নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সেবার মাধ্যমে বন্ধুত্ব

ব্লগিং করে আনন্দ , সত্য সুন্দর শেয়ার করতে চাই

আহলান

ব্লগার

আহলান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার প্রথম ভারত সফর। পর্ব-৫

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১২



ফতেহ পুর থেকে আজমিরের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছি-






কখন গিয়ে যে আজমীর শরীফ পৌছাব, আল্লাহ ই জানেন। রামজি বলেছে রাত বারোটা নাগাদ সে হয়তো পৌছাতে পারবে। এখন বাজে মাত্র ২.৪৫!! আমি বিষয়টা ফান মনে করলেও আসলে হয়েছেও তাই। গাড়ি চলছে তো চলছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। আমরা গাড়িতে করে সমানে ছুটে চলেছি। টানা প্রায় ৬০০ কিমি জার্নি! মনের মধ্যে একটু ভয় ভয়ও করছিলো। কি জানি কি হয়? রাস্তার মাঝে যদি গাড়ি খারাপ হয়ে যায়? যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটে? যদি কোন খারাপ লোককজনের খপ্পরে পড়ি? নানা রকম শঙ্কা মনে মধ্যে দানা বাঁধতে লাগলো।
(মর্মান্তিক দূর্ঘটনা)


একটি লোকালয়ের কাছে এসে আমরা জ্যামে আটকে গেলাম। দেখি রাজস্থানি মহিলারা মাথায় কলসি করে ঘরে ফিরছে, তাদের মুখ আবার আঁচল দিয়ে ঢাকা। রাস্তার পাশেই বাড়ি গুলো কোনটি পাকা করা, কোনটি কাচা মাটির। বেশির ভাগ বাড়ির সামনে গরু বাঁধা দেখলাম। যেমনটি দেখেছিলাম আগ্রাতে ঢুকতে। জ্যামের মধ্যেই একটু একটু করে কিছু দুর এসেই দেখি একটি মোটরসাইকেল ও ট্রাকের এক্সিডেন্ট। সাইকেলটি পড়ে আছে ট্রাকটির পেটের ভিতর। দেখেই মনটা আরো ঘাবড়ে গেলো। মানুষ মরেছে কিনা কে জানে?









আমরা এগিয়ে চল্লাম। বিকালের দিকে একটি ধাবার সামনে গাড়ি দাড়া করালো রামজি। এগিয়ে চলেছি আমরা জয়পুরের হয়ে আজমীরের পথে। বিকাল হয়ে গেলো। সে ফ্রেশ হলো। আমিও ঐ ধাবা থেকে চা এনে গাড়িতে বসেই খেলাম। ধাবাটি অনেক এনটিক জিনিষ পত্র দিয়ে সাজানো একটি দোকান। অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিষ রদখলাম সেই দোকানে। ওখান থেকে আবার যখন রওনা দিলাম তখন পড়ন্ত বিকেল। রোদ যেনো ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে আসছে।
(সুন্দর ধাবার দৃশ্য)






দূরে পাহাড়ের গায়ে অনেক উঁচুতে মন্দির দেদখা যায়। মন্দিরে নিশান উঢ়ছে পত পত বাতাসে পাহাড় কেটে রাস্তাটা বানানো। বেশ কিছু জায়গায় আমরা পাহাড় দেখলাম। অনেক বড় বড় ফাকা ফাকা মাঠ।

(পড়ন্ত বিকেলে ছুটে চলা আর উঁচু পাহাড়ের চুড়ায় মন্দিরের নিশান চোখে পড়ে......)









