নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কল্পদেহী সুমন

খন্দকার মো: আকতার উজ জামান সুমন

কথা বেশি একটা বলিনা চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি। সব সময় কল্পনা করি। কল্পনায় আমি সবসময় নিজের সাথে কথা বলি। আর সব সময় অন্যমনস্ক থাকি। আমার আশেপাশে কে কি করছে না করছে তার দিকে আমার তেমন খেয়াল থাকে না। অনেক সময় কাউকে খুজতে যেয়ে নিজেই হারিয়ে যাই। আর একটা কথা হলো আমার পথ মনে থাকে না তাই আমি একা হাটতে গেলে প্রায়শই পথ ভুল করি। পথে হাটাহাটি করার সময় কত জনের সাথে ধাক্কা খেয়েছি এ পর্যন্ত, তার হিসাব নেই। আমার সমস্ত জীবনটাকে কল্পনা মনে হয় কারণ সব কিছুই যাই ঘটে আমার সাথে তাই আমার কাছে কল্পনা মনে হয়। যদি কোন অঘটন ঘটে তাহলে ভাবি কল্পনা ভেঙ্গে গেলাই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার এই অসম্ভব রকম কল্পনাসক্ত দিনকে দিন বেড়েই চলছে।

খন্দকার মো: আকতার উজ জামান সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ গল্প

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৪

-জানো আমার না ক্যান্সার হইছে ।
-কি বলছো এসব তুমি ?
-আমি আর বেশিদিন বাঁচবোনা, ডাক্তার বলছে আর কয়েক মাস বাঁচবো ।
-কি যে বলোনা এসব তুমি। ডাক্তার ভালো না । ভালো ডাক্তার দেখাও আরও ।
-সত্যি আমি আর বাঁচবোনা জান ।তুমি নতুন একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করো , খুব সুন্দর এক জনকে ।
-আমি তোমাকে না পেলে আর কাউকে বিয়ে করবোনা । তোমাকে আমি আমার অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে ফেলছি । তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি । তুমি মারা গেলে আমিও মারা যাবো ।
-ছি, এসব বলোনা । তুমি মরবে কেন ?তোমার সামনে অনেক ভালো একটা ভবিষ্যৎ ।আমি ছাড়া আরও অনেক মেয়ে আছে যারা তোমাকে আমার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসতে পারবে ।
-যত মেয়েই আসুক, আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতে পারবোনা ।শুধু তোমাকেই ভালোবেসে যাবো আজীবন । একটা কথা দিবে ?
-কি ?
-আগে বলো দিবে ?
-হুম
-আমার থেকে কখনো দূরে চলে যাবেনা বলো তুমি । প্রমিজ করো আমাকে ।
-হুম, তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো বলো । তুমিই যে আমার সব । তোমাকে নিয়েই থাকবো যতদিন বাঁচবো দুনিয়াতে ।
-তাই । সত্যি বলছো তো ।
-হুম গো ।

