নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কল্পদেহী সুমন

খন্দকার মো: আকতার উজ জামান সুমন

কথা বেশি একটা বলিনা চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি। সব সময় কল্পনা করি। কল্পনায় আমি সবসময় নিজের সাথে কথা বলি। আর সব সময় অন্যমনস্ক থাকি। আমার আশেপাশে কে কি করছে না করছে তার দিকে আমার তেমন খেয়াল থাকে না। অনেক সময় কাউকে খুজতে যেয়ে নিজেই হারিয়ে যাই। আর একটা কথা হলো আমার পথ মনে থাকে না তাই আমি একা হাটতে গেলে প্রায়শই পথ ভুল করি। পথে হাটাহাটি করার সময় কত জনের সাথে ধাক্কা খেয়েছি এ পর্যন্ত, তার হিসাব নেই। আমার সমস্ত জীবনটাকে কল্পনা মনে হয় কারণ সব কিছুই যাই ঘটে আমার সাথে তাই আমার কাছে কল্পনা মনে হয়। যদি কোন অঘটন ঘটে তাহলে ভাবি কল্পনা ভেঙ্গে গেলাই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার এই অসম্ভব রকম কল্পনাসক্ত দিনকে দিন বেড়েই চলছে।

খন্দকার মো: আকতার উজ জামান সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রপোজ

২১ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:২১

ব্যস্ততম নগরীতে রাতের বেলাও যানবাহনের আনাগোনায় কোন কমতি নেই, নেই বিন্দুমাত্র কোন নিরবতা। কিছু মানুষ জেগে থাকে আর কিছু মানুষ দিনের কর্মব্যস্ততার ভীড়ে লুকিয়ে থাকা ঘুমকুমারীকে সময় দেয় তখন। জেগে থাকা মানুষগুলোর মাঝে প্রকারভেদের কোন কমতি নেই। তাদের মাঝে অদ্ভুত একধরনের মানুষ আছে যারা জেগে থেকে কল্পনা করতে ভালোবাসে। তাদের কল্পনায় থাকে জীবনের সুখকে খুঁজে পাওয়ার আকুতি, নিবিড় মধুরতাকে মনের গভীরে অনুভব করার শক্তি। হয়তো এসব সুখের বিলাসীতা তাদের রাতকে কখন দিনে নিয়ে আসে তা তারা নিজেরাও বুঝে না। তাদেরকে রাত জাগা পাখি বললেও দোষ হবেনা। হয়তো এতসব কিছু কল্পনা করতে করতে তারা কখনও হারিয়ে যায় নিজের পরিচিত পরিবেশ থেকে ভিন্ন এক পরিবেশে, যেখানে জীবনের কিছু অসম্পূর্ণতা কাল্পনিক ভাবেই পূর্ণ হয়ে যায়। তেমনি কল্পনাপ্রেমী একজন মানুষ তূর্য। তেমন একটা ঘুমের নেশা তার নেই। সারারাত জেগে থাকে আর যদি কথা বলার মানুষ খুঁজে পায় তাহলে তো কথাই নেই। তূর্য সরাসরি বা ফোনালাপে এতোটা পটু না। সে অনলাইনের চ্যাটিং আর মেসেজিংয়ে যেমন এক্সট্রোভার্ট মনে হতে পারে আসলে সামনাসামনি সে ততটাই ইন্ট্রোভার্ট। কিন্তু তার নাছোড়বান্দা আচরণের কারনে ভার্চুয়াল জগতের কেউ ভাবতেই চায় না যে তূর্য এতোটাই ইন্ট্রোভার্ট।

-আমি কি খুব বেশি কথা বলি?

-হুম .....অনেক

-আসলে সরাসরি আমি এরকম না

-তাহলে কিরকম?

-চুপচাপ থাকি

-বিশ্বাস হয়না আমার

-কেন?

-কেন আবার ...... যদি সারাদিন চাই সারাদিনই তো তুমি কথা বলতে পার তাই

-চ্যাটিং বা মেসেজিংয়েই আমি এরকম

-দেখা যাবে

-কি দেখবা?

-তোমার সাথে দেখা দেখা হলে দেখব আসলে সত্য বলছ কিনা?

-ও

-ও কি!

-বিশ্বাস কর না আমাকে!

-করি

-তাইলে আমার কথা এখন বিশ্বাস হয়না কেন?

-হয় ....কিন্তু এটার প্রমাণ না দেখালে বিশ্বাস হচ্ছে না

-যাও তোমার সাথে কথা নাই .... আড়ি আড়ি আড়ি

-ওকে আড়ি

নিধি ভালো করেই জানে তূর্য পাঁচ মিনিটের বেশি তার সাথে রাগ করে থাকতে পারবেনা। কিন্তু আজ পাঁচ মিনিট অনেক আগেই পার হয়ে গেছে তাও তূর্যের কোন কথা নেই চুপ হয়ে আছে। নিধির মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল, চোখের কোনে একটু পানিও চলে আসল। নিধি মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়ল। এদিকে তূর্য নিধি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর একটা মেসেজ পাঠাল। ভাবল নিধি হয়তো তখনই রিপ্লাই দিবে তখন তূর্যরও মন খারাপ হয়ে গেল। নিধি ঘুম থেকে উঠে তূর্যর মেসেজ দেখে কেঁদেই ফেলল ভাবল এতক্ষণ তূর্যের কতটানা খারাপ লাগছে। নিধি যখন তখন তূর্যকে মেসেজ করল। এবার তূর্য এতক্ষন পর নিধির মেসেজ পেয়ে আরও খেপে গেয়ে বলল যাও তোমার সাথে আর কথাই নেই।

-সরি

-সরি বললে হবেনা

-সরি

-না হবেনা

তূর্য হঠাৎ ভাবল নিধিতো এত সরি বলেনা। নিশ্চয়ই নিধির মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেছে। আসলেই নিধি তখন ফুপিয়ে কান্না করছিল। তূর্য একদম নরম হয়ে গেল। সে হয়তো জানেনা নিধি তার জন্য কাঁদতেছে কিন্তু একধরনের সংকেত সে পেয়ে গেছে যা তার মনকে নিধির জন্য একদম নরম পলি মাটি করে দিয়েছে।

-ঐ নিধি

-কি

-সরি

-কেন?

