নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কল্পদেহী সুমন

খন্দকার মো: আকতার উজ জামান সুমন

কথা বেশি একটা বলিনা চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি। সব সময় কল্পনা করি। কল্পনায় আমি সবসময় নিজের সাথে কথা বলি। আর সব সময় অন্যমনস্ক থাকি। আমার আশেপাশে কে কি করছে না করছে তার দিকে আমার তেমন খেয়াল থাকে না। অনেক সময় কাউকে খুজতে যেয়ে নিজেই হারিয়ে যাই। আর একটা কথা হলো আমার পথ মনে থাকে না তাই আমি একা হাটতে গেলে প্রায়শই পথ ভুল করি। পথে হাটাহাটি করার সময় কত জনের সাথে ধাক্কা খেয়েছি এ পর্যন্ত, তার হিসাব নেই। আমার সমস্ত জীবনটাকে কল্পনা মনে হয় কারণ সব কিছুই যাই ঘটে আমার সাথে তাই আমার কাছে কল্পনা মনে হয়। যদি কোন অঘটন ঘটে তাহলে ভাবি কল্পনা ভেঙ্গে গেলাই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার এই অসম্ভব রকম কল্পনাসক্ত দিনকে দিন বেড়েই চলছে।

খন্দকার মো: আকতার উজ জামান সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: ইতুর বিয়ে (১ম ও ২য় পর্ব)

১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১:৪৮

১ম পর্ব

ইতুর বিয়েটা হয়তো এবার হয়েই যাবে । কথা যা ঠিকমতো চলছিলো তা দেখে মনে হচ্ছে এবার আর কে ঠেকাবে তার বিয়ে । এবার বিয়েটা হয়েই ছাড়বে তার । একদিকে মরিয়া তার বাবা তার বিয়ে দেওয়ার জন্য, অন্যদিকে পাড়ার ছেলেদের অতিষ্ঠ যন্ত্রণায় বিয়ে দেওয়াটা এক রকম বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে । বর্তমান যুগের কিছু উঠতি যুবক অল্প বয়সে এতো অশৃঙ্খল হয়ে যায় যে যার জন্য সমাজের কিছু মেয়েরা ঠিকমতো বাহিরে যেতে পারেনা । বের হলেই এসব অভদ্র, নিম্ন মনের ছেলেদের মুখোমুখি হতে হয় । কখনো কখনো এসব ছেলেদের ভয়ে মেয়েরা থুবড়ে পড়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে নতুবা পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে বিয়ের পিড়িতে করে পাড়ি দিতে হয় অচেনা দেশে । ঠিক এমনাটাই ঘটতে চলছে আজ ইতুর সাথে । ছেলে পক্ষ খুব নামকরা । ছেলে পক্ষের পরিবারের সবাই শিক্ষিত খুব । ইতুর বাবাও ভাবলো ভালোই হবে বিয়েটা হয়ে গেলে । কিন্তু ইতু সে কি মেনে নিবে এসব । সবেমাত্র এইচএসসি শেষ করা মেয়েটা স্বপ্ন দেখছিলো স্নাতক পাশ করবে, শিক্ষিত হবে । আর এমন স্বপ্নের মাঝে এ কি ফাটল ধরছিলো ! আর তার স্বপ্ন জুড়ে ছিলো আরেকজন মানুষ, যে তার জীবনে না আসলে তার জীবন সেই কবেই ব্যর্থতার সাগরে তলিয়ে যেত । ইতু যখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে পরাজিত সৈনিক, ঠিক সেই মুহুর্তে ইতুর পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ ছিলোনা । আর তখনই ফেরেশতার মতো হাজির হলো ইমন নামের একজন । সে ইতুর মনে বেঁচে থাকার নতুন আশা দিয়েছে আর সর্বদা পাশে থাকার আশ্বাসও । আর পাশে থাকতে থাকতে তারা যে কি করে এতোটা গভীর প্রণয়ে জড়িয়ে যাবে তা কে জানতো । কিন্তু তাদের পথে বাঁধ সাধলো ইতুর বাবা । সে ইতুর বিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছিলো। যেন মেয়েটাকে কোন রকম গুছিয়ে কারো কাধে ঘুচে দিতে পারলেই তার শান্তি । মেয়েটার সুখ নিয়ে তার যেন বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই । হয়তো পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ইতুর বাবার এমন করাটা স্বাভাবিকই ছিলো, তবুও মেয়ের ইচ্ছে, স্বপ্নগুলোকে ধ্বংস করার আগে একটু ভাবাও দরকার ছিলো তার। এই একবিংশ শতাব্দীর মানুষগুলোই যেন এমন, ভাবনার গভীরতায় তারা যেন পৌঁছতেই পারেনা। সব সময় কিসের যেন একটা তাড়ায় থাকে, স্থির হতে পারেনা কোন ভাবেই।
ইতুকে পাত্রপক্ষ দেখে খুব পছন্দ করে ফেলেছে, এমনকি তারা একটি আংটিও দিয়ে দিলো। ইতুর বাবাও খুব খুশি হয়ে গেল। কিন্তু ইতু সে কি খুশি? নাহ, সে একটুও খুশি হতে পারছেনা। পুরো আকাশটা যেন ভেঙে গেল। সে কোন ভাবেই দাঁড়াতে পারছিলোনা। ইতু খুব চিৎকার দিলো তখন, পুরো পাড়ার মানুষ ছুটে এলো তার চিৎকার শুনে। পাত্রপক্ষ তখন একটু নড়েচড়ে বসলো। পাত্রের মা কিছু একটা আঁচ করতে পেরে ইতুর কাছে আসলো। ইতুকে সে পরম স্নেহ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করলো যে তাদের কাছে ইতু খুব ভালো থাকবে, ইতু তাদের কাছে থাকলে আরও ভালো করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। ইতু শুধু চুপ হয়ে অশ্রু ঝরাচ্ছিলো! পাত্রের মায়ের কথার সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলছে সবাই। ইতুর মা-বাবা, চাচা-চাচী সবাই, এমনকি ইতুকে অপছন্দ করে এমন মানুষগুলো যেন আজ ইতুর ভালো ছাড়া আর কিছুই বুঝেনা। পুরো পৃথিবী আজ ইতুর সুখ নিয়ে ব্যস্ত! শুধু ইতুই বুঝতে পারছেনা সুখটুকু কোথায়!
যে ছেলেটার জন্য তার জীবন এতোটা সুন্দর হয়ে উঠছিলো, সে আজ তাকে খুব ভালোবাসে। তার ভালোবাসা ছাড়া একদিনও চলতে পারেনা। এই ছেলেটাকে ইতু দুঃখের সাগরে ছেড়ে দিয়ে কি করে থাকবে। নিয়তি কি সহ্য করবে এই অবিচার। দূর কন্ঠে ইমনের কন্ঠ শোনা যাচ্ছে আর অপর প্রান্তে ইতুর কান্নার শব্দ।

