নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সেবার মাধ্যমে বন্ধুত্ব

ব্লগিং করে আনন্দ , সত্য সুন্দর শেয়ার করতে চাই

আহলান

ব্লগার

আহলান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার প্রথম ভারত সফর। পর্ব-২

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৫৯

প্রথম পর্ব
২৫ তারিখ সকাল ৮টার মধ্যেই সবাই রেডি হয়ে নাস্তার জন্যে নিচে নামলাম। নিচে আন্ডার গ্রাউন্ডে বুফে সিস্টেম। নাস্তা আমাদের রুমের সাথে কম্প্লিমেন্টারি। পরটা, ডিম, জ্যাম, মাখন, জ্যুস, পাউরুটি, চানা ডাল ...... মোটামুটি ভালোই লাগলো খেতে । খেয়ে দেয়ে উপরে রিসিপশনে গেলাম। জানালাম ঘোরাঘুরির জন্য ট্যাক্সির ব্যবস্থা হবে কিনা। তারা সানন্দে জানালো অবশ্যই মিলবে। ১০ মিনিটের মধ্যেই ট্যাক্সি চলে আসবে। আমরা রুমে গিয়ে হ্যান্ড ব্যাগ গুছিয়ে নিতে না নিতেই রিসিপশন থেকে কল এলো .....ট্যাক্সি রেডি!



আমরাও দেরি করলাম না। ৮ ঘন্টা ঘুরতে নিবে ১৫০০ রুপী। আমরা নিচে নামলাম। টাটা ইন্ডিগো। সাদা ট্যাক্সি ক্যাব। বেশ স্পেশিয়াস। হোটেলের গার্ড ড্রাইভারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। হোটেলের ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজার বলে দিলো ওনারা যেভাবে যেভাবে ঘুরতে চায়, সেভাবেই ঘুরায়ে নিয়ে আসতে। ড্রাইভার সাহেব বড় একটা হাসি দিয়ে বল্লো ..... হ্যা , তা তো বটেই ... ওনারা যেভাবে বলবেন, সেভাবেই ঘুরাবো। আমরা উঠে পড়লাম গাড়িতে। শুরু হলো আমাদের দিল্লী ভ্রমণ। গাড়িতে উঠে ড্রাইভার সাহেবের নাম জিজ্ঞাসা করলাম। সে বল্লো রামজি। রামজির গাড়িতে বাবা সাইয়ের গান বাজছিলো। তাই এক ফাকে জিজ্ঞেস করলাম রামজি কি বাবা সাইয়ের ভক্ত নাকি? সে জানালো না, সে হনুমানজি কি ভাক্ত হ্যায়! পেছনে ছোট একটা টিকি আছে। মুখে ঝোলানো মোচ। বয়স আনুমানিক ৬০ উর্দ্ধ, কিন্তু বোঝা যায় না। গাড়িতে উঠেই সে বল্লো আপনারা শুরু করলেন ঠিক ১০টায়। ৮ ঘন্টা ঘুরতে পারবেন। এর বেশী সময় লাগলে অতিরিক্ত পেমেন্ট করতে হবে। তো বলেন আপনারা কোথায় কোথায় ঘুরতে চান। আমরা বল্লাম কোন স্পট কেনদিকে, তা তো আমাদের জানা নেই। আপনিই ঠিক করে দিন কোন দিক থেকে শুরু করে কান দিকে শেষ করব। আমরা ঘুরবো রেড ফোর্ট, যেহেতু শুক্রবার, তাই জুম্মার নামাজ আদায় করবো দিল্লী শাহী জামে মসজিদে, হুমায়ুন টম্ব, হযরত নিমাজ উদ্দিন (রহঃ) এর মাজার শরীফ, লোটাস টেম্পল, কুতুব মিনার, রাজ ঘাট। তখন তিনি বল্লেন সবার আগে রেড ফোর্ট দেখে তারপর জুম্মা পড়ে নিন। তারপর রাজঘাট, হুমায়ুন টম্ব, নিজাম উদ্দিন (রহঃ) এর মাজার, লোটাস টেম্পল, কুতুব মিনার ঘুরিয়ে আনব।

( দিল্লী রেড ফোর্ট এর কিছু ছবি)











