নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খালিদ মুস্তাকিম\nকোন এক নিঝুম সকালে, জানালায় ভোরের পাখির কলতানে ঘুম ভেঙে জেগে উঠি। চেয়ে দেখি এক সোনালী স্বদেশ।

কোলাহল

ব্লগে প্রকাশিত লেখা প্রয়োজনে প্রকাশ করা যেতে পারে তবে লেখকের নাম উল্লেখ বিশেষ সৌজন্যের পরিচায়ক

কোলাহল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্জন পুল পেরোলেই ঝিঝি পোকার গান।

০৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ১১:৪৬

অভ্যাসবশত আমি পুলের উপর উঠে দাড়িয়ে পড়ি। গ্রীস্মের শুরুতে মৃদুমন্দ দক্ষিনা বাতাস। নিচে টলটলায়মান স্বচ্ছ পানি। পানি নেই বললেই চলে, যেটুকু আছে সেটুকুই ভীষন পরিচ্ছন্ন, চকচকে। উপরিপৃষ্টে বাতাসের সাথে মসৃন কাপুনি।



কালচে হলুদ রঙের একটি ফড়িং ঘোড়াঘোড়ি করছে অনেকটাই পানির উপরে ঝুকে পড়া বনফুলের আশেপাশে। বনফুরের আসল নাম জানিনা। কজনই বা জানে। চাচাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। স্থানীয় ভাষায় বাটই না বাটল কি জানি বলে ডাকে । কলি অবস্থায় টকটকে লাল ফুটলে সাদা পাপড়ি মেলে হাসতে থাকে। পুলের ওপর থেকে তাকিয়ে বনফুল আর ফড়িংয়ের লুকোচুরি দেখে চোখ জুড়াই। বেশীক্ষন স্বস্তিতে থাকা যাবেনা। শরীরে ঘামের আবাস



গরম পড়তে শুরু করেছে। কয়েকদিনের মধ্যে মাথার মগজ গলানো তাতানো রোদ তার সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে পথিককে বেহাল করে দিতে। কান্ত, অবসন্ন পথিক একটু শান্তির খোজে এসে বসে যাবে এই পুলের গোড়ায়, বিশালাকার বটগাছটা যেখানে তার ডানা মেলে দিয়েছে অপার মাতৃস্নেহ নিয়ে। বয়স বেশী নয় গাছটার তবুও সূর্যের তাপদাহ আটকে রাখার তীব্র প্রচেস্টা চোখে পড়ার মত। হয়তো নিজ দ্বায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন। মানুষগুলো যদি এমন সচেতন হতে পারত তবে পুলের আশেপাশে আরো দুটো ছায়াবৃক্ষ থাকতে পারতো।



কত শত প্রজন্মের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে এই পুল। প্রতিদিন কত মানুষ পার হয়ে যায় এর উপর দিয়ে। ভ্যান রিকশা সাইকেল, এবং কদাচ শহর থেকে আসা অতিথি মাইক্রোবাস। ছেলেপুলে, যুবক, বৃদ্ধ সববয়সী পায়ের পরশ লেগে অছে পুলের পটাতনে। এক প্রজন্ম হারিয়ে যায় আরেক প্রজন্ম নতুন করে আবাদ করে পলেস্তারা খসে পড়া কনক্রিটের বুক। আরো কত শত বছর আগে থেকে রয়ে গেছে পুলটা। হয়তো আরো চকচকে ছিল, উদ্ভিন্না যুবতীর মত সোন্দর্য লেপ্টে ছিল এর গায়ে। আগে হয়তো কাঠের পুল ছিল, তারও আগে বাশের সাঁকো। সাঁকো পার হতে গিয়ে পা পিছলে ঝপাৎ করে নিচে পড়ে গেছে নববধূ , তাকে সঙ্গ দিতে পাগরি পরা বরের ঝাপিয়ে পড়ার গল্প শুনেছি বড়দের মুখে এখানেও হয়তো সে ধরনের অনেক ঘটনার ইতিহাস খুজলে পাওয়া যাবে।



