নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞানিরা বলেন মানুষ জন্মমাত্রই মানুষ নয়,তাকে যোগ্যতা অর্জন করে তবেই মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হয়।যোগ্যতা আছে কি না জানি না,হয়তো নিতান্তই মূর্খ এক বাঙ্গাল বলেই নিজেকে নির্দ্বিধায় মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফেলি।

কল্পদ্রুম

আমি আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়

কল্পদ্রুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্তর্ধান (গল্প)

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২৫

ঢিমে তালে তিন জন মানুষকে কবর অথবা মাটি খুঁড়তে দেখা যায়। কবর? না কি কেবল মাটি খুঁড়ে গর্ত তৈরির নিরর্থক পরিশ্রম? — এই খনন কাজ সমাপ্তির পরে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। এদেরকে ঘিরে — কাছে এবং দূরে কিছু ছড়ানো মানুষ। যাদের ভিতরে স্ব ভাবনায় এবং পোশাকে আশাকে বেশ বৈচিত্র্য দৃশ্যমান। তাদের সকলের উদ্দেশ্যই যে খনন কাজের সাথে সম্পর্কিত তা স্পষ্ট। কোদালের ভোঁতা শব্দের সবচেয়ে নিকটে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর ভিতর সবার প্রথমে নজর কাড়ে একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ। লম্বা, শুকনো পাতলা গড়ন। মাথায় এলোমেলো মাঝারি মাপের চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, আধপাকা। পরণে বিশেষত্বহীন শার্ট প্যান্ট। হাতে হ্যান্ড কাফ — সামনের দিকে। মাঝে মাঝে লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে বাতাসে কিছু শোঁকার চেষ্টা করছে। আবার সেটা বাদ দিয়ে ডানহাতের মধ্যমা এবং অনামিকার চিপাতে ধরে থাকা তামাক শলাকার পশ্চাদদেশ অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে টেনে উপরের দিকে মুখ করে ধোঁয়ার মেঘ তৈরি করছে। অস্থায়ী মেঘ ভেসে ভেসে সরে যেতে থাকে। আমরা এইমুহুর্তে ভাসমান মেঘের বদলে লোকটির চিন্তায় মনোযোগ দিতে পারি। লোকটি কিছু একটা ভাবছে।

"বহু বছর পর মাটি থেকে লাশ উঠালে কেমন গন্ধ পাওয়া যায়? বহু বছর বলতে এই ধরা যাক বারো বছর। না কি তার চেয়ে বেশি? না কি কম! সময়ের হিসাবটা আমার কাছে বরাবরই গোলমেলে ছিলো। আগের ঘটনা পরে চলে যায়। কখনো হয়তো উল্টোটাও ঘটে। অনেক কিছু ভাবতে গেলে খুঁজে পাই না। অনেক কিছু চাইলেও হারায় না। মনের ঘটনা ক্রমগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের মাঝে বউচি খেলতে থাকে। অন্ধকারের মাঝে কেউ কেউ কখনো হুট করে হাজির হয়। এতটাই জীবন্ত — এই তো ছোঁয়া যাবে যেন! আবার ডুব দিয়ে হারিয়ে যায় কোন অধরায়। তাতে আমার অবশ্য তেমন আপত্তি নাই। বরং আমি চাই সবকিছু হারিয়ে যাক। আমার মন হবে সাদা ক্যানভাস। কিন্তু তা হয় না। নাছোড়বান্দার মতো ওরা এসে হাজির হবেই। ঘাড়ে হাত চেপে কিড়মিড় করে বলতে থাকে। আমাদের ভুলে যাবে এত সহজে! তা হবার নয়। সেগুলো দ্বিগুন সোল্লাসে ঝাপিয়ে পড়ে আমার উপর। তখন এক, দুই পুরিয়ায় কিছু হয় না। চতুর্দিকের আক্রমণে অতীত বর্তমান ভবিষ্যত সব মিলিমিশে এক হয়। এই মুহুর্তে সেটাই ঘটছে। অথচ আশেপাশের কারোর আমার দিকে লক্ষ নেই। বিশেষ কিছু একটার প্রতি শরীরের প্রতিটি কোষের হাহাকার অনুভব করছি। আপাতত নিকোটিন পেলেও চলে। হাতে হাতকড়া অবস্থায় কি ধূমপানের অনুমতি আছে? পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভোদড় মার্কা চেহারার কনস্টেবলকে কি জিজ্ঞেস করে দেখবো! এই ব্যাটারা একসময় স্যার স্যার করতো। এখন সুযোগ বুঝে থাপড়াও দিয়ে বসতে পারে। ঠিক নেই। না জিজ্ঞেস করাই ভালো। এর চেয়ে মনের ভিতরে বউচি খেলার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এটাও একরকম নেশা। শুরুতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার। সিনেমা শুরু হওয়ার পূর্বের কালো পর্দা। সেই পর্দায় লাল রঙের এলোমেলো ফোঁটা গড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন পথে। তারপর আস্তে ধীরে একটি মুখ এবং পরবর্তীতে মুখ থেকে পরিপূর্ণ মানুষের শরীর স্পষ্ট হয়। মানুষটা মাটিতে পড়ে আছে। চিন্তার শিথিলতার সুযোগে স্মৃতিগুলো আরো জেঁকে বসে। পর্দার চিত্র পরিষ্কার হয়৷ মানুষটার হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। ভেজা শার্ট প্যান্ট গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। চিত্রের সাথে গন্ধ যুক্ত হয়। ঘাম,মূত্র এবং নেশার গন্ধ। এরপর কিছু অস্ফুট শব্দমালা। যন্ত্রণা কাতর আহত পশুর মতো গোঙানি। কেউ একজন মাটিতে চিৎ হয়ে পড়ে থাকা ছেলেটাকে উপুড় করে শুইয়ে দেয়৷ বুকখোলা শার্টের নীচে কালসিটে দাগ। লালে রঞ্জিত মুখ ফুলে এবড়ো থেবড়ো হয়ে থাকার কারণে তাঁর চেহারা বোঝা কঠিন। তবে আমি তাকে চিনি। খুব ভালো করেই চিনি।

এই চেহারা যে কতবার কতভাবে ভেসে উঠেছে। কত বছর আগে এই জায়গা ছেড়েছি। এরপর যেখানেই গেছি। আছরকৃত ভূতের মতো পৌছে গেছে। রইছ একদিন ধমকে বলেছিলো, "এতদিন হয়ে গেলো। এখনো ভুলতে পারতেছিস না। আর কারো তো সমস্যা হচ্ছে না। এসব খবর সারা জীবনে কাক পক্ষীও টের পাবে না। নিজেরে শক্ত কর ব্যাটা। আমারে দেইখা শেখ।"