সেই মোতাবেক প্রথমে গেলাম রেড ফোর্ট। গাড়ি পার্কিং এর জায়গাটা তখনো বেশ ফাকা। ছুটির দিন বিধায় সকালটা আমরা ফাকা পেলাম। পুরো ভারত জুড়েই ক্রিসমাসের ছুটি চলছে। কিন্তু পরে লোকে লোকারণ্য হয়ে গেলো। আমরা পার্কিং থেকে হাটতে হাটকে রেড ফোর্ট এর দিকে চলে গেলাম। রামজি বলে দিলো পকেট সাবধান। ইংরেজীতে বেশী কথা না বল্লে সুবিধা আছে। হিন্দী আর বাংলাতে কথা বল্লে টিকেটও কম খরচে পাব। ইত্যাদি ইত্যাদি জ্ঞান দিয়ে সে আমাদেরকে রাস্তা দেখিয়ে দিলো। আমরা ওনার ফোন নাম্বারটি নিয়ে নিলাম। মোঘল আমলের স্থাপত্য এই প্রথম স্বচক্ষে অবলোকন করলাম। কি যে তাদের বিশাল স্থাপনা। নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কত যে কৌশল। বিল্ডিং এর চার পাশে পরিখা খনন করা। তাতে অবশ্য এখন পানি নেই। ঘাস পাতা আর জঙ্গল। হাটতে হাটতে সামনের দিকে চলে গেলাম। দূর থেকে ফোর্টের মগডালে অর্থাৎ চুড়ায় ছোট ছোট ৬টি সাদা গম্বুজ চোখে পড়ে। তার মাঝে ভারতের জাতীয় পতাকা উড়ছে।

আমার মেয়ের হাতে তোলা ছবি! ;) বাপি, একটু ক্যামেরাটা দাওতো বলে আমার হাত থেকে ক্যামেরা নিয়ে এই ছবি তুলছে!

কনকনে ঠান্ডা বাতাস বইছে। মিষ্টি রোদে হাটতে হাটতে টিকেট কাউন্টারে গিয়ে ফরেন কাউন্টারে দাড়ালাম। ভেতর থেকে একজন জানতে চাইলো কোন দেশ? বল্লাম বাংলাদেশ। বল্লো পাশের কাউন্টারে যেতে। সার্ক ভুক্ত দেশ হওয়ায় ভারতীয় নাগরিকদের মূল্যে টিকেট পেলাম। পাশ থেকে একজন সিকিউরিটিও বল্লো ঐ লাইনে কেন দাড়ালে? ওই লাইনে অনেক দাম দিয়ে টিকেট কাটতে হবে। এই পাশের লাইন থেকে টিকেট কাট। (বলে রাখা ভালো দিল্লী থেকে আমাদের হিন্দী ভাষার চর্চা শুরু। সব কথাই আমরা হিন্দিতে বলার চেষ্টা করেছি। যাতে বুঝতে ও বুঝাতে সুবিধা হয়।) ফোর্টের গেটে ঢুকার পরে বড় লেহার পুরানো দরজা চোখে পড়ে। ছোট এক টুকরো উঠোনের মতো। সেখান থেকে আবার সরু পাথরে বাধানো রাস্তা ঢুকে গেছে ফোর্টের অন্দরে। সেখানে আবার স্ক্যান মেশিন বসানো। নারী পুরুষ আলাদা লাইন করে ঢুকতে হচ্ছে। ঢোকার পরেই রাস্তার দুধারে ছোট ছোট বেশ কতগুলি দোকান দেখলাম। নানা রকমের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। সেগুলো পেরিয়ে ঢুকলাম ভেতরে। দেওয়ান ই আম, দেওয়ান ই খাস, নুর মসজিদ সহ নানা রকম স্থাপনায় বিশাল এলাকটি বিস্তৃত। ঘুরতে ঘুরতে এক ঝাড়ুদারকে জিজ্ঞেস করলাম এই চওড়া ড্রেন এর মতো খোদাই করা বাঙ্কারের কি কাজ ছিলো? সে জানালো রাণী সাহেবাদের হাম্মাম খানায় গোসল করার জন্য সেলিম গড় থেকে পানি বয়ে আসতো এই বড় বড় নালা দিয়ে। কুপ ও হাম্মাম খানাও দেখালো সে হাতের ইশারায়। আমরা তার কথা শুনে চলে আসতেই সে চা খাওয়ার জন্য পয়সা চেয়ে বসলো। দিলাম এবং সতর্ক হলাম যে এমন কোন কিছু আর কাওকে জিজ্ঞেস করার দরকার নাই। এখানে কোন কিছুই মুফত না!