খুব রোমান্টিক একটা সম্পর্ক ছিলো সায়ন আর সামান্তার । কেউ তাদের একে- অপরের সাথে কথা বলার ধরন দেখলে বুঝবেনা যে তারা এতোটা দূরে থাকার পরও এভাবে এতোটা কাছে কি করে থাকতে পারে ।কি করে একে-অপরেতে এতোটা মিশে যেতে পারে দুটি মানুষ ।সায়নের কাছে ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লাগতো । সরাসরি না দেখেই এতোটা ভালোবাসা কি করে হয়ে গেল তাদের মাঝে তা বোধহয় আল্লাহ ছাড়া কেউই বলতে পারবেনা ।যদিও সরাসরি দেখাও তাদের হয়েছে তবে এর আগেই ভালোবাসার গভীরতায় মনের আদান-প্রদান হয়ে গেছে তাদের ।তবে সায়নের কিছু কিছু বিষয়ে বেশ খটকা লাগছে ইদানিং । সামান্তা যে তার ক্যান্সার হয়েছে বলছিলো, তার কয়দিন পরই শোনা যায় তার এসব কিছু নাই ।এভাবে কয়দিন পর পরই তার কখনো ক্যান্সার, ব্রেন টিউমার, কিডনীতে পাথর এসব নানান সমস্যার কথা সে বলতো সায়নকে কিন্তু কিছুদিন পর ওসব রোগের কোন কথাই আর সে বলতো না, জিজ্ঞেস করলে বলে দিতো তার সব ভালো হয়ে গেছে ।সায়ন কখনো বিষয়টি এতোটা গভীর ভাবে নেয়নি । খুব ভালোবাসায় বেঁধে ফেলেছে সামান্তা তাকে । সামান্তার সব কথাই সে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতো ।এতোটা বিশ্বাস আর ভালোবাসা কোনদিন কোন ছেলে যে কোন মেয়েকে করতে পারে তার কোন ঘটনা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে ।যদিও সম্পর্কের শুরুটা সায়ন করেনি । সায়ন তো সেই কবেই সামান্তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় ।সামান্তা তার এক ফুফাতো ভাইয়ের কথা বলতো সায়নকে , যে কিনা সামান্তাকে খুব জ্বালাতো । সামান্তাকে বাজে প্রস্তাব দিতো ।এমনকি সামান্তাকে হুমকিও দেয় তুলে নিয়ে যাওয়ার ।সামান্তা একদিন তার এই ফুফাতো ভাইকেই আবার সায়নের কাছে ভালো বলতে শুরু করছিলো । তখন সায়নের খুব রাগ হয়েছিলো । যে মানুষটা কেবল তাকে কুপ্রস্তাব দিতো । তাকে কি করে সামান্তা ভালো বলতে পারে । কোন একটা মেয়ে কি পারে এমন একটা ছেলেকে ভালো বলতে ? তখনই সায়ন সামান্তাকে বলে বসছিলো তার সাথে যেন সামান্তা আর যোগাযোগ না করে । যার কাছে একটা বখাটে, অসভ্য ছেলে ভালো হতে পারে তার সাথে সায়ন কোন যোগাযোগই রাখতে চাইছিলোনা ।কিন্তু সামান্তা যে সায়নের কথা না বলতে চাওয়ায় এমন করবে তা সায়ন বুঝতে পারেনি ।যদিও সায়ন তখনো সামান্তাকে প্রেমিকা অথবা বউ এসবের ধারের কাছেও কিছু ভাবেনি । সামান্তা পাগলের মতো কাঁদতে শুরু করছিলো আর কয়বার যে কাঁদতে কাঁদতে বোমি করে দিছিলো তার তো হিসেবই নেই কোন ।কি করবে কিছু বুঝতে পারছিলোনা সায়ন ।এরপর রাতেই সামান্তা সায়নকে বলে বসলো সে তাকে খুব ভালোবাসে, তাকে ছাড়া সে কিছুতেই বাঁচতে পারবেনা । সায়নও ভাবলো এভাবে যখন বলছে সে হয়তো সত্যিই তাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলো । এরপর থেকেই তাদের সম্পর্ক শুরু । আর সম্পর্কের প্রথম থেকেই তারা একে-অপরকে স্বামী-স্ত্রী বলতো । সায়নতো মনে প্রাণে সামন্তাকে বউয়ের সব অধিকার দিয়ে দিছিলো । এমন করে যে মেয়ে তাকে ভালোবাসে তাকে বউ হিসেবে মেনে নিতে সায়নের কোন আপত্তিই নেই ।
-কি হলো? বউয়ের খরচ দেবার নাম নাই স্বামী সেজে বসে থাকলে কি হবে ?
-কি চাও বলো ?
-বউয়ের গয়না-গাটি, সাবান-ক্রিম দিতে হবেনা ?
-হুম অবশ্যই দিবো ।
-দেও জলদি
-দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ আমার তাকে কি কখনো কষ্টে রাখতে পারি আমি, কখনোই না ।
-হুম

