![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কথা বেশি একটা বলিনা চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি। সব সময় কল্পনা করি। কল্পনায় আমি সবসময় নিজের সাথে কথা বলি। আর সব সময় অন্যমনস্ক থাকি। আমার আশেপাশে কে কি করছে না করছে তার দিকে আমার তেমন খেয়াল থাকে না। অনেক সময় কাউকে খুজতে যেয়ে নিজেই হারিয়ে যাই। আর একটা কথা হলো আমার পথ মনে থাকে না তাই আমি একা হাটতে গেলে প্রায়শই পথ ভুল করি। পথে হাটাহাটি করার সময় কত জনের সাথে ধাক্কা খেয়েছি এ পর্যন্ত, তার হিসাব নেই। আমার সমস্ত জীবনটাকে কল্পনা মনে হয় কারণ সব কিছুই যাই ঘটে আমার সাথে তাই আমার কাছে কল্পনা মনে হয়। যদি কোন অঘটন ঘটে তাহলে ভাবি কল্পনা ভেঙ্গে গেলাই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার এই অসম্ভব রকম কল্পনাসক্ত দিনকে দিন বেড়েই চলছে।
অনবরত মোবাইলে অচেনা নাম্বার থেকে কল আসায় এক প্রকার ভয়েই রুপালী রিসিভ করছেনা । ৬-৭ বার বাজার পর একবার ধরলো সে সাহস করেই ।
-হ্যালো
-এটা কি নিবিরের নাম্বার ?
-জী না, রং নাম্বার
বলেই রুপালী কল কেটে দিলো । বাসায় তখন সে আর তার ২ বছরের ছোট বোনটি ছিলো শুধু । কিছু অঘটন ঘটলে তো তার মা এসে তার খবর করে দিবে । তাই এরপর আরও অনেকবার মোবাইল বাজার পরও সেই নাম্বার থেকে সে আর রিসিভ করলোনা । চুপচাপ বসে বসে ছোট বোনের জামা-কাপড় গুছিয়ে রাখছে ।
অনেক সময় কেটে কেটে গেল । তবুও রুপালীর মা এখনো আসছেনা । এদিকে তার প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার কথা একটু পরেই । রুপালী খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল । সেই কখন সে দাদার বাসায় গেছে এখনো আসছেনা । নানান কিছু রুপালীর মাথায় ঘুরছে । এমন সময় রুপালীর মা চলে আসলো । রুপালী প্রাইভেট পড়ড়ে যাবে তাই তার নিরাপত্তার জন্যই ঘরের মোবাইলটি সে নিয়ে যায় সাথে করে । আজও যথারীতি সে মোবাইলটি সাথে নিয়ে বের হলো । সাথে তার বান্ধবী লিজাও তার সাথে যাচ্ছে । লিজাকে এরকম অচেনা নাম্বার থেকে কল আসছে বলায় লিজা তো ভেবেই বসছে কেউ হয়তো রুপালীকে পছন্দ করে তাই বারবার কল দিচ্ছিলো কথা বলার জন্য । রুপালী সবেমাত্র নবম শ্রেণির ১ম সাময়িক পরীক্ষা দিলো । এ বয়সে সব মেয়েদেরই একটু উড়ুউড়ু ভাব দেখা দেয় । রুপালীও এর বাহিরে নেই । আর লিজার কথা শুনে তো রীতিমতো নতুন আগ্রহ জন্মালো তার সেই অচেনা নাম্বারের মানুষটির সাথে কথা বলতে । আর এমনই সময় সেই অচেনা আগন্তুক রুপালীকে কল দিলো । রুপালী প্রবল আগ্রহ সহকারে রিসিভ করলো ।
-আচ্ছা আপনি যেই হোন কিছুক্ষণ কথা বললে তো কোন সমস্যা নেই, তাইনা । রং নাম্বার বলে তো আর আমি ভূত হয়ে যাইনি । মানুষই তো আমি । আর মানুষ তো মানুষের সাথে কথা বলবেই।
-জী, বলেন আপনি । (রুপালী)
-আমি মিলন । আপনি ?
- আমি রুপালী
-বাহ । বেশ সুন্দর নাম তো ।
-ধন্যবাদ
-কি করছেন ?
-এইতো একটু বের হলাম প্রাইভেট পড়তে যাবো বলে ।
-তো কি যাবেন না ?
-নাহ
-কেন ?
-এমনই
-তাহলে তো কথা বরার সময় বাড়লো আরও (হাসি দিচ্ছে মিলন )
-হয়তো
-কেন আপনার কি কথা বলতে ভালো লাগছেনা ? হয়তো বলেন যে ?