আমি পুলের উপর উঠে সেই কথাগুলো বিরবির করছিলাম। আশে পাশে কেউ নেই, থাকলে হয়তো আমাকে পাগল ঠাওরাতে পারে। চায়ের দোকানগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে। মাথার কাছে মিনি রেডিও আর হাতে একটা হাত পাখা নিয়ে আধশোয়া বিশ্রাম নিচ্ছে দোকানী। অনেকক্ষন পরে একটা ভ্যান দেখলাম। ধান কিংবা ডালের বস্তা নিয়ে হাটে যাচ্ছে।



এক্ষনে একটা অদ্ভুত অনুভুতি গ্রাস করেছে আমাকে। মাটির গন্ধ আমার চোখে মুখে। রোদেলা দুপুর তার নির্জনতাকে ছড়িয়ে দিয়েছে গোটা গ্রামটাকে।



মাটি ও আকাশ মিশেছে যেথায়

বন বিথী আর সবুজ পেরিয়ে

ছায়াঘেরা মেঠোপথ ডাকে যে আমায়।



মেঠোপথের সে নিবিড় মন্ত্রণকে আমি গভীর আবেগে গ্রহণ করি কিংবা গ্রহণ করতে বাধ্য হই। একে বেঁকে চলে যাওয়া মেঠো পথের শেষ সীমনায় থাকা ছাউনিতে বাস করেন এক বৃদ্ধা যিনি আমাকে দেখলেই কিরে দাদু এতদিনে আমার কথা মনে পড়ল বলে জড়িয়ে ধরেন, হাত মুখ ধোয়ার জন্য কলতলা পর্যন্ত এগিয়ে দেন, চিংড়ি মাছ দিয়ে রান্না করা কুমড়ো জালি আর মোটা চালের ভাত নিয়ে অপেক্ষা করেন গভীর আগ্রহ ভরে। তাতেই শেষ নয় সকালে পাখি ডাকারও আগে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় তেল তেলে তপ্ত তাওয়ায় পিঠার মসলা ছড়ানোর শব্দে।চালের গুড়া আর পানির মিশ্রণ ভালো করে নেড়ে তাওয়ায় ছিটিয়ে দিয়ে একসময় রুটির মতো অবয়ব চরে আসে। সাড়ম্বর আয়োজন শেষে আমার হাতে আসে আসে যে পিঠা তার নাম জানি ছিটারুটি। বৃদ্ধার আন্তরিকতায় আমি আপ্লুত হই। আজও নিশ্চয়ই তেমন হবে ভাবতেই চলার গতি আপনা থেকে দ্রুততর হয়ে ওঠে। পরক্ষনেই আবার শ্লথ হয়ে যায়। মন ভাল রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিপাটি সবুজের একি হাল ! । সর্বনাশা সিডর গভীর আচড় রেখে গিয়েছে নিতল নিসর্গের বুকে। একটা চাঁপা হাহাকার মেখে আছে পথের আশেপাশে। খালের উপর আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে আছে বিশালাকার রেইন ট্রি। চাইলে ওটাকেই এখন সাকো হিসেবে ব্যবহার করা যায়। হাজারো অনটনের মধ্যেও মেয়ের বিয়েতে খাট বানিয়ে দেয়ার জন্য রেখে দেয়া হয়েছিল যে মুল্যবান সেগুন গাছটি তাতে প্রাণ অবশিস্ট নেই। নিরব মৃত্যু গৃহস্থের স্বপ্নের ইতি ঘটিয়ে দিয়েছে। সবুজ গাছগুলি নিজেদেরকে সর্বসান্ত করে দিয়ে মানুষের প্রাণ বাচিয়ে দিয়েছে। আমি নিরবে দেখলাম। গভীর দুখবোধ নিয়ে নিরবেই সমবেদনা জানালাম।