ধাবা থেকে রওনা দেয়ার সময় রামজি বল্লো ঐ এক্সিডেন্টে স্বামী স্ত্রী স্পট ডেড, একটি বাচ্চা ছিলো সাথে, তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। বুড়ি তার মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে ক্লান্তি অনুভব করলাম। কিন্তু দুচোখের পাতা এক করতে পারলাম না। আজমির কখন পৌছাব, রাত কটা বাজতে পারে ..... এই সবই শুধু চিন্তা করছিলাম। সন্ধ্য নেমে এসেছে। চারিদিকে গাড় অন্ধকার। বেশ কিছুদূর পর পরই টোল দিতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পরপরই একটি জায়গায় টোল দিয়ে রামজি গাড়ি আবারো গাড়ি দাড়া করালো। ভালো করে পেপার দিয়ে গাড়ির সামনের উইন্ড গ্লাস মুছে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিলো। বুঝলাম রাতে গাড়ি চালানোর পূর্ব প্রস্তুতি! ভালোভাবে উইন্ড গ্লাস পরিষ্কার করে আবারো রওনা হলাম আমরা।

মাইল ষ্টোনে তখনো দেখলাম জয়পুর ৩০০ কিমি! আমার বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো। জয়পুরই যদি ৩০০ কিমি হয় তাহলে আজমির আর কত দূর ... ... ... ?? গাড়ি চলছে অন্ধকার রাত কেটে। বাইরে বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। যদিও আমরা জানালা বন্ধ রেখেছি। বড় বড় লরি, ট্রাক বাস পাশ কাটিয়ে আমরা এগিয়ে চল্লাম। দিনের বেলায় যে মাঠ গুলো দেখছিলাম, রাতে তা অন্ধকার কুয়োর মতো মনে হচ্ছে। আমরা রাত আটটার দিকে জয়পূরের কাছাকাছি পৌছলাম। আমি চিন্তা করছিলাম, রাতে কি জয়পুরের হোটেলে থেকে পরের দিন সকালে আজমির যাব কিনা? মেয়ের মা আমার মনের কথা বোধ হয় পড়তে পারলো। তাই সে মুখ দিয়ে বলেই ফেল্লো যদি আজকে জয়পুরে রাতটা থেকে কালকে সকালে আজমির গিয়ে জিয়রত করে আসি তাহলে কেমন হয়? আমিও প্রথমে সায় দিলাম। রামজিকে বল্লাম কি করলে ভালো হয়? সে-ও বল্লো রাতে জয়পুর থেকে যাওয়াটাই ভালো। আমি আবার রামজিকে জিজ্ঞেস করলাম জয়পুর থেকে আজমিরের রাস্তা কেমন? কোন সমস্য হয় নাকি? সে বল্লো না ...রাস্তা ভালো ...... সম্পূর্ণ হাই ওয়ে ...। কি করবো তাই ভাবতে লাগলাম। একরকম সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেল্লাম যে রাতে জয়পুরেই থাকবো। কিন্তু এদিকে আবার ফতেহপুর থেকে যখন রওনা হই তখন আজমিরের হোটেলে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি, যত রাতই হোক আমরা আসব। সুতরাং না গেলে তারাও কি ভাববে? এমন দোনো মনো করতে করতে বউকে বল্লাম, চলো এগিয়েই যাই।

আল্লাহর উপর ভরসা করে এগিয়ে যেতে বল্লাম রামজিকে। সেও বল্লো তোমাদের যা ইচ্ছা, আমার গাড়ি চালাতে কোন সমস্যা নেই। আমরা যখন জয়পুর অতিক্রম করি তখন বাজে রাত ৯টা। রাতের জয়পুরের কিছু দৃশ্যও নজরে পড়লো। রামজি একটি পেট্রোল পাম্প থেকে টাঙ্কি লোড করে নিলো। রামজি তার পরিচিত অলি গলি ধরে শর্ট কাট রাস্তা ব্যবহার করলো। আমি অবশ্য বার কয়েক তাকে জিজ্ঞেসও করলাম যে উনি ঠিক রাস্তায় যাচ্ছেন তো? উনি ওনার মতো করে এগিয়ে চল্লো। বিভিন্ন অলি গলি পেরিয়ে এক সময় আমরা হাই ওয়ে ধরলাম।
(রাতের জয়পুর পার করছি...)




