নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাঙালি রাজনীতিবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদ আবুল হাশিম। অতীতে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে যা ইতিহাসের উপাদান। সেই সব ঘটনার নায়ক যারা তারাও স্মরণীয় হয়ে থাকেন ইতিহাসে। গত শতাব্দীর ত্রিশ,চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকের বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এমনই একজন উল্লেখযোগ্য রাজনীতিবিদ আবুল হাশিম। বাংলাদেশের বামপন্থী বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরের পিতা আবুল হাশিম ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন; বাংলাদেশে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন এবং আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। আবুল হাশিম আমাদের এক মহান পূর্বপুরুষ। আমাদের গৌরবময় মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাস নির্মাণের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অত্যন্ত মূল্যবান। আজ প্রখ্যাত এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুবার্ষিকী। ৫ অক্টোবর মনীষী আবুল হাশিমের ৩৯তম মৃত্যুদিবস। মৃত্যুৃদিনে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
আবুল হাশিম ১৯০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমানের কাশিয়াড়ায় জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৌলভী আবুল কাশেম বর্ধমানের কংগ্রস নেতা ছিলেন এবং মাতা মোকাররমা খাতুন। ১৯২৩ সালের বর্ধমান মিউনিসিপাল স্কুল থেকে আবুল হাশিম ম্যাট্রকুলেশন পাস করেন। এরপর ১৯২৫ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আই এ এবং ১৯২৮ সালের বি এ পাস করেন আবুল হাশিম। ১৯৩০ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা হিসেবে যোগ দেন। মুসলিম লীগে যোগ দিয়ে তিনি এর উদারপন্থী অংশ গড়ে তোলার কাজে মনোনিবেশ করেন। অনেক প্রগতিশীল বাঙালি মুসলিম তরুণকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেন। এর মাঝে ১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে বি এল ডিগ্রি লাভ করে বর্ধমান আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি বর্ধমান থেকে নির্দলীয় পার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বঙ্গীয় আইন সভায় সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালের মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯৩৮ সালে তিনি বর্ধমান জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি ও ১৯৪২ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালের ৭ নভেম্বর মুসলিম লীগ কাউন্সিল সভায় বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ আইন সভায় বিরোধী দলের নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দেন তিনি। এরপর পঞ্চাশের দশকের শুরুতে তিনি ঢাকায় চলে আসেন।
১৯৫২ সালে তিনি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকায় তিনি ১৯৫২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন এবং প্রায় ১৬ মাস কারাভোগের পর মুক্তিলাভ করেন। এরপর থেকে তিনি খেলাফতে রাব্বানী পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি এ পার্টির সভাপতি ছিলেন। আইয়ুব খানের শাসনামলে আবুল হাশিম ইসলামিক একাডেমীর পরিচালক ছিলেন। এ পদে থাকার সময়ে তাঁর উদ্যোগে কুরআন শরীফের মূল আরবি থেকে বাংলায় তর্জমা প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু ঐ সময়ও তিনি আইয়ুব খানের বাঙালি বিরোধী কার্যক্রমের প্রতিরোধ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মোনায়েম খানদের রবীন্দ্রউচ্ছেদ, বাঙালি সংস্কৃতি উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলনের সৈনিক ছিলেন। ১৯৬৭ সালের ২২ জুন পাকিস্তান সরকারের বেতারমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দীন রেডিও টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচার বন্ধের ঘোষণা করলে তিনি এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান।
