![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কথা বেশি একটা বলিনা চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি। সব সময় কল্পনা করি। কল্পনায় আমি সবসময় নিজের সাথে কথা বলি। আর সব সময় অন্যমনস্ক থাকি। আমার আশেপাশে কে কি করছে না করছে তার দিকে আমার তেমন খেয়াল থাকে না। অনেক সময় কাউকে খুজতে যেয়ে নিজেই হারিয়ে যাই। আর একটা কথা হলো আমার পথ মনে থাকে না তাই আমি একা হাটতে গেলে প্রায়শই পথ ভুল করি। পথে হাটাহাটি করার সময় কত জনের সাথে ধাক্কা খেয়েছি এ পর্যন্ত, তার হিসাব নেই। আমার সমস্ত জীবনটাকে কল্পনা মনে হয় কারণ সব কিছুই যাই ঘটে আমার সাথে তাই আমার কাছে কল্পনা মনে হয়। যদি কোন অঘটন ঘটে তাহলে ভাবি কল্পনা ভেঙ্গে গেলাই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার এই অসম্ভব রকম কল্পনাসক্ত দিনকে দিন বেড়েই চলছে।
গভীর রাত। অমাবস্যা আজ। তাই গভীর রাতের গভীরতাটাও খানিকটা বেশি। আজ রাতটা আশ্চর্যজনক কারণ প্রতি রাতেই গভীর রাতে শিয়ালের ডাক শোনা যায় কিন্তু আজ পুরো রাত পাড় হয়ে যাচ্ছে শিয়ালের কোন ডাকই শোনা যাচ্ছেনা। চারিদিক একদম নিরব হয়ে গেছে আজ। ঝিঝি পোকার আওয়াজও নেই আজ। যেন পুরো শহরটা একটা বদ্ধ গুহায় পরে আছে। কেউ সেই বদ্ধ গুহার মুখে পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে। শহরের সব মানুষকে এক এক করে যেন সে চিবিয়ে খাবে।
এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে যদি হঠাতই কেউ শুনতে পায় হাড়, মাংস চিবিয়ে খাওয়ার আওয়াজ। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হওয়ার আওয়াজ তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে? হয়তো প্রথম প্রথম ঘুমের ঘোরে হেলোসিনেশন মনে হবে, কিন্তু যখন সত্যি সত্যিই শুনতে পাওয়া যাবে পিনপতন নিরবতার মাঝে হাড়ের মটমট শব্দ, রক্ত ফিনকি দিয়ে বের হওয়ার শব্দ। তখন আসলে ভয়ের মাত্রাটা কোথায় পৌঁছবে সেই পরিস্থিতিতে না পড়লে বুঝাই যাবেনা।
হারিয়ানার শংকরপাশা গ্রামের একজন বয়স্ক পুরুষ তিনি। তার নাম জুদুম্বর। তিনি প্রতি রাতেই গ্রামের সাহসী যুবকদের অলৌকিক ঘটনা বলতেন। তিনি চাইতেন এই ঘটনাগুলো বংশপরম্পরায় সবাই যেন জানতে পারে। তাই প্রতিদিন গভীর রাতে একটি বাশ বাগানে সে তাদের নিয়ে আসর জমাতেন। তিন বয়স্ক হলেও যুবকদের থেকে কোন অংশে কম ছিলেন না। তিনি এখনো যুবকদেরকে কুস্তি খেলা, লাঠি খেলায় হারিয়ে দেন। এমনকি কাবাডি খেলায় তাকে ধরে রাখতে পারেনি আজ পর্যন্ত কোন খেলায় কেউ। কিন্তু তিনি সবকিছুই করতেন রাতের বেলা। দিনে তাকে দেখা যায়না বাহিরে আসতে। গ্রামের একদম এক কোনায় বাশ বাগানের পর তার বাড়ি। একাই থাকে সে তার বাড়িতে। তার আশেপাশে অন্য কোন পরিবারও থাকেনা। সে কি করে, কিভাবে চলে তা কেউ কোনদিন জানতে পারেনি। তাকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করলেই সে রেগে যেত আর কি সব উদ্ভট কথা বলে গল্প বলা বন্ধ করে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিতো।
আজ সে গল্প বলছে ঐ গুহার মাঝে আটকে পরা শহরের গল্প। যেখানে এক ভয়ঙ্কর রাক্ষসী শহরের সবাইকে এক রাতেই খেয়ে ফেলেছিলো এক এক করে সবাইকে। হাসান আর জয়নাল পাশাপাশি বসে গল্প শুনছিলো। হঠাতই হাসান দেখে তার পাশে জয়নাল নেই। সে পিছনে তাকিয়ে দেখে জয়নাল বাশ বাগানের বাহিরে কাঁচা মাটির রাস্তায় দাড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলার চেষ্টা করছে। হাসান দৌড়ে জয়নালের কাছে গেল।
-কিরে তোর কি হয়েছে?