সাইকেলের লকের প্রতি রইছের একরকম ফেটিশ কাজ করতো। ওর খাটের নীচে অনেকগুলো জমা ছিলো। মতিন ব্যাটাকে ধরে আনার পর মাটিতে ফেলে পা দিয়ে চেপে ধরেছিলো আশরাফ। আশরাফের গলায় পা দিয়ে দাঁড়ানোর ভঙ্গি ছিলো অনেকটা ওয়েস্টার্ন সুপার ভিলেইনের মতো। পুরা ব্যাপারটা বোধহয় ওর কাছে এবং আমাদের কাছে সিনেম্যাটিক কিছু একটা মনে হয়েছিলো। উত্তেজনাকর সিনেমা। অদৃশ্যমান ক্যামেরায় দৃশ্যায়ন ঘটছে শিকারকে পাকড়ে ধরে শিকারীর রীতিগত উল্লাসিক নিষ্ঠুরতা। উৎসব সূচনা করে ছিলো মতি ও কয়েকটি ক্রিকেট স্ট্যাম্প। একে একে প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয় শুভ্র, আতিক, সায়েম। শুরুর ব্যাপারটা ছিলো এলোপাথারি। কার আগে কে? কোথায় কতখানি? তার হিসাব ছিলো না। আধাঘন্টা পর প্রক্রিয়ায় একটি ঐক্যতান তৈরি হয়। অন্তত আমার চোখে তাই মনে হয়েছে। নরম মাংশ থেতলানোর শব্দেও একটা ছন্দ এসেছিলো। কেবল মাত্র বেসুরো গোঙ্গানি বারবার মনোযোগ নষ্ট করছিলো। তাই একটা রুমাল দলা পাকিয়ে আমিই ওর মুখে ঢুকিয়ে দেই। দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় দফার শেষে যখন রইছকে সাইকেলের লক হাতে একশনে নামতে দেখি তখন আনমনেই শিষ দিয়ে উঠেছিলাম। মানুষকে যন্ত্রণা দেওয়ার একটা ন্যাচারাল প্রতিভা আছে ওর। বিদেশ হলে হয়তো ওর আলাদা ডিমান্ড থাকতো। ভাড়া করে নিয়ে যেত বিশেষ বিশেষ কাজে। আপাতত রইছের হাতে দলিত হতে থাকে ভিরমি খেয়ে পড়ে থাকা মানুষটি।

"ওই নাটক করতেছে।" আতিকের লাথিতে অজ্ঞান শরীরটা নড়ে ওঠে। তবে কোন আওয়াজ পাচ্ছিলাম না। মরে গেছে! মরে গেলো এত দ্রুত! একটু যে আফসোস হচ্ছিলো না তা নয়। ভেবেছিলাম আরো কিছুক্ষণ টিকে থাকবে। অবশেষে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সায়েম আতিকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় আমিও নিষ্ক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলাম। শিকারকে কি পুড়িয়ে ফেলা হবে না কি ভাসিয়ে দেওয়া হবে? না কি ইট বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হবে? আর যাই হোক প্রতিপক্ষের হাতে কিছুতেই পড়তে দেওয়া যাবে না৷ এই লাশ কাঁধে নিয়ে মিটিং হবে, মিছিল হবে...বিচার চাই...বিচার চাই। আমি বলতে চেয়েছিলাম স্টাফড করে রেখে দেই, চল। ক্যাম্পাসের বড় মাঠের গোলপোস্টে ঝুলিয়ে রাখি। ওদের একটা উচিত শিক্ষা হোক৷ শেষ পর্যন্ত শিকারকে মাটি চাপা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার পর মাটি ফেলতে ফেলতে গর্তের অন্ধকারে ওর মুখটা কেন জানি মাথায় গেঁথে গেল। এই নাছোড়বান্দা স্মৃতিগুলোর শেষ পেরেক। কিছুতেই ছুটলো না আর। রইছকে প্রায়ই বলতাম৷ ও বলতো "ভুলে যা", "ঔষধ খা", "আমাকে দেখ"। হেহ! যতটা ও ভেবেছিলো আসলে ততটা ভুলো মনা ও নয় তা আমি ধরে ফেলেছিলাম।

একদিন ভিনদেশের এক ট্রেনে সামনেই পত্রিকায় ডুবে থাকা এক লোককে দেখে রইছের চেহারার পরিবর্তন দেখেছিলাম। সামনের লোকটার চেহারার সাথে বিশেষ একজনের মিল আছে। সেই যে শেষ পেরেক! সেদিন বুঝেছিলাম একই রোগের বীজ রইছের ভিতরেও আছে। হয়তো খোঁজ নিলে দেখা যাবে বাকীদেরও একই অবস্থা। অন্যরকম স্বস্তি অনুভব করেছিলাম তখন।


মঈনকে দেখে স্বস্তির ছাপ টের পাওয়া যায়। তার চোখ বন্ধ করে উর্ধ্বমুখী ধোঁয়া ছাড়ার ব্যাপারটা কলের পুতুলের মতো পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। ভেসে যাওয়া ধোঁয়া ভাসতে ভাসতে উপস্থিত হয় যতীনের কাছে। কোদালের শব্দের অনতিদূরেই একটি ভাঙ্গা পাইপের উপর তার অবস্থান। দুই পা হাঁটু ভাজ করা। তবে ডান পায়ের হাঁটুর চার আঙ্গুল নীচ দিয়ে উধাও। গলায় ঝুলানো গামছা দিয়ে তৈলাক্ত মুখ বার বার মুছতে দেখা যায়৷ সামনের কোদাল চালানোর ব্যাপারটায় তার চোখে মুখে বেশ আগ্রহ। সেও নিশ্চুপ কিছু ভাবছে বলে মনে হয়।

মাটির নীচে জিন্দা কবর দিলে কেমন লাগে? পোলাটার কি শ্বাস ছিলো তখনো?

ঘুমের ঘোরে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। চোউখ মেইলা দেখি বুকের উপর হাঁটু ভাজ কইরা পাঁচ ছয় বছরের বাচ্চা বইসা আছে। তার শকুনের মতো লম্বা ঠোঁট ঝুইকা আমার কপাল সোজাসুজি নিশানা করছে। দুইপাশে দুইটা মণিছাড়া সাদা চোখ। বুকটার মধ্যে বাতাসের জন্য আকুলি বিকুলি। দম যায় যায়! বাচ্চা আজরাইল ঘাপটি মারছে কিসের আশায়! কেস কি আইজকাই ফাইনাল! স্পষ্ট দুই তিন বছরের বাচ্চার খটখট হাসির শব্দ শুনলাম। সন্তু ছোট থাকতে এরাম কইরা হাসতো। সন্তুর কথা মনে হইতে বুকটা হঠাৎ হালকা হইলো। গলগল হাওয়া ঢুইকা জায়গা নিলো। বুকের উপর শকুন হইলো উধাও। বাচ্চা আইজরাইল সিদ্ধান্ত বদলাইলো বুঝি! তয় বাচ্চার খটখট হাসির ঘটনা বুঝলাম।

ফোন ধরলাম। শুনলাম। ধীরে ধীরে উইঠা বসলাম। দেখি সারা শরীর ঘামে ভেজা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর হাজির হইলাম জায়গামতো। নীচতলার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতেই দেখলাম চার পাঁচ জনে একটা মাদুরে মোড়াইয়া নামতেছে। মাদুরে মোড়ানো মাংসপিন্ড। কম তো দেখি নাই! ঘটনা বুঝতে অসুবিধা হয় নাই। এক পোলায় আইসা ধমকাইলো, "থাকেন কই? ডিউটি মিউটি তো করেন না। ফ্রি গাঞ্জা খাইয়া চিৎ হয়ে থাকেন গা রুমে। ফোন দিলেও ধরেন না।" হেহ! ঘটনা বুইঝা লইলাম। কইলাম,

"দাদু থাকি তো আশেপাশে। কি লাগবো!"

