নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবি জ্ঞানদাস নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি জানি। আমি আব্দুল্লাহ আল- মাহমুদ, আজ এসেছি তার কিছু কবিতার বর্ত
মান সরল ভাষায় অনুবাদ কার্যে। মানুষ মাত্রই ভূল করে, কোন দোষ চোখে পড়লে ধরিয়ে দিবেন।
ঃকিশোর বয়েসঃ
কিশোর বয়েস মণি কাঞ্চনে আভরণ
ভালে চূড়া চিকণ বনান |
হেরইতে রূপ- সায়রে মন ডূবল
বহু ভাগ্যে রহল পরাণ ||
সখি হে--পেখলুঁ পন্থক মাঝ |
হাম নারি অবলা একলা যাইতে পথে
বিছুরল সব নিজ কাজ ||
নয়ান-সন্ধান- বাণে তবু জর জর
কাতর বিনি অবলম্বে |
বসন খসয়ে ঘন পুলকে পুরল তনু
পানি না পূরলুঁ কুম্ভে ||
ঘর নহে ঘোর যেন জাগিয়া স্বপন হেন
আরতি কহনে না যায় |
জ্ঞানদাস কহে মনে অনুমানিয়ে
বাস করব নিপ-ছায় ||
আমার অনুবাদে কবি বলছে-
কিশোর বয়স রত্ন, স্বর্ণে (ফুল বিশেষ গাছ) ভূষণ
কপালের মুকুটে সুন্দর মিল।
দেখে সে শোভা, সমুদ্রে মন ডুবিল।
অনেক ভাগ্যে হৃদয় থামিল!
সখি হে- অভিশপ্ত ধর্ম মাঝে
আমি নারী বলহীনা, একা যেতে পথে
ভূলিলাম নিজের সব কাজ।
দুর্বল নয়নের বন্ধন, তান্ত্রিক মারণমন্ত্র সঙ্গে তবু কত জালা
পীড়িত বিণা-ই আশ্রয়।
কাপড়ের শব্দ পুরু,
আবেগাদিতে শরীরের লোম খাড়া হল
পানিতে না কলসী ভরল।।
এখন গৃহ ভয়ঙ্কর নয়, জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি কাব্যে
গভীর আসক্তি বলা যায় না।
জ্ঞানদাস বলে- মনে সাদৃশ্য মেপে
করব বাস শান্ত/ ঘুমন্ত ছায়ায়।
-
অপর একটি পদে কবি-
কেন গেলাম জল ভরিবারে |
যাইতে যমুনার ঘাটে সেখানে ভুলিলুঁ বাটে
তিমিরে গরাসিল মোরে ||
রসে তনু ঢর ঢর তাহে নব কৈশোর |
আর তাহে নটবর বেশ |
চূড়া টালনী বামে মউর চন্দ্রিকা ঠামে
ললিত লাবণ্য রূপ-শেষ ||
ললাটে চন্দন পাঁতি নব গোরোচনা কাঁতি
তার মাঝে পূণিমক চাঁদ |
অলকা-বলিত মুখ ত্রিভঙ্গ-ভঙ্গিম রূপ
কামিনী জনের মন ফাঁদ ||
লোকে তারে কাল কয় সহজে সে কাল নয়
নীলমণি মুকুতার পাঁতি |
চাহনি চঞ্চল বাঁকা কদম্ব গাছে ত ঠেকা
ভূবন-মোহন রূপ-ভাঁতি ||
সঙ্গে ননদিনী ছিল সে সকল দেখি গেল
অঙ্গ কাঁপে থরহরি ডরে |
জ্ঞানদাসেতে কয় তারে তোমার কিবা ভয়
সে কি সতী বোলাইতে পারে ||
আমার অনুবাদে কবি বলছে-
কেন গেলাম জল ভরার জন্য
পথ ভূলিলাম যমুনার ঘাটে
অন্ধকার গ্রাস করল আমাকে।।
রসে ভরপূর, নতুন কিশোর শরীর যার
লম্পট শ্রেষ্ঠ আবেশ তার ।।
পূর্ণপরিণতির অস্থিরতা বামে, মুকুট জ্যোৎস্নার স্থানে
কোমল লাবণ্য রূপ- শেষ।।
কপালে চন্দনের ধরণ, হলদে রঙ্গের নতুন বচন
যার মাঝে রয়েছে পূর্ণিমার চাঁদ।
আট বা দশ বছরের মেয়ের লোলচর্ম মুখ, কৃষ্ঞ ভঙ্গি রূপ
রমণীদের মন বেধে যাওয়ার ফাঁদ।।
লোকে তারে কালো বলে, আসলে সরল সে কালো নয়
নীলমণি দামী সে মুক্তার চিঠি।
চাহনি তার চঞ্চল বাঁকা, কদম গাছ বাঁধা
পৃথিবী পাগল করা রূপের আলো।।
