![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
" খৃষ্ঠ জন্মের ১৫০০ বছর আগে ভারতের বাইরে থেকে কিছু যাযাবর শ্রেণীর লোক ভারতে প্রবেশ করে। তারা এসেছিল সম্ভবত মধ্য এশিয়া থেকে। তারা ছিল আর্যজাতি। বেদ তাদেরই রচনা এবং তা আনুমানিক খৃঃ পূঃ ১২০০ অব্দে অর্থাৎ আজ থেকে ৩২০০ বছর আগে। সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা এই আর্য সভ্যতার পূর্বসূরী।আর্যরা ছিল nomadic barbarians অসভ্য বর্বর যাযাবর জাতীয়। দ্রাবিড়দের তারা অনার্য বলত। সিন্ধু সভ্যতার লোকেরা দ্রাবিড় ভাষায় কথা বলত। দ্রাবিড়রা পরাজিত হয়ে দক্ষিণ ভারতে চলে যায়।"-----বিসিএস বা ইতিহাসের ছাত্রদের কাছে এ এই বর্ননাটা খুব চেনা। কিন্তু সত্য অনেকটাই আলাদা।
মহেঞ্জোদাড়ো-হরপ্পায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও আবিষ্কার হয়েছিল —আর্য আক্রমণ তত্ত্ব প্রচারিত হওয়ার পর। এহ তত্ত্ব রচিত হয় উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে। আর হরপ্পা খনন ১৯২১ এবং ১৯২২ -এ।ঐ সময়ের পর মহেঞ্জেদাড়ো হরপ্পা সম্পর্কে অনেক তথ্য আবিষ্কার হয়েছে। এখন জানা গেছে যে তথাকথিত সিন্ধু সভ্যতার প্রাণ সিন্ধুনদ নয়, সরস্বতী। প্রাচীন সরস্বতী নদীর উল্লেখ বেদ গ্রন্থে পাওয়া যায়। তথাকথিত সিন্ধু সভ্যতা সরস্বতী -সিন্ধুকে কেন্দ্র করে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তার শেষ দিকের কথা।
ভি. এস. ওয়ানকার এবং অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিকের আবিষ্কৃত তথ্য থেকে এখন জানা গেছে যে সরস্বতী কয়েকবার গতিপথ পরিবর্তন করে অানুমানিক ২০০০ খৃ. পূর্বাব্দে সম্পূর্ণ শুষ্ক হয়ে যায় এবং হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংস হওয়ার কারণ পরিবেশগত। আনুমানিক ২২০০ খৃ.পূ. থেকে ভয়াবহ খরার কারণে সিন্ধু বা হরপ্পা ধ্বংস হয়।
মার্টিমার হুইলার বৃটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক মহেঞ্জোদারো কয়েকটি কঙ্কাল দেখতে পেয়ে সিদ্ধান্ত করলেন যে আর্যরা যে গনহত্যা করেছিল এ তারই প্রমাণ। পরবর্তীকালে প্রত্নতাত্ত্বিক এস আর রাও প্রমাণ করলেন যে আক্রমণকারী ও আক্রান্তর হাড়গুলি বা কঙ্কালগুলির মধ্যে কয়েকশত বছরের সময় ব্যবধান আছে। সিমেট্রি আর ৩৭ এবং সিমেট্রি এইচ এই সময় ব্যবধান এমনই যে তথাকথিত আক্রমণকারীরা যখন এসেছিল তখন তথাকথিত আক্রান্তরা ছিল না। ফলে গণহত্যার তত্ত্ব হাস্যকর।খননে প্রাপ্ত কতকগুলি পাথর ও পোড়ামাটির বস্তু দেখিয়ে হুইলার, মার্শাল, পিগট প্রমুখ প্রত্নতাত্ত্বিক আর্য আক্রমণতত্ত্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে বললেন যে —এগুলি প্রমাণ করে যে লিঙ্গ পূজা সে যুগে ছিল — এদেরই পরে দাক্ষিণাত্যে লিঙ্গ পুজক দ্রাবিড়ীয় বলে আমরা দেখতে পাই।এস. আর. রাও বলেলেন যে ওগুলি কোন দেবমূর্তি নয় —ওজনের বাটখারা যা গুজরাট এলাকাতেও খনন করে পাওয়া গেছে (The Aryan Invasion Theory A Repraisal by Srikant G. Talageri উদ্ধৃত পৃ. VI)। তা ভারতে কয়েকশত বছর প্রচলতি ছিল।
আর্য আক্রমণ তত্ত্বের এই সব তাত্ত্বিকরা ধরেছেন শিবপুজা মানেই দ্রাবিড়ীয় এবং দক্ষিণাত্য। প্রকৃত কথা হল শিব পূজা প্রধানত হিমালয় ভিত্তিক অর্থাৎ নেপাল, কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ প্রভৃতি এলাকার। ঐ সব তাত্ত্বিকেরা যে শিব পূজা সংক্রান্ত কোন তথ্য পেয়েছিলেন হরপ্পায় তাও নয় — সেটাও কাল্পনিক। দ্রাবিড় তত্ত্ব আর শিব পূজাকে এক করে দিয়ে দক্ষিণাত্যে পাঠিয়ে দেওয়া এবং বলা হল যে আর্য আক্রমণের ফলে হরপ্পীয়রা পালিয়ে গেছিল — বাকিরা ধ্বংস হয়ে গেছিল।
