি জ্বালি চলেছি নিশিদিন।
.......
বিশ্বমাঝে মহান যাহা সঙ্গী পরানের,
ঝঞ্ঝামাঝে ধায় সে প্রাণ সিন্ধুমাঝে লুটে।
নিমেষতরে ইচ্ছা করে বিকট উল্লাসে
সকল টুটে যাইতে ছুটে জীবন-উচ্ছ্বাসে—
শূন্য ব্যোম অপরিমাণ মদ্যসম করিতে পান
মুক্ত করি রুদ্ধ প্রাণ ঊর্ধ্ব নীলাকাশে।
১৩ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:২২
অন্তু নীল বলেছেন:
আজ বুঝিলাম, গুরুদেব কেন সেরের উপর সোয়াসের ঢালেন নি।
৯| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
"কদিন আগে ক্যাম্পাসে মামার টঙ দোকানে বসে লেবু চা পান করছিলাম। "
-লেবুর চা, নাকি ডাইল দিচ্ছে চা'য়ে? যাক, লেখা মাঝে একটা বিষয় আছে, বাংগালীরা সবাই 'গবেষণা'য় কিংবা 'গোবেষনা'য় লেগে গেছে
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩৭
পুলহ বলেছেন: সাবলীল লেখা বে-এ-শ ভালো লাগলো।
বানানে কিছুটা হোচট খেয়েছি, সম্ভবতঃ এ কাজটা লেখক ইন্টেনশনালিই করেছেন, অন্ততঃ শেষ অংশটুকু পড়ে তাই অনুমান করছি...
“ষোলো কোটি জনগনের হে মুগ্ধ জননী
রেখেছো ডিজিটাল করে, মানুষ কর নি”।-- এপিক
এরকম একটা ভিডিও সত্যি সত্যি বেশ কিছুদিন আগে ফেসবুকে দেখেছিলাম।
শুভকামনা লেখক।
আমি নিজেও শুদ্ধ বাংলা চর্চার 'অভিজান' শুরু করবার আশা রাখছি!!