![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কথা বেশি একটা বলিনা চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি। সব সময় কল্পনা করি। কল্পনায় আমি সবসময় নিজের সাথে কথা বলি। আর সব সময় অন্যমনস্ক থাকি। আমার আশেপাশে কে কি করছে না করছে তার দিকে আমার তেমন খেয়াল থাকে না। অনেক সময় কাউকে খুজতে যেয়ে নিজেই হারিয়ে যাই। আর একটা কথা হলো আমার পথ মনে থাকে না তাই আমি একা হাটতে গেলে প্রায়শই পথ ভুল করি। পথে হাটাহাটি করার সময় কত জনের সাথে ধাক্কা খেয়েছি এ পর্যন্ত, তার হিসাব নেই। আমার সমস্ত জীবনটাকে কল্পনা মনে হয় কারণ সব কিছুই যাই ঘটে আমার সাথে তাই আমার কাছে কল্পনা মনে হয়। যদি কোন অঘটন ঘটে তাহলে ভাবি কল্পনা ভেঙ্গে গেলাই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার এই অসম্ভব রকম কল্পনাসক্ত দিনকে দিন বেড়েই চলছে।
বিশাল দৈত্যাকার বটগাছের নীচে একটা ছাউনি আছে। এ ছাউনিটি মানুষ ব্যবহার করেনা বললেই চলে। আশেপাশে তেমন বসতবাড়িও নেই। অদূরে একটা খোলা মাঠ আছে যার তীর ঘেসে বৃক্ষরাজি মাথা উচুঁ করে দাড়িয়ে আছে। উওর দিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলে একটা হাইওয়ে রাস্তা পাওয়া যাবে যা গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী বলে তেমন একটা যান চলাচল নেই বললেই চলে। প্রতিদিন মধ্যদুপুরে নিরব বটতলার ছাউনিতে বসে থাকে। এসময় বসে থাকার একটা কারণ অবশ্য আছে। নীলাও প্রতিদিন ঐ খোলা মাঠের তীর ঘেসে বৃক্ষরাজির মাঝে পদ্মকে নিয়ে ঘুরতে আসে। আর বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এই ছাউনিতেই আসে। প্রত্যেক দিনের মতো আজও নিরবের সাথে তাদের দেখা।
-কি খবর?
-হুম ...এইতো। তোমার?
-ভালোই
-প্রকৃতি দেখা শেষ তোমাদের?
-নাহ
-তাহলে চলে আসলে যে!
-এমনি, ভাবলাম তুমি একা বসে আছ তোমাকে সঙ্গ দেয়া উচিৎ।
-ও তাই
-হুম
-বস.... আসো
-এই পদ্ম আয় বসি একটু
পদ্ম আর নীলা ছাউনিতে বসল। নিরবের পাশেই নীলা বসে আছে ফলে কাছ থেকে নীলার দিকে তাকাতে একটু সঙ্কোচ লাগছিল নিরবের। নিরব পদ্মের দিকে তাকিয়ে নীলার সাথে কথা বলছিল।
-আচ্ছা তোমার সমস্যাটা কি বলোতো?
-কেন?
-কথা বলছো আমার সাথে আর তাকিয়ে আছ পদ্মের দিকে!
-ও
-কি?
-কিছুনা, আচ্ছা পদ্ম কিসে যেন পড়ছে এখন ক্লাস ফাইভে
-ভালো
-তো তোমার কি অবস্থা এখন?
-আমার আর কি অবস্থা!
-গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি এখনও ছ্যাঁকার উপরই আছ?
-আরে নাই, আর ছ্যাঁকাও খাইনি
নিরব এ কথা বলে হাসতে থাকে। নিরব একদৃষ্টে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটির সাথে ছোট্ট বেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছে। মাঝে হয়তো দুইজনের মাঝে অনেকদিন দেখা হয়নি পড়াশোনার জন্য। তবে এখন আবার সেই আগের মতোই ছেলেমানুষি করছে তারা।
-তুমি একটুও বদলাওনি
-এতোদিনে বুঝলে!
-হুম
-তুমিও বদলাওনি। এখনও আগের মতো এ জায়গাতেই বসে থাক। তাকাতে ভয় পাও। আচ্ছা এখনও কি কল্পনা দেখতে পছন্দ কর তুমি?
-হুম,
নিরব মিনমিনিয়ে বলল "এখন তোমাকে নিয়ে কল্পনা দেখছি "
-কি বললে?
-ও কিছুনা
-আরে কল্পবিলাসী এখন একটু বাস্তব হও
-তুমি শিখিয়ে দেও?
-এগুলো নিজ থেকে শিখে নিতে হয়। আগে ছোট ছিলাম এখনতো বড় হইছি, আগের মতো তোমার সাথে কথা বললে হবে।
-হবে হবে, আমি আর কিছু জানিনা
-বাদর একটা, ঠিক আছে
নীলা নিরবের নাছোড়বান্দা স্বভাব ভালোই সামাল দিতে পারে। নিরব যা চাই তা নীলা কখনও না দিয়ে থাকতেই পারেনা। প্রচন্ড জিদ চেপে বসে নিরব।
এভাবে করে ভালোই কাটছে নিরব আর নীলার দিনগুলো। নিরবের সবকিছুই নীলা জানত কিন্তু নীলার ব্যক্তিগত বিষয় কখনও নিরবকে বলে না নীলা। নিরব অন্য মেয়েদের থেকে নীলাকে একটু বেশিই ভয় পায়। নীলার কথা না শুনলে নিরবের খবর করে দেয়। অনেক সময় নীলার কথা শুনতে একটু দেরী হলেই রেগেমেগে দুই তিন দিন কথা বলা বন্ধ করে দেয়। নিরব তাই সবসময় নীলা কিছু বললে তার গুরুত্ব দেয় বেশি। নিরব অনেক চেষ্টা করে নীলা তাকে ভালোবাসে কিনা বুঝতে কিন্তু যতবারই এসব বিষয়ে আগাতে গেছে ততবারই নীলা রেগে যায়। তাই নিরব তাদের বন্ধুত্ব রক্ষার জন্য কখনও আর এই বিষয়ে আগায়নি।
দুই দিন পর নিরব তার এক বন্ধুর সাথে একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করতে গেল। যদিও উদ্দেশ্য বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডের সাথে পরিচিত হওয়া। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে নিরবের বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড আর সাথের বান্ধবী চলে গেল। নিরব আর তার বন্ধু কামরান হাটতে হাটতে কথা বলছে।
-দোস্ত
-তোর ভাবীকে কেমন দেখলি?