আবুল হাশিম নানা উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে জীবন অতিক্রম করলেও তাঁর কার্যক্রম নিন্দা-প্রশংসায় মিশ্রিত এবং কিছুটা স্ববিরোধিতায় আক্রান্ত হলেও তিনি শেষ পর্যন্ত খাঁটি ও মহৎ বাঙালি ছিলেন। তিনি যদিও মুসলিম লীগ করেছিলেন এবং নিজ যোগ্যতায় মুসলিম লীগের নেতৃস্থানীয় পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন, তবুও জিন্নাহর সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের রাজনীতি করেননি। মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে কংগ্রেসকে টাটা-বিরলার সিংহদ্বার থেকে জনগণের স্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন। অনুরূপ আবুল হাশিমও ১৯৪৩ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে ঢাকার নবাববাড়ির দুর্গ থেকে উদ্ধার করে জনগণের কাতারে নিয়ে গিয়েছিলেন মুসলিম লীগকে। সাধারণ সম্পাদক হয়েই তিনি ঘোষণা দিলেন, মুসলিম লীগ তিন জায়গায় বন্দি দৈনিক আজাদ, আহসান মঞ্জিল ও ইস্পাহানিদের কাছে। এই প্রভাবশালী ত্রি-সিন্দুকের লৌহডালা ভেদ করে তিনি বাংলার কাদামাটির স্তরে বঙ্গীয় মুসলিম লীগকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আবুল হাশিম আমাদের এক মহান পূর্বপুরুষ। আমাদের গৌরবময় মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাস নির্মাণের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অত্যন্ত মূল্যবান। তার স্থান শ্রেষ্ঠ বাঙালির কাতারে এতে কোনো সন্দেহ নেই। স্বয়ং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় কারাগারে শহীদ জাতীয় চার নেতার দুজন-তাজউদ্দীন আহমদ ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামছুল হক এবং কামরুদ্দীন আহমদ আবুল হাশিমের শুধু কর্মীই নন, মন্ত্রশিষ্যও ছিলেন। ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতিসত্তার যে বিকাশ ঘটে তার একজন তাত্ত্বিক ছিলেন আবুল হাশিম। তাঁর সুযোগ্য পুত্র বদরুদ্দীন উমর বাংলাদেশের সেরা বুদ্ধিজীবিদের একজন। বদরুদ্দীন উমর মূলত একজন মার্ক্সবাদী তাত্বিক এবং একজন রাজনৈতিক সমালোচক।
(রাজনৈতিক সমালোচক বদরুদ্দীন উমর)
ইসলামী চিন্তাবিদ আবুল হাশিমের উল্লেখযোগ্য রচনাবলীঃ
১। দ্যা ক্রিড অফ ইসলাম (The Creed of Islam) -১৯৫০
২। এ্যাজ আই সি ইট (As I See It)– ১৯৬৫
৩। ইনটিগ্রেশন অফ পাকিস্তান (Integration of Pakistan)-১৯৬৭
৪। অ্যারাবিক মেইড এসে (Arabic Made Eassy)–১৯৬৯
৫। রব্বানীর দৃষ্টিতে -১৯৭০
৬। ইন রেট্রোস্পেকশন (In Retrospection) -১৯৭৪
আবুল হাশিমের লেখা In Retrospection গ্রন্থটির অনুবাদ 'আমার জীবন ও বিভাগপূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতি'। এটা স্বার্থক অনুবাদ করেছেন আবুল হাশিমের কনিষ্ঠ পুত্র শাহাবুদ্দীন মহম্মদ আলী। গ্রন্থটিতে আবুল হাশিমের রাজনৈতিক জীবনের প্রসঙ্গই মুখ্যভাবে উঠে এসেছে। গ্রন্থটিতে আবুল হাশিমের বর্ণাঢ্য জীবন, তাঁর পুর্বপুরুষ, শৈশবকাল, স্কুল ও কলেজ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযোজিত হয়েছে। মূলত ১৯৩৬ সাল থেকে ১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মুসলিম রাজনীতি এবং সেই সঙ্গে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক আন্দোলনের স্রোত ও অন্তঃস্রোতের ওপর আলোকসম্পাত করতে গিয়ে তাঁর অবস্থানকে তুলে ধরেছেন লেখক। আবুল হাশিমের বর্ণাঢ্য জীবন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটির বাংলা সংস্করণের পাঠে রাজনীতিসচেতন পাঠকমাত্রই উপকৃত হবেন।
১৯৭৪ সালের ৫ অক্টোবর ৬৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ভারত উপমহাদেশের এই প্রখ্যাত বাঙালি রাজনীতিবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদ আবুল হাশিম। আজ তাঁর ৩৯তম মৃত্যুদিন। মৃত্যুৃদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৯
কোবিদ বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এই গুণী ব্যক্তিত্বের
মৃত্যুদিন শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:০৮
তানিয়া হাসান খান বলেছেন: আবুল হাশিম। তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
লেখককে ধন্যবাদ