"শাবল আর কোদালের ব্যবস্থা করেন।"

করলাম। দশ বারো জন মিইলা খুঁড়তে কতক্ষণ আর লাগে! তয় কাজ শেষ করতে ভোর হইলো। বইসা বইসা দেখলাম ক্যামনে মাটির নীচে হারায় গেলো। আহ! দম ফুরানির কষ্ট মনে হইলো। বুকের ভিতরে হাওয়ার জন্য আকুতি।

জানতাম এই যে যতদিন মাটির উপরে আছি ওই আমারে মাটির নীচে টানবো। ঘটনার পর ছয় মাস পলাতক ছিলাম৷ নিজের জন্যে নয়। ঐ যে কাবিলের বংশধরদের জন্য। ওরাই কইলো "যান গা কোথাও। বাড়ি আসার দরকার নাই। আপনার সংসারে টাকা পয়সা লাগলে আমরা দেবো।" পরে ফিরা আইলাম। ততদিনে সব স্বাভাবিক। ছাত্ররা কিছুদিন আন্দোলন কইরা যে যার কাজে ব্যস্ত। কয়েক বছরের মধ্যে বাচ্চা শকুনেরাও একে একে উঁড়াল দিলো। আমি আর যাবো কই! এখানেই থাকি। রাইত হইলে প্রথম প্রথম এই দিকে ডিউটিতে আইতাম না। কিন্তু টানের কথা যে বলছিলাম। না আইয়া উপায় কি! মাটি ফুইলা উঠে আমারে ডাক দিয়ে কয় আহো যতীন পাল! তোমার গুপ্তধন উপচাইতেছে! তাড়াতাড়ি মাটির উপরে ফাটল সারাইলাম৷ উপরে ঘাস বিছাইলাম। রাইতে ঘুমাইলে পরে বাচ্চা শকুন আইসা বুকের উপর উইঠা বসতো। দম আটকাইতে আটকাইতে সন্তুর মায়ের ধাক্কায় লাফ দিয়া উঠতাম। হাঁফাইতে হাঁফাইতে মাটির নীচে দম আটকানির কথা ভাবতাম।

কয়েক বছর পর চাকরি ছাড়লাম। দুই বছর আগে পাও কাটার আগে মাঝে সাঝে আইতাম। সব ঠিকঠাক। কাবিলের গুপ্তধনের খোঁজ তখনো কেউ পায় নাই। আইজকা পাবো নি?""


ধুপধাপ কোদালের শব্দ চলে। যতীন অপেক্ষায় থাকে। কোন একজনের বক্তব্যের শব্দে তার ধ্যান ভাঙ্গে।

"ঠিক জায়গা মতো দেখাইছিস তো?"

"জি।"

"তাইলে তো পাওয়ার কথা এতক্ষণে। কত গভীরে?"

"তা তো স্যার স্মরণে নাই। এত বছর আগের কথা।"

ওসি মনসুর মাটির কাছে দাঁড়িয়ে থাকেন। জোরে জোরে শ্বাস টেনে নেন। তারপর আগের জায়গায় ফিরে যান। মাটির গন্ধ তাঁর পিছু নিয়ে কিছুদূর পর ম্লান হয়ে যায়। চেয়ারে বসতে বসতে মনসুর বাবুলকে ডেকে বলেন আরো এক চা দিতে। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। ভিতরে ভিতরে হয়তো আরো বিরক্ত। দূরে হ্যান্ড কাফড পাগলটাকে দেখে তাঁর দৃশ্যমান বিরক্তির ভাব আরো বাঁড়ে। দুধের সর ভাসা গরম চায়ে চুমুক দিয়ে সিধা হওয়া কুঁচকানো ভ্রু কিছুটা শান্ত মনের ইঙ্গিত দেয়। এই সুযোগে কিছু ভাবনা হয়তো একত্রিত হওয়ার সুযোগ পেলো।

কবেকার সেই মান্ধাতার আমলের ঘটনা। এতদিন মাটি চাপা ছিলো। খুড়াখুড়ি করে উঠাও। তারপর ফাইল চাপা দাও। দরকার কি বাপু! পাবা তো কয়খান হাড্ডিগুড্ডি। দেশে কি নতুন কেসের অভাব পড়ছে! বড় বড় হেডলাইন দিছে আবার "দেড় যুগ আগে মেধাবী ছাত্রের অন্তর্ধান রহস্য উদঘাটন, সন্দেহভাজনের স্বীকারোক্তি" বাল! স্বীকারোক্তি দিলেও বা কি! মিডিয়াতে না আসলে ব্যাপারটা সাইজ করা যেত। স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর থেকে সারা দেশে আন্দোলন শুরু হলো। হেন স্লোগান তেন স্লোগান! দেশ উদ্ধারে নেমেছে সব। আরে বাপুরে এ দেশে এরকম কতগুলোরে মাটিতে, কাদায়, ঝোপে জঙ্গলে লুকায়ে রাখছে তার সবগুলারে খোঁজ দেখি! কত কেসই তো দেখলাম। রাতের আঁধারে ড্রাইভার গুম। পাটকল শ্রমিক গুম হয়। তার জন্যে নামিস না ক্যান? যখন উর্ধতন ফোনের হেচকা টানে পুলিশের চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে তখন কিছু বলিস না কেন! মেধাবী ছাত্র! মেধাবী ছাত্র! মরার পর সব মেধাবী ছাত্র।

মনসুর লম্ব চুমুক দিয়ে সরটা খেয়ে ফেলে। কোদালগুলোর দিকে তাকিয়ে নতুন ভাবনার উদয় হয় তার মনে।

মামলা এখন পর্যায়ে আছে সেটাকেও ম্যানেজ করা কঠিন হবে না। এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। এদের কোন না কোন রাজনৈতিক বাপ এর ভিতরে কন্ট্যাক্ট করবেই। রাজনৈতিক বাপ না আসলেও বায়োলজিক্যাল বাপকে ধরতে হবে। কিছু লাভ সেখান থেকে আদায় করা যাবে৷ কেবল যদি লাশটা...

মাটিতে জুতা ঘষার শব্দ পাওয়া যায়। মনসুরের চায়ের কাপে ছায়া পড়ে। ছায়াটি যার এই মুহুর্তে তার পোশাক আশাক দেখে অনুমান করা কঠিন তিনি কে। বয়স অল্প, স্মার্ট পোশাক। ওসি মনসুরের সাথে কথা বার্তায় জানা যায় তাঁর নাম ওয়াহেদুল। সম্ভবত আইন বেঁচে জীবিকা অর্জন করা তার পেশা। কথা বার্তা শেষ করে ভদ্রলোক ফিরে চলেন। গন্তব্য হলের লবিতে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন পৌড় পুরুষ এবং নারী। এই খনন কাজের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর ভিতরে এই দুইজন মানুষের মুখের অনুভূতির ভিন্নতা লক্ষণীয়। তাদের শান্ত চোখের দৃষ্টিতে গভীর বিষাদ হয়তো চোখে পড়ে। পথ হারা হতাশাও দেখা যেতে পারে। শুকিয়ে যাওয়া কান্নার দাগ। তবে কোন রাগ বা প্রতিহিংসার চিহ্ন খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। কেউ যদি সেটা খুঁজে পায় তবে তা হবে নতুন আবিষ্কার।

ওয়াহেদুল তাদের কাছে পৌছানোর আগেই দ্রুত কিছু বিষয় মনে মনে গুছিয়ে নেয়।

এই মামলায় বেশ জটিল হয়ে যাচ্ছে। আসামীরা বেশিরভাগই বিদেশে পলাতক বহু বছর থেকে। একমাত্র স্বীকারোক্তি দেয়া আসামীকেও ইনসেন প্রমাণ করা খুব কঠিন হবে না। যতীনের একক স্বাক্ষীও আনরিলায়েবল। হতাশ হওয়া যাবে না। বাদীপক্ষকেও হতাশ করা যাবে না।

