![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলা এই বংগ জনগোষ্ঠীর প্রাণের ভাষা কখনো ছিলই না। সবসময়েই এই ভাষা পরিগণিত হয়ে এসেছে অচ্ছুত এর ভাষা-নিম্নবিত্তের ভাষা। ষোড়শ শতকের সাধক কবি সৈয়দ সুলতান যখন বলেছিলেন-
যারে যেই ভাষে প্রভু করিল সৃজন
সেই ভাষ হয় তার অমূল্য রতন।
সেই যুগেই তাকে বড় রকমের বিরুপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল।মধ্যযুগে জতটা বাংলার চল ছিল তার পুরোটাই ছিল আসলে আরাকান রাজসভার বদান্যতা। হোক সেটা মঙ্গলকাব্য, রামায়ন অনুবাদ বা ইউসুফ জোলেখা। প্রাণের ভাষা, মুখের ভাষা, মাতৃভাষা অথবা ভাষা সংশিষ্ট চেতনা উর্দু, হিন্দি, বিলুপ্ত ল্যাটিন/ রোমান কিংবা অন্য যে কোন ভাষায় যেভাবে দেখা যায়
বাংলার ইতিহাস ঘেটে দেখুন ১৭-১৮ শতকের আগে লেশমাত্র গন্ধও আসলে পাওয়া যায় না।
বাংলা নিয়ে এখানকার মানুষ এতটাই উদাসীন ছিল যে বাংলার প্রথম ব্যাকরন বা প্রথম খোদিত লিপি আলোর মুখ দেখে ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড এর হাত ধরে। ব্যাকরন না হয় বাদ ই দিলাম -বাংলা সাহিত্যের আধুনিক জোয়ার বলতে যা বুঝায় তার প্রথম শতক আসলে পশ্চিমবঙ্গের অবদান বললে ভুল হবে না। কিন্তু বাংলা নিয়ে গুরুত্বহীন থাকা জাতির মধ্যে হটাত এই জোয়ার সৃষ্টির মূল কারন যতটা না বাংলা প্রেম-তার থেকে আমার কাছে অনেক বেশি মনে হয়েছে ইংরেজ শাসনের পজিটীভ আর নেগেটীভ বাইপ্রোডাক্ট। সে আলোচনা রাজনৈতিক। রাজনৈতিক কারনে ভাষার বিকাশ এটা দোষ ধরার মত কিছু না। কিন্তু সমস্যা তখনই যখন এর ব্যবহারের চেতনাটা বহুলাংশে রাজনৈতিক।
বাংলার ব্যবহারের একটা স্রোত সৃষ্টি হলেও সেটা কিন্তু কখনোই ইংরেজি, সংস্কৃত বা ফারসির মত এলিট মর্জাদা সে অর্থে পায় নি। কখনো বাংলাকে অগ্নি পরীক্ষা দিতে হয়েছে হিন্দীর কাছে-কখনো নিজের আভিজাত্য প্রমান করতে হয়েছে ইংরেজির কাছে-কখনো সংস্কৃতি থেকে নিজের স্বতন্ত্রতা প্রমাণ করতে হয়েছে উর্দু-আরবির কাছে। ৪৭ এর একটা অধ্যার পার হয়েছে, ৭১ এর একটা অধ্যায় পার হয়েছে-যেহেতু রাজনৈতিক সংকট সে অর্থে নেই-তাই এপার বংগ বা ওপার বংগ দুইজায়গাতেই বাংলা তার গুরুত্ব হারিয়েছে বা হারাচ্ছে।
অর্থাৎ বাংলাকে বাঙ্গালীরা মা এর ভাষা বা প্রানের ভাষা যতটা মনে করে-তার থেকে বেশি জাতিসত্তা বা অধিকার আদায়ের বেশি উপযোগী মনে করে। অন্তত ইতিহাস পরিক্রমা কম বেশি সেরকম কথাই বলে। কিছুটা ব্যতিক্রম সম্ভবত ১৯৫২ এর ৮ ই ফাল্গুন। অই একটিবার সম্ভবত বাংলা একি সাথে হয়ে উঠেছিল জাতিসত্তার হাতিয়ার আর বাংলায় ভাব প্রকাশের আকুলতা।
কিন্তু তার মানে এই না যে বাঙালি রাতারাতি বাংলা প্রেমিক হয়ে গেছে। আর সে কারনেই বাংলা নিয়ে আমাদের অনীহা।
এই অনীহাটা আসলে আপনার আমার সমস্যা না-
এটা জাতিগত সমস্যা।
এক বঙ্গবন্ধু না জন্মালে যেমন বাংলাদেশ রাষ্ট্র বলে কোন কিছুর সৃষ্টি অন্তত ১৯৭১ এ হতো না। সেরকম সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্টভাষা সংগ্রাম পরিষদ কিংবা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বা এই ধরনের নামগুলো না থাকলে বাংলা আজো থাকতো অচ্ছুত কারন
মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার মর্ম বুঝতে বাঙ্গালী হিসেবে অধিকাংশই এখনো সেই অর্থে পরিপক্ব বা যোগ্য না!
©somewhere in net ltd.