নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞানিরা বলেন মানুষ জন্মমাত্রই মানুষ নয়,তাকে যোগ্যতা অর্জন করে তবেই মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হয়।যোগ্যতা আছে কি না জানি না,হয়তো নিতান্তই মূর্খ এক বাঙ্গাল বলেই নিজেকে নির্দ্বিধায় মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফেলি।

কল্পদ্রুম

আমি আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়

কল্পদ্রুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুবাদঃএকটি গ্রীষ্মের রাত || মূলগল্পঃOne summer night, লেখকঃএমব্রোজ বিয়ার্স

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৫৮



কবর দিয়ে দেওয়া মানেই যে কেউ মারা গেছে প্রমাণ হয় হেনরি আর্মস্ট্রঙ তা মনে করে না।এমনিতে সহজে কোন কিছু মেনে নেয়ার পাত্র সে নয়।তবে এই একটা ব্যাপার মেনে নিয়েছে যে তাকে কবর দেওয়া হয়েছে।চিৎ হয়ে শুয়ে থাকবার ভঙ্গি,পেটের উপর কিছু একটা (পরিস্থিতির কোন লাভজনক পরিবর্তন ছাড়াই যেটা সে ছিঁড়ে ফেলেছে) দিয়ে বেঁধে আড়াআড়ি ভাঁজ করে রাখা দু হাত এবং সর্বোপরি চারপাশের গুমোট পরিবেশের মিশকালো অন্ধকার আর প্রগাঢ় নীরবতা তাকে একরকম বাধ্য করেছে এটা মেনে নিতে।অন্তত তাঁর ইন্দ্রিয়গুলিও সেরকমই স্বাক্ষী দেয়।

কিন্তু তাই বলে কি সে মারা গেছে!----উঁহু।বড়জোর বলা যায় সে অসুস্থ ছিলো,খুবই অসুস্থ।তবু সে নিজের রুগ্নতাকে পাত্তা দিতো না।নিজের দুর্ভাগ্য নিয়ে খুববেশি ভাবতো না।না---হেনরি কোন মহাপুরুষ নয়;খুবই সাধারণ একজন মানুষ যাকে উপরওয়ালা রোগবালাই সম্পর্কে উদাসীন থাকার মত ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।তার শরীর একদিন অসাড় হয়ে গেছিলো।তাই নিকট ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তিত না হয়ে হেনরি ঘুমিয়ে পড়েছিলো।পুরো প্রক্রিয়াটাই ছিলো হেনরি আর্মস্ট্রঙের জন্য শান্তিপূর্ণ।

কিন্তু সে পরিষ্কার বুঝতে পারলো মাথার উপর কিছু একটা ঘটছে।তখন ছিলো গ্রীষ্মকাল।অন্ধকার রাতের বুক চিড়ে অনিয়ত বিদ্যুৎ চমক জ্বলে উঠছে নীরবে নীচ দিয়ে ভেসে চলা পশ্চিমা মেঘে।সবই ঝড়ের পূর্ব লক্ষণ।ইতস্তত বজ্রপাতের আলো ছায়ায় কবরস্থানের স্মৃতিফলক এবং নামফলকগুলো যেন নাচতে শুরু করে দিয়েছে।কবরস্থানের পরিবেশ হয়ে উঠেছে আরো ভয়ঙ্কর রূপ।এরকম একটা রাতে দেখার মত কেউ নিশ্চয় এখানে ঘোরাঘুরি করবে না।তাই যে তিনজন হেনরি আর্মস্ট্রঙের কবর খুঁড়ছিলো তারা সঙ্গত কারণেই নিজেদের নিরপত্তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলো।

এদের মধ্যে দুজন কয়েক মাইল দূরের মেডিকেল কলেজের ছাত্র।তৃতীয়জন বিশালদেহী নিগ্রো,নাম জেস।সে বহু বছর ধরে এই কবরস্থানে আছে।ওকে বলা যায় সব কাজের কাজী।আর এটা তার কাছে সবচেয়ে মজার দিক ছিলো যে এখানকার প্রতিটা বাসিন্দা সম্পর্কে সে জানে।বর্তমানে সে যে কাজ করছে তাতে সহজে অনুমেয় জায়গাটা অতটা জনপূর্ণ নয়।যতটা না রেজিস্টারে দেখানো হয়েছে।

সীমানা প্রাচীরের বাইরে জনসাধারণের চলাচলের পথের থেকে দূরে মাঠের ভিতর একটা ঘোড়া এবং একটা হালকা ওজনের ওয়াগন অপেক্ষা করছে।