কালো অন্ধকার রাত। অনেক বড় বড় লরি, বাস, গাড়ি কাটিয়ে রামজি একই গতিতে গাড়ি এগিয়ে নিয়ে চল্লো। রাত তখন প্রায় ১০টা বাজে। এখনো প্রায় ১৫০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। ভাবছি কি হয় কি হয়। এতো সময় ধরে চলছে গাড়িটি। রাস্তায় আবার কোন ট্রাবল ক্রিয়েট হয় কিনা। রাস্তার দুধারে শুধু অন্ধকার, জন বসতি বিহীন এলাকা। মাঝে মধ্যে একটি দুটি হোটেল বা বিল্ডিং নজরে পড়ছে। তবে রাস্তা সেই রকম! বিশাল চওড়া এক্সপ্রেস ওয়ে। চলতে চলতে রামজি বল্লো একটু চা খেতে পারলে ভালো হতো! আমিও তাকে বল্লাম ভালো পরিচ্ছন্ন নিরাপদ কোন জায়গায় দাড়িয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নিতে। রাস্তার পাশে সব হোটেল গুলোই রাস্তা থেকে একটু দূরে দূরে। একদম রাস্তা ঘেষে কোন হোটেল বা চায়ের দোকান নজরে পড়লো না। এমনই একটি দোকানের কাছে গিয়েও রামজি দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে রাস্তায় নিয়ে এলো। আমি বল্লাম কি ব্যাপার? চা খাবেন না? সে বল্লো ওখানে সব ট্রাক ড্রাইভার দেখলাম, বেত্তমিজি হতে পারে, তাই চলে এলাম।

সে আবার এগিয়ে চল্লো। বেশ কিছু দুর আসার পর দেখি একটি ছোট হোটেল, একজন মহিলা সহ কিছু মানুষ তাদের প্রাইভেট গাড়ি থামিয়ে চা নাস্তা করছে। আমরাও সেখানে থামলাম। চা পানি খেলাম। মাসালা চা ...... বেশ মজা লাগলো। বেশ ঠান্ডা অনুভুত হলো। কিন্তু জয়পুরে পেট্রল পাম্পে যখন থেমেছিলাম, তখন মনে হচ্ছিলো এখন গরম কাল! বেশ গরম লাগছিলো। এখান থেকে আরো ৬৫ কিমি দূর আজমীর শরীফ। আমরা চা খেয়ে আবারো রওনা দিলাম। শহরে ঢুকতে টিকেট কেটে ফ্লাই ওভার বা এক্সপ্রেস রোড ব্যবহার করতে হলো।

যখন শহরে ঢুকলাম, তখন রাত ১১.৩০টা। শুন শান নিরব চারিদিকে। কোন বাসা বাড়িতেও লাইট জলছে না। শুধু আমাদের গাড়িটাই রাস্তা জুড়ে এগিয়ে চলছে। রেল ষ্টেশনের কাছে আসলাম। রাত বাজে তখন ঠিক ১২টা। হোটেল থেকে তখনই ফোন দিলো। জানতে চাইলো আমরা কত দূরে আছি, আর কত সময় লাগবে। আমিও জানালাম আমরা রেল ষ্টেশনের সামনে। হোটেল খুজে পাচ্ছি না।

