নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্থার্ক্থা

আমি যততুক সময় অবসর থাকি ততটুক সময় নিজেকে মানুষের কাজে ব্যস্ত রাখতে চাই ।

ক্থার্ক্থা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুস্থ ভাবে বাঁচতে হলে আপনার যৌন সম্পর্কে জানতে হবেপর্ব ৩ এবারের বিষয় নারী খৎনা

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৭:২৭

নারী খৎনা যা নারী লিঙ্গাগ্রচ্ছেদ নারী যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ এবং নারী যৌনাঙ্গ ছাটাই নামেও পরিচিত । বলতে বোঝানো হয় সে সকল কার্যপ্রণালী যেগুলোতে স্ত্রী যৌনাঙ্গের আংশিক বা পুরোপুরি অপসারণ করা হয় অথবা সাংস্কৃতিক ধর্মীয় বা অন্য কোনো চিকিৎসা বহির্ভূত কারণে নারীর যৌন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করা হয় বা ক্ষত সৃষ্টি করা হয় । এটি সেই ধরনের কার্যপ্রণালীগুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয় যেগুলো আন্তলৈঙ্গিকদের জন্যে লিঙ্গ প্রতিস্থাপন সার্জারি বা যৌনাঙ্গ পরিবর্তনে ব্যবহৃত হয় । এর চর্চা সারা পৃথিবীতেই আছে কিন্তু প্রধানত আফ্রিকা ও ইন্দোনেশিয়াতেই এর চর্চা বেশি দেখা যায় । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO প্রক্রিয়াটিকে চার ভাগে ভাগ করেছে ।

তিন নম্বর কার্যপ্রণালীটিকে ঘিরে অনেক বিতর্ক রয়েছে, কারণ এই প্রক্রিয়াটির নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও প্রক্রিয়াটির ফলাফল । গত কয়েক দশক ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছাড়াও বহু স্বাস্থ্য সংস্থা এর চর্চা বন্ধ করতে তাদের চাপপ্রয়োগমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। যদিও ঐতিহ্য ও ধর্মীয় জীবনের প্রয়োজনে এটির চর্চা এখনো অনেক সমাজে রয়ে গেছে ।

নারী খৎনা বিষয়ে পারিভাষিক ইতিহাস
নারী যৌনাঙ্গের অস্ত্রোপচার বা এ ধরনের অন্যান্য কার্যপ্রণালীগুলোকে বর্ণনা করতে বিভিন্ন রকম পরিভাষা ব্যবহৃত হয়। এই প্রক্রিয়াগুলো সাধারণত নারী লিঙ্গাগ্রচ্ছেদ বা খৎনা নামে উল্লেখ করা হতো কিন্তু নারী যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ এবং নারী যৌনাঙ্গ ছাঁটাই পরিভাষা দু"টি এখন আর্ন্তজাতিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রাধান্য বিস্তার করছে।

এই চর্চাটির বিপক্ষে যারা আছেন তারা প্রায়ই নারী যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ পরিভাষাটি ব্যবহার করেন । কিছু গোষ্ঠী বিকৃতকরণ শব্দটি ব্যবহারের বিরোধী কারণ তারা মনে করেন এটি নারীর জন্যে অবমাননাকর তাই তারা নারী যৌনাঙ্গ ছাঁটাই পরিভাষাটি ব্যবহার করাকেই শ্রেয় মনে করেন । কিছু সংস্থা ইতোমধ্যেই দু"টি পরিভাষাকে একত্রিত করে সম্মিলিত পরিভাষা ব্যবহার করা শুরু করেছে, আর তা হলো নারী যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ বা ছাঁটাই FGM/C ।

জাতিসঙ্ঘ বিশ্ব জনসংখ্যা তহবিল UNFPA ৬ ফেব্রুয়ারিকে আর্ন্তজাতিক নারী যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ বিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।


নারী লিঙ্গাগ্রচ্ছেদ বা খৎনা বিষয় কিছু মন্তব্য

চিকিৎসা অভিধানসহ বিভিন্ন অভিধান লিঙ্গাগ্রচ্ছেদ শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করেছে যে শব্দটির প্রযোজ্য হবে তখনই যখন এই প্রক্রিয়াটি নারীর উপর সম্পাদিত হবে । মরিসন এট অল. বলেন “নারী লিঙ্গাগ্রচ্ছেদ বা খৎনা হলো এই প্রক্রিয়াটির জন্য সচারচর ভাবে ব্যবহৃত পরিভাষা ।