-কি হয়েছে ইতু? তুমি কাঁদছো কেন?
-আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আজ। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
-কি বলো এসব! আমার সাথে তুমি এমনটা করতে পারলে!
-আমার কিছুই করার ছিলোনা, আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সব শেষ।
-মানে কি?
-তুমি কি বুঝোনা এখনো, কি শেষ হওয়ার বাকি আমার।
ইতুর কান্নার শব্দ। অতঃপর দূরালাপ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

২য় পর্ব

ভালোবাসা কখনো নিশ্চুপ হয়ে যায়। খুব অসহায়ও হয়ে যায়। সমাজ, সংসার, পরিস্থিতি সবকিছুই মিলে কখন যে স্বাভাবিক জীবন চলার গতিকে পাল্টে দেয় তা বুঝাই যায়না। যদি মানুষ আগে থেকেই আঁচ করতে পারতো তার সাথে কি ঘটতে চলেছে তাহলে সে অবশ্যই এমন কিছু করতো যা তার জীবন চলার গতিকে পাল্টে না দেয়, আর যদি সে কোন ভাবেই কিছু করতে না পারতো তাহলে আগে থেকেই সেই পরিস্থিতি মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারতো। কিন্তু আজ ইমন কিংবা ইতুর সাথে এমন কিছুই ঘটতে চলছে যা কখনোই তারা ভাবেনি।

হঠাৎ করেই ইতুর বাড়িতে মানুষজন এসে ভীড় করে। তাকে শাড়ি পরানো হয়েছে পাত্রপক্ষকে দেখানোর জন্য। ইতুর কাছে সবটাই স্বপ্ন মনে হচ্ছে। ইতু কিছু বুঝতে পারার আগেই সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর ইমন সে তো সকালেই ইতুর সাথে অনেক কথা বলছিলো। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি হবে সবকিছু নিয়েই কথা হয়েছে। কিন্তু এতসব পরিকল্পনা কি এই হঠাৎ ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যাবে! নিয়তির এই অবিচার হয়তো নিয়তির স্রষ্টাও পছন্দ করছেননা, কিন্তু স্রষ্টারই বা কি করার আছে তা না করে!

ঘড়ির কাটায় প্রায় চারটা পনেরো বাজে। ইমনের চোখ ভর্তি জল। সে ইতুকে খুব ভালোবাসে। এই অসময়ে এরকম কিছু ঘটবে তা তার কল্পনাতেও ছিলোনা।