পরে রামজির সাথে কথা বলায়ে লোকেশন বুঝিয়ে দিতে বল্লাম। ডিরেকশন অনুযায়ী রামজি রেল ষ্টেশন বামে রেখে এড়িয়ে চল্লো। ঠিক তখনই দুজন লোক মটর সাইকেলে এসে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলো হোটেল লাগবে কিনা। আমি আমাদের বুক দেয়া হোটেলের নাম বলতেই রাস্তা বাতলে দিলো। রামজি সোজাই যাচ্ছিলো। কিন্তু আমার চোখে পড়লো ডানে দূরে আমার বুক করা হোটেলের নাম নিয়ন আলোয় জলছে। আমি দ্রুত রামজিকে গাড়ি ডানে মোড় নিতে বল্লাম। রামজি গাড়ি টার্ন করে কিছুদূর এগোতেই আমাদের কাঙ্খিত হো্টেলের সামনে এসে পৌছালাম। এখানে গাড়ি ও রামজির থাকারও ব্যবস্থা আছে। রামজি ভেবেছিলো এখানে সে থাকতে পারবে না। বিষয়টি রিসেপশনিস্টকে জানাতেই সে রসিকতা করে বল্লো, কেনো? তুমি কি পাকিস্তানে এসেছো নাকি?

আমি ভবেছিলাম এটি হয়তো মুসলিম হোটেল। ধারণা ভুল। যাই হোক লাগেজ পত্র সব রুমে তুলে পাসপোর্ট এন্ট্রি করতে বেশ সময় লাগলো। ইন্টারনেটে নাকি কি সব ফরম পূরণ করতে হয় এদের। রুমে ঢুকে বেশ ভালো লাগলো। সুন্দর ছিম ছাম গোছানো রুম। ভেবেছিলাম রাতেই একবার দরগাহ শরীফে যাব। কিন্তু সাহস করতে পারলাম না। একেই অপরিচিত জায়গা, তার উপর রাত প্রায় ১.৩০ বেজে গেছে ফ্রেশ হতে হতে। শুয়ে পড়লাম।

সকালে ফজরের ওয়াক্তে প্রায় ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। নামাজ সেরে বেরিয়ে পড়লাম দরগাহ শরীফের উদ্দেশ্যে। দরবার-এ-খাজা হযরত মঈন উদ্দিন চিশতী আজমেরী (রহঃ) এঁর মাজার শরীফ। হোটেলের রিসেপশনিষ্ট এর থেকে গত কালই জেনে নিয়েছিলাম কোন পথে এগোলে মাজার শরীফ মিলবে। সেই পথ ধরেই চলা শুরু করলাম। ফজর পরবর্তি সময়, কিন্তু মনে হচ্ছে গভীর রাত। চারিদিকে ঘুট ঘুটে অন্ধকার। ভয়ও করছে একা একা যেতে। কিন্তু যেতেও মন চাইছে। কিছুদুর এগোতেই কিছু চায়ের দোকান আর কিছু লোক জনের জটলা চোখে পড়লো। সেখান থেকে সরু সরু অনেক গলি বিভিন্ন দিকে চলে গেছে। গলি গুলো আবার উচু হতে শুরু করেছে। অর্থাৎ পাহাড়ে ওঠার মতো উচু নিচু। মনে হয় আগে পাহাড় ছিলো, এখন জনবসতি আর রাস্তা তৈরী হয়েছে। আমি একটি গলি ধরে এগিয়ে গেলাম। সেই সাথে চারিদিকে ভালো ভাবে নজর রাখলাম যেনো আবার রাস্তা চিনে ফিরতে পারি। কারণ এখানে এতো বেশী অলি গলি যে একটু অসতর্ক হলে আমি আর হোটেলে সহজে ফিরতে পারব না।

