নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্থার্ক্থা

আমি যততুক সময় অবসর থাকি ততটুক সময় নিজেকে মানুষের কাজে ব্যস্ত রাখতে চাই ।

ক্থার্ক্থা › বিস্তারিত পোস্টঃ

জরায়ুমুখ ক্যান্সার আক্রান্ত

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৭:০৪

জরায়ুমুখ ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সার নারীদের জন্য এটি একটি ভয়াবহ ব্যাধি ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারন । সারাবিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন এবং প্রতি বছর ৫০ লক্ষাধিক নারী নতুন করে আক্রান্ত হন ।

জরায়ুমুখ ক্যান্সার ১৫ বছর থেকে ৪৫ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায় । ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশের প্রায় ২ থেকে ২০ বছর আগেই একজন নারী এ রোগের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন । তবে সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায় ।

সাধারণত অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের নারীরা স্বাস্থ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতনতা নাই বলে এই রোগের বিস্তার বেশি বা বেশি আক্রান্ত হয় । তবে উন্নত দেশের নারীরা এবিষয়ে সচেতন এবং উন্নত জীবনযাপনের কারণে অনেকটাই এই রোগ থেকে নিরাপদ । জরায়ু মুখ ক্যান্সার সনাক্ত করার জন্য পেপস স্মেয়ার টেস্ট রয়েছে যা উন্নত দেশের নারীরা দ্বিধাহীনভাবে গ্রহণ করতে পারেন । কিছু অনুন্নত দেশে সেগুলো গ্রহণ করতে অনেক পারিবারিক ও সামাজিক বাধা রয়েছে ।

সংক্রমনঃ
২০ বছরের কম বয়সীদের নিচে এ রোগ সাধারণত হয় না । আক্রান্তরা সাধারণত ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের বেশি হয়ে থাকেন । ৬০ বছরের পরও এ রোগ হতে পারে তবে সংখ্যা তুলনামূলক কম । উপযুক্ত চিকিৎসায় শতভাগ ভালো হওয়া সম্ভব ।
হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস এইচপিভি হিউম্যান পেপিলোমা বা এইচপি ভাইরাস জরায়ুমুখের ক্যানসারের অন্যতম একটি কারণ তবে এটি একমাত্র কারণ নয় । যৌন সংযোগে এর সংক্রমণ ঘটে । সংক্রমণের এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জরায়ুমুখের স্বাভাবিক কোষ পরিবর্তিত হতে থাকে এবং একসময় তা ক্যান্সারে রূপ নেয় ।

এযাবৎ ১০০ ধরণের এইচপি ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে । যার বেশিরভাগই জরায়ু ক্যান্সারের জন্য অতোটা ঝুঁকিপূর্ণ নয় । তবে এইচপিভি ১৬ এইচপিভি ১৮ ও এইচপিভি-৬ এবং এইচপিভি ১১ সবথেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ । স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত নারীদের জরায়ু প্রায়ই এইচপি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে । এতে কোনো উপসর্গ থাকে না বা শারীরিক পরীক্ষায় কোনো চিহ্ন বা ক্ষত পাওয়া যায় না ।

এর জন্য কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না । শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাবলে ১৮ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে জরায়ু প্রায় সব এইচপি ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে যায় । জরায়ুতে এইচপি ভাইরাস দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে জরায়ু কোষে পরিবর্তনের সূত্রপাত হয় এবং ধীরে ধীরে তা ক্যান্সারের রূপ ধারণ করে ।


পেপস স্মেয়ার টেস্ট
পেপস স্মেয়ার টেস্ট বা প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট এজাতীয় ক্যান্সার সনাক্তকরনের একটি সহজ পরীক্ষা । জরায়ুমুখ থেকে রস নিয়ে অণুবীক্ষনযন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে ক্যান্সার ও ক্যান্সার হওয়ার পূর্বাবস্থা এবং জরায়ুমুখের অন্যান্য রোগ যেমন প্রদাহ ইনফ্লামেশন সনাক্ত করা যায় ।

এটি একটি ব্যথামুক্ত এবং সাশ্রয়ী পরীক্ষা পদ্ধতি বলে বলা হয় । সাধারণত বিবাহিত নারীদের ২১ বছরের পর থেকে এই পরীক্ষা শুরু করা যেতে পারে এবং দুই বছরে একবার করে পরীক্ষা করানোর জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে ।