ঘুরে ঘুরে পা ব্যথা হয়ে গেলো। মেয়ে তো কত বার যে কোলে উঠেছে, আর বিভিন্ন বাহানা দিয়ে তাকে কোল থেকে নামিয়েছি, তার ইয়ত্তা নেই। চোখ দিয়ে স্থাপনা গুলো শুধু দেখলাম। মন দিয়ে অসুধাবনের সময় নেই .......! ফিরে আসার পথে ঢোকার যে গেট, সেই গেটেরই দোতলায় আছে যাদুঘর। অনেকটা আমাদের ঈসা খাঁর সোনারগাঁ বা লাল বাগের কেল্লার যাদুঘরের মতোই সব জিনিষ পত্র সাজানো। একবার শুধু ঘুরে আসলাম আরকি! হাটতে হাটতে পার্কিং এ আসলাম। মেয়েকে কাঁধে করে নিয়ে আসতে হলো। সে আর হাটতে রাজী না। রামজি দাড়িয়েই ছিলো। আামদেরকে দেখে এক গাল হাসি দিয়ে দরজা খুলে দিলো। সে বল্লো এবার নামাজ পড়ে নিন, চলুন দিল্লী জামে মসজিদে।

দিল্লী শাহী মসজিদের কিছু ছবি












তখন বাজে ১২.৩০। মসজিদের পার্কিং এ গাড়ি ঢুকিয়ে আমি নামাজ আদায় করতে গেলাম। ওরা গাড়িতেই অপেক্ষা করতে লাগলো। সিঁড়ি বেয়ে অনেক উঁচুতে উঠে গেলাম। বিশাল বড় বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা চত্বর। চত্বরের মাঝখানে ওজু করার চৌবাচ্চা। হিম ঠান্ডা পানি। লোকজনে ঘিরে অযু করছে। ওজু করতেও সময় লাগলো। মুল মসজিদে জায়গা অনেক আগেই পূরণ হয়ে গেছে। আমি চত্বরে দাড়ালাম। কবুতরের সাদা সাদা শুকনা পায়খানায় ছয়লাব। তার মধ্যেই সবাই দাড়িয়ে নামাজ আদায় করছে। মাসয়ালা অনুযায়ী অবশ্য কবুতরের বিষ্ঠা নাপাক নয়। সুতরাং চিন্তা করে উপায় নেই। একটি জায়নামাজ সাথে রাখতে চেয়েছিলাম। ভুলে গেছি। কিছু সময় বাদেই সানি আজান, খুৎবা সহকারে জুম্মার সালাত আদায় করলাম। তার পর মুল মসজিদের দিকে গেলাম। মাঝখানে একটি সিড়ি করে উচু করা এটি ঘরও দেখলাম। কেন জানিনা। মসজিদের গায়ে কোরআনের বিভিন্ন আয়াত অঙ্কিত আছে। সম্রাট শাহজাহান এই মসজিদে জুম্মা আদায় করতে আসতেন। খুবই কারুকাজ মন্ডিত মসজিদের অভ্যন্তরভাগ। দিল্লী জামে মসজিদের পেশ ইমামকে দেখলাম দ্রুত মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আমিও ওনার পিছু পিছু বের হতেই দেখি একটি লাশ মসজিদে আনা হয়েছে। উনি সেই লাশের জানাজর নামাজ পড়ানোর জন্য দ্রুত প্রস্তুতি নিলেন। আমি যে গেট দিয়ে ঢুকেছিলাম সেই গেট ধরেই বের হয়ে এলাম। বের হবার পথে এক লোক দেখি চকলেট বিতরণ করছে, আমিও দুটি পেলাম। গাড়ি পার্কিং থেকে গাড়ি বের করতে বেশ সময় নিলো। অনেক গাড়ি।

এখন কোথায় খাব বুঝতে পারছিলাম না। মসজিদের আশে পাশে অনেক বিয়িানি হাউজ সহ অনেক খাবারের দোকান থাকলেও আমাদের রামজি এখানে দেরী করলো না। সে বল্লো রাজ ঘাট দেখার পরে ওদিকে কোথায় নাকি ভালো খাবারের দোকান আছে। আমরা রাজঘাট আসলাম, দেখলাম ইন্দিরা গান্ধির সমাধীস্থল।