একটি গলির ভেতরে ঢোকার পর দেখি কিছু মহিলা রাস্তার পাশে পানির কল থেকে পানি ভরছে। আমি এক ব্যাক্তিকে জিজ্ঞেস করলাম দরগাতে কোনদিক দিয়ে যাব? সে সোজা রাস্তা দেখিয়ে দিলো। আমি সেই রাস্তা দিয়ে এগোতেই দেখি রাস্তাটা কারোর বাড়ির প্রাচীর ঘেষে আবার তিন চার হাত নিচের দিকে নেমে গেছে। নিচের নামার জন্য আবার সিড়িও করা আছে। এতো অন্ধকার যে চোখে কিছু দেখা যাচ্ছে না। দূরে একটি বাসার বাইরে ১০০ পাওয়ারের একটি বাল্ব জ্বলছে। সেই আলোতে অন্ধকার তেমন একটা দূর হচ্ছে না। প্রায় ৭টা বাজে, তার পরেও এতো অন্ধকার কেন বুঝলাম না। ঐ সিঁড়ি ধরে নেমে যেতেই রাস্তাটা আবার বাক নিয়েছে ডানে বায়ে। আমি এখন কোন দিকে যাব? দেখি রাস্তার উপরে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। গরু ছাগল মহিষ এর মল মূত্রের গন্ধে পুরো এলাকাটাকে গোয়াল ঘর মনে হচ্ছে ......। আমি আর এগোতে সাহস করলাম না। ফিরতি পথ ধরলাম। ঐ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই ঐ লোকের সাথে আবার দেখা। সে বল্লো কি যাবা না দরগায়? আমি বল্লাম অন্ধকার তো। সে বল্লো আসো আমার সাথে .....। আমি যাব কিনা ইতস্ততঃ করছি, ঠিক এমন সময় একপাল মহিষ নিয়ে এলো কিছু লোক। মহিষ গুলোও অন্ধকারে ঐ সিড়ি দিয়ে নামতে সাহস করছে না। ঐ লোকগুলো মহিষগুলোকে জোর করে পিটিয়ে পাটিয়ে ঐ গলিতে ঢুকতে বাধ্য করছে। এমনই একটি বাচ্চা মহিষ ঐ অন্ধকার গলিতে ঢোকার ভয়ে পালাতে গিয়ে আমাকে মারলো ঢুস! মহিষের ঢুস খেয়ে আমি আর ওখানে দাড়ালাম না। ফিরতি পথ ধরলাম।

হোটেলের কাছে এসে মন বল্লো এতো ভয় পাইলে কি চলে? আবার যা। কি মনে করে আবারো দরগার দিকে হাটা ধরলাম। এবার অন্য রাস্তা ধরে লোক জনকে জিজ্ঞেস করতে করতে এগোলাম। এই গলি সেই গলি উচু নিচু সরু রাস্তা ধরে এগোলাম। নর্দমা, ড্রেন, আর ময়লার ভিতর দিয়ে হাটতে থাকলাম। দেখি পুরো রাস্তাটার দুধার দিয়ে হোটেল আর খাবারের দোকান। ধীরে ধীরে তারা দোকান খুলছে। এখন একটু পরিস্কার হয়েছে চারিপাশ। বেশ কিছু দূর যাবার পরে আমি যেটা উপলব্ধি করলাম সেটা হলো এর বেশী আগালে আমি আর রাস্তা চিনে ফিরতে পারবো না। ইতিমধ্যে দশ ঘুল্লি দিয়েছি। সুতরাং এবারো দরগায় না গিয়ে হোটেলে ফেরার পথ ধরলাম।

ফোন দিলাম হোটেলে শুয়ে থাকা পরিবারকে। বল্লাম তোমরা তৈরী হও। আমি এসে তোমাদেরকে নিয়ে একসাথে দরগায় যাবো। তাহলে আর পথ হারালেও ভয় থাকবে না। আমার কথা মতো ওরা তৈরী হয়ে নিলো। আমি হোটেলে পৌছে ওদেরকে নিয়ে আবার দরগার দিকে রওনা হলাম। এবার হোটেল থেকে বের হতেই একটি অটো পেয়ে গেলাম। তাই ওদেরকে নিয়ে আর হাটা লাগলো না। অটো ওয়ালা এই গলি সেই গলি দিয়ে উচুতে উঠতে উঠতে দরগার একদম কাছে এনে নামিয়ে দিলো।

(হোটেলের জানালা দিয়ে আজমিরের পাহড়ি দৃশ্য....)


