![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
World is totally meaningless. Though sometime you will find here happiness. But length of happiness is highly limited. Original color of the world is black.
সুন্দর একটা মিষ্টি স্বরের আবেশ নিয়ে আজ ঘুম ভাঙ্গলো। ঝলমলে মন নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়াঁলাম। সামনের খোলা জায়গাটায় অনেক রকম ফুল ফুটেছে। আজ সব কিছুই অন্য রকম লাগছে.... ¯স্নিগ্ধ মন কেমন করা সকাল। আজ সকালটা নতুন কোন সাজে সেজেছে। এক মিষ্টি মেয়ে খোঁপায় হলুদ ফুল জড়িয়ে, হলুদ শাড়ী পড়ে হেঁটে যাচ্ছে যেন জগতের সব আলো ওর সাথে শাড়ীর আঁচলে, চোখের পাতায় জড়িয়ে আছে। ভাবছিলাম আজ কি কোন বিশেষ দিন? হঠাৎ মনে পড়লো আজ পহেলা ফাল্গুন। আমার মন নেচে উঠলো আনন্দে। সব ফুলের রেনুগুলো যেন ছড়িয়ে পড়লো আমার মনে। দুহাতে পরাগ মেখে চোখে বুলাতে ইচ্ছে করছে। আজ দূরে কোথাও হারিয়ে যাওয়ার দিন। কাজকে দিব ছুটি। এখন আমি শাড়ী খুঁজে বের করব কোন শাড়ীটা পড়ব, লাল টিপ পড়ব আর খোঁপায় হলুদ গাধা ফুল। মনে মনে গল্প করব তোমার সাথে, চিঠি লিখব।
নবীন প্রাণ ও নবীন উদ্দীপনা নিয়ে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। বসন্ত আসে বাসন্তী রংয়ের শাড়ী পরে, খোঁপায় অশোক, পলাশ, মাধবিকা পুষ্ট গুঁজে এদেশের প্রকৃতির রঙ্গমঞ্চে। বসন্তের পুষ্পময় গন্ধেভরা দখিনা বাতাসে ভাবুকের মনে জাগে ভাব, কবির মনে জাগে ছন্দ, আর গায়কের মনে জাগে গান। বসন্তের অনিন্দ্য সুন্দর হাসির পুষ্পবৃষ্টি আর কোকিল কণ্ঠের কুহুতান সবাইকে জানিয়ে দেয় তার আগমনের কথা।
আহা আজি এ বসন্তে ...
“দখিন সমীরণে শিহরণ” জাগানোর মাহেন্দ্র দিন এলো, মাতাল হাওয়ায় কুসুম বনের কাপঁনে, উতরোল মৌমাছিদের ডানায় ডানায়, নিরাভরন বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে উঠবার আভাসে, পল্লব মর্মরে আর বনতলে কোকিলের কহুতাল জানাল: ‘আজি বসন্ত’ কবিকণ্ঠের এ আহ্বানের লগন এলো। আজ পয়লা ফাল্গুন। গনমানুষের কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক... আজ বসন্ত:। শীতের রিক্ততা মুছে দিয়ে প্রকৃতি জুড়ে আজ সাজসাজ রব। হিমেল পরশে বিবর্ণ প্রকৃতিতে জেগে উঠেছে নবীন জীবনের ঢেউ। নীল আকাশে সোনা ঝরা আলোর মতই হৃদয় আন্দোলিত। আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে...। আহা আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোটে কত বাঁশি বাঁজে, কত পাখি পায়....। নব পুষ্প পত্র পল্লবে, প্রকৃতি নতুন সাজে সেজে উঠেছে। কুড়িঁদের ওষ্ঠপুটে লুটছে হাসি ফুটেছে গালে টোল। অশোকে-অশ্বখে-শিরীষে-শালে পিয়ালে হাওয়ায় নাচল, আলোর কাপন যখন তখন মাতামাতি দিন এখন। ঋতরাজ বসন্তের দিনগুলো মধুরেন মায়াবী এক আবেশে ঘিরে রাখবে বৃক্ষ, লতা, পাখ-পাখিলী আর মানুষকে। এ ফাগুন সুখের মতো এক ব্যথা জাগিয়ে দেবে চিত্তে:’ এতটুকু ছোঁয়া লাগে’ এতটুকু কথা শুনি তাই দিয়ে মনে মনে রচি ফাল্গুনি....।