কুক বলেন যে “ঐতিহাসিকভাবে নারী লিঙ্গাগ্রচ্ছেদ বা খৎনা পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয়েছিল কিন্তু এই কার্যপ্রক্রিয়াটি বা যে প্রক্রিয়াতেই এটির চর্চা করা হয়ে থাকুক না কেন তা পুরুষ খৎনার সাথে পুরোপুরি সাদৃশ্যপূর্ণ নয় । শেল ডানকান বলেন নারী লিঙ্গাগ্রচ্ছেদ বা খৎনা পরিভাষাটি হলো একটি সুভাষণ যা নারীর যৌনাঙ্গের পরিবর্তনের অনেক গুলো কার্যপ্রক্রিয়ার মধ্যে একটি । টোউবিয়া ভিন্নমত পোষণ করে বলেন নারী লিঙ্গাগ্রচ্ছেদ বা খৎনা পরিভাষাটি অবিকৃত পুরুষ খৎনার সাথে প্রতারণামূলক সাদৃশ্যতার ইঙ্গিত বহন করে ।


নারী যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ
নারী যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ পরিভাষাটি ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিকে সমর্থন পেতে শুরু করে । বিকৃতকরণ শব্দটি শুধুমাত্র যে পুরুষ খৎনার থেকে একটি ভাষাতাত্বিক স্বাতন্ত্রতা সৃষ্টি করে তাই না বরং এ কাজটির গুরুত্বকেও জোরের সাথে তুলে ধরে ।

১৯৯০ সালে আদ্দিস আবাবাতে আন্ত আফ্রিকান কমিটির তৃতীয় কনফারেন্সে যেসকল ঐতিহ্যগত চর্চা নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে সেগুলো সম্মন্ধে আলোচনা করা হয় । সেখানেই প্রথম এ পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয় । ১৯৯১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যা জাতিসঙ্ঘের একটি বিশেষ সহায়ক সংস্থা সুপারিশক্রমে জাতিসঙঘ এই পরিভাষাটি গ্রহণ করে । তারপর থেকে এটি জাতিসঙেঘর দাপ্তরিক কাগজপত্রে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ।

এ প্রসঙ্গে বলতে হয় যে নারী লিঙ্গাগ্রচ্ছেদ বা খৎনা পরিভাষাটি প্রধানত নারী যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ পরিভাষাটির স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল ।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রক্রিয়াকরণ

কাটা ছেড়ার সীমার উপর নির্ভর করে বিশ্বে বিভিন্ন রকম নারী খৎনার চর্চা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, অর্থাৎ যৌনাঙ্গের টিশ্যু কতো বেশি কেটে ফেলা হবে তার ওপর । প্রধানত চার ধরনের প্রক্রিয়া দ্বারা নারী খৎনাকে ভাগ করা হয়েছে ।

যদিও নারী খৎনার সকল প্রচলিত প্রক্রিয়াগুলো এই চারটি প্রক্রিয়াতে সন্নিবেশিত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে । সেই সাথে এই বিষয়গুলোর উপর দাখিল করা প্রতিবেদনের উপত্তের নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও।


টাইপ ১

পুরো ভগাঙ্কুর বা ভগাঙ্কুরের অগ্রভাগ সম্পূর্ণ বা লম্বালম্বিভাবে কেটে অপসারণ করাকে টাইপ ১ নারী খৎনা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে । যা হুডেক্‌টোমি বা ক্লিটোরোডটোমি নামেও পরিচিত । ভগাঙ্কুরের অগ্রভাগ ও পুরুষাঙ্গের অগ্রত্বককে পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ ধরা হয় যা খৎনার সময় কেটে ফেলা হয় । এখানে যে নারীরা লেবিয়াপ্লাসটি করাতে ইচ্ছুক তারা ভগাঙ্কুরের অগ্রভাগ অপসারণের তীব্র বিরোধী কারণ এর ফলে ক্ষত সৃষ্টি এবং স্নায়ুর ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে ।


টাইপ ২

টাইপ ২ নারী খৎনাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে ক্লাইটোরিসের সম্পূর্ণ অপসারণের সাথে লেবিয়া মাইনরার আংশিক বা সম্পূর্ণ অপসারণ । এই ধরণের নারী খৎনাকে খাফ্‌দ ও বলে আরবিতে যার অর্থ হ্রাস ।

টাইপ ৩

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টাইপ ৩ নারী খৎনাকে কে সংজ্ঞায়িত করেছে যে বর্হিযৌনাঙ্গের অংশ বিশেষ বা পুরো বর্হিযৌনাঙ্গের অপসারণ এবং যোনিদ্বারকে সেলাই বা চিকন করে ফেলা ইনফিবুলেশন । এটি নারী খৎনার সবচেয়ে মারাত্নক রূপ এবং জরিপে দেখা যায় এটি সকল নারী খৎনার প্রায় ১৫%। ইনফিবুলেশনকে ফারাওনিক খৎনা বা নামেও পরিচিত ।

হর্ন অফ আফ্রিকাতে ইনফিবুলেশনের উপর এক পর্যবেক্ষণে পিয়েটারস লক্ষ করেন এই প্রক্রিয়ায় বর্হিযৌনাঙ্গের বেশ অনেকখানি টিশ্যু কেটে ফেলা হয় । লেবিয়া মেজরার ভেতরের অংশসহ পুরো লেবিয়া মাইনরা । এরপর লেবিয়া মেজরা কাটা বুনে বা সেলাই করে রাখা হয় ।