ওয়াহেদুল বিড়বিড় করে 'চিয়ার আপ' 'চিয়ার আপ' জাতীয় কিছু বলে। এত আস্তে বলে যে অনুমান করা যায় সেটা নিজেকেই শোনাচ্ছে।

কোদালের ভোঁতা আওয়াজ আর শোনা যাচ্ছে না। মাটি খোঁড়ার সমাপ্তি ঘটেছে।

প্রথমে ওসি মনসুর এবং একজন সান্ত্রীকে দেখা যায় গম্ভীর মুখে ও দ্রুত পদে জিপ গাড়িতে উঠে বসতে৷ মঈনকে তার আগেই গাড়িতে উঠানো হয়েছে। ইঞ্জিন চালুর হওয়ার কর্কশ শব্দ হয়। ক্যাম্পাসের মেইন গেট দিয়ে বের হওয়ার আগে গাড়িটার গতি অনেকটাই কমে যায়। সামনে বিশাল জনসমাবেশ। প্রধান রাস্তায় অনেক মানুষ বসে, কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে মুহুর্মুহু স্লোগান এবং সমতালে হাততালিতে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে। অনেকের কাঁধে ব্যাগ। কপালে বাংলাদেশের পতাকা। বয়সে তরুণ এদের দেখে পথচারীরা বুঝতে পারেন এরা এই বিশ্ববিদ্যালয় অথবা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের অগ্নীঝরা স্লোগান পথচারীদের ব্যস্ত সমস্ত ছোটাছুটিতে মন্থরতা আনে। তারা কৌতূহলী হয়ে এদের পর্যবেক্ষণ করেন। কারো কারো মুখে হাসি দেখা যায়। সেটা কি অনেকগুলো ছেলে মেয়ের একসাথে স্লোগানের কারণে। না কি এদিকে ওইদিকে টিভি ক্যামেরায় নিজের চেহারা দেখানোর সুবাদে। না কি রাস্তার মাঝখানে গোল হয়ে বসে থাকা একটি বড় দলের কেন্দ্রে ছন্দবদ্ধ স্লোগানরত এক তরুণীর শরীরী ভাষা দেখে। মেয়েটি চমৎকার বলিষ্ঠ কন্ঠে স্লোগান দিতে থাকে। সে একটি লাইন বলে। বাকীরা চিৎকার করে আর একটি লাইন বলে। দেখার মতো দৃশ্যই বটে। বেশ কয়েকজনকে দেখা যায় সমাবেশকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে ভি চিহ্ন দেখিয়ে সেলফি তুলতে। সমূহ সম্ভাবনা আছে এই ছবিগুলো প্রো পিক হওয়ার। কেউ একজন পাশের জনকে খোঁচা দিয়ে বলে, "ওই ব্যাটা, প্রোপিকের স্টিকার ক্যামনে লাগাইছস। ওই যে জাস্টিস ফর...কে যেন।"

কিছু টিভি সাংবাদিককে দেখা যায় তারা পুলিশের গাড়িটিকে ঘিরে ধরেছে৷ রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া ছাত্র সমাবেশ তাদের এ কাজে সুবিধা করে দিয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে কিছু তথ্য তারা বের করতে পেরেছেন বলে মনে হয়। একজন সাংবাদিক কিছুক্ষণ ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে গরমাগরম আপডেট সাজিয়ে নেন মনে মনে। তবে আমাদের আর তার মনের ভিতরে উঁকি ঝুঁকি দেওয়ার প্রয়োজন নাই৷ একটু পর নিজেই সেটা বলে দেন,

"ফারজানা, আপনি জানেন আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি...এ...এ... আপনি দেখতেই পারছেন আমার পিছনে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন চলমান। তারা নানারকম স্লোগান দিয়ে এই হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করছেন। তাদের সাথে শিক্ষকদের একাংশও যুক্ত হয়েছেন। যদিও... শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করলেও শিক্ষকেরা যেটা বলছেন যে...এ...এ...এ...আন্দোলনের পাশাপাশি ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করছেন তাঁরা। আপনি জানেন যে আজকে এই মামলা একমাত্র গ্রেফতারকৃত আসামীকে নিয়ে... এ... ঘটনাস্থলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে...এ...এসছিলো। কিন্তু আমরা... আমরা... দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের কাছ থেকে যেটা জানতে পেরেছি যে...যে... তাঁরা এখানে কোন লাশ খুঁজে পাননি। এখানে ঘটনাক্রমে বলে রাখি যে গ্রেফতারকৃত আসামী আসামী একটি মাদক মামলায় আটক হয়েছিলেন এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় অনেকটা...অনেকটা...অনেকটা... অপ্রত্যাশিতভাবেই পনেরো বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি...একটি হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেন। এই স্বীকারোক্তিতেই পুনরায় মামলাটি চালু হয়... সোস্যাল মিডিয়ায় এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে... এবং... এবং... আন্দোলন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত অনেকে সন্দেহ করা হচ্ছে এটি... এটি... একটি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ছিলো। যদিও পুলিশ কিংবা কোন দলের পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য দেওয়া হয়নি। হত্যাকারীরা খুন করার পর সংশ্লিষ্ট হলের পিছনে মাটি চাপা দিয়েছিলো... সেখানে... সেখানে লাশ না পাওয়াতে এখন হয়তো... হয়তো...হয়তো..."

পুলিশের গাড়িটি জন বাঁধা পার হয়ে অবশেষে বের হয়ে যেতে পারে। গাড়ির পিছনে মঈনের ছবি তোলার জন্য একরকম হুড়োহুড়ি লেগে যায়। মঈন সম্ভবত তার ভাবনা অনুযায়ী ভোঁদড় চেহারার কনস্টেবলের সাথে একটা সখ্যতা তৈরি করে ফেলেছে। তার হাতে নতুন সিগারেট। উপরের দিকে মুখ করে সে ধোঁয়ার রিং বানানোর চেষ্টা করছে। পুলিশের গাড়িটি চলে যেতে যেতে মঈনের কাছে বলিষ্ঠ কন্ঠের মেয়েটির স্লোগানগুলো স্তিমিত হয়ে আসে।

লাশ কই...খোঁজ চাই...
বিচার চাই... বিচার চাই।


----------


বাবুল চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। ভাজ করা বাম হাঁটুর উপর ডান পা তোলা। তার মনে খুব আনন্দ। সেটার বহিঃপ্রকাশ অনুমান করা যায় তার শিষ দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় এবং দ্রুত গতিতে ডান পায়ের পাতা নাচানো দেখে। বাবুলের মনে খুশির ভাবনা৷

"কলোনীতে নানান জনের শখের বাগান বানাইতে মাটি লাগে। হলের পিছনের ঐ জায়গা থেকে মাটি উঠাইতাম। ঐ জিনিস যে লুকায়ে আছে কেমনে বুঝতাম! প্রথম এক সপ্তাহে তো ঘুমাইতে পারি নাই৷ কাউরে কইতেও পারি না। যদি পুলিশে ধরায় দেয় তাইলে কেস তো খাবো আমি। পরে চিন্তা করে দেখলাম। জ্যান্ত মানুষের দাম কয় পয়সা? কোন দামই নাই৷ এই যে অনার্স পাশ কইরা আমি এইখানকার কেয়ার টেকার। পোলাপাইনে কথা কয় তুমি, তুই কইরা। কোন দাম আছে আমার? মরা মানুষের দাম আছে। বুক, কিডনি, চোখ যদি বাদও দেই৷ খালি হাড্ডির দামও আছে৷ দাম নাই শুধু রক্ত মাংসের জ্যান্ত মানুষের। তয় গন্ধটা নিয়ে একটু চিন্তায় ছিলাম৷ এত বছরের পুরানো। মাটিতে যদি পচা মাংসের গন্ধ মিশা থাকে! ফেসবুকে কোন এক কবি মবির একটা লাইন দেখছিলাম। "বাতাসে লাশের গন্ধ পাই..." হাফ ডজন সস্তা আতর আইনা ঢাইলা দিছিলাম পরে। যাক! গন্ধ না ছড়ায়ে এইবার খুশবু ছড়াক।"

