নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাঙলার লোকসংস্কৃতির কিংবদন্তীর মরমী কবি এবং বাউল শিল্পী হাসন রাজা। হাসন রাজা ছিলেন বাংলার সুবিখ্যাত মরমী লোকগীতি রচিয়তা। মরমী সাধনা বাংলাদেশে দর্শনচেতনার সাথে সঙ্গীতের এক অসামান্য সংযোগ ঘটিয়েছে। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে লালন শাহ্ এর প্রধান পথিকৃৎ। এর পাশাপাশি নাম করতে হয় দুদ্দু শাহ্, পাঞ্জ শাহ্, পাগলা কানাই, রাধারমণ দত্ত, আরকুম শাহ্, জালাল খাঁ এবং আরো অনেকে। তবে দর্শনচেতনার নিরিখে লালনের পর যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নামটি আসে, তা হাসন রাজার। হাসন রাজা ভালো বাংলা লিখতে পারতেন না । তাই তিনি মুখে মুখে গান রচনা করতেন। তিনি গানের কথা বলে যেতেন আর তার নায়েব তা লিখে নিতেন কাগজে। পরে তিনি সেই গানে সুরারোপ করতেন। ১৮৫৪ সালের আজকের এইদিনে জন্মগ্রহন করেন হাসন রাজা। মরমী শিল্পী হাসন রাজার ১৫৯তম জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা।
(হাসন রাজার জন্ম ও বংশ পরিচয়)
হাসন রাজা ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী সুরমা নদীর তীরে লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে বিখ্যাত জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। হাসন রাজার পুর্বপুরুষের অধিবাস ছিল অয্যোধ্যায়। সিলেটে আসার আগে তাঁরা দক্ষিণবঙ্গের যশোর জেলার অধিবাসী ছিলেন। হাসন রাজার পূর্বপুরুষেরা হিন্দু ছিলেন। তাঁদেরই একজন বীরেন্দ্রচন্দ্র সিংহদেব মতান্তরে বাবু রায় চৌধুরী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন প্রতাপশালী জমিদার। হাসন রাজা তাঁর ত্রিতীয় পুত্র। হাসন রাজার প্রকৃত নাম দেওয়ান হাসন রেজা চৌধুরী । পরবর্তী সময় তিনি হাসন রাজা নামে পরিচিতি ও খ্যাতি লাভ করেন।
সিলেটে তখন আরবী-ফার্সির চর্চা খুব প্রবল ছিল। সিলেটে ডেপুটি কমিশনার অফিসের নাজির আবদুল্লা বলে এক বিখ্যাত ফার্সি ভাষাভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ মতে তাঁর নামকরণ করা হয়- হাসন রাজা। বহু দলিল দস্তাবেজে হাসন রাজা আরবি অক্ষরে নাম দস্তখত করেছেন- হাসান রাজা। হাসন দেখতে সুদর্শন ছিলেন। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে তিনি কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেননি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। তিনি সহজ-সরল সুরে আঞ্চলিক ভাষায় প্রায় সহস্রাধিক গান রচনা করেন। তাঁর রচিত গানে সৃষ্টিকর্তার দর্শন লাভের আকুলতাই ফুটে উঠেছে। তিনি ছিলেন মানবতা ও সাম্য দর্শনে বিশ্বাসী।
উত্তারিধাকার সূত্রে বিশাল ভূসম্পত্তির মালিক ছিলেন হাসন রাজা। প্রথম যৌবনে তিনিসৌখিন, ভোগবিলাসী এবং রমণী সম্ভোগে রত ছিলেন। প্রতিবছর বিশেষ করে বর্ষাকালে নৃত্য-গীতের ব্যবস্থাসহ তিনি নৌকায় চলে যেতেন এবং বেশ কিছুকাল ভোগ-বিলাসের মধ্যে নিজেকে নিমজ্জিত করে দিতেন। এর মধ্যেই বিশেষ বিশেষ মুহুর্তে তিনি প্রচুর গান রচনা করেছেন। এসব গানে জীবনের অনিত্যতা সম্পর্কে, ভোগ-বিলাসের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে নিজেকে স্মরন করিয়ে দিয়েছেন। তিনি তার এক গানে নিজেই উল্লেখ করেছেনঃ "সর্বলোকে বলে হাসন রাজা লম্পটিয়া"