ভেতরে ঢোকার সময় স্যান্ডেল খুলে জমা রাখলাম পশের এক জুতা সংগ্রহকারীর দোকানে। কিছু রুপির বিনিময়ে ওরা স্যান্ডেল রাখে। সিকিউরিটি আমার ব্যাগে ক্যামেরা দেখে বল্লো ক্যামেরা নিয়ে ভেতরে যাওয়া যাবে না। আমি বল্লাম মোবাইল নিয়ে যাওয়া যাবে? সে বল্লো যাবে। আমি বল্লাম মোবাইলেও তো ক্যামেরা আছে। তাতে সমস্যা নাই? সিকিউরিটি আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বল্লো মোবাইল নিয়ে ফোকা যাবে, ক্যামেরা নেয়া যাবে না। আমি আবারো তাকে বল্লাম মোবইলেও তো ক্যামেরা আছে, তো মোবাইল নিতে পারলে ক্যামেরার কি দোষ? সে কিছুতেই তা শুনতে মানতে নারাজ। অগত্যা পাশের এক দোকান থেকে এক প্যাকেট মুড়কি কিনলাম এবং তার বিনিময়ে তার দোকানে ক্যামেরাটি রেখে তারপর মাজার প্রাঙ্গণে ঢুকলাম।
(আজমীর শরীফের দরগা গেট...)





বেশ নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ। ঢুকতে হাতের ডানে সম্রাট শাহজাহানের করা মসজিদ। আমরা বেশ সকাল সকাল এসে পড়েছি বিধায় মাজার প্রাঙ্গণ বেশ ফাকা। সাদা শ্বেত পাথর এতো ঠান্ডা হয়ে আছে যে পা জমে যাবার যোগাড়। একটু আগালেই ডানে বামে বড় বড় দুটি ডেগ। মেয়েকে কোলে নিয়ে এগিয়ে গেলাম। মাজারের কাছাকাছি আসতেই একজন খাদেম স্বেচ্ছায় আমাদেরকে গাইড করতে চাইলো। কিন্তু আমরা আমাদের আচার আচরণে বুঝিয়ে দিলাম ওনাকে আমাদের প্রয়োজন নেই। লাইনে দাড়িয়ে ঢোকার সময় উনি আবার আমাদেরকে পাশে ছোট বাক্স নিয়ে বসে থাকা একজন খাদেমের কাছে বসতে বল্লেন। আাম বসে মুড়কির প্যাকেটটা তাকে দিয়ে দিলাম। আমি ভেবেছিলাম এটি বোধ হয় ওনাকে দিতে হয়। উনি কি বুঝলেন জানি না, মুড়কির প্যাকেটটি আবার আমাকে ফিরিয়ে দিলেন, বল্লেন আমিই যেনো এটা খাই। যাই হোক ওটা আবার হাতে নিয়ে ঢুকলাম মাজার শরীফের ভেতরে। ওখানে দেখি বেশ ভিড় আর লোকে গাদাগাদি করে দাড়িয়ে আছে।

যে ঢুকেছে, সে আর সরছে না, বিধায় নতুন করে কেউ ঢুকতে পারছে না। আমি এক দরজা দিয়ে ঢুকে বহুত কষ্টে চাপাচাপি গাদা গাদি সয়ে পাশের দরজা দিয়ে মেয়েকে কোলে করে বেরিয়ে এলাম। বের হয়ে দরজার একপাশে দাড়িয়ে জিয়ারত সারলাম। চত্ত্বরে বেরিয়ে এসে দেখি চত্বরের এককোনে একজন হারমোনিয়াম নিয়ে সামা সংগিত করছেন। বাইরের চত্বরে ম্যাট্রেস বিছানো আছে। ওখানে না দাড়াতে পারলে পা জমে বরফ হয়ে যেতো। ওদেরকে ওখানে বসিয়ে শাহজাহানের করা মসজিদে গিয়ে দুরাকাত সালাত আদায় করে বের হয়ে আসলাম।