বাবুল শিষ দিতে দিতে তার ফোনের দিকে তাকায়। আপাতত কেউ তাকে মৃত মানুষের দাম কত জিজ্ঞেস করলে সে নিদেন পক্ষে হাড্ডির দাম বলে দিতে পারে। পুরানো হাড্ডির দাম তার কাছে এই ফোনসেটের বাজারদরের সমান। পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা। এক বছর পুরাতন হইলেও ফোনের সার্ভিস ভালো। বাবুলের সম্ভবত আতরের খুশবুর কথা মনে হওয়াতেই একটি গানের কথা মনে পড়ে। কিছুক্ষণ পর তার পছন্দের ফোন সেটে গানটি বাজতে শোনা যায়।

"হাওয়া হাওয়া এ হাওয়া খুশবু লুটা দে..."

মন্তব্য ৪৯ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (৪৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:০০

রাজীব নুর বলেছেন: লেখা ঠিকঠাক আছে। কিন্তু শিরোনামটা আমার ভালো লাগে নি।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:১৬

কল্পদ্রুম বলেছেন: আপনি একটা সাজেস্ট করুন। দেখি পছন্দ হয় কি না। পছন্দ হলে পরিবর্তন করতে লারি।

২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:১৪

আমি সাজিদ বলেছেন: বেশ নতুন একটা প্যাটার্ন। চমৎকার। যথারীতি ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৬

কল্পদ্রুম বলেছেন: ধন্যবাদ সাজিদ ভাই। ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে। পছন্দ হয়েছে এটাও আশার কথা।

৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:১৭

যায়েদ আল হাসান বলেছেন: ক্ষুদ্রক্ষুদ্র ডিটেইলস গুলো কত নিখুঁত! নাকে গন্ধ পাচ্ছি শিরোনাম টা ভেবেই।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৮

কল্পদ্রুম বলেছেন: ধন্যবাদ। অফলাইনে আপনার একটা লেখা পড়ছিলাম।

৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:১০

অনল চৌধুরী বলেছেন: ১৯৮৯ সালে আমরা যখন ৯ এ পড়ি , তখন হাওয়া-হাওয়া গানটা সারাদেশ হৈচৈ ফেলেছিলো।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৯

কল্পদ্রুম বলেছেন: এখনো জনপ্রিয়। সম্প্রতি একটা রিমেক করা হয়েছে। ভালো হয়নি তেমন।

৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৩০

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: পড়লাম স্যার। বাস্তবতার জমিনে প্রোথিত গল্পগুলো আমার বরাবরই ভালো লাগে। এই গল্পও ভালো লাগলো তাই। এবার প্রফেশনাল জায়গা থেকে দু' একটা মন্তব্য করি। যে টেকনিকে গল্পটি মূলত এগিয়েছে, এটাকে ইংরেজিতে বলে স্ট্রিম অফ কনশাসনেস, বাংলায় চৈতন্যপ্রবাহ রীতি।এই বর্ণনারীতিতে ঘটনার ঘনঘটা মুখ্য চরিত্রের চিন্তার প্রবাহে অগ্রসর হতে থাকে। ভার্জিনিয়া উলফের উপন্যাসগুলোতে যেমন, অথবা বাংলাদেশের সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহে , বা শহিদুল জহিরে, এবং আরও কারু কারুর রচনায়।

চৈতন্য প্রবাহ রীতিতে চিন্তার বর্ণনে কোহিয়ারেন্স মেইনটেইন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ, নতুবা পাঠকের প্যাঁচ লেগে যায়। আপনার গল্পে একাধিক চরিত্রের চিন্তার শব্দ আমরা শুনতে পাই, খুব মনোযোগ দিয়ে পাঠ না করলে মনে হয় যে চিন্তাগুলো ওভারল্যাপ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত কথাশিল্পীর পাঠকেরা কম বেশী তবুও হজম করে নেয় কষ্টটুকু, কিন্তু যারা এখনো প্রতিষ্ঠা পান নি, তাঁদের লেখা অবিচারের সম্মুখীন হয়। চিন্তাপ্রবাহসমূহ আর একটু মসৃণতা দাবী করে হয়তো।

মতামত গ্রহণ করা বা বর্জন করার পূর্ণ স্বাধীনতা আপনার স্যার। তবে কষ্ট পাবেন না আশা করি। আপনার মঙ্গল কামনা করেই মন্তব্যটি করা। পারস্পারিক পীঠ চুল্কাচুল্কির রেওয়াজ আজকাল চোখে পড়ে খুব। এতে করে লেখকের উন্নতি হয় না।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫৩

কল্পদ্রুম বলেছেন: একেবারেই প্রফেশনাল মূল্যায়ণ। একজন লেখক এবং শিক্ষকের কাছে যেমনটা প্রত্যাশিত। স্ট্রিম অব কনশাসনেস ব্যাপারটা সুন্দর করে লিখেছেন। অল্প পরিসরে কিভাবে বহুমুখী প্রবাহকে একটি জায়গায় আনতে পারি তার একটা নভিশ চেষ্টা ছিলো। সেইসাথে গল্পের মূখ্য চরিত্রের (বাবুলকে ইঙ্গিত করার চেষ্টা) বয়ানকে পাশ কাটিয়ে কি করে অপ্রধান চরিত্র দিয়ে গল্প এগোনো যায় সেরকম একটা ভাবনা ছিলো। কেবল মাত্র আত্মু জবানির ভিতরে না রেখে পাঠককে একটা সুপার কনশাস লেভেল থেকে চরিত্র এবং তার আশেপাশের পরিবেশ দেখানোর ব্যবস্থা করারও একটা ইচ্ছা ছিলো। বুঝতেই পারছেন, সবমিলিয়ে একটি সহজ গল্প কি করে জগাখিচুরি বানিয়ে জটিল করা যায় তার সবরকম প্রচেষ্টাই ছিলো৷ তবু চিন্তাপ্রবাহ "আর একটু মসৃণ" হতে পারতো। কিছুটা মসৃণ যে হয়েছে এটা ভেবেই আনন্দ পাচ্ছি। ভবিষ্যতে ঘষামাজার পথ দেখানোর জন্য ধন্যবাদ।
সমালোচনা সাদরে গৃহীত হলো এবং হবে। ব্লগটাকে সমালোচনার স্থান হিসেবেই আমি দেখি। নিজের কনসেপ্টকে ব্লগাররা কাঁটাছেড়ার জন্যেই উপস্থাপন করেন বলে আমার মনে হয়। নাহলে তো ব্যাপারটা 'শো অফ' হয়ে যাবে। পিঠ চুলকানির জন্যে নিজের হাতের চেয়ে ভালো কিছু নেই। খুব ভালো লাগলো আপনার মূল্যায়ণ পেয়ে। প্রতিউত্তর পড়বেন কি না জানি না। এখানেও সমালোচনার জায়গা থাকলে বিনা সেন্সরে করতে পারেন।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:০৮

কল্পদ্রুম বলেছেন: ওভারল্যাপ করার ব্যাপারটা আমার উত্তরে বাদ পড়ে গেছে। পাঠকের মনোযোগ থাকবে এটা একরকম আশা থাকে। তবে আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় ব্লগে অনেক বড় লেখা আমিও মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারি না। আমারটাতে না হয় লেখার সমস্যা। অন্য ভালো লেখাতে কি সমস্যা? ব্লগের ডিফল্ট ফন্ট অথবা ব্লগে যেভাবে প্রেজেন্ট করা হয় তার কোন ভূমিকা আছে? না কি পাঠক হিসেবে আমরা ব্লগে খুব তাড়াহুড়ো করি!