বাবলার ডাল চেঁছে ডাংগুলি খেলা দুরন্ত শৈশব, পাটের নিড়ানি দেয়া কিংবা ডাল মাড়ানো দ্বায়িত্বশীল শৈমব খোজার যে মিশনে হুট করে ছুটে এসেছিলাম



অকস্মাৎ ঝিঝি পোকার ডাকে আমার সম্বিত ফিরে আসে। কতদিন পরে শুনছি এই ডাক !!! আমি চমকে উঠি। ঝি-ঝি-ঝি-ঝি-ঝি-ঝি-ঝি-ঝি- ররররররররররররর-র--র---র----র-----র------র--------র------র ঝি-ঝি-ঝি-ঝি । কে যেন আমাকে টেনে নিয়ে যায় অনেক অনেক দিন আগের কোন এক অপরিকল্পিত সময়ের কোলাহলে। সন্ধার আলো আধারিতে বাঁশের খুটিতে কঞ্চি পিটিয়ে--



আয় ঝিঝি আয়

তোর মায় তোরে থুয়ে

কলই ভাজা খায়।

.......



আমার কি ঝিঝিপোকা ধরার বয়স আছে !



একটা দুস্ট প্রশ্ন আমার মাথায় কিলবিল করছে। আচ্ছা অস্ট্রেলিয়ায় কি ঝিঝি পোকা আছে। চৈতালী দুপুরের রোদে টরেন্টোর কোন বাঁশ বাগানে কি ঝিঝি পোকার ডাকে কান ঝালাপালা হয়? কিংবা আবুধাবীর বিস্তীর্ণ বালুর সমুদ্রে !! আছে কি কোকিলের একটানা কুহু কুহু ডাক।





আমি জানিনা আছে কিনা। না থাকলেও আমার কিছু করার নেই। আমি কেবল আরেকবার আমার বাড়ির ছায়াঢাকা আঙ্গিনায় আপনাদের দাওয়াত দিতে পারি যেখানে লাউয়ের ডগায় লকলকিয়ে ওঠে সম্ভাবনার বাংলাদেশ। আমার পুলের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দক্ষিনা বাতাস গায়ে মাখার অনুমতিটুকুই কেবল আমার দেয়ার মত আছে। শ্যামলিম বাংলাদেশ কেমন আছে সে আমি বলতে পারবনা।



চতুরভুজের লেখা



সবারই থাকে শেঁকড় আর সেই শেঁকড় কেবলই মানুষকে নিজের দিকে টানে আমরণ। আমার শেঁকড়েরা গ্রামে থাকার কারণে গ্রামের পথের ধুলো আমিও বেশ মেখেছি। সেই সোঁদা মাটির গন্ধ আজও আমার নাকে লেগে আছে। সেই হলুদিয়া বাজার, গ্রামের মাতব্বরদের শালিস; সন্ধ্যাবেলার হাঁট। সেখানে মুড়কি-নিমকি ভাজা আরও কত কি! জমজমাট হাঁটবেলা শেষে ছোট খালার সাথে ফিরে আসতাম বাড়ি। মামাদের তাসের আসরেও কতবার মামার গা ঘেঁষে বসে থেকেছি। তখনও ইলেক্ট্রিসিটি ছিলোনা। কারও ঘরে জ্বলছে কুপি তো অন্যের ঘরে হারিকেন। সেই টিমটিমে আলোয় স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবই সুর করে পড়ার শব্দ- এসকল কিছু আজও কানে বাজে যেন। আবারও ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই উঠোনে- যেখানে গাঁয়ের বধূরা গোসলের পর পিঁড়ি পেতে বসে চুল শুকোয়, যেখানে বৃদ্ধাদের পান খাবার আসর বসত, যেখানে দুরন্ত কিশোরেরা বাবলার ডাল চেঁছে ডাংগুলির গুটি বানায়, যেখানে নববধূ তার স্বামীর চিঠি সবার অলক্ষে নিয়ে গিয়ে ঘরের কোনে চুপটি করে পড়ত আর চোখের জল ফেলত, যেখানে ঘর্মাক্

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.