সঙ্গে ননদ ছিল, সে সব দেখিল
অঙ্গ কাঁপছে থর থর ভয়ে |
জ্ঞানদাসে বলে- তারে তোমার কিসের ভয়
সে কী সতীভাব নষ্ট করতে পারে।।
-
অপর একটি পদে কবি-
সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু
অনলে পুড়িয়া গেল |
অমিয়া-সাগরে সিনান করিতে
সকলি গরল ভেল ||
সখি কি মোর করমে লেখি |
শীতল বলিয়া ও চাঁদ সেবিনু
ভানুর কিরণ দেখি ||
উচল বলিয়া অচলে চড়িতে
পড়িনু অগাধ জলে |
লছিমি চাহিতে দারিদ্র্য বেঢ়ল
মাণিক্য হারানু হেলে ||
নগর বসালাম সায়র বাঁধিলাম
মাণিক পাবার আশে |
সাগর শুকাল মাণিক লুকাল
অভাগার করম-দোষে ||
পিয়াস লাগিয়া জলদ সেবিনু
বজর পড়িয়া গেল |
জ্ঞানদাস কহে কানুর পিরীতি
মরণ অধিক শেল ||
আমার অনুবাদে কবি বলছে-
সুখের জন্য এই ঘর বান্ধিলাম,
যা আগুনে পুড়িয়া গেল
অতি মধুর সাগরে গোসল করতে গিয়ে হায়,
সব বিষ হয়ে গেল।
সখি বল, কী আমার কর্মে লিখি।
শান্ত/ স্থির বলে ঐ চাঁদে সেবা দিলাম
সূর্য রশ্নি দেখে।।
নিষ্ফল চড়তে, উচ্চ বলে
পরিলাম অতি গভীর জলে।
ক্ষুদ্রতা চাইতে দারিদ্রতা বেষ্টন করল
মানিক্য হারাইলাম নির্বিষ সর্পবিশেষে।।
নগরায়ন তৈরি করলাম, সমুদ্র বাধলাম
মানিক পাবার আশায়।
সাগর শুকিয়ে গেল, মানিক গোপন হল
অভাগার কর্ম দোষে।।
তিয়াসের জন্য জল দিলাম
নৈকা/ ভড়া তলিয়ে গেল।
জ্ঞানদাস বলে- ক্ষুদ্রের প্রেম
মরণের চেয়ে বেশি কষ্টদায়ক শূল।।
অপর একটি পদে কবি-
মনেক মরম কথা শুনলো সজনি |
শ্যাম বন্ধু পড়ে মনে দিবস রজনী ||
কিবা রূপে কিবা গুণে মন মোর বান্ধে |
মুখেতে না ফুরে বাণী দুটি আঁখি কান্দে ||
কোন বিধি নিরমিল কুলবতী বালা |
কেবা নাহি করে প্রেম কার এত জ্বালা ||
চিতের আগুনি কত চিতে নিবারিব |
না যায় কঠিন প্রাণ কারে কি বলিব ||
জ্ঞানদাস কহে মুঞি কারে কি বলিব |
বন্ধুর লাগিয়া আমি সাগরে পশিব ||
আমার অনুবাদে কবি বলছে-
মনের কষ্টদায়ক কথা শুনল সজনী
মেঘবর্ণ বন্ধু মনে পড়ে, দিবস রজনী
কী সে রূপে, কী সে গুণে মন আমার তারে টানে
মুখের কথা শেষ হয়না কভূ, দুটি চোখ আমার তার জন্য কাঁদে।।
কোন নিয়ম অমলিন, কুলবতি বালা
কে করেনা প্রেম, কার নেই এত জালা
চিতার আগুনে কত চিতা প্রশমিত
কঠিন আত্মা মরিবার নয়, কারে কী বলব
জ্ঞানদাস বলে- আমি কারে কি বলব
বন্ধুর জন্য আমি সাগরে ডুবিব।।
অপর একটি পদে কবি-
পহিলহি চাঁদ করে দিল আনি |
ঝাঁপল শৈলশিখরে একপাণি ||
অব বিপরীত ভেল গো সব কাল |
বাসি কুসুমে কিয়ে গাঁথই মাল ||
না বোলহ সজনি না বোলহ আন |
কী ফল আছয়ে ভেটব কান ||
অন্তর বাহির সম নহ রীত |
পানি-তৈল নাহি গাঢ় পিরীত ||
হিয়া সম-কুলিশ বচন মধুরার |
বিষঘট-উপরে দুধ-উপহার ||
চাতুরি বেচহ গাহক ঠাম |
গোপত প্রেম-সুখ ইহ পরিণাম ||
তুহুঁ কিয়ে শঠি নিকপটে কহ মোয় |
জ্ঞানদাস কহ সমুচিত হোয় ||
আমার অনুবাদে কবি বলছে-
প্রথমেই চাঁদ এনে দিল
ঝাপ দিল শিখরে, এক হাত
এখন বিপরীত হল চন্দ্র, সব সময়।