দরগাহর গেটের বাইরে সারি সারি অনেক হোটেল আছে। ওখানেই সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। তারপর একটি রিক্সা নিয়ে আবার হোটেলে ফিরে এলাম। ব্যাগ বোচকা আগেই গুছিয়ে রেখেছিলাম। হোটেলে পৌছে দেখি রামজিও গাড়ি নিয়ে প্রস্তুত। হোটেলের ভাড়া মিটিয়ে রওনা দিলাম। এবার আমাদের গন্তব্য জয়পুর।

মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬

ফারিহা নোভা বলেছেন: বেশ সাবলীল ও চমৎকার বর্ণনা ভাল লাগল।

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৩০

আহলান বলেছেন: আপনাদের ভালো লাগা আমার লেখার অনুপ্রেরণা ... ধন্যবাদ ... !

২| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৯

ডার্ক ম্যান বলেছেন: ভ্রমণ পোস্ট দেখি আরা হাহাকার বাড়তে থাকে। কবে যে এমনভাবে ঘুরতে পারবো। আপনার পোস্ট গুলো খুব ভাল হচ্ছে

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৪

আহলান বলেছেন: পোষ্ট গুলো এমন ভাবে দিতে চেষ্টা করছি, যেনো এটি একটি গাইড হিসাবে সাহায্য করে ... আপনার হা হা কার দূর হোক ..এ শুভ কামনা .... ধন্যবাদ .... :)

৩| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৬

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম, সেই সাথে আজমীর শরীফে যাবো সেই প্রতিজ্ঞাটা আরো একবার করলাম।

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:২২

আহলান বলেছেন: সময় নিয়ে ঘুরে আসুন ... ভালো লাগবে !

৪| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৭

কল্লোল আবেদীন বলেছেন:



চমৎকার ছবি ও বর্ণনা।

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:২৩

আহলান বলেছেন: ধন্যবাদ ....!

৫| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০১

সাদা মনের মানুষ বলেছেন:

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৩

আহলান বলেছেন: বাহ ...! গরম কফি তো লেখকের তৃপ্তি ...

৬| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:১১

প্রামানিক বলেছেন: ছবি বর্ননা ভাল লাগল। ধন্যবাদ

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:২৪

আহলান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ... আপনার মতো পারি না ...চেষ্টা করি ... :)

৭| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৪

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুব চমৎকার ভ্রমন গল্প। পড়তে ভালো লাগছিলো।

তবে খাজা বাবার জন্য মায়া লাগছে। তাঁকে বা তার কবরকে কেন্দ্র করে এই বড় ব্যবসা, ধান্দাবাজী গড়ে উঠবে যদি তিনি জানতেন, তাহলে নিশ্চিত তিনি নিরিবিলিতে কোথাও গায়েব হয়ে মৃত্যুবরণ করতেন। হাজার হাজার মানুষ এই মাজারকে কেন্দ্র করে বেদাতে লিপ্ত। তবে একটাই আশার কথা, এর সাথে মহান এই ব্যক্তির কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুক।

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৫৮

আহলান বলেছেন: ঠিক বলেছেন ...ব্যবসা মানে চরম ব্যবসা ... ...!

৮| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৪

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: বর্ণনা ভালো লেগেছে।

কিন্তু এত্ত লং জার্নি বাব্বাহ। আমি লং জার্নির ভয়ে অনেক জায়গায় যাওয়া বাদ দেই।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৫৫

আহলান বলেছেন: ধন্যবাদ ... ভারত ভ্রমণ করতে হলে লং জার্নি ছাড়া গতি নাই ...

৯| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন লাগল। যেন আপনার সাথে সাথৈ ভ্রমনও হয়ে গেল।

কিন্তু ভোরের বিষয়টা বুঝলাম না। ওরা কি ভুল বলেছিল না আপনি পথ খুঁজেই পাচ।ছিলেন না?!!!

শেষ ভাল যার সব ভাল তার।
চলুক ভ্রমন...