৩০ থেকে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত যাদের ফলাফল তিনবার স্বাভাবিক এসেছে তাদের প্রতি তিন বছর পর পর এই পরীক্ষা করা উচিত । তবে চিকিৎসকের পরামর্শে এ রুটিনের পরিবর্তনও হতে পারে ।


প্রতিরোধক টিকা

সাধারণত ১০ বছর বয়সের পর থেকেই জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধক টিকা নেয়া যায় । মোট তিন ডোজ টিকা নিতে হয় । প্রথম ডোজের এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং প্রথম ডোজের ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ টিকা নিতে হয় । টিকা গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত পরীক্ষা করালে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের আক্রমণ হার কমিয়ে আনা যায় ।

ভাইরাস এইচপিভি ১৬ এইচপিভি ১৮ ও এইচপিভি ৬ এবং এইচপিভি ১১ এর প্রতিরোধক টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে । আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এফডিএ নিয়মানুযায়ী ৯ থেকে ২৫ বছর বয়সে এই টিকা কার্যকর হয় । গর্ভাবস্থায় এই টিকা গ্রহণ করা যাবে না বা প্রদানের অনুমোদন নেই । রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্যান্সার সংঘটনের পরও এই টিকা আর কোনো কাজে আসে না ।

তবে ঔষধি প্রতিরোধকের চেয়ে আচরণগত প্রতিরোধকের দিকে বিজ্ঞানীরা বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন । যেমন বাল্য বিবাহ রোধ, অধিক সন্তান প্রসব, ধুমপান করা, এমনকি পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার হওয়া, পানের সাথে জর্দা, সাদা পাতা, দাঁতের গোড়ায় গুল এবং তামাকের গুঁড়া রাখা ইত্যাদি কারণে এই ক্যান্সারে আক্রান্তের সম্ভাবনা বেশি বাড়ে ।

আর সুষম খাবার গ্রহণ দৈনিক তিন চারবার ফল, শাকসব্জি, তরকারি খাওয়া এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং সামাজিক অনুশাসন মেনে চলা এই রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে । এর পাশাপাশি নারীর নিয়মিত পেপস স্মেয়ার টেস্টে অংশ নেওয়া উচিত তাতে রোগ আগেভাগে সনাক্ত করা সম্ভব হয় ।


জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী ১২ তম সবচেয়ে পরিচিত রোগের নাম ।এবং নারীদের জন্য এটি ৫ম প্রাণঘাতী রোগের নাম জরায়ুমুখ ক্যান্সার । প্রতিলাখে প্রতিবছর ১৬ জন নারী এই রোগে আক্রান্ত হন । যাদের ৮জনই মৃত্যুবরন করেন । আনুমানিক ৮০শতাংশ উন্নয়নশীল দেশের নারীরা এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ।

২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী ৪৭৩০০০ টি জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঘটনা জানা যায় । ২৫৩০০০ জনের প্রতিবছরে মৃত্যু হয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে ৮ম কমন রোগ । ১৯৯৮ সালে ১২৮০০ মার্কিন নারীর মধ্যে ৪৮০০ জন মৃত্যুবরন করেন । ২০০৮ সালে ৩৮৭০ জন মার্কিন নারী এই রোগে মারা যায় বলে গভেষকরা ধারনা করেন ।


বাংলাদেশ আক্রান্ত
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে ২০১০সালে এক জরীপে ধারণা করা হয় প্রতিবছর প্রায় ১৩০০০ নারী নতুন করে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং প্রতিবছর মৃত্যুবরণ করে প্রায় ৬৬০০ নারী ।

অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে সারাদেশে ১৮ জন নারী মারা যাচ্ছেন জরায়ু মুখ ক্যান্সারে । জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতালের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগ থেকে প্রকাশ করা প্রতিবেদনমতে ২০০৫ সালে পাঁচ হাজার ৪১১ জন মোট ক্যান্সার শনাক্ত রোগীর মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল দুই হাজার ২৭৫ জন ।

এর মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৬১ জন । এ ক্যান্সারে আক্রান্ত ৫৬১ জনের মধ্যে ২১৩ জনেরই বয়স ছিল ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সের মধ্যে । আর ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সের মধ্যে ছিল ২৬ জন ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.