সামান্তার অনেক খরচই সায়ন দিতো । সে নিজের বউয়ের মতোই যেন তার খেয়াল রাখতো । সারাদিন খুব টেনশনে থাকেতো সামান্তাকে নিয়ে ।সামান্তার বিপদ-আপদ হলো কিনা এসব নিয়ে একটুতেই খুব বেশি টেনশন করতো সায়ন ।সামন্তাও জানে এখন সায়ন সামান্তার থেকেও বেশি সামান্তাকে ভালোবাসে ।
কিন্তু কিছুদিন পর যা শুনলো তা নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলোনা সায়ন । সামান্তা তার সাথে এভাবে করে ঠকাবে তা সে কখনো কল্পনাও করেনি ।পারবিারিক চাপের কারণে অন্য কোন ছেলেকে বিয়ে করলে হয়তো মানতে পারতো কিন্তু এমন কোন কিছুই ঘটেনি । সামান্তা সায়নের সাথে সম্পর্ক করার আরও এক বছর আগে থেকেই নাকি ফয়সালের সাথে সম্পর্ক শুরু করছিলো । এমনও না যে ফয়সালের সাথে সামান্তার সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছিলো ।ফয়সালের সাথেও স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্ক থাকা অবস্থাতেই আবার সায়নের সাথেও সে সম্পর্ক রাখছিলো । এমনকি সায়ন বা ফয়সাল কখনো এক মিনিটের জন্যও বুঝেনি সে এই কাজ করছে ।সায়নকে তার কোন এক বান্ধবী আরও কয়েকজনের নাম বলছিলো যাদের সাথে তার আগে সম্পর্ক ছিলো ।সায়ন এও শুনছিলো যে সামান্তা এক সাথে চারটি সম্পর্ক চালাতো । এসব শুনে সায়নের আর ঠিক থাকার কথা নয় ।তার হৃৎপিন্ড থর থর করে কেপে উঠলো । কি করে সে পারলো এমন করতে ।সে অন্য একজনের বউ হয়তো প্রথমে ছিলোনা কিন্তু কয়েক মাস আগে সে অন্য কারো বউ হয়ে যাওয়ার পরও কি করে অন্য ছেলেদের সাথে ঠিক আগের মতোই প্রেম করতে থাকে । এমনকি যেকোন চাহিদাও পূরণ করতো ।কি করে সে পারলো সায়নকে এভাবে দিনের পর দিন মিথ্যা বলতে? বড়ই অদ্ভুত এ দুনিয়া । সায়নের ভালোবাসায় কোন ছলনা ছিলোনা, সে সত্যিই সামান্তাকে খুব ভালোবাসতো ।এক মুহুর্তের জন্যও সে সামান্তাকে ছাড়া থাকতে পারতোনা । সামন্তাও জানে সায়ন তাকে এখন পাগলের মতো ভালোবাসে । কিন্তু কেন সে তার জীবন নিয়ে তবুও খেলে গেল । সায়ন সামান্তাকে ভালোবাসে তাই অন্য মেয়েদের দিকেও তাকাতো না ।সে সব সময় তার পুরোটা সামান্তার জন্য যত্ন করে রাখতো । আর সেই সামান্তাই নিজেকে অন্যদের মাঝে ঠিক বিলিয়ে যাচিছলো । সায়ন কিছুতেই সামান্তাকে অন্য কেউ স্পর্শ করবে এ বিষয়টি মানতে পারতোনা ।সে নিজেও খুব নিরাপদে থাকতো । কোন মেয়ের স্পর্শ যেন তার গায়ে না লাগে সে দিকে খুব খেয়াল রাখতো সে তার সবকিছু সামান্তার জন্য রেখে দিছিলো আর সেই সামন্তাই নিজেকে সায়নের জন্য রাখছিলোনা ।কতো অদ্ভুত এ দুনিয়া । যেখানে একটা ছেলে একটা মেয়ের জন্য নিজেকে আগলে রাখতো অন্য আট-দশটা মেয়েদের কাছ থেকে, সেই কিনা তার সাথে প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা করলো ।সে আজ এও বলে সায়নের সাথে নাকি তার প্রেম গভীর হয়নি । অথচ সায়নের কাছে এরচেয়ে আর বেশি গভীরতাও যে আছে তা জানা ছিলোনা । সে যে গভীরতা বলতে কি বুঝিয়েছিলো তাই তো আজও সায়নের কাছে অজানা রয়ে গেল । সায়নতো কোন অপরাধ করেনি । সে সম্পর্ক গড়েওনি ইচ্ছে করে । সামান্তাই সম্পর্ক গড়ালো আবেগ তাড়িত করে আর সেই সম্পর্ক ভাঙলো তার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার পরই ।তবে কেন সামান্তা সায়নের সমস্ত ভালোবাসার আবেদন বের করে এনেছিলো যদি সে তার কোন মূল্যই দিতে না জানে ? কেন সে সায়নের সব স্বপ্ন-আশাকে ভেঙে তছনছ করে দিলো । একটা মানুষের তিলতিল করে গড়ে উঠা স্বপ্ন, ভালোবাসাকে বিনা অপরাধে এভাবে হত্যা করার কি কোন বিচার হবেনা ? সামান্তারা কি আজন্ম ছেলেদের সত্যিকারের ভালোবাসা নিয়ে খেলেই যাবে? এর কি কোন শেষ হবেনা? আর কয়জন সায়নের জীবন নষ্ট করলে সামন্তারা শান্তি পাবে ? তার উত্তর কি আছে, এ সমাজের কাছে ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.