নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তখন ছিলো বর্ষা কাল। কি রাত কি দিন .... অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরেই চলেছে। বাড়ির আশে পাশে যত ডোবা নালা পুকুর খাল বিল ছিলো, সবই পানিতে টইটুম্বুর। প্রায় সারাদিনই ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাং ঘ্যাঙর ঘ্যাং শব্দ কানে আসে। সেই সাথে বৃষ্টি ঝরার ছর ছর শব্দ। দিনের বেলায়ও আকাশ সন্ধ্যার মতো মনে হয়। শরীফ মামা মাদ্রাসায় যেতে পারছেন না বৃষ্টির কারণে। হাট বাজারও বন্ধ। সেই সাথে হাড়ি জ্বালানোও দায় হয়ে পড়ছে। কারণ শুকনো খড়ি কাঠি ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। এরই মাঝে পাশের বাড়ির ঈমান আলী বল্লো," মামা, মাছ মারতি যাবেন নাকি? শরীফ মামা কাথা গায়ে দিয়ে শুয়ে শুয়ে মাথার কাছে টিম টিম করে জ্বলা হারিকেনের আলোয় কি একটি কিতাব পড়ছিলেন। ঈমান আলীর কথায় একটু শিহরিত হলেন বলে কিতাটি বুকের উপরে দুই হাতে ধরা অবস্থায়ই চোখ দুটি ঈমান আলীর দিকে ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর বল্লেন," তা কল্লি তো মন্দ হতো না ঈমান আলী! কিন্তু এতো ঘন বরষার মদ্যি বেরোতি চাচ্ছ?" ঈমান আলীর গাল ভরা দাড়ি। মামার কথা সেই দাড়ির ফাক দিয়ে ঈমান আলীর নিষ্পাপ মুচকি হাসি বেরিয়ে আসে। সে বলে," মামা, এই সময়ই তো তাজা তাজা মাছের ঝাঁক ভাইসে বেড়ায় বিলির মদ্যি। তালের ডুঙ্গাটা বিলের ধারেই রাখা আছে। চলেন দুইজনে যাই।" দুই দিন টানা ঘরের ভেতরে বন্দী থেকে শরীরটাতেও কেমন আলিস্যি ধরে গেছে। ঈমান আলীর ডাকে মামা সাড়া না দিয়ে পারলেন না। তাছাড়া মামারও মাছ ধরার বাতিক আছে- সেটা ঈমান আলী খুব ভালো করে জানে।
মাঝারি আকৃতির দুটি খালৈ, ছোট একটি খ্যপলা জাল, একটি কোচ, আর একটি হারিকেন নিয়ে সন্ধ্যার দিকে দুজন বের হয় মাছ ধরার অভিযানে। বৃষ্টি তখনো ঝরছে। মেঠো পথ কাদায় মাখামাখি। তার ভিতর দিয়ে ছাতা মুড়ি দিয়ে মামা আর ঈমান আলী হেটে চলেছেন মথুনী বিলের দিকে। চারিদিকে এত অন্ধকার যে, ছোট্ট ঐ হারিকেনের আলোয় তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে মামা আর ঈমান আলীর চির চেনা গ্রামের এই মেঠো পথে চলতে তেমন কোন অসুবিধা হচ্ছে না। গ্রামের রাস্তায় দুই ধার দিয়ে বাড়ি। তার পাশাপাশি বিভিন্ন মানুষের কবর। ছাগির চাচা-র কবরের পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় হঠাৎ সাদা একটা কিছু ওদের পাশ দিয়ে ছুটে চলে গেলো। শরীফ মামা একটু ঘাবড়ে হেই করে শব্দ করে উঠলো। ঈমান আলী বল্লো," মামা ভয় পাইয়েন না, ওটা বিড়াল।" মামা বল্লো, "কবরের উপর থেকে দৌড় দিলো, কবরে বিড়ালের কাম কি"? ঈমান আলী বল্লো," আরে মামা, বৃষ্টিতে তো সব জায়গাই ভিজে গেছে, হয়তো ওখানে একটু শুকরা মাটি পাইছিলো, তাই শুয়ে ছিলো। আমাদের আসা দেখে দৌড় মারছে।" মামা বল্লেন, " হতেও পারে"। তবে বিড়ালের আকৃতিটা একটু বড় বড় মনে হয়েছিলো মামার কাছে। কিন্তু ঈমান আলীর কথায় সে অন্য কোন ভাবনা মাথায় আনলো না। কিছু দোয়া কালাম পড়ে আবার হাটতে শুরু করলো।
