নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সেবার মাধ্যমে বন্ধুত্ব

ব্লগিং করে আনন্দ , সত্য সুন্দর শেয়ার করতে চাই

আহলান

ব্লগার

আহলান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমলের পূর্বে জেনে নিন কিভাবে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয় ............

১২ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৩৮

আমরা অনেক অনেক আমল করি। নামাজ রোজা হজ্জ্ব যাকাত দান সাদকা ইত্যাদি ইত্যাদি। এই রমজান মাসে তো অনেকে দেখি ক্যালকুলেটর হাতে নিয়ে সোয়াবের হিসাব কষতে বসে। এতো গুন এতো গুনন এতো যোগ এতো ..... মোট এতো কোটি এতো লক্ষ সোয়াব ........ । বাস্তবিক অর্থে আল্লাহর রহমত ছাড়া এই লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সোয়াব দ্বারা কেউই নাজাত লাভ করতে পারবে না। সুতরাং কোটি কোটি সোয়াবের হিসাব না করে শুধু কায়মনো বাক্যে আল্লাহর সন্তোষ্টি আদায়ের উদ্দেশ্যেই আমল করা উচিৎ।

হযরত মো’আয ইবনে জাবাল রাহেমাল্লাহ্ বলিয়াছেন, রাসূলে মাকবুল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ

“ আল্লাহ সাত আসমান সৃষ্টি করার পূর্বে সাতজন ফেরেশতা সৃষ্টি করিয়াছেন। অতঃপর সাত আসমান সৃষ্টি করিয়া এক একটির প্রহরায় এক একজন ফেরেশতাকে নিযুক্ত করিয়াছেন। যে সমস্ত ফেরেশতা ভূপৃষ্ঠ হইতে মানুষের কার্যাবলী লইয়া আল্লাহ তা’আলার দরবারে পৌঁছাইবার কাজে নিযুক্ত আছেন তাঁহাদিগকে ‘হাফাযাহ’ অর্থাৎ, রক্ষী ফেরেশতা বলা হয়।

তাঁহারা মানবের দৈনন্দিন কার্যাবলী লইয়া আরোহণের পথে প্রথম আসমানে উপনীত হওয়া মাত্র তথাকার প্রহরী ফেরেশতা আসিয়া তাঁহাদের পথ রোধ করিয়া বলেনঃ থাম, আমি এবাদত গুলি পরীক্ষা করি দেখি। কতকগুলি এবাদত বাছিয়া লইয়া তিনি বলেন, যাহারা এই এবাদতগুলি করিয়াছে, এগুলি নিয়া তাহাদের মুখের উপর নিক্ষেপ কর। ইহারা পরনিন্দাকারী। আল্লাহ তা’আলা আমাকে নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন, আমি যেন পরনিন্দাকারীদের আমল তাঁহার দরবারে পৌঁছিতে না দেই।

রক্ষী ফেরেশতাগণ সেই আমলগুলি ফেলিয়া দিয়া অবশিষ্টগুলি লইয়া দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছিতেই তথাকার প্রহরী ফেরেশতা বাধা প্রদান করিয়া বলেন, দাঁড়াও, তোমাদের হস্তস্থিত আমলগুলি বাছাই করিতে হইবে। অতঃপর কতকগুলি আমল বাছাই করিয়া রক্ষী ফেরেশতাগণ বলেন, এই আমলগুলি যাহারা করিয়াছে এগুলি নিয়া তাহাদের মুখের উপর ছুঁড়ে মার। কেননা, ইহারা এ সমস্ত আমল পার্থিব উদ্দেশ্য সিদ্ধির সঙ্কল্পে করিয়াছে এবং লোকসমাজে এ সমস্ত আমলের বাহাদুরী করিয়া বেড়াইয়াছে। এই শ্রেণীর লোকদের কার্যাবলী যাহাতে আল্লাহ তা’আলার দরবারে না পৌঁছিতে পারে তজ্জন্য আমাকে নিযুক্ত করা হইয়াছে। রক্ষী ফেরেশতারা সেই অবরুদ্ধ আমলগুলি ফেলিয়া দিয়া অবশিষ্ট আমল গুলি লইয়া সম্মুখের দিকে অগ্রসর হইতে থাকেন। এ সমস্ত আমলের মধ্যে রোযা, নামাজ এবং সদ্‌কার আমল মিশ্রিত থাকা হেতু রক্ষী ফেরেশতাগণ উহাদের অপূর্ব জ্যোতি দেখিয়া বিস্মিত ও চমৎকৃত হইয়া পড়েন।