হাসন রাজা পাখি ভালোবাসতেন। 'কুড়া' ছিল তার প্রিয় পাখি। তিনি ঘোড়া পুষতেন। তাঁর প্রিয় দুটি ঘোড়ার নাম ছিল জং বাহাদুর এবং চান্দমুশকি। মোটকথা, সৌখিনতার পিছনেই তাঁর সময় কাটতে লাগলো। আনন্দ বিহারে সময় কাটানোই হয়ে উঠলো তাঁর জীবনের একমাত্র বাসনা। তিনি প্রজাদের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে লাগলেন। এ ভাবে অত্যাচারী আর নিষ্ঠুর রাজা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে হাসন রাজা দাপটের সঙ্গে জমিদারী চালাতে লাগলেন। কিন্তু এক আধ্যাত্নিক স্বপ্ন-দর্শন হাসন রাজার জীবন দর্শন আমূল পরিবর্তন করে দিল। হাসন রাজার মনের দুয়ার খুলে যেতে লাগলো। তাঁর চরিত্রে এলো এক সৌম্যভাব। বিলাস প্রিয় জীবন তিনি ছেড়ে দিলেন। ভুল ত্রুটিগুলো শুধরাতে শুরু করলেন। জমকালো পোশাক পড়া ছেড়ে দিলেন। শুধু বর্হিজগত নয়, তার অন্তর্জগতেও এলো বিরাট পরিবর্তন। বিষয়-আশয়ের প্রতি তিনি নিরাসক্ত হয়ে উঠলেন। তাঁর মনের মধ্যে এলো এক ধরনের উদাসীনতা। এক ধরনের বৈরাগ্য। সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর নেয়া হয়ে উঠলো তাঁর প্রতিদিনের কাজ। আর সকল কাজের উপর ছিল গান রচনা। তিনি আল্লাহ্র প্রেমে মগ্ন হলেন। তাঁর সকল ধ্যান ধারণা গান হয়ে প্রকাশ পেতে লাগলো। সেই গানে তিনি সুরারোপ করতেন এ ভাবেঃ
“লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ী ভালা নায় আমার
কি ঘর বানাইমু আমি, শূন্যের-ই মাঝার
ভালা করি ঘর বানাইয়া, কয় দিন থাকমু আর
আয়ন দিয়া চাইয়া দেখি, পাকনা চুল আমার।”
এভাবে প্রকাশ পেতে লাগলো তাঁর বৈরাগ্যভাব। হাসন রাজা সম্পূর্ণ বদলে গেলেন। জীব-হত্যা ছেড়ে দিলেন। কেবল মানব সেবা নয়, জীব সেবাতেও তিনি নিজেকে নিয়োজিত করলেন। ডাকসাইটে রাজা এককালে যিনি 'চন্ড হাসন' নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন তিনি এবার হলেন 'নম্র হাসন'। এরপর তার সকল বিষয় সম্পত্তি বিলিবন্টন করে দিয়ে দরবেশ-জীবন যাপন করেন। তাঁর উদ্যোগে হাসন এম.ই. হাই স্কুল, অনেক ধর্ম প্রতিষ্ঠান, আখড়া স্থাপিত হয়।
হাসন রাজা ৬৭ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুৃবরণ করেন। আজ এই এ মহান সঙ্গীত সাধকের জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
পাঠকদের জন্য হাসন রাজারঃমাটিরো পিঞ্জিরার মাঝে
২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪১
আছিফুর রহমান বলেছেন: প্লাস
৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮
সোজা কথা বলেছেন: লেখা সুন্দর হয়েছে।হাছন রাজার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।সিলেটি হিসেবে গর্বিত।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪০
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: বাউলা কে বানাইল রে ২ বার
হাছন রাজারে বাউলা কে বানাইলরে ''''''''''
কেন পিরিত বারাইলা রে বন্ধু ছাইড়া যাইবায় যদি """""""
মাটির ও পিঞ্জিরার মাঝে বন্দি হইয়া রে
কান্দে হাছন রাজার মন কান্দে রে **********
অথবা
আগুন লাগাইয়া দিলি কেনে
হাছন রাজার মনে
এইসব আধ্যাতিক অসংখ্য গানের স্রষ্টা
বিশ্ব নন্দিত বাংলার চিরচেনা হাছন রাজার গভীর আত্মায় জানাই
শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা ।।
মহামুনিষিরাইকখন ও মরেনা
তারা জিইয়ে থাকে কোটি কোটি ভক্তকুলের হৃদয়ে ।।
পোস্ট এ ধন্যবাদ