সরস্বতী নদীঃ ঋগ্বেদে গঙ্গা নদীর নাম উল্লিখিত হয়েছে মাত্র একবার । কিন্তু সরস্বতী উল্লিখিত হয়েছে অন্নতঃ ৫০ বার । ঋগ্বেদের দ্বিতীয় মণ্ডলের ৪১ নং সূক্তের ১৬ নং মন্ত্রটি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য । এই মন্ত্রে সরস্বতীকে বলা হয়েছে — অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে শ্রেষ্ঠ মাতা, শ্রেষ্ঠ নদী ও শ্রেষ্ঠা দেবী ।যমুনার পশ্চিমে আর শতদ্রুর পূর্বে ছিল এর অবস্থান । ঋগ্বেদের ৭ম মণ্ডলের ৯৫ সূক্তের ২য় মন্ত্রে বলা হয়েছে এই নদী পাহার থেকে সমুদ্রগামী । এই নদী নহুষের সন্তানদের (বৈদিক যুগের জনগণ) প্রতিপালন করে । ঋষি শৌনক, গৃৎসমদ, বশিষ্ঠ ও বিশ্বামিত্র সকলেই এই নদীর কথা বলেছেন । এই কারণেই যে সভ্যতা বৈদিক যুগে শুরু হয়ে হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতা অব্দি অগ্রসর হয়েছিল — তাকে সরস্বতী সিন্ধু সভ্যতা বলাই সঙ্গত ।
সরস্বতী ছয় থেকে আট কিঃমিঃ চওড়া কোথাও কোথাও ১৪ কিঃমিঃ । এই নদী তাহলে কোথায় গেল ? প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাও উপগ্রহ মারফৎ গৃহীত ছবি থেকে জানা যাচ্ছে — সরস্বতী উপনদীগুলির জলের অভাবে ক্রমশঃ দূর্বল হতে শুরু করে এবং ১৯০০ - ২০০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দে সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায় । এই নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসতির প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গেছে । বেদোক্ত সরস্বতী নদীর ভৌগলিক অবস্থানকে কেন্দ্রীয় সূত্র ধরে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে বৈদিক সভ্যতার সন্ধ্যাকালে সিন্ধু সভ্যতার সৃষ্টি । বৈদিক যুগ খুব কম করে হলেও ৭০০০ খৃ. পূর্বাব্দে শুরু এবং সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার কাল দাঁড়ায় খৃ. পূ. ৩০০০ -২০০০ অব্দ ।
আর্য আক্রমণ তত্ত্ব শুধু প্রত্নতত্ত্বকেই অস্বীকার করেনি ভূগোলকেও বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছে । তাই ঐ তত্ত্ব অনুসারে খৃ. পূ. ১৫০০ অব্দে আর্য আক্রমণ এবং ১২০০ খৃ. পূর্বাব্দে বেদ রচনার কাল সম্পূর্ণ হাস্যকর । সরস্বতী সিন্ধু সভ্যতা খুব কম করেও ৫০০০ বছর চলে ছিল। সিন্ধু নদের তীরবর্তী এলাকায় বসতির প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং যাচ্ছে ।
সরস্বতীর ভৌগলিক অবস্থানে যা জানা গেছে এবং তার তীরবর্তী এলাকাতে যত বসতির প্রমাণ পাওয়া গেছে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে আর্যরা ১৫০০ খৃ. পূর্বাব্দে বিদেশ থেকে এসে সিন্ধু সহ ৫টি নদী অতিক্রম করে সরস্বতী তীরে এসে বসবাস করল কেন যে সরস্বতী ২০০০ খৃ. পূর্বাব্দে শুকিয়ে গেছে ? আর সেই শুকিয়ে যাওয়া নদীটিকে অম্বিতমে, নদীতমে, দেবীতমে বলে সাহিত্য রচনা করল ১২০০ খৃ. পূর্বাব্দে ?২২০০ -১৯০০ খৃ. পূর্বাব্দে খরার কারণে সরস্বতী একাই শুকিয়ে যায় নি ।
আকাদীয় যুগের সভ্যতা (মেসোপটেমিয়া ২২০০ খৃ. পূুর্বাব্দে) শেষ হয়ে যায় । মিশরীয় (দ্বিতীয় রাজা) সভ্যতাও প্রায় ঐ সময়ে । ভারতে সিন্ধু সভ্যতাও ঐ সময়ে । এস. আর. রাও তার ডন এন্ড ডেভোলিউশান গ্রন্থে বিস্তৃত ব্যাখ্যা করেছেন ।
©somewhere in net ltd.