৬| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১১

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: গল্পের নামের মতই সুন্দর গল্প!

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫৭

কল্পদ্রুম বলেছেন: ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়।

৭| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৪

ঢুকিচেপা বলেছেন: গল্পের থিমটা ভালো লেগেছে।
এ্যাকশনসহ বর্ননাও দারুণ।
মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলছিলাম হয়তো মনোযোগের অভাবে তবে একটা লোমহর্ষক ঘটনা পড়া হলো।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:০১

কল্পদ্রুম বলেছেন: যাক। তাও যে মাঝপথে এটাকে ত্যাগ করে চলে যাননি তার জন্যে শুকরিয়া জানাই। ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

৮| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২২

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: আপনি একটা সাজেস্ট করুন। দেখি পছন্দ হয় কি না। পছন্দ হলে পরিবর্তন করতে লারি।

এই রে বিপদে পড়ে গেলাম। আসলে যথাযথ শিরোনাম আমি নিজেই দিতে পারি না।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৫

কল্পদ্রুম বলেছেন: তাহলে আপনার সাথে আমার মিল আছে এই দিক দিয়ে। পরে কিছু মনে হলে বলে যেয়েন৷ আমিও ভেবে দেখছি অন্য কিছু পাওয়া যায় কি না।

৯| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হেডিং দেখে ভেবেছিলাম, রম্যগল্প। কিন্তু প্রথম সেন্টেন্স পড়েই বুঝতে পারি - সিরিয়াস গল্পের শুরু।

অসাধারণ একটা গল্প এবং আপনার স্ট্যান্ডার্ড এখানে সমুন্নত রয়েছে। চমৎকার উপস্থাপনা।

কয়েকটা জিনিস আমার ক্লারিফিকেশনের জন্য একটু বলুন : যতীন, মঈনকে এক মনে হয়েছে। হত্যার কারণটা ধরতে পারি নি। যতীন বা মঈনকে খুব সাধারণ মানের চাকরিজীবীই মনে হলো, কিন্তু পুলিশও তাদেরকে স্যার বলতো কেন তাহলে?

১২/১৩ বছর আগের হত্যাকাণ্ড নতুন করে মামলায় উঠলে ব্যাপক ছাত্র-আন্দোলন হওয়া কি সম্ভব?

শ্লোগানমুখর মেয়েটার কথা আমাদেরকে একটা মেয়েকে মনে করিয়ে দেয়।

লাইভ টেলিকাস্টে সাংবাদিকের বর্ণনা খুব ইনজয় করেছি। এদের 'আপনি যেমনটা বলছিলেন' শুনলেই আমার গতর জ্বলা শুরু হতে থাকে। তারপর একই শব্দ এরা এত রিপিট করতে থাকে এবং কথা বলার সময় এত জড়তা, রীতিমতো ইরিটেশন শুরু হয় আমার।

শুভেচ্ছা রইল।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১২

কল্পদ্রুম বলেছেন: আমার বিবেচনায় লেখক বেশ পরিষ্কারভাবে যতীন এবং মঈন চরিত্র দুটোকে আলাদা ভাবে উপস্থাপন করা করেছে। ওয়াহেদুলের ভাবনাতেও দুজনের নাম আলাদাভাবে এসছে। এদের দুজনকে এক মনে হওয়ার কথা না। তবুও স্পষ্ট করে বললে, মঈন হলো এককালের মারদাঙ্গা ছাত্রনেতা যে সরাসরি অন্য একজনের খুনের সাথে জড়িত ছিলো। যতীন ঐ খুনের সময়কার ঐ হলের কেয়ার টেকার কাম নাইট গার্ড জাতীয় কিছু একটা।

মঈনকে চাকুরীজীবি মনে হতে পারে। তবে মঈনের স্মৃতিতে বিদেশে রইছের সাথে দেখা হওয়ার ইঙ্গিত আছে। পুলিশের কনস্টেবল লেভেলের মানুষ তাকে স্যার ডাকতো। ওসি সাহেব মঈনের বাপের সাথে কন্ট্যাক্ট করার কথা ভাবছিলো। শেষে তার মাদক মামলার কথা জানা যায়। এগুলো মিলিয়ে মঈনের প্রোফাইলটা লেখক হয়তো "বিত্তশালী নেশাখোর ছাত্রনেতা যার মাথায় হালকা পাতলা ছিট আছে" এ জাতীয় কিছু একটা দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন।

এমনিতে হয়তো সম্ভব না। তবে সোস্যাল মিডিয়ার উল্লেখ হয়তো এ কারণেই এখানে উপযুক্ত। লেখক সোস্যাল মিডিয়ায় ঘটনা ছড়িয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়ার হুজুকে ১২/১৩ আগের ঘটনা নিয়েও ছাত্র আন্দোলন হতে পারে এবং হয়েছেও। দেশব্যাপী না হলেও অন্তত ক্যাম্পাসভিত্তিক হয়েছে। লেখকের অভিজ্ঞতা তাই বলে। হুজুক বলার কারণ ব্যাপারটা যতটা না অন্যায়ের প্রতিবাদ। তার চেয়ে বেশি যে কোন ছুতায় ক্লাস বর্জন এবং রাস্তায় স্লোগান দেওয়ার একধরণের উত্তেজনা অর্জনের চেষ্টা। এইজন্যেই ভি চিহ্ণ দেখিয়ে প্রোফাইল পিকচার তুলি। অথচ ভিক্টরির কিছুই হয়নি। গল্পের আসামীরা হয়তো ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। প্রোফাইল পিকচারে "জাস্টিস ফর অমুক" বলে স্টিকার লাগাই। অথচ আমি মানুষটার সম্পর্কে কিছুই জানি না। সবাই যা করছে। আমিও তাই করছি। সেরকমই ব্যাপার অনেকটা।

স্ট্যান্ডার্ডের কথা বলে কিছুটা চাপে ফেলে দিলেন শ্রদ্ধেয়। তবে প্রশংসা পেয়ে ভালো লাগছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

১০| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আচ্ছা, আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছিলাম। এই অনবদ্য গল্পটা এই ব্লগের সর্বকালের সেরা গল্পের মধ্যে স্থান পাবার যোগ্য, কিন্তু গল্পের শিরোনামটা গল্পের মেজাজের সাথে একেবারেই যায় নি বলে আমার মনে হয়েছে।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৮

কল্পদ্রুম বলেছেন: এতো অনেক বড় কমপ্লিমেন্ট। গল্পের নাম নিয়ে রাজীব নূর ভাইও আপত্তি করেছেন। আপনারও পছন্দ হয়নি দেখছি। আমি ঠিকমত নাম ভেবে পায় না। এই নামটা একটা কিছু ভেবে দিয়েছিলাম। তবে ভাবনাটা যুতসই হয়নি বলে মনে হচ্ছে। রাজীব নূর ভাইকে অনুরোধ করেছিলাম। আপনাকেও করছি। কোন সাজেশন থাকলে জানাতে পারেন। আমি পরিবর্তন করে দেই।

