নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহিত্যের পথে, সংস্কৃতির রথে

কবি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

কবিতা এবং সাহিত্যের ছাত্র

কবি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্লিনিক থেকে ফিরলাম একঝাক কষ্ট নিয়ে। আহারে কিশোরী মা, আর তোর কষ্ট.

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২৬

মা আফিয়ার নিস্পাপ ছলছল ১ দিন বয়সের দুটি চোখ দেখছিলাম, খোদার শুকরিয়া জ্ঞাপনে।
তখন সন্ধ্যা 9.16/9.25 হবে, আকস্মিক নতুন এক রোগির শোড়গোল। বুঝলাম ক্লিনিকের কেবিনে নতুন কোন প্রসূতির আগমণ ঘটেছে, যা এখানে কোনরুপ আশ্চর্যের বিষয়-ই নয়, তাই স্বাভাবিকতার বহিঃপ্রকাশ আমার মনোযোগ স্থির রইল আফিয়ার পানে।
-
আধঘন্টা পর সিজার হওয়া বধুযোগ্য বয়স কিন্তু কিশোরীভাব রমণীর প্রবেশ ঘটল স্ট্রেতে চড়ে। শাশুরী আম্মা নারীত্বভাব থেকেই জিজ্ঞাসা করলেন সিস্টারকে, কী হয়েছে ?
জবাব এল- ছেলে কিন্তু অক্সিজেন দিতে হবে, শ্বাস-প্রশাসে নাকি সমস্যা হচ্ছে।
অসুস্থ সে মায়ের সাথে তার ২৩/২৪ বয়সী স্বামী এবং ২/৩ জন মহিলা। কথা-বার্তায় বোধে এল সেখানে ছেলের মা বিদ্যমান, তার কণ্ঠে- “আমি যে ভয়ে বউকে কিছুই করতে দিলাম না, কিন্তু তাই হয়ে গেল! হায়! হায়! ” । পার্শ্বে দাড়িয়ে থাকা আরেকটি মহিলা ছোট একটা মেয়ে নিয়ে দাড়িয়ে আছে মনে হয় তিনি তাদের প্রতিবেশি হবেন কিন্তু কেন জানি তাদের পোশাক-পরিচ্ছেদের সাথে মহিলাটির যাচ্ছেনা। কিছু কিছু সময় দামী পোশাক নয়, মার্জিত স্বল্প দামের পোশাক এবং ব্যবহারেও বংশীয় কিছু লক্ষণ পাওয়া যায়, আমিও মহিলার মাঝে মায়াবী আভিজাত্য খুজে পেয়েছিলাম।
-
যাইহোক সন্তানের অসুস্ততার কষ্টটা তেমন ভারী হয়ে ওঠেনি কারণ নবজাতকটি বেঁচে আছে। বিষণ্য এক চিন্তা সবার মাঝে। রাত ১১.২৫/৩০ দিকে খালি একটি ব্যডে আমি ঘুমিয়ে গেলাম তবু গুণ গুণ করে হায় হুতাশ শোনা যাচ্ছিল তাদের বেড থেকে।
-
ঘুম থেকে জেগে মা আফিয়া জান্নাতকে দেখছিলাম, লক্ষ হল পার্শ্বের দম্পতিদ্বয় এবং আভিজাত্বিক মহিলা ছাড়া আর কেউ নেই!
কারণ জিজ্ঞাসায় আমার সহধর্মিণী জবাব দিল- বাচ্চাটা অবস্থা ভালো নয়, তাই তাকে পার্শ্বের ফরিদপুর ২৫০ বেডে নেয়া হয়েছে এবং সেখানেই গত দিনের সেই পুরুষ-মহিলাগণ রয়েছে।
অল্প বয়সী এ দম্পতি দেখলে যে কারোই খটকা লাগতে পারে, কারণ মেয়েটির স্বভাবে যা তা ছেলেটির স্বভাবে নেই কিন্তু বউয়ের জন্য ভালোবাস রয়েছে অঘাদ। পেট কাটা মেয়েটির চেয়ে যেন ছেলেটির কষ্টটায় বেশী।
-
সঁন্ধ্যায় নিচতলা থেকে চিনিকম দিয়ে একটা চা খেয়ে উপড়ে এসেই দেখি- দম্পতিদ্বয় কষ্টের কিন্তু অতি সুখের খুনসুটিতে ব্যস্ত। আমি বিনা সংকোচে জান্নাতের মা-মণিকে বল্লাম- ঘটনাটা কী তাদের মাঝে অসমতা কেন ?
উত্তর পেলাম: আভিজাত্বিক মহিলাটি প্রতিবেশি নয়, তিনি মেয়ের মা। আর তাদের বিয়েটাও এখনও অমিমাংসীত রয়েছে কিঞ্চিৎ।
-
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পুর্বে আগ যাচিয়ে বল্ল ভাই আপনারা কবে এসেছেন? আমি উত্তর দিলাম যোগ গল্প জুড়িয়ে দিলাম। তারপর জানলাম শশুর তার সৈাদি থাকে, দুই মেয়ের মধ্যে তার স্ত্রীই বড়। ননান সমস্যার মাঝেও অনেক সাধের সংসার তার। বারে বারে শুধু বলছিল ভাই কেবল সাতমাস কিন্তু পানির থলি ফেটে যাওয়াতে আজ এই সমস্যা। দোয়া করবেন।