-কেন?
-হঠাৎ উঠে চলে আসলি যে!
-আমিতো ওর সাথে কথা বলছিলাম
-কার সাথে?
-কামিনী
-মানে
-কামিনী, খুব সুন্দরী একটা মেয়ে। জানিস ওর চুলগুলো খুব বড়। সব সময় মাথায় বেলী ফুলের খোপা করে রাখে চুলগুলো।
-তাহলে চুল যে বড় তা বুঝলি কি করে? আর এখনই বা কেন ওকে দেখছিনা?
-একদিন ভুল করে খোপা করেনি তখন দেখছিলাম। আর ওর তাড়া আছে তাই চলে গেছে।
-তোর সাথে কি কথা বলে?
-না, তবে ওর নাম আমি শুনছিলাম। একদিন অদৃশ্য থেকে ওর নাম ধরে ডাকছিলো কে যেন।
-আচ্ছা ঠিক আছে এখন চল।
হাসান জয়নালকে টেনে নিয়ে গেল। হাসান আর জয়নাল চাচাতো ভাই। একসাথেই থাকে ওরা এমনকি একই বিছানায় ওরা ঘুমায়। জয়নালের অদ্ভুত কথা শোনে উল্টাপাল্টা কিছু হয়েছে ভেবে তাড়াতাড়ি করে গল্পের শেষ পর্যন্ত না শুনেই হাসান জয়নালকে নিয়ে বাড়ি চলে আসলো।
ঘরে এসেই দুজনই কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমিয়ে গেল। হঠাতই ভোর হওয়ার কিছুক্ষণ আগে হাসান জেগে উঠলো। কে যেন তার কানে সুমধুর কন্ঠে গান গাইছিলো। হাসান প্রথমে ভাবলো স্বপ্ন হবে হয়তো কিন্তু ঠিক তখনই গানটি আবার তার কানের কাছে কেউ আবার গেয়ে গেল। পেছন ফিরে কাউকে না দেখে জয়নালকে ডাক দিলো। কিন্তু জয়নাল তো গভীর ঘুমে এখন। সে তো ডাকার কথাই না। সাত পাঁচ না ভেবে হাসান আবার ঘুমিয়ে পরলো।
পরদিন সকালে জয়নাল ঘুম থেকে উঠে হাসানকে বকাবকি শুরু করলো। হাসান নাকি ঘুমের মাঝেই ওর গাল, নাক আর চুল ধরে টান দিছে তাই। কিন্তু হাসান তো ঘুমিয়ে ছিলো। সে কি করে জয়নালের সাথে এমন করবে! হাসান চুপ থেকে জয়নালের বকাবকি সহ্য করে গেল।
এরপর কয়েকদিন পর তারা আবার বাশ বাগানে গল্প শুনতে গেল। আজ জুদুম্বর একজন মায়া পরীর গল্প বলছিলো। মায়া পরীরা অনেক সুন্দরী হয়। তাদের চুলগুলো হয় খুব বড় বড় যেন একজন মায়াবী পরীর চুল দিয়েই পুরো একটা গ্রাম ছেয়ে যায়। তাদের হাসির শব্দ গ্রামের পর গ্রাম শুনা যায়। তাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ফুলের সুভাষ পাওয়া যায়। বিভিন্ন রকমের মূল্যবান পাথরের গয়না পরে তারা। তাদের মায়া হাসি আর সুন্দরী মুখ দেখে যেকোন পুরুষই তাদের মায়ায় জড়িয়ে যেত। এই মায়া পরীরা সব সময় যুবকদের বাছাই করে নিজেদের মায়া জালে বাঁধার জন্য। তাদের মায়ায় একবার পরলে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়না। এক