রাজঘাটে ইন্দিরা গান্ধীজীর সমাধি




জুতা খুলে ঢুকতে হলো। বিশাল নিরিবিলী এলকা জুড়ে এই সমাধী স্থল। সেখান থেকে আবার বের হলাম যখন, তখন সবারই বেশ ক্ষুধা লেগেছে। রামজিকে বল্লাম ভালো মানের একটি মুসলিম হোটেলে নিয়ে যেতে। সে বল্লো এখানে সবই নাকি হালাল ...... । আমি মনে মনে বল্লাম তাইলে তো কামই হইছিলো। যাই হোক সে অনেক রাস্তা পাড়ি দিয়ে এমন এক হোটেলের সামনে এসে দাড়ালো যেখানে লোক জন গিজ গিজ করছে। বসার জন্য কোন জায়গাই খালি নাই। চিমনি নামের এই ছোট রেস্তোরাতে এতো ভীড় কেন জানতে চাইলে রামজি বল্লো এটা ভালো হোটেল আর আজ ছুটির দিন। (ক্রিষ্টমাসের ছুটি চলছে তখন) তাই। রামজি আবার হোটেলের ম্যানেজারের পূর্ব পরচিত বুঝলাম। সেও আমাদেরকে বসার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য ম্যানেজারকে বলে এসেছে। মেয়েটা ক্ষুধায় বেশী বিরক্ত করছিলো। কিছু সময় দাড়িয়ে থেকেও যখন জায়গা জুটলো না, সিদ্ধান্ত নিলাম কেক, বিস্কুট, জ্যুস, চিপস কিনে গাড়িতে উঠে বসব। এখানে আর সময় নষ্ট করবো না। পাশে কনফেকশনারী দোকান থেকে ওই সব কিনে গাড়িতে উঠে বসলাম। রামজিও বুঝলো আমরা একটু বিরক্ত। সেও আর কিছু বল্লো না। শুধু বল্লো ম্যানেজার তোমাদেরকে খোজ করছিলো। আমি বল্লাম করুক। এখন কোথায় যাব আমরা? উনি বল্লেন নিজাম – এর মাজার।

হুমায়ুন টম্বের পাশ দিয়ে গিয়ে ইউ টার্ন নিয়ে কিছু দূর আগালেই উক্ত স্থান। আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে রামজি বল্লো আমি এখানেই থাকার চেষ্টা করবো, যদি না ট্রাফিক পুলিশ ঝামেলা করে। তোমরা এই ছোট গলি ধরে এগিয়ে গেলেই মাজার পেয়ে যাবে।

হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (রহঃ) এর মাজার শরীফ


আমি মেয়েকে নিয়ে হাত ধরে এগিয়ে গেলাম। রাস্তার মুখে বেশ ভীড়। ডানে একটি মসজিদ আর বাঁয়ে খাবারের দোকান। আমি ভাবলাম এই মসজিদের এখানেই বুঝি মাজার। জিজ্ঞাসা করলাম এক লোকের কাছে দরগাহ কাহাপে? সে সোজা রাস্তা দেখিয়ে দিলো। আমি হাটতে লাগলাম। মেয়েকে কোলে তুলে নিয়েছি। অনেক ভীড় রাস্তায়। ছুটির আমেজ এখানেও। শুরুতেই এক ফুলের দোকানদার বল্লো তার দোকানে ফ্রিতে জুতা স্যান্ডেল রেখে যেতে। আমি রাখতে গেলাম। মেয়ের মা বল্লো কতদূর হাটতে হবে তা কি তুমি জান যে তুমি এখানেই স্যান্ডেল রাখবা? আমি আবার না রেখে হাটা দিলাম। পরে দেখলাম ভালোই করেছি। ওখান থেকে আরো অনেক দূর সেসই মাজার শরীফ। যতো এগোচ্ছি রাস্তা ততোই সরু হচ্ছে। সরু পথের দুপাশেই ফুল, মুড়কি, মাজারের গিলাফ বিক্রি করছে আর ফ্রীতে স্যান্ডেল রাখার জন্য ডাকাডাকি হাকাহাকি চলছে। এটাই এখানকার প্রথা বা ব্যবসা ...... বিরক্ত হলেও বলার বা করার কিছুই নেই। এক জায়গায় এসে রাস্তাটা দুই ভাগ হয়েগেছে। ডানে আর বামে। কোনদিকে যাব বুঝতে পাছিলাম না। আবার এরই মধ্যে প্রচন্ড ভীড় আর ধাক্কা ধাক্কি ঠেলা ঠেলি শুরু হয়ে গেলো। মাজারে ঢোকার আর মাজার থেকে বের হওয়ার দুই পক্ষই আগে যেতে মরিয়া। আমি তো ভয়ই পেয়ে গেলাম যে আমরা হারিয়ে না যাই। দুই হাত দিয়ে আমি মেয়ে আর মেয়ের মাকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে থাকলাম। কিন্তু একটু বাদেই আবার সব স্বাভাবিক হয়ে গেলো। আমরা সঠিক পথও পেয়ে এগিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম।