ছেলেটি তেমন শিক্ষিত নয় কিন্তু বেশ মার্জিত স্বভাবের তাই বোধহয় সব জেনেও টাকা এবং বংশের ভারসাম্য খুজেনি মেয়েটি।
-
আজ ঢাকা আসতে হবে বলে, গতকাল সন্ধ্যায় ক্লিনিক থেকে বাড়িতে যাই।
সকাল বেলা জান্নাতের সাথে দেখা করে ঢাকা আসব, তাই ক্লিনিকে গেলাম। আমার মেয়ে নিজ মনে খেলে যাচ্ছে, বাবাকে দেখেই জলজল ক্ষুদ্র চোখে তাকালো আমার মা।
পার্শ্বের বেডের থমথম দৃশ্য আন্দাজ করলাম। জান্নাতের মা বল্ল তাদের নবজাতক শিশুটি মারা গেছে।
এরকম কথা শুনলে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়তে হয় কিনা জানি না তবে খুব খুব একটা ভালো তখন মোটেও লাগলনা। জান্নাতের চেহারাটাও ফ্যকাসে হয়ে যায় আমার চোখে। কেমনে কী ?
পাশ্বের বেডে শুধুই সন্তান হারা সিজার করা সেই আভিজাত্বিক প্রেমময়ী মা, বাকিসব গুরুত্বপুর্ণ কাউকে দেখলাম না। বধুর মা, শাশুরী, স্বামী এবং বাবা সবাই গেছে গ্রামে নবজাতকের কবর খুড়তে।
-
তাকালাম সেই দিকে-
আহা, এ কেমন দৃশ্য ! মেয়েটি তাকিয়ে আছে জানালার বাহিরে। পার্শ্বের এক দূরের আত্বিয়া তার মাথায় এবং পিঠে হাত বুলাচ্ছে আর বলছে- মা একটু শক্ত হও, তুমি এরকম করলে বাবুর বাবাও ত ভেঙ্গে পড়বে। এমনিতেই ছেলেটি সকাল থেকেই কাঁদছে........!
দৃষ্টি আমার তখনও ফিরেনি- হঠাৎ হৃদয় কাপানো একটি অশ্রু বিন্দু গড়িয়ে পড়ল সেই অল্প বয়সী মায়ের।
-
আহারে গতকাল দুপুরেও দেখলাম কত স্বপ্ন ছিল দুই দুই এক চোখে। আজ স্বপ্নগুলো অশ্রু হয়ে ঝড়ে পড়ছে ।
-
জান্নাতের আম্মুকে বল্লাম-
ঐ মহিলাগুলো খামাখা ঐরুপ আচরণ করছে কেন ?
উত্তর: সন্তান মারা যাওয়ার পর সেই সকাল থেকে উনি কথা বলছেনা।
আমিত অবাক,
হায়রে ভাই! যার কলিজা ছেড়া কষ্টের সম্পদ হারিয়ে যায় সে কী বলবে ? আর এখানে কেন কথা দিয়ে শান্তনা দেয়ার চেস্টা করা হচ্ছে ?
এ ব্যদনা কী কোনদিনও কমানো যায় ?
বরং সবাই শান্ত থাকলে হয়ত শান্তিতে মেয়েটি একটু পোড়া কপালের ব্যদনায় নিজেকে ভাসাতে পারবে।
-
কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম,
কিন্তু মা তোমার ব্যদনায় সব ছন্দ ফিকে
তোমার ভালোবাসা, তোমার আবেগ, তোমার অশ্রু
শুধুই তোমার স্বামীর ছন্দে কিছুটা মিলে যেতেও পারে



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪১

আখেনাটেন বলেছেন: এতদিনের এত এত স্বপ্ন এক ঝটকায় নিঃশেষ!

বেদনাদায়ক। হৃদয়বিদারক!

সৃষ্টিকর্তা উনাদের মানসিক দৃঢ়তা দান করুক নতুন স্বপ্নের...।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৪

কবি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেছেন: হুম, :)

২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪৯

সুমন কর বলেছেন: দুঃখজনক ঘটনা।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৩

কবি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেছেন: হুম, দুঃখজনক

৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫২

নতুন বলেছেন: সন্তান মারা যাবার কস্ট সেই বাবা মা ছাড়া আর কেউই অনুভব করতে পারেনা।

আশা করি আমার কোন শত্রুও যেন এই রকমের কস্ট না পায়।

আশা করি এই দম্পতি এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারে।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৩

কবি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেছেন: ১০০% সহমত !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.