ইমন ইতুকে বারবার ফোন দিয়েও পাচ্ছেনা। এক সময় ইতুই ফোন দেয় তাকে। ইমন ইতুকে মনে প্রচন্ড জোর নিয়ে বলে "তুমি চলে আসো ", এরপর যা করার তা আমি করবো। কিন্তু ইতু কিছু বলতে পারছেনা, কারণ সে এতগুলো মানুষের মাঝ থেকে কি করে পালিয়ে আসবে? কি করেইবা একা আসবে এতোটা পথ? ইতু খুব কান্না করছে শুধু আর বলছিলো "আমি পারলামনা তোমাকে নিয়ে ঘর বাঁধতে, আমাকে মাফ করে দিও। " ইমন খুব চিৎকার দিয়ে ফোন কেটে দিলো। আর অঝোরে কাঁদতে থাকলে। আসলেই ইতু আর ইমনের পারিপার্শ্বিক পরিবেশটা এতোটাই অস্বাভাবিক যে তাদের পক্ষে কোনকিছু করাই সম্ভব নয়। একটু পর আবার ইতুর ফোন -
-আমি এখন রুমে একা। জানি তুমি খুব কষ্ট পেয়েছ, কিন্তু আমি কি কম পেয়েছি?
-তুমি কেন কষ্ট পাবে? বিয়ে করতেছো বড়লোক পরিবারে; আদর, ভালোবাসা কোনকিছুর অভাব হবেনা তোমার।
-কিসের আদর, ভালোবাসা! তোমার আদর, ভালোবাসার কাছে দুনিয়ার সবকিছুই আমার কাছে মরীচিকা।
-যদি তাই ভাবতে তাহলে এখন তুমি আমার বুকে থাকতে অন্য কারও বুকে নয়।
-আমি অন্যের ঘরে থাকলেও মনটা তোমার কাছে থাকবে। তোমার সাথে আমি সব সময় দেখা করবো। যা চাও সবকিছু দিবো।
-আমি চাইনা এসব। তুমি যদি সত্যিই কারও ঘরনী হয়ে যাও তাহলে আমার সাথে আর কোনদিন সম্পর্ক থাকবেনা। আমি চাইনা আমার জন্য তোমার সংসারে আগুন লাগুক, আমার জন্য তুমি সবার কাছে খারাপ হও।
-কেউ জানবেনা সত্যি। তোমার সাথে কথা না বলে আমি যে থাকতে পারবোনা।
-ভুলে যাবে আমাকে। স্মামী, সংসার, সন্তান নিয়ে তুমি একদিন ব্যস্ত হয়ে যাবে আর আমাকে তখন তোমার মনেই পরবেনা।
-পরবে অবশ্যই। তুমি যদি আমার সাথে সম্পর্ক না রাখো তাহলে আমি সুইসাইড করবো।
-আচ্ছা বলবো, আর যেদিন ভুলে যাবে সেদিন থেকে আর বলবোনা।
-আমার কাছে চলে এসো। তোমার বুকে মাথা রেখে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
-কোনদিন আমাকে স্পর্শ করতে দিলেনা, ধর্ম যাবে বলে। আর আজ বলছো এ কথা! আবার তোমার স্মামী কি তোমাকে আমার বুকে মাথা রাখতে দিবে?
-আমার যদি স্মামী বলে কেউ থাকে সে হলে তুমি। তোমার সাথে দেখা করতে আমি কারও কাছে অনুমতি চাইবো কেন?
-এতো আবেগের কথা। এখনো তুমি গভীর আবেগের মাঝে আছ। বাস্তবতা এরকম নয়, তুমি যেমনটি ভাবছো।
-আমি আবেগের বশে না, সত্যিই বলছি।
-এতো আরও বেশি আবেগের কথা।
-আমি রাখি এখন, মা আসছে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো। পশ্চিম দিগন্তের লাল আভা ক্রমশ আঁধারে তলিয়ে যাচ্ছে। ইতুর কোন সাড়া নেই অনেক্ষণ ধরেই। ইমনও আর ইতুকে ফোন করছেনা, কেমন যেন একটা দ্বিধা আর কষ্ট ইমনের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে চলছে। ইমন পারছেনা কোন কিছু করতে, কাউকে কিছু বলতেও। বুক ফেটে বারবার কান্না আসছে, কিন্তু কাঁদতেও পারছেনা।

ইমন কারও সাথে তেমন মিশতে পারছেনা। কেমন যেন একটা চাপা কান্না তাকে সব সময় তাড়া করে বেড়াচ্ছে। সবার থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখতেই সে ঘুমের মাঝে ডুবে থাকার সিদ্ধান্ত নিলো।

রাত প্রায় এগারোটা বাজে। ইতু অনেক ফোন করেও ইমনকে পাচ্ছেনা । অনেকগুলো ফোন করার পরও ইমনের কোন সাড়া না পেয়ে ফোন রেখে দিলো । এরপর ইমন ঘুম থেকে উঠে যখন ইতুর এতো মিসড কল দেখলো তখনই ফোন বেক করলো কিন্তু ইতুও তখন কোন সাড়া দিচ্ছিলোনা । একটু পর মেসেজ আসলো ইতুর কাছ থেকে । আর মেসেজের লেখা দেখে ইমনের এতোটাই কষ্ট লাগলো যে সে তার কাছে থাকা দুই পাতা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো । কি এমন লেখা ছিলো যা ইমনের সহ্য হয়নি ! কিইবা এতো কষ্ট পেল যে সে গভীর ঘুমের জন্য ব্যকুল হয়ে পড়লো ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.