সাগর, নদী, ভু-গ্রীস্মের তাপবাষ্পে নিঃশ্বাস নেবার আগে এ বসন্তের ফাল্গুনে পায় শেষ পরিতৃপ্তি। নৈসর্গিক প্রকৃতি বর্ণচ্ছটায় বঙ্গময় হয়ে উঠে। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতই বাঙালী তরুণ মনে লাগে দোলা। হৃদয় হয় উচাটন। ফুল ফুটবার পুলকিত দিন বসন্ত। বন-বনান্তে, কাননে কাননে পরিজাতের কোলাহল, আর বর্ণাঢ্য সমারোহ। ‘ফুলের বনে যার পাশে যাই তারেই লাগে ভালো:’ কবিগুরুর এই পুলকিত পংক্তিমালা বসন্তেই কি সকলের বেশি মনে পড়ে? বনে বনে রক্তরাঙা শিমুল-পলাশ, অশোক-কিংশুকে বিমোহিত জাতীয় কবি নজরুর ইসলামের ভাষায় ‘এলা খুনমাখা তুণ নিয়ে খুনেরা ফাগুন...’ বসন্ত বাতাসে পুলকিত ভাটিবাংলার কণ্ঠ শাহ আবদুল করিম গেয়ে ওঠেন: বসন্ত বাতাসে... সইগো, বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।
প্রকৃতির দিকে তাকালে শীত-বর্ষার মত বসন্তকে ও সহজে চেনা যায়। বাঙালীর জীবন বসন্তের উপস্থিতি সেই অনাদিকাল থেকেই। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনে ও বসন্ত ঠাঁই পেয়েছে নানাভাবে। আমাদে ঋতুরাজ বসন্তের আবাহ আর পশ্চিমের ভ্যালেন্টাইন-ডে যেন এক বৃত্তের দুটি কুসুম। এ যেন এক সুতোয় গাঁথা দুই সংস্কৃতির এক দ্যোতলা। মানুষের মতই এ সময় পাখিরা ও প্রণয়ী খোঁজে বাসা বাঁধে। রচনা নতুন পৃথিবী।
হালে শহরের যান্ত্রিকতার আবেগহীন সময়ে বসন্ত যেন কেবল বৃক্ষেরই, মানুষের আবেগে নাড়া দেয় কমই। তারপরও আজ বসন্তের পয়লা দিনে নানা আয়োজনে আলোকিত হবে ঢাকা। বিশেষত বাসন্তী শাড়ি আর সফেদ-শুভ্র পাঞ্জাবিতে তরুণ-তরুণীরা বইমেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, উদ্যানমালা, ফাস্টফুড ক্যাফেতে বসন্ত আবাহন করবে নানা নৈবেদ্যে, নানা অনুষঙ্গ।
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
বসন্তের ফুল গাঁথলো ও-আমার জয়ের মালা/বইলো প্রাণ দখিন হাওয়া,আগুন জ্বালা/যৌবনেরই ঝড় উঠেছে আকাশ পাতালে/নাচের তালে ঝঙ্কার তাই আমায় মাতালে-শুধু কবিগুরু বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নয়, বসন্তের দখিন হাওয়া আজ মানব ও প্রকৃতির সবখানেই বয়ে যাবে। মাতাবে আপন মোহে। ভালোবাসায় ঝঙ্কার আনবে। আজ যে বসন্ত। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। আজ পহেলা ফাগুন। প্রভাতের নবীন ঊষা বাংলার প্রকৃতিতে ঋতুরাজের দোলা নিয়ে এসেছে। মানব-মানবীর হৃদয় বেবি আর পশু-
পাখি, প্রজাপতির রঙিন পাখনা, মৌমাছির গুণগুনানি, বৃক্ষ-লতা, গুল্ম, ফুলে-ফলে, পত্র-পলবে, শাখে-শাখে, ঘাসে ঘাসে, নদীতটে, কুঞ্জ বীথিকায় ও অরণ্যে-পর্বতে নবযৌবনের বাম ডেকেছে। সকালের ঘুমভাঙালি দক্ষিণা সমীরণে কেটেছে শীতের জরাগ্রস্ততা। জেগেছে আশ্চর্য শিহরণ। জারুল-পারুল, মাধবী-মালতী-রজনীগন্ধা, পলাশ-জবা, কৃষ্ণচূড়া-দোপাটি, কনকচাঁপার গুচ্ছ আন্দোলিত হয়েছে নবজীবনের স্পন্দনে। আড়মোড়া ভাঙানিয়া বসন্ত বায় হিলোলিত হয়েছে আ¤্রকুঞ্জ। নবপত্রে ও পুষ্পে বন-বাদার উঠেছে কেঁপে। শরীরময় ছড়িয়ে পড়েছে