২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৫২

আহলান বলেছেন: আমার লেখনী যেনো আপনাদেরকে ঘুরিয়ে আনতে পারে সেই দিকটা বিবেচনায় রেখেই লেখার চেষ্টা করেছি।
ওরা রাস্তা ঠিকই বাতলেছিলো, আমি একদম নতুন আগন্তুক আর অন্ধকার পরিবেশে রাস্তা খুজে নিতে সাহস পাইনি।

১০| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৫৪

স্বপন খাঁন বলেছেন: আপনার পরের পোষ্টের অপেক্ষায় রইলাম।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩৮

আহলান বলেছেন: রেডি করছি ভাই .. ধন্যবাদ!

১১| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:১৯

ঢাকার লোক বলেছেন: It is NOT right to set out to visit a place with the intention of acquiring "Sawab" except visiting 3 mosques, Masjidul Haram in Makkah, Masjidan Nabbi in Madina and Masjidul Al Aqsa in Jerusalem per our beloved Prophet (PBUH), though nothing wrong if one goes with the intention of seeing the area or its people, & no Haram activities are involved (as making donation to a Baba's majar)!
Hope you didn't make any donation to the majar!!

২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬

আহলান বলেছেন: না, ডোনেশন দেই নাই ....

১২| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:৩৯

ডি মুন বলেছেন: ভ্রমণে তো আনন্দের চেয়ে কষ্ট বেশি হল মনে হচ্ছে !!!

লম্বা জার্নি, তার উপরে আবার বার বার আপনি পথ হারিয়ে ফেললেন, মহিষের ঢুস খেলেন । :)


খুব সাবলীল বর্ণানায় লিখেছেন, পড়ে ভালো লেগেছে।
ভালো থাকুন।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩৪

আহলান বলেছেন: কিছু ক্লেশ তো সইতেই হবে ব্রাদার ... ধন্যবাদ!

১৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৩৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


"এমনই একটি বাচ্চা মহিষ ঐ অন্ধকার গলিতে ঢোকার ভয়ে পালাতে গিয়ে আমাকে মারলো ঢুস! মহিষের ঢুস খেয়ে আমি আর ওখানে দাড়ালাম না। ফিরতি পথ ধরলাম। "

-আপনাকে খুঁজতেছিল

২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩২

আহলান বলেছেন: সে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ... তাইলে বেতাল হয়ে গেছিলাম

১৪| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৩৯

রাজপুরুষ বলেছেন: লিখাটি দারুন, প্রানবন্ত হয়েছে।
পড়ে বিস্তারিত জানলাম।
বেড়াতে গিয়ে মহিষের গুতো....

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:২০

আহলান বলেছেন: হ্যা রে ভাই ..সেও এক জটিল অভিজ্ঞতা ... ভয়ই পেয়েছিলাম বলতে পারেন ... !! ধন্যবাদ

১৫| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:১৪

মন্জুরুল আলম বলেছেন: আপনার বর্ণনা খুব সবালীল....ভাললাগে পড়তে।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:২৩

আহলান বলেছেন: :) ধন্যবাদ .....

১৬| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৫৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



আজকে একজন ব্লগার একটা মহিলা মরিয়ম ও তার মেয়ে মারিয়ার উপর পোস্ট দিয়েছিলেন; আপনার মনে আছে, কোন ব্লগার? মনে হয়, পোস্টা আর নেই।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:২২

আহলান বলেছেন: পোষ্টটা মনে আছে ... সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে ৫ বছর ধরে চিকিৎসাধীন ....কিন্তু ব্লগারের নাম টা তো ঠিক মনে পড়ছে না রে ভাই! ...

১৭| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৫

কালনী নদী বলেছেন: এইবারে প্রথম কিস্তিটাও পেয়ে গেলাম! বেশ সাবলীল ও চমৎকার বর্ণনা- প্লাস লেখা হয়েছে ভাই!

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১৯

আহলান বলেছেন: ধন্যবাদ ব্রাদার .... !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.