দুর্ঘন্দময় পুস্পে কিভাবে গাথি মালা
কিছু বলনা সজনি, কিছু বলনা ভিন্য
কী ফল দ্বারা সাজাবো কান।।
অন্তর এবং বাহিরের রীতি সমান নয়,
পানি এবং তেলের প্রেম কখনই গারো হয়না।।
মনের মত বজ্র, বচন মধুরার
বিষের কলসী তার, উপড়ে দুধ উপহার।।
ছল বিবেচনায় স্নানের স্থান।
লুকায়িত প্রেমের সুখের এই পরিণাম।।
তুমি কেন শঠি, অভয়ে বল আমাকে
জ্ঞানদাস বল্লে সমুচিত হয়।
অপর একটি পদে কবি-
কান্দিতে না পাই বঁধু কান্দিতে না পাই |
নিশ্চয় মরিব তোমার চান্দমুখ চাই ||
শাশুড়ী ননদীর কথা সহিতে না পারি |
তোমার নিঠুরপনা সোঙরিয়া মরি ||
চোরের রমণী যেন ফুকারিতে নারে |
এমত রহিয়ে পাড়াপড়শী ডরে ||
তাহে আর তুমি সে হইলে নিদারুণ |
জ্ঞানদাস কহে তবে না রহে জীবন ||
আমার অনুবাদে কবি বলছে-
কাদিতে পারি না বধূ, কাদিতে পারিনা
মরিব মানি, তবু তোমার চন্দ্রমূখ চাই।।
শাশুড়ী ননদের কথা সহিতে পারি না
তোমার নিষ্ঠুরতায় সোহাগে মরি ।।
চোরের রমণী মেন, ডাকিতে পারি না
এইরূপ থামিয়ে, পাড়াপড়শি ডরে
আর তাতেই তুমি হলে নিদারুণ
জ্ঞানদাস বলে- তাহলে জীবনের মানেই হয় না ||
অপর একটি পদে কবি-
মাগো গেনু খেলাবার তরে |
পথে লাগি পেয়ে এক গোয়ালিনী
লয়ে গেল মোরে ঘরে ||
গোপরাজরাণী নন্দের গৃহিনী
যশোদা তাহার নাম |
তৈহার বেটার রূপের ছটায়
জুড়াইল মোর প্রাণ ||
কি হেন আকুতে তার বাম ভিতে
লয়ে বসাইল মোরে |
এক দিঠে রহি তাহার আমার
রূপ নিরিক্ষণ করে ||
বিজুরি উজোর মোর অঙ্গখানি
সেহ নব জলধর |
সুমেল দেখিয়া দিবাকর ঠাঁই
কি হেতু মাগল বর ||
তবে মোর গোরা গা-খানি মাজিয়া
লাস বেশ বনাইয়া |
হরষিত মোরে পাঠাইলা দেখ
এ সব আঁচরে দিয়া ||
ঝিয়ের কাহিনী শুনি গোয়ালিনী
মুচকি মুচকি হাসে |
কত সুধারস হিয়ায় বরিষে
কহে কবি জ্ঞানদাসে ||
আমার অনুবাদে কবি বলছে-
মাগো, খেলার জন্য গেলাম
পথে পেয়ে, এক গোয়ালিনী
সঙ্গে নিয়ে গেল আমায়, ঘরে।।
গো সে রক্ষক রাজরাণী, শ্রীকৃষ্ণের পালক পিতার গৃহিণী
যশোদা তাহার নাম |
তাহার ছেলের, রূপের আভায়
শান্ত হল, আমার প্রাণ ||
কী এমন ব্যকুলতায় তার বাম বনিয়াদে
সঙ্গে নিয়ে বসাইল আমারে।।
কোমলভাবে একদৃষ্টে তাহারা
অামার রূপ নিরিক্ষণ করে।।
মোলায়েম বিজলী উজোর, আমার অঙ্গখানি
সেও নতুন কোন জলধ-অরণকারী |
উত্তম মিল দেখে, সূর্যের ঠায়
কী কারণে সে সাধারণ মানব।
তবে আমার ফর্সা গা খানি মজিয়া
রেশমি কাপড় বেশ বানাইয়া।
রুদ্র আমারে পাঠাইল ,
দেখ এসব মনোযোগ দিয়া।।
ঝিয়ের কাহিনী শুনে গোয়ালিনী
মুচকি মুচকি হাসে |
কত মনোমুগ্ধ রস, মনে ঝরে
বলে কবি জ্ঞানদাসে ||
২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২১
কবি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেছেন: মতামত উপস্থাপনের জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি মাটি ও মানুষের কবি।