-তোমাকে কষ্ট দিছি তাই

-আমি কি বলছি কষ্ট পাইছি

-বলতে হবেনা, আমি বুঝছি

-বুঝনি

-তাও সরি

-আচ্ছা

-কি?

-কিছুনা

-একটা কথা বলি

-বলো

-না থাক

-বলো বলছি

-তোমার সাথে একটু ঘুরতে ইচ্ছে করছে

-ঘুর

-কিভাবে?

-কল্পনা কর?

-না .....বাস্তবে

-বললাম না কল্পনা কর, বাস্তব আবার কি!

-ঐ

-না বলছি এতটুকুই বুঝছো

-একদিন শুধু

-না বলছিনা

তূর্য এরপর চুপ হয়ে থাকল অনেকক্ষণ। নিধিও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না কেন তূর্যকে সে এতো লাই দেয়, আবার ভাবছে তূর্যর মন খারাপের কথা।

-ঐ

-কি?

-চলনা একদিন

-আচ্ছা যাওয়া যাবে একদিন

-সত্যিই

- হুম

-কবে?

-কোন একদিন

-হুম

কিছু দিন পর ......

-তোমাকে হঠাৎ কি করে চিনবো?

-আমি চিনলেই হবে

-না, আমি আগে দেখব তোমাকে

-এবার তোমার কথা শুনবইনা ......দেখি কত জিদ কর

-আচ্ছা যাও আর জিদ করবো না এখন

তূর্যের অনেকদিনের ইচ্ছে নিধির সাথে বাস্তবে দেখা হবে। আজ যখন সুযোগ এসেছে তখন আর হাত ছাড়া করতে চাইছে না। তাই সে চুল কাটলো ছুটো করে, সেভ করলো। যেহেতু তূর্য জানে নিধি তার বড় বড় চুল, খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখলে জংলী বলবে আর তখন রাগ করে চলেও যেতে পারে। খয়েরি রংয়ের একটা পাজ্ঞাবী পড়ল। অগোছালো তূর্যটা আজ অনেক পরিপাটি হয়ে গেল। একটা মেয়ের সাথে দেখা হবে তাই তার এতো পরিপাটি। আর মেয়েটা সত্যিই যদি আজীবন তার পাশে থাকতো তাহলে কত ভালোইনা হতো।

নিধি হাতে কালো একটা পার্স, কালো রংয়ের বোরকা আর ধবধবে সাদা হিজাবে সেজে দাড়িয়ে ছিল। বনানী এয়ারপোর্টে ঢুকতে যে রাস্তা সেখানে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ দেখলো একটা ছেলে বাস থেকে নেমে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে আর মোবাইল টিপতেছে। একটু কাছে আসাতে বুঝতে পারলো এটাই তূর্য। যদিও নিধির ধারনা ছিল তূর্য এরকমই হবে।

-একটু শুনবেন

-জী

-আমার একটু উপকার করবেন

-কি?

-তূর্যকে চিনেন আপনি

তখন তূর্য বুঝতে পারলো এটাই নিধি। নিধির হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহেদী দেওয়া। এরপর কিছুক্ষণ তূর্য নিধির দিকে তাকিয়ে রইলো যেন কথা বলতে পারছে না। নিধির চোখের গভীর মায়ায় একটা আশ্রয় খুঁজে পেল তূর্য তাই আর হারাতে চাইছে না তা। নিধির হাত ধরে তূর্য হাটা শুরু করলো। নিধিও কিছু বলছেনা তূর্যকে। নিধি বুঝতে পারছে তূর্যর জীবনে সেই একমাত্র মেয়ে যে তূর্যর অগোছালো জীবন গুছিয়ে দিতে পারে।

কেউ কাউকে কিছু বলছেনা শুধু হাটছে তো হাটছে। তূর্যর ইচ্ছে করছে নিধিকে নিয়ে হারিয়ে যেতে। হঠাৎ তূর্য দাড়িয়ে গেল, নিধির দুই হাত একসাথে ধরে নিধির সামনে হাঁটু গেড়ে বসল। কপালে নিধির হাত স্পর্শ করে মাটির দিকে তাকিয়ে বলল ভালোবাসি তোমাকে। নিধি তূর্যকে দাড় করিয়ে বললো আবার বলো।

-আই লাভ ইউ

-বাংলায় বলো

-আমি তোমাকে ভালোবাসি

-এটাও কি জেদ তোমার

-না পাগলামী

-আমি না বললে!

-মরে যাব

তখন নিধি নিশ্চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর নিধি নিজেই তূর্যর হাত ধরল।

-সত্যিই আমাকে ভালোবাস

-হুম

-সিরিয়াসলি

-হুম

নিধি তখন তূর্যর হাত চেপে ধরল।

-এতোদিন লাগল

-সিরিয়াসলি ভালোবাসতে পারছি কিনা তাই দেখছি।

এরপর একে অপরের হাত ধরে হাটা শুরু করল। তূর্যর আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না যে নিধিও তাকে ভালোবেসে ফেলছে। তাদের এই একসাথে পথ চলা যেন যুগযুগ ধরে ভালোবাসার সমুদ্রে দুইটি ফুটন্ত গোলাপের উচ্ছলতাকেই নির্দেশ করছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.