নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রনি ও সাদিকের পথচলা ভিন্ন হলেও, গল্পের শেষে, বুঝা যায় আল্লাহ যাকে ইচ্ছে তাকে সফল করে দেন, আর যাকে ইচ্ছে, তাকে দান করেন সুখের সঞ্চয়।
গল্পের প্রথম চরিত্র, রনি ছিল এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবক, যার হৃদয়ে ছিল এক অমল স্বপ্নের অঙ্কুর। বিভিন্ন ঘটনার বেড়াজালে, ২১ বছর বয়সে বিয়ে করলেও তার মনে ছিল এক আশা, এক যাত্রা। তার বয়স যখন ২৩, তখন সে একটি সরকারি চাকরি পেয়ে গেল । আত্মীয়দের অধিকাংশই তার মেধার উপর অগাধ বিশ্বাস রাখে। তারা ভাবে যে, এটাই তার প্রথম সিঁড়ি, যার উপর পা রেখেই সে অনন্ত আকাশ ছুঁতে পারে। তার বয়স যখন ২৪ এ, তখন তার জীবনে একটি ছোট্ট সুখের দেবদূত এল, তার পুত্র।
যত দিন গড়াচ্ছিল, ততই তার জীবন উজ্জ্বল হতে লাগল। ২৬ বছর বয়সে, আরও বড়ো এক চাকরির পরীক্ষায় পাস করে, সে একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে গেল। সবার চোখে সে ছিল এক সফল যুবক, যার জীবনের ক্যানভাসে শুধু জয় আর জয়ই ছিল। রনির জীবন যেন একটা মহাকাব্য হয়ে উঠছিল, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল জয়গাথার মতো। কিন্তু ৩৮ বছর বয়সে, হঠাৎ রনি এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেল, অপ্রত্যাশিতভাবে তার জীবন সমাপ্ত হলো । তবে তার সাফল্য, তার কষ্ট, আর তার অদম্য জয়ের গল্প, সবাই মনে রেখেছিল।
অন্যদিকে, সাদিক ছিল এক সাধারণ ছেলে । স্কুলের সাধারণ মেধাবিদের চেয়েও নিম্ন। বাবা দারিদ্র্য হওয়ায়, ওর জীবনে ছিল না তেমন কোনো বিলাসিতা বা বড় ধরনের স্বপ্ন। গ্রামের অধিকাংশের দৃষ্টিতে, সাদিকের জীবন ছিল অনিশ্চিত; সৎ মায়ের বৈষম্য দৃষ্টির সাথে, কষ্টের এক দীর্ঘ যাত্রা । সাদিক ৩৬ বছর বয়সে কোনোমতে একটি চাকরি পেল; তাও গ্রামের এক ছেলে মায়া করে তাকে শহরে নিয়েছিল বলে। ওর জীবনের রাস্তা ছিল বন্ধুর, তবে সে কখনো হাল ছাড়েনি। বয়স যখন ৪০, তখন শহরেই সে একটি ব্যবসা শুরু করল। সে জানত যে ব্যবসা চালানো সহজ নয়; তবে তার দৃঢ় মনোবল তাকে তার ক্ষুদ্র ব্যবসায় নতুন নতুন পথ দেখাল।
ধীরে ধীরে, তার কঠোর পরিশ্রম আর প্রতিভা তাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেল। ৫০ বছর বয়সে, সাদিক তার আশেপাশের মানুষের কাছে অনেকটা পরিচিত হয়ে উঠল। কাছের অনেকের পরামর্শে, সে এই বয়সে এসে ২১ বছরের একটি মেয়েকে বিয়ে করল। অনেক টাকা ও খ্যাতির জন্য বিয়ের ক্ষেত্রে বয়সটা ঢাকা পড়ল। ৫২ বছরে তার জীবনে এল এক কন্যা সন্তান এবং ৫৮ বছরে এক পুত্র।
সময়ের পথচলা চলতেই থাকল, আর সাদিক যেমন অদৃশ্য আলোর মতো এগিয়ে চলেছিল, তেমনই অপ্রত্যাশিতভাবে, তার ৯৬ বছর বয়সে, তার জীবনেও এল এক নিদান; তার স্ত্রীর মৃত্যু। ৬৭ বছর বয়সের, তার প্রিয়তমা সঙ্গী পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল।
যেহেতু সাদিক জীবনের অনেক বাস্তবতা দেখে এই বয়সে উপস্থিত হয়েছে, সেহেতু সে জীবনের চরম সত্য উপলদ্ধি করে ভেঙে পড়েনি। সে তার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে বাকিটা জীবনে সুখের সময় কাটাতে লাগল। তার জীবন যেন এক মহাকাব্য হয়ে উঠেছিল, যা শেষ পর্যন্ত ১১৩ বছর বয়সে শেষ হলো।
গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনি। জীবনের রহস্য বুঝতে একটি উদাহরণ টানা হয়েছে মাত্র।
গল্পটি ছিল রনি ও সাদিককে নিয়ে মানুষের ধারণা ও শেষ পরিণতির। জীবন কখনো একরকম হয় না । এখানে, কখনো গতি পায় সৃষ্টির অজানা শক্তি, কখনো জীবন চলে অপ্রত্যাশিত জানা-অজানা গোলক ধাঁধায়।
রনি ছিল এমন যুবক, যার জীবন সহজ-সরল হলেও ছিল স্বপ্নে ভরা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত । অপরদিকে, সাদিক ছিল এমন যুবক, যার জীবন ছিল কষ্টে ভরা, তবে ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের সাথে সাথে আল্লাহর রহমতে তা হয়েছিল সুন্দর ও ছান্দিক এক দীর্ঘ যাত্রা ।
কাল্পনিক হলেও, আশেপাশে লক্ষ্য করলে দেখবেন, আমাদের সামনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা অনেকটাই অবিশ্বাস্য হলেও আমরা মানতে বাধ্য হই। কারণ তা সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জীবন কখনো মানুষের হাতে থাকে না। সফলতা, সুখ, বা কষ্ট সবই আল্লাহর ইচ্ছার ফল। কখনো রনির মতো দ্রুত, কখনো সাদিকের মতো ধীরে, তবে সবাই একদিন আল্লাহর রহমত লাভ করে, কারণ আল্লাহ যাকে ইচ্ছে তাকে সফল ও সুখী করেন।
তবে মানুষবেশী শয়তানগুলো দুই নাম্বারি পথে বেশি দূর এগোতে পারে না। তারা কিছু সময়ের জন্য সফল মনে হলেও, অপেক্ষার পরে দেখবেন, তারা ব্যর্থ হচ্ছে। সবকিছু তো মহান আল্লাহরই হাতে। তিনি নাড়া দেন।
---- ফলপ্রসূতা
---- আব্দুল্লাহ আল- মাহমুদ
©somewhere in net ltd.