-তা বলিনি আমি । আপনি ভুল বুঝছেন ।
-তাহলে
রুপালীর খুব হাসি পেল তখন । তাই আর কিছু না বলে রুপালী হাসতেছে ।
-বাহ ! তোমার হাসিটা তো খুব সুন্দর ।
-জ্বী, না । সামনাসামনি ভালো লাগবেনা আমার হাসি এতোটা ।
-কি যে বলো । এতো সুন্দর যার হাসি তাকে সামনে থেকে দেখলে তো আরও কত না জানি ভালো লাগবে ।
-তাই
এভাবেই তাদের কথা শুরু । একে অপরকে জানতে শুরু করা । রুপালীর সারাদিন ভাবনা জুড়ে কেবল এই অচেনা মানুষটিই থাকে । তার পড়াশোনা যেন এবার সত্যি সব জলে গেল । পড়াশোনায় বিশাল অবহেলা করতে শুরু করলো সে । কি জন্য যেন সারাদিন সে শুধু সেই অচেনা আগন্তুকের আশায় থাকে । এভাবে বেশ কয়েক মাস যাওয়ার পর তারা বুঝতে পারলো তারা একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেছে । প্রথমে যদিও মিলনই তাকে বলেছে ভালোবাসে, এরপর কয়েক দিন পর রুপালীও হ্যাঁ বলে দিলো । সেই থেকে তাদের সম্পর্ক শুরু । ভালোবাসার গভীরতায় পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা । মোবাইলে এমএমএসের মাধ্যমে একজন আরেকজনকে দেখা ছবিতে । এরপর যেন ভালোবাসা আরও বেড়ে গেল । এভাবে করে কেটে গেল প্রায় দুই বছর ।
রুপালীর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে কয়দিনের মধ্যেই । এমনই সময় সেই মিলনই কেমন যেন পাল্টে যেতে শুরু করলো । কেমন যেন তার ভালোবাসা কমতে শুরু করলো । তার কথায় যেন শুধু সম্পর্কটাকে শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছে ফুটে উঠছে । মিলনের পরিবার নাকি রুপালীর সাথে তার সম্পর্ক মেনে নিতে পারবেনা । মিলন তাই তার মায়ের পছন্দ মতোই বিয়ে করবে ।মিলনের ভাষ্যমতে তারা খুব ধনী । তাদের পরবিারের অনেক ব্যবসা আছে । মিলনকে সারাদিন ঐ ব্যবসাতেই সময় দিতে হয় । আর রুপালীর পরিবার মধ্যবিত্ত । তাই নিরবও চাইতোনা রুপালীকে আর । তার পক্ষে তাকে বিয়ে করা সম্ভব নয় এও সে রুপালীকে বলে দিলো । কিন্তু রুপালী যে তাকে তার সমস্ত মন জুড়ে স্থান দিয়ে দিয়েছে । তাকে ছাড়া যে সে আর কাউকেই সেই জায়গায় দিতে পারবেনা । তার আকাশ জুড়ে কেবল যেন শুধু মিলনের নামই উড়ে বেড়ায় । কয়দিন পরই পরীক্ষা আর এ সময় যদি এমন কিছু ঘটে যায় তার জীবনে তাহলে কি করে সে পরীক্ষা দিবে কিছুতেই বুঝতে পারছেনা । আর পরীক্ষার আগের রাতেই ঘটে গেল সবচেয়ে অঘটন । মিলন রুপালীকে ফোন দিয়ে বললো তার মায়ের পছন্দের মেয়ের সাথেই তার এ্যাংগেজমেন্ট হয়ে গেছে । বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে আছে, কয়েক বছর পর বিয়ে করবে । রুপালী এ খবর শুনে আর কিছু তাকে বলতে পারলোনা । কান্না করে বিছানায় উপুড় হয়ে পরে রইলো সারা রাত । সকালেই যে তার পরীক্ষা, তার যেন সেদিকে কোন খেয়ালই নাই ।
সকালে পরীক্ষা দিতে গেল সে । পরীক্ষার মাঝেও বেশ কয়েকবার সে কান্না করে দিলো । রুপালী তাকে কতটা ভালোবসে ফেলেছে সেটা সে নিজেও জানেনা । কিছুতেই যেন সে করতে পারছেনা । কোন কিছুই তার ঠিকমতো চলছেনা । প্রায় দশ-বারদিন পর আবার মিলন তাকে ফোন দিলো, কথা বললো । আবার শুরু হলো তাদের আগের মতো কথা বলা । এভাবে করে বহুদিন কেটে গেল । রুপালী এসএসসি পাশ করে কলেজে উঠে গেল । বেশ ভালোই চলছে তখনো তাদের সম্পর্ক । কলেজের এক বান্ধবীকে সব বলায় সে তাকে বললো এবার দেখা করতে । এতো দিনের একটা সম্পর্ক এভাবে না দেখেই সামনাসামনি কি করে বিশ্বাস আর বিশ্বাস করা যায় । তাই এবার রুপালী দেখা করতে চাইলো তার সাথে । সেও রাজি হয়ে গেল । রুপালীর সাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা করবে । যেহেতু রুপালীর বাসা বিশ্ববিদ্যায়ের কাছেই তাই এই স্থান ঠিক বাছাই করা । মিলনের বাড়ি পাবনাতে । পাবনা থেকে রাজশাহী আসতে তেমন বেশি সময়ও লাগেনা ।