১১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৩৩

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: দুটো কথা যোগ করতে চাই আপনার প্রতিমন্তব্যের সূত্র ধরে। এটা অবশ্য আমার একান্তই নিজের দর্শন, পড়তে পড়তে , লিখতে লিখতে তৈরি হওয়া।

প্রথমত, আমি বিশ্বাস করি, যদি আমার বলবার মত অসাধারণ একটা গল্প থাকে, তবে ন্যারেটিভ টেকনিক প্রধান কোন সমস্যা না। অসাধারণ একটা গল্পের ক্ষেত্রে একদম নির্মোহ নিরাবেগ ফ্ল্যাট ন্যারেটিভেও পারপাস সারভ হয়। বাংলা সাহিত্যেই এর ভূরিভূরি উদাহরণ আছে। টেকনিক তখনই প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে, যখন আমার গল্পের "গল্প" -র মেরুদণ্ড দুর্বল। কাজেই ইচ্ছাকৃতভাবে ন্যারেটিভকে জটিল বানানোকে প্রাথমিকভাবে পরিহার করা আমি শ্রেয় মনে করি। গল্পের "গল্প"কে মজবুত করবার জন্যে দরকার হচ্ছে অনেক করে পড়া, চারপাশে কি হচ্ছে তা খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করবার সক্ষমতা তৈরি, এবং একটা মানবিক হৃদয়ের লালন।

দ্বিতীয়ত, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম - সাহিত্যের, যদি এটাকে একটি শিল্পমাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করি, তবে তাঁর ক্ষতি করছে, এমনটাই আমার মতামত। সেটা ব্লগ হোক বা ফেসবুক। প্রায় সময়ই দেখা যায়, আমরা এ সমস্ত ভার্শনে বেশীক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম নই। অনেকের মন্তব্য দেখেই বোঝা যায় যে সে শিরোনাম, শুরু আর শেষের প্যারা পড়ে কমেন্টটা করেছে। কেউ আবার মূল লেখা ছেড়ে কমেন্টের সূত্র ধরে কমেন্ট করা শুরু করে। এই অবমূল্যায়ন তো গেল সমস্যার একটা দিক। অপরদিকে , ব্লগ বা ফেসবুকে লেখার সাইজের একটা ছাঁচ আছে - সর্বোচ্চ হাজার বারো'শ, ফেসবুকে পাঁচশো শব্দ। এর বেশী লম্বা লেখা হলেই পাঠক সাধারণত পড়ে না আর লেখাটি। যিনি সত্যিকারের কথাসাহিত্যিক হবেন, যার উদ্দেশ্য প্রমাণ সাইজের একটি উপন্যাস লেখা, তাঁর মাথা যদি ঐ ফেসবুক / ব্লগের লাইক কমেন্টের নেশায় পাঁচশো থেকে হাজার শব্দের ছাঁচে একবার আটকা পড়ে যায়, তারপক্ষে সেই নোটিফিকেশনের টুংটাং আওয়াজ আর শস্তা জনপ্রিয়তার মোহ অতিক্রম করে বড় কাজে হাত দেয়া মুশকিল। কাজেই যেকোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মেধার লালন - মূল্যায়ন হয়, আমার অভিজ্ঞতা এমনটা বলে না।

মেধার লালন - মূল্যায়ন বলতে কি বোঝাচ্ছি - সেটাও আবার ব্যাখ্যার দাবী রাখে। আপনার মনে হতে পারে, "ভালো" লেখে - এমন অনেকেরই ফেসবুকে, ব্লগে হাজার হাজার ফলোয়ার তৈরি হচ্ছে, বই বিক্রি হচ্ছে। তো, মেধার মূল্যায়ন তো হচ্ছেই। আমার কাছে মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে - মহাকালের পাতায় ঠাই পাওয়ার মত সাহিত্যকর্মের সৃষ্টি, এবং তাঁর পাঠকপ্রিয়তা লাভ করা, জীবদ্দশায়, বা মরণোত্তর। যেমন, নিকট অতীত থেকে উদাহরণ দিলে - ইলিয়াস সাহেব, হাসান আজিজুল হক সাহেব, শহিদুল জহির সাহেব, পশ্চিমবঙ্গে সুনীলের হিস্টোরিক্যাল ট্রিলজি, শীর্ষেন্দুর মোটা উপন্যাসগুলো।

মন্তব্য আর দীর্ঘায়িত করার প্রয়োজন নেই বোধয়।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০৫

কল্পদ্রুম বলেছেন: সাজিদ ভাই চমৎকার লিখেছেন। এগুলো আমারও ধারণা। যদিও আমি লেখক নই। কেবলই পাঠক। প্রথমত যেটা লিখেছেন, ওখানে নিজের একটা ভাবনা যুক্ত করতে চাই, আপনি টেকনিক বলতে গল্প বলার ধরণ বুঝাচ্ছেন নিশ্চয়ই। পাঠক হিসেবে আমার কাছে মনে হয়, গল্পটা অসাধারণ হলে সাধারণ বর্ণনাতেও যেমন তার অসাধারণত্ব আমার কাছে ধরা পড়ে। আবার সাধারণ অতি পরিচিত ঘটনাও কেবল অসাধারণ অথবা ভিন্ন উপস্থাপনের কারণেই সেই লেখাটি আমার কাছে অসাধারণ হয়ে ওঠে। অর্থাৎ কোন কোন লেখকের ক্ষেত্রে "কি বলছেন" তার চেয়ে "কিভাবে বলছেন" সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেটা যেমন পাঠকের কাছে, তেমন হয়তো লেখকের কাছেও (লেখকের পয়েন্ট অব ভিউ আপনি বলতে পারবেন ভালো)। যেমন আপনার "আয়াজ আলীর ডানা" (শিরোনামে ভুল লিখলে দুঃখিত) গল্পে একজন ব্যর্থ কবির শেষ পরিণতির কথা আছে আমার ভুল না হলে৷এই ব্যর্থ কবির গল্প পাঠক হিসেবে আমার কাছে নতুন কিছু নয়। অসাধারণ কোন ঘটনাও না (তবে মেরুদন্ডও দুর্বল না অন্তত আমার বিবেচনায়) তারপরেও আমি মুগ্ধ হয়েছি। কারণ কি? আপনার অসাধারণ লেখার ধরণ। আখতারুজ্জামান, শহীদুল, সিরাজ বা এই জাতীয় মানুষদের লেখাও কিন্তু ঐ আগ্রহ নিয়েই পড়ি।

দ্বিতীয়ত, যা লিখেছেন আমিও এমনটাই মনে করি। মহাকালের সাহিত্যকর্ম বাংলাদেশে আরো তৈরি হোক। পাঠক হিসেবে আমরা তো আছিই আপনাদের জন্যে।

শেষ করি অন্য একটি দিক নিয়ে। কিছু মনে করবেন না। ন্যারেটিভকে জটিল করার বিষয়টা আপনি লিটারেলি নিয়ে ফেলেছেন। এখানে জটিলতা কোন মূল চিন্তার বিষয় না। লেখাকে জটিল করবো এই চিন্তা নিয়ে কেউ লিখে বলে আমি জানি না। বিষয়টা হচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ট গল্প নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবনাকে শব্দে রূপ দেওয়া। এতে পাঠক পড়ে যতটা না আনন্দ পান। লেখক (যেমন ব্লগের কল্পদ্রুম) লিখে তার চেয়ে অনেক বেশি মজা পান। আগের গল্পে একরকম ভাবনা ছিলো। এই গল্পে একরকম ছিলো। সামনে হয়তো আবার অন্যরকম ভাবনা কাজ করবে। প্রতিষ্ঠিত লেখকদের অনেক জটিলতা, সরলতা নিয়ে ভাবতে হয়। আমাদের জন্যে তো খোলা প্রান্তর। বিরাট লম্বা কথা লিখেছি৷ ভুল টুল হইলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