সময় নাকি কোন গ্রামের সব যুবকই একসাথে উধাও হয়ে গেছিলো। গ্রামের সবাই ধারনা করতো তাদের সবাইকে মায়া পরীরা নিয়ে গেছে। জুদুম্বর এরপর বলে বসলো মায়া পরীরা আজ পর্যন্ত অনেক যুবককে তাদের মায়ায় জড়িয়েছে। মায়ার জালে বন্দী যুবকরা বেশিরভাগই শেষ পর্যন্ত করুণ মৃত্যুর সম্মুখীন হয়। কাউকে পাহাড়ের উপর থেকে ছিটকে ফেলে, কাউকে জীবন্ত ১০০ হাত গভীরে মাটি চাপা দিয়ে, কাউকে শ্বাসনালী কেটে এছাড়াও আরও অনেক ভাবে তারা যুবকদের মেরে ফেলতো।
জুদুম্বর আরও বললো এই মায়া পরীদের কেউ বিয়ে করতে চায়না তাদের দেশে। কারণ এই মায়া পরীদের বিয়ে করলে আয়ু কমে যায়। আর তাই মায়া পরীরা মানুষদের তাদের মায়ার জালে বেঁধে নিজের বংশবৃদ্ধি করতো আর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেই সেই যুবকদের তারা নৃশংস ভাবে মেরে ফেলতো। কখনো কখনো তো তারা যুবকদেরকে তাদের ধারালো নখ দিয়েই কেটে টুকরো টুকরো করতো আর দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সব ইলবোয়া নামক হিংস্র জন্তুকে খাওয়াতো। ইলবোয়া হলো পরী রাজ্যের সবচেয়ে হিংস্র প্রাণি যাদের প্রতিটি কামড়ে এক একটা গ্রহকে ধ্বংস করার মতো শক্তি থাকে।
জয়নাল আর হাসান জুদুম্বরের গল্প শুনে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। হাসান ভয় পেল আজ খুব। তার বিশ্বাস হতে লাগলো কামিনী হয়তো সেই মায় পরী। কিন্তু জয়নাল কিছুতেই তা বিশ্বাস করছিলো না। হাসান জয়নালকে অনেক বুঝিয়েও বুঝাতে পারলোনা।
প্রায় এক মাস পর হাসানকে পাওয়া গেল বাশ বাগানের সবচেয়ে উঁচু বাশেঁর মগডালে। চোখগুলো তার প্রায় বের হয়ে আসছে এমন দেখাচ্ছিলো। হাত, পায়ের সব নখ উপড়ানো ছিলো। হাতের হাড়গুলো বের হয়ে ছিলো আর হাঁটু ভেঙে পাগুলো উল্টানো ছিলো। যখন তাকে নীচে নামানো হলো তখন দেখা গেলো তার মাথার খুলি শুকিয়ে আছে, মস্তিষ্ক নেই তার ভিতরে। এক মাস আগেই হাসান আর জয়নাল একটা মেলা দেখতে আসছিলো। মেলা থেকে জয়নাল ফিরলেও হাসান ফিরে যায়নি। জয়নাল বলছিলো হাসানকে সে হঠাৎ খুঁজে পাচ্ছিলো না। আজ হাসানের এমন করুণ পরিনতি দেখে সবাই জয়নালকে দোষী করলো আর পুলিশের কাছে জয়নালকে ধরিয়ে দিলো।
কয়দিন পর শোনা গেল জয়নাল বন্দী জেল হতেই লাপাত্তা। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
©somewhere in net ltd.