এটি বড় মাজার এলাকা। শুধু কবর আর কবর। ছোট বড় বিভিন্ন আকারের পাকা করা অসংখ্য কবর। কারোর কবর আবার ঘর করা। ডান দিকে এগিয়ে গেলেই বড় একটি উঠানের মতো। বায়ে মসজিদ আর ডানে একটি ছোট ঘর। ওটাই হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (রহঃ) এর মাজার শরীফ। মেয়ের মা বাইরে দাড়িয়ে জিয়ারত করলো। আমি বুড়িকে কোলে নিয়ে ওনার মাজার ঘরে ঢুকতেই একজন দাড়িবিহীন ভদ্র লোক বল্লো লেড়কী? আমি বল্লাম হ্যা। সে তখন বুড়িকে নিয়ে ভেতরে যেতে নিষেধ করলো। আমি বল্লাম বেবি তো! সে বল্লো বেবি হলে কি জেন্ডার চেঞ্জ হয়ে যায়? আমি একবার বলতে চেয়েছিলাম শরিয়তের হুকুম কি বয়সের সাথে সম্পৃক্ত নয়? মাজারের খাদেম গিরি করছ, মিয়া তোমার দাড়ি কই? কিন্তু কিছু বল্লাম না। শুধু শুধু বিদেশে এসে এদের সাথে তর্কাতর্কি করে লাভ নেই। আমি বুড়িকে বাইরে ওর মায়ের কাছে রেখে ভিতরে ঢুকে জিয়ারত সেরে ওদেরকে সাথে নিয়ে মোনাজাত করলাম। মাজারের কাছেই একটি দোকানে স্যান্ডেল রেখেছিলাম। তাকে কিছু বখশিশ দিয়ে স্যান্ডেল সংগ্রহ করলাম। মেইন রোডের কাছে এসে একটি মুসলিম হোটেলে ঢুকে ভাত, মুরগী, ডাল, রুমালী রুটি দিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। মুরগীতে গোলাপজলের ঘ্রাণ বেশী ছিলো, তাছাড়া স্বাদ খারাপ ছিলো না। এরই মধ্যে রামজি ফোন দিলো, আর কত সময় লাগবে জানতে চাচ্ছে, কারণ ট্রাফিক পুলিশ যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমরা দ্রুত আহার সেরে গাড়িতে গিয়ে উঠলাম।

এবার যাব লোটাস টেম্পল।
বাইরে থেকে তোলা লোটাস টেম্পল


গাড়ি চালাতে চালাতে রামজি জানালো আর এক ঘন্টা আছে আমাদের। এর বেশী ঘুরলে প্রতি ঘন্টার জন্য এক্সট্রা চার্জ দিতে হবে। আমরা রাজী হলাম। কিন্তু রামজী বল্লো ৫টার পরে সব দর্শনীয় স্থানই বন্ধ হয়ে যায়, সুতরাং বেশী কিছু দেখার আর সুযোগ আজকে নেই। তার পরও লোটাস টেম্পলের দিকে আমরা এগোলাম। রামজি রাস্তার পাশেই গাড়ি পার্ক করে আমাদের নামিয়ে দিলো, আর বল্লো এখানে মানুষ ঢুকে একটু জোরে নিশ্বাস নেয়, তার পর উপরের দিকে তাকিয়ে ফুউউস করে দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসে, দেখার মতো এটা তেমন কিছু নয়। তোমরা চাইলে ভিতরে না ঢুকে বাইরে থেকেই দেখে ফিরে আসতে পারো। তারপরও আমরা লাইনে দাড়ালাম ভেতরে ঢোকার জন্য। চরম ভীঢ় আর দীর্ঘ লাইন। কিছু সময় দাড়িয়ে থেকে আমরা ভেতরে ঢোকার আগ্রহ সত্যি হারিয়ে ফেল্লাম, কারণ বাইরে থেকেও অনেকটাই দেখা যাচ্ছে লোটাস টেম্পল। তাই আবার লাইন থেকে বেরিয়ে রামজির গাড়ি খোজ করে উঠে পড়লাম।