১২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:


অনেক সময় ব্যয় করছেন ফটকা তৈরি করছেন, ইহা একবার একটা বড় আওয়াজ দিয়ে বাতাসে মিশে যাবে; মানুষের জীবনের গান লিখুন, উহা অনেকে গাইবেন, অনেকে শুনবেন।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:১১

কল্পদ্রুম বলেছেন: যাক। আপনি পড়েছেন। আমার ধারণা ফটকা ফাটবে না। বারুদে জোর কম৷
নিশ্চয়ই জীবনের গান লিখবো। জীবনের গান তো হরেক রকমের৷ তবে অনেকে গাইবেন, শুনবেন এরকম গান লিখতে চাই না৷ এতে 'বাজারি' ট্যাগ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।


১৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৬

মা.হাসান বলেছেন: গানটার রিমেক হয়েছে জানা ছিলো না।

মরা মানুষের দাম মনে হয় জ্যান্ত মানুষের চেয়ে অনেক বেশি এখন।

অসাধারণ লিখেছেন। পুরো গল্পে যাদের সদর্প উপস্থিতে তাদের বাদ দিয়ে শেষের ১৫ লাইনে বর্নিত বাবুলই মূল চরিত্র হয়ে গেলো! বড় চমক ছিলো। আমার কাছে নাম করন ভালো লেগেছে। হ্যাটস অফ।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪৩

কল্পদ্রুম বলেছেন: ধন্যবাদ মা.হাসান ভাই। পছন্দ হয়েছে জেনে ভালো লাগলো। আপনিই কেবল নামকরণ নিয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। তা না হলে আপনাকেও ধরতাম নতুন নাম দেওয়ার জন্যে।

১৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৩৪

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: গল্পে ভালোলাগা রইলো।
শুভ কামনা জানবেন। নিয়মিত গল্প লেখা চলুক।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৩

কল্পদ্রুম বলেছেন: উৎসাহ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। খুব ভালো লাগলো।

১৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৩০

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: ওয়াও, দারুণ লিখেছেন তো। যদিও শুরুতে গল্পে ঢুকতে একটু কষ্ট হয়েছে, সেজন্য অর্ধেক পড়েই চলে গিয়েছিলাম। এখন মন্তব্য পড়ে আবার পুরোটা পড়লাম। লাইভ টেলিকাস্টের ব্যাপারটা খুব চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, এদের দেখলেই রাগ উঠে যায়, খবর দেখার আর রুচি হয় না। সেলফির ব্যাপারটা ও একদম বাস্তবসম্মত। সবমিলিয়ে দারুণ হয়েছে। গল্পে ভালোলাগা।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৭

কল্পদ্রুম বলেছেন: ধন্যবাদ। শুরুতে কষ্ট হলেও যে পরবর্তীতে আগ্রহ দেখিয়েছেন সেটাই অনেক বড় ব্যাপার। মন্তব্যগুলোও তাহলে উপকার আসছে দেখি!

১৬| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩০

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: পয়েন্ট টু বি অ্যাডেড স্যার, আমার দ্বিতীয় মন্তব্যটা কিন্তু আমার - আপনার কোন গল্পের উপর ভিত্তি করে না। গল্পের ম্যাথডলজির ব্যাপারে আমার জেনেরালাইজড একটা রিয়ালাইজেশন।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫১

কল্পদ্রুম বলেছেন: দ্বিতীয় মন্তব্যের প্রতিউত্তরে জটিলতার পয়েন্টটাতে আমার বুঝতে ভুল হয়েছে। তাহলে ঐ অংশটুকুও আমার একটা জেনারালাইজড অনুধাবন হিসেবে ধরে নেন। আশা করি প্রতিউত্তরের কোন বক্তব্য আমার ঔদ্ধত্য হিসেবে নেননি।

১৭| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: না না, একদমই না। আর শিল্পীর ঔদ্ধত্য থাকাই স্বাভাবিক।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২৪

কল্পদ্রুম বলেছেন: আচ্ছা৷ ধন্যবাদ সাজিদ ভাই।

১৮| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩৭

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
শিরোনাম যথাযর্থ হয়নি।

গল্পের নাম অন্তর্ধান বা অন্তর্ধান রহস্য হলে কেমন হয়ে।

বর্ণনা ও চরিত্র যথার্থ হয়েছে।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২৫

কল্পদ্রুম বলেছেন: নাম সাজেস্ট করার জন্য ধন্যবাদ মাইদুল ভাই। অন্য একটি নাম ভেবে রেখেছিলাম। তবে ব্লগে আপনার দেওয়া নামটাই থাকুক।

১৯| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
অনেক অনেক ধন্যবাদ কল্পদা।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১২

কল্পদ্রুম বলেছেন: আপনাকেও। :)

২০| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০৩

ভুয়া মফিজ বলেছেন: অনেক পরে পড়লাম। আপনার গল্প সবসময়েই একটা ভিন্নধর্মী আমেজ দেয়। ব্যস্ততার কারনে বিস্তারিত মন্তব্যে গেলাম না। শুধু ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম। মনে হয়, আপনার নতুন আরেকটা গল্প পোষ্ট করার সময় হয়েছে। :)

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:১৮

কল্পদ্রুম বলেছেন: ব্যস্ত আছেন অনুমান করতে পারি। ব্লগে, বিভিন্ন পোস্টে আপনার উপস্থিতি কম দেখতে পাচ্ছি। তবে কাজের ভিড়ে সুস্থ থাকেন এটাই কামনা করি। আপনার উৎসাহ পেয়ে মনে হচ্ছে ড্রাফটগুলো ঘাটতে হবে।

২১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৭:৩২

অধীতি বলেছেন: গল্পটি ভালো লেগেছে।শহীদুল জহিরের বর্নানা ভঙ্গিও খানিকটা এরকম।তবে একটু প্যাঁচালোও হয়েছে বটে।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩২

কল্পদ্রুম বলেছেন: ধন্যবাদ। শহীদুল জহির আমার পছন্দের লেখকদের অন্যতম।প্যাঁচালো হওয়ার ব্যাপারটা ভাবনায় থাকলো।

২২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:০৫

শায়মা বলেছেন: বাবলু বাস্তববাদী মানুষ। ফোনটাকে বেঁচে দিক।

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১২

কল্পদ্রুম বলেছেন: শখের জিনিস।বেঁচবে কেন!তাছাড়া নতুন ব্রান্ড আসুক।তখন হয়তো বেঁচতে পারে।

২৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:০৭

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
দেখা নেই কেন , ব্যস্ত ?

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২০

কল্পদ্রুম বলেছেন: ধন্যবাদ মাইদুল ভাই খোঁজ নেওয়ার জন্য।ব্যস্ততা কিছুটা তো আছেই।আগামী কয়েক মাস সম্ভবত আগের মতো নিয়মিত হতে পারবো না।তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।দোয়া করবেন।

২৪| ৩১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:৪৫

ঢুকিচেপা বলেছেন: অনেক দিন হলো অনুপস্থিত। সুস্থ্য আছেন তো ?

০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২৫

কল্পদ্রুম বলেছেন: আমি সুস্থ আছি।আপনাদের এরকম অপ্রত্যাশিত আন্তরিকতা পেয়ে খুবই ভালো লাগলো।আপনিও সুস্থ আছেন আশা করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.