খোঁড়াখুঁড়ির কাজটা খুব কঠিন ছিলো না।মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে ফেলা মাটি কিছুটা প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করেছিলো।তবে দ্রুতই তা সরানো গেলো।বাক্সের ভিতর থেকে ক্যাসকেটটা বের করতে পূর্বের তুলনায় একটু বেগ পেতে হয়েছিলো।যদিও সেটাও বাইরে বের করা হয়েছে।উপরি লাভের জন্য কাজটা জেসই করেছে।সাবধানে স্ক্রুগুলো খুলে ঢাকনাটা একপাশে সরিয়ে রাখা হলো।ভিতরে কালো ট্রাউজার আর সাদা শার্ট পরা হেনরি শুয়ে আছে।হঠাৎ বাতাসের গতি প্রচন্ড বেড়ে গেলো,বজ্রপাতের কর্কশ আওয়াজ যেন পুরো পৃথিবীকে চুপ করিয়ে দিলো।হেনরি আর্মস্ট্রঙকে দেখা গেলো স্থির ভঙ্গিতে উঠে বসতে।অস্ফুট চিৎকারে আতঙ্কিত মানুষগুলো একেক জন একেক দিকে এমনভাবে ছুটে পালালো যে পৃথিবীর কোনকিছুর পক্ষে তাদের আর এ মুখো করা সম্ভব নয়।কিন্তু জেস অন্য জাতের মানুষ।

মেডিকেল ছাত্র দুজনের দেখা হলো পরদিন।কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে মুখগুলো মলিন ও ফ্যাকাশে।গতরাতের অভিযানের আলোড়ন এখনো তাদের রক্তে।দুশ্চিন্তা আর আতঙ্কে দুজনের অবস্থাই খারাপ।

-'তুমি দেখেছিলে না?' একজন বলল।
-'ঈশ্বর!অবশ্যই------এখন আমরা কি করবো?'

তারা বিল্ডিঙের পিছনের দিকে গেলো।সেদিকে ডিসেক্টিং কক্ষের কাছে একটা ওয়াগন এবং খুঁটির সাথে বাঁধা একটা ঘোড়া দাঁড়ানো।কোন এক অদৃশ্য শক্তির টানে দুজনে ডিসেক্টিং কক্ষে প্রবেশ করলো।মৃদু আলোয় একটা বেঞ্চের উপর জেস বসা।ওদের দেখে সে উঠে দাঁড়ালো;চোখে মুখে যেন ভয়াল হাসি ছড়িয়ে আছে।

'আমার টাকাটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম',সে বলল।

লম্বা টেবিলের উপর হেনরি আর্মস্ট্রঙের দেহটা শোয়ানো।কোদালের আঘাতে মাথাটা রক্ত আর কাদায় মাখামাখি।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:১০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: বেশ উপভোগ্য লিখা পাঠে ভাল লাগল ।
শুভেচ্ছা নিবেন ।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৪

কল্পদ্রুম বলেছেন: ধন্যবাদ।ভালো আছেন নিশ্চয়ই?

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৭

সুমন কর বলেছেন: অনুবাদ বেশ সাবলীল হয়েছে। গল্পটিও ভালো লাগল।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৫

কল্পদ্রুম বলেছেন: উৎসাহ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।ভাবছি অনুবাদের ক্ষেত্রে আরো কিছু কাজ করার চেষ্টা করবো।পড়ার জন্য আমন্ত্রণ রইলো।

৩| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫২

পুলহ বলেছেন: গল্পটা ভালো। আপনার অনুবাদও ভালোই। আমার পড়া অনেক অনুবাদেই খটমটে একটা ভাব থাকে, আপনার লেখা তা থেকে মুক্ত বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে।
শুভকামনা আপনার জন্য।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৫

কল্পদ্রুম বলেছেন: উৎসাহ দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞ রইলাম।ভালো থাকবেন।

৪| ১৯ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২০

ভুয়া মফিজ বলেছেন: ঝরঝরে অনুবাদ, যথাযথ শব্দ চয়ন আর মূলভাবকে অবিকৃত রেখে সাবলীলভাবে লিখে যাওয়া......সবই উপস্থিত। আপনার অনুবাদ অত্যন্ত মানসম্মত, কোন সন্দেহ নাই। আরো অনুবাদ আশা করছি আপনার কাছ থেকে।

শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে আকর্ষনীয় বাক্যে সমাপ্তি টানা যেহেতু আপনাকে দিয়ে সম্ভব, তাই মৌলিক গল্পেও আপনি খুবই ভালো করবেন। ধৈর্য ধরে চালিয়ে যাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ এখানে। অনেক অনেক শুভ কামনা। :)

১৯ শে মে, ২০২০ রাত ১০:২৬

কল্পদ্রুম বলেছেন: এত পুরাতন লেখা খুঁজে নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।অনুবাদ বেশ পরিশ্রমের কাজ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.