ওকে বল্লাম রেড ফোর্টের যে লাইট এন্ড সাউন্ড শো হয় সন্ধ্যায় সেটাতে নিয়ে যেতে। অতিরিক্ত পয়সা যা লাগে দিয়ে দিবো। পরে আবার ভাবলাম, সকালে যা দেখলাম, বিকালে আবার তা দেখতে যাওয়ার কি কাম? সিদ্ধান্ত বাতিল করলাম। আবার বল্লাম তাহলে চাদনি চকে নিয়ে যেতে। ও বল্লো ওখানে ট্যাক্সি যায় না। তোমাকে কিছুদুর গিয়ে রিক্সা ভাড়া করে যেতে হবে, আবার ফিরতে হবে। আসলে আমরাও একটু ক্লান্ত ছিলাম, তাই এতো ঝামেলা আর করতে চাইলাম না। রামজী বল্লো এখন হোটেলেই ফিরতে। ফিরতি পথে রাষ্ট্রপতি ভবন দেখে নেয়া যাবে। তাই করলাম। ৩৬০ টি কামরা বিশিষ্ট এই ভবন। বিশাল এলাকা জুড়ে সেই নয়নাভিরাম ভবন। সামনে চওড়া রাস্তা ........ লোকালয় এর আশে পাশে নেই বলেই মনে হলো। আশে পাশে পার্লমেন্টারি ভবন টবন কি কি সব আছে রামজি বল্লো ...! তাই শুনতে শুনতে হোটেলে প্রায় ৬.১৫ এর মধ্যে পৌছে গেলাম।

সন্ধ্যা কালীন সময়ে তোলা রাষ্ট্রপতি ভবন


দুজনে মিলে চিন্তা করলাম আজ আর এই হোটেলের খাবার খাব না। ইন্দিরা চক বা কোনাট প্লেস এর দিকে কিছু হোটেল দেখেছিলাম ফেরার পথে। সেখানে যেয়ে না হয় কিছু খেয়ে নেবো। কাজ আরো একটা আছে। সেটা হলো এই হোটেলে এমেক্স কার্ড দিয়ে বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না, তাই হয় আমাকে ডলারে বা বুথ থেকে রুপি তুলে পেমেন্ট করতে হবে। কোনাট প্লেসে কিছু বুথ দেখেছি। সুতরাং সেই কাজটিও হাতে রয়েছে।

সন্ধ্যায় হোটেলে পৌছেই ওদের ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজারের সাথে সিটিং দিলাম। আগামী কাল রওনা দিবো আগ্রার উদ্দেশ্যে। সেই জন্য গাড়ি ঠিক করতে হবে। আগ্রা, জয়পুর, আজমীর হয়ে আবার দিল্লী ঢুকবো। কত কি খরচ পড়বে তাই নিয়ে আলাপ পাড়লাম। উনি প্রথমে ২২০০০/- টাকা চাইলো। পরে সর্বশেষ ১৯০০০/- এ রফা করলাম। আগামী কাল ৮টার মধ্যে আমরা বেড়িয়ে পড়বো বলে জানিয়ে দিলাম। একটু খুশি খুশি লাগছে এই ভেবে যে এই ট্যুরটা ১৯০০০/-এ করতে পারছি। কারণ দুইটা। প্রথমতঃ ঢাকা থেকে মেক মাই ট্রিপের সাথে অনেক দর কষাকষি করে এই প্যাকেজের জন্য ওরা চেয়েছিলো প্রথমে ৩০,০০০/- পরে ২৩,৫০০/-। দ্বিতীয়ত তারা বলেছিলো তারা রাতে রাতে জার্নি করাতে পারবে না। আমি আমার খুশি মতো ম্যুভ করতে পারবো না। তাদের বেধে দেয়া সময় শিডিউল ধরে আমাকে ঘুরতে হবে। আর এখানে তার কোন বালাই নেই। এই কয় দিন আমার গন্তব্য অনুযায়ী আমি যেভাবে খুশি যখন খুশি ঘুরতে পারবো। দ্বিতীয়ত আমার এক কলিগ কিছুদিন আগে ঘুরে গেছে, পরিচিত একজনের মাধ্যমে তিনি একটি ইনোভা গাড়ি নিয়ে ঘুরছে একই ট্রিপ, ৩০,০০০/- রুপিতে। সুতরাং ওদের চেয়ে আমি সস্তায় ডিলটা করতে পেরেছি!