নড়াচড়া যেন না করতে পারে সেজন্য কিছু ক্ষেত্রে মেয়েটির দুই পা দুই থেকে ছয় সপ্তাহের জন্য বেধে রাখা হয় যাতে করে ভালভাবে সেরে ওঠে । পিউবিস থেকে মলদ্বার পর্যন্ত মাংস প্রাচীর ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না । সাথে শুধু ভালভার নিচের অংশে ছোট একটি জায়গা খোলা থাকে যাতে প্রস্রাব ও রজঃস্রাবের রক্ত বেরিয়ে যেতে পারে ।

সাধারণত এই কাজটি যিনি করেন তিনি এই প্রক্রিয়াটি করার ব্যাপারে অভিজ্ঞ এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা সম্পন্ন ও এজন্য স্থানীয় চেতনানাশক ব্যবহৃত হয় । প্রত্নন্ত অঞ্চলে যখন এই কাজটি করা হয় তখন এটি সাধারণত করেন বয়স্ক মাতৃকা বা ধাত্রীরা এবং তখন কোন চেতনানাশক ব্যবহৃত হয় না ।

যৌনমিলনের সময় বা কোন কাজের জন্য একটি উল্টো ইনফিবুলেশন সম্পাদিত হতে পারে । এই কাজটি করেন মহিলা আত্নীয়রা যাদের দায়িত্ব হলো ক্ষতটি কয়েক সপ্তাহ পর পর পরীক্ষা করা এবং যদি প্রয়োজন হয় তবে খোলা স্থানটি আরো একটু সম্প্রসারণ করা । শিশু প্রসবের সময় ঐ স্থানটি সাধারণ স্বাভাবিক প্রসব বা যোনিজ প্রসবের জন্য খুব ছোট হওয়ায় ইনফিবুলেশন সম্পূর্ণ খুলে ফেলা হয় এবং প্রসবের পর আবার লাগিয়ে ফেলা হয় ।

আবার পা দুটো কিছু দিনের জন্য বেধে রাখা হয় যেন সেরে ওঠে । যখন শিশু প্রসবের প্রক্রিয়াটি হাসপাতালে হয় তখন ডাক্তার শিশু প্রসবের জন্য ইনফিবুলেশটিকে ঠিক রেখে গভীর এপিসিয়োটোমাইস এর মাধ্যমে যৌনিকে বড় করেন । পরবর্তীতে রোগিনী তার ভালভা আবার বন্ধ করে দেবার জন্য জোর করতে পারেন।

পর্যাপ্ত আধুনিক ওষুধ এবং অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা না থাকায় এই চর্চাটির কারণে চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতা বেড়েই চলেছে ।

সুদানে ৩০০ জন নারী ও ১০০ জন পুরম্নষের মধ্যে পাঁচ বছর ব্যপী এক পর্যবেৰণে দেখা গিয়েছে যে নারীরা এই মারাত্নক যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণের শিকার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ যৌনাকাঙক্ষা সুখ এবং অর্গাজম বা শীর্ষসুখের অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন । এদতসত্ত্বেও তারা তাদের এই অনুভূতিগুলো তাদের সংস্কৃতিতে তারা লুকিয়ে রাখতে বাধ্য ।

এই প্রক্রিয়াটির সমর্থকেরা এটি চালিয়ে যাবার পক্ষপাতি কারণ তারা এটিকে আদর্শ সুন্দরের অনুগামীতা বলে মনে করেন । এটি পশ্চিম থেকে অনেক আলাদা । অনেক ইনফিবুলেটেড নারী মত দেয় । এই প্রক্রিয়াটির কারণে তাদের সঙ্গীরা যে সুখ লাভ করবে তা সুনির্দিষ্টভাবে একটি সফল বিবাহিত জীবন ও আনন্দপূর্ণ যৌন জীবনের অংশ ।


টাইপ ৪ অন্যান্য প্রক্রিয়া

অন্যান্য রূপগুলো যৌথভাবে টাইপ ৪ হিসেবে উলেস্নখ্য এবং এটার সাথে কোন রকমের টিশ্যু অপসারন জড়িত নয় । এটির সাথে বিভিন্ন সীমা চর্চার জড়িত । ভগাঙ্কুরে সূচ ফোটানো, যৌনাঙ্গ পুড়িয়ে ফেলা বা ক্ষত সৃষ্টি করা সেই সাথে যৌনি চিরে বা ছিড়ে ফেলা অথবা যৌনির ভিতরে তৃণলতা প্রবেশ করানো যাতে রক্তপাত হয় এবং যৌনিদ্বার চিকন হয় । টাইপ ৪ এর চর্চা প্রাথমিকভাবে কিছু বিচ্ছিন্ন নৃ তাত্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায় সেই সাথে অন্যান্য টাইপের সাথে একত্রেও দেখা যায় ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.