এতদ্‌সত্ত্বেও যখন তাহারা উহা লইয়া তৃতীয় আসমানে আরোহণ করেন, তৎক্ষণাৎ প্রহরী ফেরেশতা আসিয়া বলেন, আমি অহংকারী লোকদের আমল আটক করিবার জন্যে নিযুক্ত আছি। এই বলিয়া তিনি অহঙ্কারী লোকদের আমল বাছিয়া লইয়া ফেলিয়া দেন।

অতঃপর ‘হাফাযাহ্’গণ অন্যান্য আমলগুলি লইয়া চতুর্থ আসমানে আরোহণ করেন। সেই আমলগুলির মধ্যে তাস্‌বীহ-তাহ্‌লীল, রোযা, নামায এবং হজ্জ্বের আমল মিশ্রিত থাকা হেতু সমস্ত আমল নক্ষত্রের ন্যায় উজ্জ্বল দেখায়, তথাপি উক্ত আসমানের প্রহরী ফেরেশতা আসিয়া বলেন, এই আমলগুলির মধ্যে আত্মাভিমানী লোকের আমলও মিশ্রিত আছে। আমি আত্মাভিমানী লোকের আমল আটক রাখার জন্য নিযুক্ত আছি। আমি তাহাদের আমল আল্লাহ্ পাকের দরবারে যাইতে দিতে পারি না। এগুলি নিয়া আমলকারীদের মুখের উপর ছুঁড়িয়া মার।

হাফাযাহ্ ফেরেশতাগণ সেগুলিকে ফেলিয়া দিয়া অবশিষ্ট আমলগুলি সঙ্গে লইয়া পঞ্চম আসমানে পৌঁছেন। চাকচিক্য ও সৌন্দর্যে এগুলিকে সৌষ্ঠবপূর্ণ ও সসজ্জিত নববধুর মত দেখায়। ঠিক যেন প্রথমদিন স্বামীর গৃহে প্রেরিত হইয়াছে। তথাপি তথাকার ফেরেশতা বাধা প্রদানপূর্বক বলেন, এ সমস্ত আমলের মধ্যে ঈর্ষাপরায়ণ লোকের আমল রহিয়াছে। আমি তাহাদের কার্য আটক করিয়া রাখার জন্য নিযুক্ত আছি। এই বলিয়া কতকগুলি আমল বাছিয়া লইয়া বলেন, এগুলি ঈর্ষাকারী লোকদের আমল, এইগুলিকে নিয়া আমলকারীদের ঘাড়ে চাপাইয়া দাও। যাহার জ্ঞানে ও পরহেযগারীতে ইহাদের সমকক্ষ হইয়াছে, ইহারা তাহাদের প্রতি ঈর্ষা পোষণ করিয়া থাকে ও তিরষ্কার করে। অতএব, আমি এই সমস্ত কার্যকে সন্মুখে লইয়া যাইতে দিতে পারি না।

হাফাযাহ্ ফেরেশতাগণ সেগুলিকে ফেলিয়া দিয়া অবশিষ্ট আমলগুলি সঙ্গে লইয়া ষষ্ঠ আসমানে উপণীত হন। ইহার মধ্যেও রোযা, নামাজ, ছদ্কা, যাকাত, হজ্জ, ওমরা প্রভৃতি আমল বিদ্যমান। তথাপি উক্ত আসমানের রক্ষী ফেরেশতা বাধা প্রদানপূর্বক বলেন, দাঁড়াও, তোমাদের হস্তস্থিত আমলগুলি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে। এই বলিয়া তিনি তন্মধ্যে অনেকগুলি আমল বাছিয়া লইয়া বলেন, এগুলি এমন লোকদের দ্বারা অনুষ্ঠিত হইয়াছে যাহার দুস্থ এবং বিপন্ন লোকের প্রতি দয়া করে না; বরং পরের দুঃখ-কষ্ট দেখিয়া তাহার আনন্দিত হয়। আমি রহমতের ফেরেশতা, আমি নির্দয় লোকদের আমলকে বাধা প্রদান করিবার জন্য আদিষ্ট হইয়াছি। অতএব, তোমরা এইগুলিকে নিয়া আমলকারীদের মুখের উপর নিক্ষেপ কর।