রাতে বের হলাম খাবারের হোটেলের সন্ধানে। হোটেল থেকে বের হতেই গার্ড বল্লো ইন্দিরা চকের দিকে যেতে পারেন, অটো নিয়ে। ৪০-৫০ টাকা লাগবে। কিন্তু একটি অটো আমাদের কাছে ১০০ টাকা চাইলো। পরে ঐ গার্ড ঐ অটোকেই ৪০ টাকায় রাজী করিয়ে দিলো। আমরা ইন্দিরা চকে নেমে ঘুরা ঘুরি শুরু করলাম। কোন হোটেলে যে ঢুকবো, মন মতো খাবার পাব, সেটা ঠিক ঠাহর করতে পারছিলাম না। আবার ২৫ তারিখের রাত হওয়ায় সব রেষ্টুরেন্ট গুলোতেই বেশ ভীড়। অন্ধকার রাত। রাস্তার ল্যাম্প পোষ্ট গুলো হলুদ আলো ছড়াচ্ছে। ওয়ান ওয়ে দিল্লিীর রাস্তার একমুখি সব গাড়ি ছুটে চলছে, আমাদের পাশ দিয়ে। আমরা শপিং মল গুলোর বারান্দা দিয়ে শুধু হাটছি আর দেখছি, কিন্তু কোনটাতে ঢোকার মতো আগ্রহ পাচ্ছি না। সব গুলোতেই মানুষ। আর সবারই গায়ে উৎসবের পোশাক। ছেলে মেয়ে সবাই আধুনিক সজ্জায় সজ্জিত। যে যার মতো ব্যস্ত। আমি আবার ঠান্ডার জন্য বুড়িকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। ওকে এই ঠান্ডার মধ্যে এতোক্ষন বাইরে রাখছি, সেটাই দুশ্চিন্তার বিষয়। অনেক ঘোরাঘুরি হাটাহাটি করেও যখন কোন হোটেলে ঢুকা হলো না, তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, যাই, হোটেলে গিয়ে গত রাতের মতো অর্ডার দিয়ে কিছু আনিয়ে খাই। এই ভেবে হোটেলের দিকে আগালাম।

মুষ্কিল হলো দিল্লীর সব রাস্তাই ওয়ান ওয়ে। আমি যে রাস্তায় অটোতে করে এসেছি এখানে, সেই রাস্তা দিয়ে আমি ফিরতে পরবো না। হেটে যেতে পারবো, কিন্তু অটো নিতে হলে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। তাই হাটাই শুরু করলাম। পথিমধ্যে এইচডিএফসি নামের একটি ব্যাংকের বুথে এমেক্স কার্ডটি ট্রাই মারলাম। কাজ হলো। রুপি বের হলো বুথ দিয়ে। আশ্বস্ত হলাম যে যাক! যে কোন উপায়ে কার্ডটি ব্যবহার করতে পারবো তাহলে। ফেরার পথেই হাতের বায়ে চোখে পড়লো হলদিরামের শপ। সবাই মিলে ঢুকলাম ওখানে। দেখি সবই আছে ওখানে। ফাষ্ট ফুড, লাষ্ট ফুড, মিষ্টি মিষ্টান্ন থেকে শুরু করে সব কিছু। তবে যে জিনিষটা নাই তা হলো জায়গা! না বসার কোনো, দাড়ানোর কোন জায়গাও নেই। কে কার গারেয়র উপরদিয়ে হেটে যাচ্ছে, কে কার পা মাড়িয়ে চলে যাচ্ছে, তার কোন ইয়ত্তা নেই। এই ভীড়ের ভিতরে কিভাবে অর্ডার করবো, কিভাবে খাবো ...... মহা হুলুস্থুল। এর মধ্যে আবার অনেকেই অর্ডার করে খাবার নিয়ে খেতেও বসে যাচ্ছে। আমরা আর এই যুদ্ধে নিজেদেরকে সামিল করলাম না। কিছু মিষ্টি আর পান মশলা কিনে দ্রুত বের হয়ে আবার হোটেলের দিকে হাটা দিলাম। আমরা আমাদের বাঁ ধার ধরে হাটছিলাম। কিছু দূর আসার পরে দেখি রাস্তার ওপাড়ে অর্থাৎ ডান দিকে পাহাড়গঞ্জ এর দিক নির্দেশনা দেয়া সাইনবোর্ড। দেখেই থমকে দাড়ালাম, তাহলে কি ভুল পথে এগোচ্ছি? এই রাতে বউ বাচ্চা সাথে নিয়ে ভুল রাস্তায় ঘুরাঘুরি তো বিপদজনকও হতে পারে। কাকে জিজ্ঞাসা করবো তাও বুঝতে পারছি না। রাস্তার পাশেই একটি পেট্রোল পাম্প ছিলো। সেখানকার এক কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করলাম পাহাড়গঞ্জ কোনদিকে? সেও সাইনবোর্ডে নির্দেশিত রাস্তাই দেখালো। কি আর করা। কিছুটা পিছনে এসে রাস্তা ক্রস করার প্রস্তুতী নিলাম।