রুপালী ঠিক সকাল ১০.৩০ এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ে উপস্থিত হলো তার বান্ধবীকে নিয়ে। এরপর মিলনকে ফোন দেওয়ায় সে বললো সে কোন একটা হলে আছে । আসতেছে বলে ফোন কেটে দিলো । এরপর আরও বহুবার ফোন দেওয়ার পরও সে ফোন রিসিভ করলোনা আর । এভাবে করে কেটে গেল বহু সময় । সন্ধ্যার দিকে কোন কূল কিনারা না পেয়ে বাসায় চলে গেল রুপালী । সে শুধু কান্নাই করছে বাসায় যেয়ে । তার মা বুঝতে পারলো বিষয়টি, কারণ সেও জানতো বিষয়টি । আর খিচু বললোনা তাকে তাই । এরপর রাত দুইটার দিকে মিলন ফোন দিয়ে বললো সে খুব কাজে আটকে গেছিলো তাই আসতে পারেনি । রুপালীর ভালোবাসা তার প্রতি এতোটাই প্রখর ছিলো যে সে কিছুতেই নিজেকে বুঝাতে পারেনা যে মিলন আসলে তাকে নিয়ে খেলা করছে । তার ভালোবাসা নিয়ে সে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে । তীব্র ভালোবাসার অজুহাতে মিলন রুপালকে বুঝাতে সমর্থ হলো যে সে আসলে আসতে যেয়েও আসতে পারেনি । এরপর যেন মিলনের ভালোবাসা আরও বেড়ে গেল । আরও মধুর মধুর কথা বলা শুরু হলো তাদের ।
রুপালী একদিন হঠাৎ করেই মিলনের মোবাইল নাম্বার দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করে একটা আইডি পেল । সেই আইডিতে যে ছেলের ছবি সে দেখতে অনেক কালো আর খাটো । রুপালী ছবিতে যে মিলনকে চিনে সে অনেক সুন্দর একটা ছেলে । কিন্তু ফেসবুকে মিলনের মোবাইল নাম্বার দিয়ে খোলা আইডির মানুষটিকে দেখে সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল । তার এই সন্দেহ দূর করার জন্য সে তখনই মিলনকে ফোন দেয় ।
-আজ আমার সাথে সত্যি করে কিছু বলবেন ?
-হ্যাঁ, বলো ।
-আপনার মোবাইল নাম্বার দিয়ে যে আইডি ফেসবুকে আছে সেটাতে যে ছবিটা দেখা যাচ্ছে সেটা কে ? আপনি ?
-না, সেটা আমার ভাতিজা ।
-ও
-কেন সন্দেহ হচ্ছে ?
-না, আমি আপনাকে খুব বিশ্বাস করি । আপনার মুখে সত্যি শুনেলেই আমার সন্দেহ শেষ ।
-তাই
-হুম
-যদি সেই খাটো , কালো ছেলেটাই আমি হতাম তাহলে কি করবে ?
-কিছুনা ।
-কি কিছুনা ?
-বাদ দেন তো । আপনি তো আর সে নন ।
-ওকে ঠিক আছে ।
এইচএসসি পরীক্ষা চলছে রুপালীর এখন । পড়াশোনায় খুবই ব্যস্ত সে এখন । এমনই সময় মিলন ফোন দিয়ে বললো সে আসলে মিলন না সে নিরব । আর ফেসবুকে যে ছেলেটিকে রুপালী দেখেছে সেটাই ও । আর সে কোন ব্যবসা করেনা , সেও রুপালীর সাথে এইচএসসি দিচ্ছে এবার । তার বয়স ২৩ না ১৮ বছর । এসব সব বলার পর নিরব রুপালীর সাথে সম্পর্কটা শেষ করে দিতে চাইলো । কিন্তু রপালীর ভালোবাসাতো মিথ্যা ছিলোনা । সে তো সত্যিই তাকে খুব ভালেবাসে । সে যেই হোক, সে যে রুপালীর পুরো জীবনের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে গেছে ।
-প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না । আপনি যেই হোন আপনার সাথে আমাদের এতোদিনের সম্পর্ক তো মিথ্যা নয় । আমি আপনাকেই ভালোবাসি । এখন থেকে না হয় সত্য মানুষটার সাথেই সম্পর্ক করবো ।
-না এ হয়না । আমার পক্ষে আর সম্ভব না ।
এরপর মিলন ফোন কেটে দিলো আর কথা হয়নি তাদের এরপর ।
রুপালী শুধু কাঁদছে । কয়দিন ধরে কিছু খেতে পারছেনা । ডাক্তার বলছে তার হার্টে সমস্যা দেখা দিচ্ছে । তাকে হাসিখুশি রাখতে হবে সব সময় । কিন্তু রুপালীর জীবনের সাথে যা ঘটে গেল তারপরও কি সে অন্য মানুষের মতো হাসি খুশি থাকতে পারবে ? হয়তো পারবে তার জন্য প্রয়োজন সময় আর তার ইচ্ছে শক্তি ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১০
তানিয়াজামানরুম্পা বলেছেন: গল্পটা মনকে ছুঁয়ে গেল।