নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহিত্যের পথে, সংস্কৃতির রথে

কবি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

কবিতা এবং সাহিত্যের ছাত্র

কবি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সহানুভূতির ফাঁদ

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০৪

সকাল থেকেই পুরো শহর উত্তপ্ত। আদালতের রায়ের পর চোর-ডাকাতদের পরিবার রাস্তায় নেমে এসেছে। নারী-শিশুরা রাস্তার মাঝখানে বসে আছে, নড়বড়ো মাদুর পেতে কেউ শুয়ে পড়েছে, কেউবা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তাদের অভিমান রাষ্ট্রের ওপর, সমাজের ওপর, বিচার ব্যবস্থার ওপর।
এই শহরেই কিছুদিন আগে একটা বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। মধ্যরাতে একদল মুখোশধারী ঢুকে পড়ে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে, হাত-পা বেঁধে ভয় দেখিয়ে সব লুট করে নিয়ে যায়। এরপর শহরের অন্যপ্রান্তে এক গৃহস্থের ঘরে হামলা হয়। লুটপাটের পাশাপাশি মারধর, এমনকি একজন বৃদ্ধা গুরুতর আহত হয়। মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা চাইল কঠোর বিচার।
শেষ পর্যন্ত কিছু অপরাধী ধরা পড়ল। আদালতে বিচার হলো, কয়েকজনের শাস্তি হলো, কেউ যাবজ্জীবন, কেউ মৃত্যুদণ্ড পেল।
এবার শুরু হলো নতুন নাটক। শাস্তিপ্রাপ্তদের পরিবার পথে বসলো। তাদের দাবি—তাদের স্বামীরা নির্দোষ, রাষ্ট্র তাদের জীবন ধ্বংস করেছে। তারা ক্ষতিপূরণ চায়, না হলে রাস্তায় পড়ে থাকবে।
শুরুতে পথচারীরা বিষয়টা উপেক্ষা করল। কিন্তু দিন গড়ানোর সাথে সাথে আবেগের বন্যা বয়ে গেল। কেউ তাদের জন্য খাবার নিয়ে এলো, কেউ ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিল। দেখো, ছোট্ট শিশুরা না খেয়ে বসে আছে! এক বৃদ্ধা মহিলা ডুকরে কেঁদে উঠলেন, “বাবারে, এত ছোট্ট বাচ্চারা কী দোষ করল?”
শহরের লোকজনের চোখ কেঁদে এল। এই তো সেদিন যারা বিচার চেয়েছিল, তারাই এবার নরম হয়ে গেল। একদিন আগেও যারা আদালতের রায় দেখে হাততালি দিয়েছিল, তারা আজ বলছে—“না, এটা ঠিক হয়নি।”
কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাহলে কি চোর-ডাকাতদের ছেড়ে দেওয়া হতো? তাহলে কি রাষ্ট্রের উচিত ছিল বিচার না করা?
এদিকে প্রশাসনের লোকজন চিন্তায় পড়লো। রাস্তায় বসে থাকা এসব মানুষকে সরাতে হবে, নইলে শহরের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হবে। কয়েকজন নারী পুলিশ এগিয়ে গেল, বুঝিয়ে বলল—“আপনারা যান, রাস্তায় বসে থাকলে সমস্যা হবে।”
কিন্তু তারা নড়ল না।
শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোর করে সরানোর চেষ্টা করল। হঠাৎ কেউ একজন ভিডিও ধারণ করে ফেলল, তারপর মুহূর্তের মধ্যে সেটি ভাইরাল হয়ে গেল—“দেখুন, নিরীহ নারীদের কীভাবে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে!”
এবার পুরো শহর স্তম্ভিত।
যারা বিচার চেয়েছিল, তারাই বলছে—“এটা খুব অন্যায় হলো।”
যারা জানত, এই পরিবারের কর্তারাই ডাকাতি করেছে, তারাও বলছে—“আহারে, বাচ্চাগুলোর কী দোষ!”
কিন্তু রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন—এভাবে চললে আইন কোথায় থাকবে? যদি কাল দেশের প্রতিটি দরিদ্র পরিবার তার শিশুকে নিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে, দাবি তোলে ক্ষতিপূরণ—তাহলে রাষ্ট্র কী করবে?
এভাবেই আবেগের চক্রে ঘুরতে থাকে সমাজ। একদিকে বিচার চাই, অন্যদিকে সহানুভূতিতে নরম হয়ে পড়ি। কিন্তু এই সহানুভূতি কি আদৌ সুবিচার নিশ্চিত করে? নাকি এটিই সত্যিকার অর্থে ন্যায়বিচারের অন্তরায়?
রাষ্ট্র জানে, এসব প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়। কিন্তু একবার যদি আবেগের কাছে আইন হেরে যায়, তবে আর ন্যায়বিচার থাকবে না, থাকবে কেবল সহানুভূতির ফাঁদ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: আসলে আপনি কি লিখেছেন আমি বুঝতে পারছি না।
গল্প? নিউজ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.