সমানে সা সা করে গাড়ি চলছে। সব একমুখী। রাস্তা পার হবার আগে আরো একজনের কাছে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হলাম যে ঐটাই পাহাড়গঞ্জের রাস্তা কিনা। সেই লোকও বল্লো ওপাশের রাস্তাটাই পাহাড়গঞ্জের রাস্তা। গাড়ি সিগন্যালে কিছু সময় থামছে তো আবার দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বেশ চওড়া রাস্তা। এমন না যে চিকন রাস্তা সাই করে পার হয়ে গেলাম। সাথে আবার বউ বাচ্চা। রাস্তাটা পার হওয়া বেশ কঠিনন ব্যপার এখানে। তারপরও দাড়ালাম। সিগন্যালে গাড়ি গুলো থেমেছে, পিছনের গাড়িগুলো একটু স্লো হয়েছে, আমরা ঝপাং করে নেমে গেলাম রাস্তায়, কেরি কেটে ঠিক পার হয়ে গেলাম। ওপাড়ে দেখি রড দিয়ে বানানো কঙ্কাল টাইপের রিক্সা। যার সামনেও বসা যায় আবার পিছনেও বসা যায়। বল্লাম শিলা টকিজ এর ওখানে যাবে কিনা। ভাড়া চাইলো ৪০ রুপি। ৩০ রুপিতে ঠিক করে উঠে পড়লাম। নির্জন রাস্তা, তার উপওে বেশ ঠান্ডা পড়ছে। রাস্তায় চলতে চলতে চিনলাম যে এটাই আমাদের হোটেলে ফেরার রাস্তা। মনের থেকে কিছুটা আশঙ্কা দূর হলো। হোটেলের সামনে নেমে আবারো রেষ্টুরেন্টের খোজ করলাম। কিছু দূর হাটার পরে বুঝলাম এই জায়গাটা আসলেই অপরিচ্ছন্ন এবং আমাদের গুলিস্তান, কমলাপুর এর মতো। কারণ পাশেই দিল্লী রেল ওয়ে ষ্টেশন। রাস্তায় ময়লা আবর্জনা আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। তাই আর আশে পাশে পা বাাড়ালাম না। হোটেলে উঠে আসলাম। খাবারের অর্ডার দিলাম। ভেজিটেবল ফ্রাইড রাইস, মিক্সড ভেজিটেবল, বুড়ির জন্য চিকেন আর সালাদ। এসব খেয়ে শুয়ে পড়লাম। সকালে উঠে আবার শুরু হবে লম্বা জার্নি , জার্নি টু আগ্রা!

(রাষ্ট্রপতি ভবন এলাকা)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৮

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: সে কি এই পোস্টে কোন মন্তব্য নেই কেন?? এত চমৎকার ভ্রমণ ব্লগ আমি খুব কমই পড়েছি। সব ভ্রমণ পোস্ট পড়ে আনন্দ পাওয়া যায় না, আপনারটা পড়ে আনন্দ পাচ্ছি।

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫২

আহলান বলেছেন: আপনার মতো আমিও আহত হই, যখন দেখি কষ্ট করে দেওয়া পোষ্টগুলো মন্তব্য ছাড়াই শত পোষ্টের ভীড়ে হারিয়ে যায় ... :(

ধন্যবাদ ....! :)

২| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫০

পলক শাহরিয়ার বলেছেন: ভাল লিখেছেন। খুটিনাটি সব এত দিন পর মনে রাখলেন কিভাবে?

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৪

আহলান বলেছেন: আমরা ব্লগাররা যখন কোথাও ভ্রমণে যাই , তখন আপনাদের মতো সম্মনিত সহ ব্লগারদের কথাও মাথায় রাখি .... আনন্দ দুঃখ ভাগাভাগি করতে হবে না ....! :)

৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০৫

আমি গাডডুর বাপ বলেছেন: সোজা প্রিয়তে.......

২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:২৭

আহলান বলেছেন: ধন্যবাদ ...! :

৪| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩

শরাফত বলেছেন: দারুণ লিখছেন ভাই, এমন ভ্রমণ পোস্ট খুব কমই পড়েছি ।
+++

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪০

আহলান বলেছেন: ধন্যবাদ ...!

৫| ০২ রা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:১৭

রাঙা মীয়া বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন :-B

০২ রা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:২৪

আহলান বলেছেন: ধন্যবাদ ..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.