যৌবনের উচ্ছলতা-উদ্দমতা। তাই তো মন উদাস করা কোকিলের কুহুতান নিয়ে যাবে দূরে কোন অশত্থ আর বটচ্ছায়ায়। যেখানে দখিনা ঝিরঝির বাতাসে খুঁজে ফিরবে প্রিয়া আর সোনামণির আদুরে মুখখানি। বসন্তের উষ্ণতায় আমের মুকুল আজ মঞ্জুরিত। গিরি-শৃঙ্গমালার ভেঙেছে মহৎ মৌনতা। নব পুষ্প ও পত্র পল বে প্রকৃতিতে সাজ সাজ রব। কোন এক অতীন্দিয় লোকের দুর্জ্ঞেয় রহস্যঘেরা এক অস্ফুট আহ্বান যেন কানে এসে চুপি চুপি কথা কয়ে যায়-‘কবি নীরব কেন, বসন্ত যে এসেছে ধারায়’।
বসন্ত মানেই সুন্দরের জাগরণ। নবীনের আগমন। চিরায়ত সুন্দর, ভালোবাসা আর যৌবনের প্রতীক এ বসন্ত। বসন্তের রোদেলা দুপুরে, মন উদাস করা খ্যাপা বাতাসে কিংবা মায়াভরা আবির ছড়ানো গোধুলি লগ্নে, বসন্তানিলের ¯িœগ্ধ পরশে বা সোনাঝরা পূর্ণিমা নিশীথে অথবা নির্মেঘ অমাবস্যা আচ্ছাদিত পুষ্পিত কাননের সৌরভে প্রকৃতিতে আনন্দধারা বয়ে যায়। আকাশ-বাতাস যৌবনের ঝড়ে আন্দোলিত হয়। মনের রাগ-রাগিণীটা আবীররাঙা হয়ে ওঠে সুরেলা বাতাসের মৃদুমন্দ চালে। বসন্তের আগমনে হৃদয় পুলকিত আর আন্দোলিত হয় বলেই কবিরা আকাশে চোখ মেলে তাকাতেই যেন জ্বলে ওঠে আলো। বসন্তের বন্দনা করে একটি ছত্রও লেখেননি, এমন একজন বাঙালি কবিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রাচীন চর্যাপদে পাওয়া বসন্ত আরও ঋদ্ধ করেছেন কবিগুরু। আর সুভাষ মুখোপাধ্যায় তো প্রকৃতিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেই ফেলেছিলেন-ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত। বসন্তের মাতাল হাওয়ায় যাদের মন-ময়ুরী বেশি আন্দোলিত হয়ে ওঠে, তারা তরুণ-তরুণী। তাই তো দখিনা বাতাসে যখন ভেসে আসে উদাস করা কোকিলের কুহুতান, তখন তারা অগোচরেই গেয়ে ওঠে-শোন গো দখিনা হাওয়া প্রেম করেছি আমি। কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকা বসন্তের আবেশেই বজ নির্ঘোষে ঘোষণা দেয়-মৃত্যুর দাঁড়ায়ে জানিব তুমি আছ আমি আছি। এ বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে পলাশের শাখে গলা ছেড়ে ডাক দেয়া কৃষ্ণ কোকিলের কুহুতান গাঁও-গেরামের নিত্য চিত্র। কিন্তু ইট-কাঠ পাথরে গড়া যান্ত্রিক-কৃত্রিম নগরীতে ব্যস্ত মানুষের কানে তা কতটাই বা পৌছে। কিন্তু তবুও কি পিছিয়ে থাকে নগরবাসী? এই শহরে বৃক্ষের ¯স্নিগ্ধতা কিংবা কুঁড়িদের নাচনের অনুপস্থিতি যতই থাকুক, প্রিয়ার কমনীয় সঙ্গে নিশ্চিতই আজ শোভিত হবে লতানো শাড়ি; প্রিয়’র রোমশ শরীরে উঠবে বাহারি ডিজাইনের রঙিন পাঞ্জাবি। প্রিয়’র দক্ষিণ বাহুকে প্রিয়া তার কোমল-উত্তর হস্তে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী, রমনা-সোহরাওয়ার্দী-চন্দ্রিমা উদ্যান অথবা টিএসসি, শহীদ মিনার, রবীন্দ্র সরোবরে রেশমি কেশ হাওয়ায় উড়িয়ে দেবে। অথবা পরম আদরে বাঁধা চুলের বেণিদ্বয় দুলুনি দেবে এ-কাঁধ থেকে ও-কাঁধে। আর গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠবে-আমার কে নিবি ভাই সঁপিতে চাই আপনারে।
©somewhere in net ltd.