-ভালো
-আর কিছু দেখিসনি
-হুম, সিন্থিয়ার বান্ধবীটা অনেক ভালো
কামরান নিরবের মুখে রোমান্টিক হাসি দেখে খুব ভালো বুঝতে পারছে যে নিরব মায়াকে পছন্দ করে ফেলছে।
-আরে শালা বল তোর জন্য সব ঠিক করে দেই
-কি?
-মায়াকে তোর করে দেই
-না থাক
-মায়া যেমন সুন্দরী তেমনি ভালো
-হুম .....ও তো ফোন নম্বর দিল আমাকে
-যাক তাহলে মায়া তোকে পছন্দ করে ফেলছে এবার তুই আগালেই হবে
-বুঝলি আমি কারও প্রতি স্থির হতে পারিনা
-ওর সাথে প্রেম কর সব ঠিক হয়ে যাবে
এরপর একমাস পর নিরব আর মায়া একে অপরকে ভালোবেসে ফেলল। তাদের এ সম্পর্কের কথা নিরব নীলাকে জানাল।
-নীলা
-হুম
-প্রেম করব
-কার সাথে
-মায়া
-সিরিয়াসলি
-হুম
-এর আগে কয়েকটা প্রেম করে তো ব্রেক আপ করলে,
-এবার আর এরকম হবে
-তাহলে তো ভালোই
-নীলা
-আচ্ছা এভাবে কি দেখছ?
-তোমাকে
-যাও মায়াকে দেখ
-তোমার সাথে যেরকম ফ্রি মায়ার সাথে তো এরকম না
-হয়ে যাবে
-হবেনা। তোমার চোখে অসম্ভব মায়া আছে
-তো
-কিছুই বুঝনা তুমি
-এতো বুঝে লাভ নেই
-একটুতো বুঝবে
নিরব আসলে যা বুঝাতে চাচ্ছে তা নীলা আরও অনেক আগে থেকেই বুঝতে পারছে। শুধু নিরবকে বুঝতে দিচ্ছে না। আসলে নীলাও নিরবকে অসম্ভব ভালোবাসে। নীলা শুধু নিরবের দিকে তাকিয়ে ছিল সে কখন বলবে। কিন্তু বেচারা নিরব নীলার ভয়ে তা বলতেই পারেনি কখনও। আজ যখন নিরব মায়াকে নিয়ে স্বপ্নে বিভোর তখন নীলা বুঝতে পারল নিরবকে এতোটা শাসন করা ঠিক হয়নি। যদিও নিরব নীলার ডাকে অসংখ্য মায়াকে ছেড়ে চলে আসতে পারে। কিন্তু নীলা নিজের সুখের জন্য তো অন্য মেয়েকে কষ্ট দিতে পারেনা।
প্রায় তিন মাস পর নীলার সাথে নিরবের একসাথে অনেক সময় কাটানো হলো।
-কি ব্যাপার?
-তেমন কিছুনা
-ভালো আছ
-হুম, তুমি?
-এইতো
-আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে
-তাই
-তুমি খুব সুন্দরী
-হইছে তেল মারা বন্ধ কর
-শাড়িটাও সুন্দর
-ধন্যবাদ
-হাতের পার্সটাও
-হইছে তোমার
-কি?
-আমাকে দেখা
-না
-আর হতে হবেনা, আসল কথা বলি
-বল
-আজকের পর আমাদের আর দেখা নাও হতে পারে
-কেন?
-আমরা সবাই ঢাকা চলে যাব
-তাহলে কি হলো ফোনে যোগাযোগ করব
-না, আজই শেষ কথা। আর কোনদিন দেখা হবেনা আমাদের
-এরকম করছ কেন তুমি?
-বাই
এটাই নীলার মুখে শোনা শেষ কথা। এরপর নীলা চলে গেল। নিরব শুধু দেখছে কেমন যেন হয়ে গেছে নীলাটা। নিরব নীলার চোখে জমে থাকা জল দেখে হতভম্ব হয়ে গেছিল। যে মেয়েটা তাকে কান্না করতে দেখলে কাপুরুষ বলতো, এতো শক্ত মনোবলের ছিল সেই আজ কান্না করছে। নিরব আর কিছুই করতে পারেনি। অনেক চেষ্টা করেও নীলার কোন খুঁজ সে আর পায়নি।
আজ পাঁচ বছর পর এখনও নিরব নীলাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে আর স্বপ্ন ভেঙে গেল চিৎকার দিয়ে উঠে। তখন তার পাশে শায়িত মায়া (তার বউ) তাকে আগলে রাখে। গভীর ভালোবাসা দিয়ে আজও সে নিরবের মন থেকে পুরনো স্মৃতি মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করেই যাচ্ছে।
©somewhere in net ltd.