হাফাযাহ ফেরেশতাগণ সেই আমলগুলিকে ফেলিয়া দিয়া অন্যান্য আমলগুলি লইয়া সন্মুখের দিকে অগ্রসর হইতে থাকেন। এই আমলগুলি রোযা, নামায, ছদকা, খয়রাত, পরহেয্‌গারী প্রভৃতি শ্রেষ্ঠ আমলে পরিপূর্ণ বলিয়া উহাদের জ্যোতি সূর্যের ন্যায় দীপ্তিমান এবং শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের কারণে বজ্রনিনাদের ন্যায় ঘর্‌ ঘর্‌ শব্দে আসমান কম্পিত করিয়া অগ্রসর হইতে থাকে। উহাদের অনুপম জ্যোতিতে সমগ্র আসমান উদ্ভাসিত হইয়া পড়ে। তিন সহস্র ফেরেশতা উহাদিগকে আল্লাহ তা’আলার সমীপে পৌঁছাইয়া দিবার জন্য সঙ্গে সঙ্গে পাহারা দিয়া চলেন, অন্য কোন ফেরেশতাই ইহাদিগকে বাধা দিতে পারে না। প্রচন্ডবেগে অগ্রসর হইয়া সপ্তম আসমানের দ্বারে পৌঁছিবামাত্র তথাকার রক্ষী ও প্রহরী ফেরেশতাগণ পথ অবরোধ করিয়া বলিতে থাকেনঃ যাহাদের এবাদতে আল্লাহ তা’আলার সন্তোষ লাভ উদ্দেশ্য ছিল না, বরং সুধী ও জ্ঞানী সমাজে নিজের প্রাধান্য প্রদর্শন এবং সুনাম-খ্যাতি ও প্রতিপত্তি বিঘোষণ করাই উদ্দেশ্য ছিল, তাহাদের আমলগুলিকে এই আসমানের উপর দিয়া অতিক্রম করিবার অনুমতি প্রদান না করিতে আমি আদিষ্ট হইয়াছি। দাঁড়াও, তোমাদের হস্তস্থিত আমলগুলিকে বাছিয়া দিতে হইবে। অতঃপর কতকগুলি আমল বাছিয়া বলিবেন, এগুলি নিয়া আমলকারীদের মুখে নিক্ষেপ কর। যে সমস্ত কার্য কেবল আল্লাহ তা’আলার সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে না হয় সেগুলি ‘রিয়া’, রিয়াকার লোকের আমল আল্লাহ তা’আলার দরবারে কবুল হয় না।

অতএব, ‘হাফাযাহ’ ফেরেশতাগণ সেগুলিকে ফেলিয়া দিয়া অন্যান্য আমলগুলি লইয়া আল্লাহ তা’আলার দরবারের দিকে অগ্রসর হইতে থাকেন। এই বাছা বাছা আমলগুলি সৎস্বভাব, তাস্‌বীহ-তাহ্‌লীল এবং নানা প্রকার এবাদত। আসমানের সমস্ত ফেরেশতা এই আমলগুলির সৌন্দর্যে ও মাধুর্যে মুগ্ধ হইয়া ইহাদিগকে আল্লাহ তা’আলার দরবারে পৌঁছাইবার জন্য সঙ্গে গমন করিতে থাকেন এবং আল্লাহ তা’আলার দরবারে পৌঁছিয়া সকলে সমবেত কন্ঠে সাক্ষ্য প্রদান করিতে থাকেন – হে প্রভূ! এই আমলগুলি সর্ববিধ দোষ-ত্রুটি হইতে পবিত্র। স্থানে স্থানে ইহাদিগকে যাচাই করা হইয়াছে। এই কার্যগুলি খাঁটি নিয়তে আপনার জন্য করা হইয়াছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে ফেরেশতাগণ! তোমরা মানবের কার্যাবলীর তত্ত্বাবধায়ক মাত্র। তোমরা মানুষের কার্যাবলীর দোষ-ত্রুটিই কেবল বাছাই করিতে পার। আমি তাহাদের আত্মার পরিদর্শক, কোন্ কার্য কোন্ ব্যক্তি কোন্ সঙ্কল্পে করিয়াছে, কোন্ কার্যে কাহার কি উদ্দেশ্য ছিল তাহা আমিই জানি। এ সমস্ত কার্যের মধ্যে অধিকাংশই আমার উদ্দেশ্যে করা হয় নাই; বরং আমলকারীদের হৃদয়ে অন্যবিধ উদ্দেশ্য লুক্কায়িত ছিল, যাহারা আমার উদ্দেশ্যে কার্য করে নাই তাহাদের প্রতি আমার ধিক্কার। ইহা শুনিয়া ফেরেশতাগণ বলিবেন, হে প্রভূ! যাহার উপর তোমার লা’নত তাহার উপর আমাদের ও লা’নত। আসমান-জমীন এবং তন্মধ্যস্থিত সমস্ত পদার্থের লা’নত তাহার উপর পতিত হউক।“

- (আল-হাদীস, ইমাম গাযযালী (রঃ), কিমিয়ায়ে সাদাত, ৩য় খন্ড, রিয়া ও উহার প্রতিকার, ২১৬-২১৭)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.