নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কল্পদেহী সুমন

খন্দকার মো: আকতার উজ জামান সুমন

কথা বেশি একটা বলিনা চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি। সব সময় কল্পনা করি। কল্পনায় আমি সবসময় নিজের সাথে কথা বলি। আর সব সময় অন্যমনস্ক থাকি। আমার আশেপাশে কে কি করছে না করছে তার দিকে আমার তেমন খেয়াল থাকে না। অনেক সময় কাউকে খুজতে যেয়ে নিজেই হারিয়ে যাই। আর একটা কথা হলো আমার পথ মনে থাকে না তাই আমি একা হাটতে গেলে প্রায়শই পথ ভুল করি। পথে হাটাহাটি করার সময় কত জনের সাথে ধাক্কা খেয়েছি এ পর্যন্ত, তার হিসাব নেই। আমার সমস্ত জীবনটাকে কল্পনা মনে হয় কারণ সব কিছুই যাই ঘটে আমার সাথে তাই আমার কাছে কল্পনা মনে হয়। যদি কোন অঘটন ঘটে তাহলে ভাবি কল্পনা ভেঙ্গে গেলাই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার এই অসম্ভব রকম কল্পনাসক্ত দিনকে দিন বেড়েই চলছে।

খন্দকার মো: আকতার উজ জামান সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার দাদা

২৩ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:২৫

মৃত্যু বিষয়টি সব সময় অনাকাঙ্খিত। কখন কার জীবনে তা হঠাৎ চলে আসে তা বুঝা বড় মুশকিল। আমরা সবাই জানি প্রত্যেকটি প্রাণিই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে, কারণ আল্লাহ তায়ালা ইহকাল থেকে পরকালে যাওয়ার পথ হিসেবে মৃত্যুকেই বাছাই করেছেন। তাই মৃত্যু অনাকাঙ্খিত কিংবা যতই সময়ের সাথে বেমানান হোকনা কেন তা ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ঠিক তেমনি আমার দাদা আবুল আজাদ খন্দকার মৃত্যুর এই স্বাভাবিক পর্যায় পাড়ি দিয়েছেন আজ হতে এক বছর পূর্বে। যদিও তিনি চলে যাবেন হঠাৎ করে এভাবে তা কারোরই চিন্তা ভাবনায় আসেনি। হয়তো তার অনেক বয়স হয়েছিলো, অনেক অসুস্থ ছিলো সে সময়। কিন্তু মৃত্যু যে তার খুব নিকটবর্তী ছিলো তা আমরা একচুল পরিমানও অনুধাবন করতে পারিনি। তিনি জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। জীবনে টিকে থাকার জন্য অনেক সংগ্রাম করেছিলেন। তার মুখ থেকে বিভিন্ন গল্প শুনা যেত। এসব গল্পের মধ্যে বৃটিশ যুগের গল্প,অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের গল্প, যুদ্ধের পূর্বে পাকিস্তানের গল্প উল্লেখযোগ্য। তিনি বিভিন্ন ভাষায় চমৎকার ভাবে কথা বলতে পারতেন।বাংলা ভাষার পাশাপাশি উর্দু, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় স্বতস্ফুর্ত ভাবে কথা বলতে পারতেন। এসব ভাষায় তিনি বিভিন্ন কথোপকথন, গল্প ও গান আমাদের শুনাতেন। তিনি ইপিআর-এ কর্মরত ছিলেন অনেকদিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের পূর্বে চাকরি ত্যাগ করে চলে আসছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকেই তার জন্য সংসার চালানো সবচেয়ে কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। তবুও শত কষ্ট সহ্য করে সে সম্মুখে অগ্রসর হয়েছিলো। তিনি ছিলেন সুঠাম দেহের অধিকারী। গায়ের রং কালো ছিলো তার। শক্তিতে তার সাথে কয়েক গ্রামের মানুষ হেরে যেত নিশ্চিত। তবে তিনি শক্তিশালী হলেও কখনও কারও সাথে লাগতে যাননি। সমস্ত শক্তি তিনি ব্যয় করেছিলেন জীবন যুদ্ধে নিজেকে ও তার পরিবারকে টিকিয়ে রাখার জন্য। অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিলো তার জীবন নিয়ে। অনেক ধরনের সমস্যার সঠিক সমাধান তিনি তাই অতি সহজেই দিতে পারতেন। তিনি ছিলেন অতি সাধারণ ও সহজ সরল একটা মানুষ। তিনি যে কতটা সহজ সরল ছিলেন তা তার সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা থেকে অতি সহজেই বুঝা যায়। তার এই সহজ সরলতার সুযোগ নিয়ে অনেক মানুষ নানা সুবিধা ভোগ করেছে তার কাছ থেকে। ঐসব সুবিধাবাদী মানুষগুলো আমার দাদাকে ঘিরে না রাখলে দাদা অনেক কিছুই করতে পারতেন। তিনি অনেক পরিশ্রমী ছিলেন। বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি প্রচুর পরিশ্রম করতেন। তিনি হয়তো পরিশ্রমের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন যার কারণে তিনি বার্ধক্যে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হোন। তার মতো একটা সুঠামদেহীর মানুষ সহজেই এতোটা বার্ধক্যের ভারে নুব্জ্যে যাওয়ার কথা নয়, হয়তো এরজন্য তার অতিরিক্ত পরিশ্রমই দায়ী। বার্ধক্যে তিনি নানান ধরনের অসুখবিসুখে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পরে যান। বিছানায় পরে যাওয়ার পর থেকে বড্ড কষ্টকর হয়ে গিয়েছিলো তার জন্য। একটা মানুষ হাত-পা থাকা সত্ত্বেও চলতে না পারলে, নিজের কাজ নিজে করতে না পারলে কতটা কষ্ট লাগে তা তাকে দেখলে বুঝা যেত। এতো অসুস্থতা ও প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও সে সর্বদা ঈমান ঠিক রেখেছিলেন। গতবছর রমজান মাসে তিনি একটা রোজাও ভাঙ্গেনি। এমনকি তাকে হুইল চেয়ারে করে দেড়-দুই মাইল দূরে ঈদগাহ ময়দানেও নেওয়া হয় ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করার জন্য। কিন্তু কে জানতো এটিই তার শেষ ঈদের নামাজ ছিলো, এটিই তার জীবনের শেষ ঈদের আনন্দ ছিলো। এরপরের দিন হঠাৎ করেই খুব অসুস্থ হয়ে তিনি চলে গেলেন এ পৃথিবী ছেড়ে, আমাদের ছেড়ে চিরতরে। তার পুরো জীবনের সব কষ্টের ফলাফল আল্লাহ তাকে দিবেন অবশ্যই। আল্লাহ তাকে বেহেশত দান করবেন এ প্রার্থনাই করি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.