বিল পর্যন্ত হেটে আসতেই হাফ ধরে গেলো ওদের। কাঁদা পানি পেরিয়ে কি জোরে হাটা যায়? শরীফ মামা জাল, কোচ খালৈ সব রেডি করতে লাগলো, আর এই ফাকে ঈমান আলী তালের ডুঙাটা বিলের পানিতে ভাসিয়ে দিলো। তারপর মাছ ধরার আর রাখার সব সরঞ্জামাদি নিয়ে এগিয়ে চল্লো বিলের পুকুরের দিকে। শুকনো সময়ে যখন পানি থাকে না বিলে, তখনো এই বিলের পুুকুরে পানি থাকে। মাছ থাকে। এই পুকুরে প্রতি বছরই ডাল পালা দেয়া হয় মাছের থাকার সুবিধার্থে। তাই ওরা বিলের মাঝখানের দিকে এগিয়ে চল্লো।
বৃষ্টিটা মনে হয় একটু ধরেছে। মেঘ সরে কিছুটা চাঁদের আলো বেরিয়ে এসেছে। মেঘ গুলো সব চাদের চারপাশ ঘিরে একটি আলোকময় গোলোক সৃষ্টি করেছে। দেখতে ভারি সুন্দর লাগছে। বিলের শান্ত পানিতে ডুঙা বেয়ে চলেছে শরীফ মামা, পিছনে বসেছে ঈমান আলী। বিলের মাঝ বরাবর আসতেই শরীফ মামার মনে হলো তার গা ঘেষে কিছু একটা ছুটে এগিয়ে গেলো। কোন মাছ টাছ লাফ দিলো নাকি - বিষয়টা বোঝার জন্য মামা এদিক ওদিক তাকাতেই সামনের যে দৃশ্য চোখে পড়লো, তা দেখে মামার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসলো। গলা শুকিয়ে গেলো। বার কয়েক ঢোক গিলে সে ঈমান আলীকে ডেকে বল্লো," ঈমান আলী, সামনে কি কিছু দেখতে পাচ্ছ?" ঈমান আলীর কোন উত্তর মামার কানে পৌছালো না। কারণ ঈমান আলীও তখন ভয়ে সিটকে গেছে। মামা আবারো বল্লেন,"ঈমান আলী! বিলের পুকুরের মাঝে ঐ সাদা বিড়ালটা কিভাবে আসলো?" এরই মাঝে তারা দেখতে পেলো বিড়ালটার আকৃতি আগর বাতি জ্বালালে যেমন ধোঁয়া বের হতে থাকে, ঠিক তেমন ভাবে ধোঁয়ার মতো ধীরে ধীরে বড় হতে হতে মুহুর্তের মধ্যেই দশাশই একটি হাতির আকার ধারণ করেই বাতাসে মিলিয়ে গেলো। পরক্ষণেই ডুঙার পাশ দিয়ে পানির ভেতর দিয়ে দৌড়ে গেলে যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমন থপ থপ শব্দ করে কি যেনো চলে যাওয়ার শব্দ হলো। সেদিকে তাকাতেই ওরা দেখলো শশ্বান ঘাটের পাড় হতে বিশাল আকৃতির মাথা বিহীন কিছু মানুষ দৌড়ে নেমে এসে ঝপ ঝপ করে বিলের পানিতে স্বশব্দে আছড়ে পড়েই বিলিন হয়ে যাচ্ছে .... ! এর পর কি ঘটেছে তা আর শরীফ মামা বা ঈমান আলী- কারোরই মনে নেই।
যখন তাদের জ্ঞ্যন ফিরে তখন তারা গ্রামের মৌলভী বাড়ির উঠানে পাটিতে শোয়া অবস্থায় নিজেদেরকে আবিষ্কার করে।
১১ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:০৬
আহলান বলেছেন: হুম ... !
২| ১১ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:২৫
সিরাজুল হক খান বলেছেন: সত্য ঘটনার পিছনের বুনন বেশ শক্ত হয়। এখানে দূর্বলতা পেলাম।
(১) হ্যারিকেনে মাছ ধরে রাত্রি বেলা, এমন উদাহরণ বাংলাদেশের কোন বিলাঞ্চলে আছে বলে আমার জানা নেই। আমি নিজে গ্রামাঞ্চলের মানুষ। ওরকম মাছ ধরার স্মৃতির সম্ভার আমার হস্তীসম।
(২) গ্রামের মানুষ আমোদ করে বিলে যাচ্ছে মাছ ধরতে। হেটে হেটে। বিলের ধার যত দুরেই হোক, পৌছাতে পৌছাতে হাফ ধরার প্রশ্নই আসেনা।
(৩) তালের ডুঙ্গায় দুইজন বসে কার্যক্রম পরিচালনা করা দুঃসাধ্য। তথাপি তারা অনেক রসদ নিয়ে নৌকায় উঠল। ডুঙ্গায় অজ্ঞান হয়ে গেছে, এমনই বুঝলাম। অজ্ঞান হয়ে গেল দুজন লোক। অবশ্যই অবশ্যই এবং অবশ্যই ডুঙ্গা কাত হয়ে ডুবে যাবার কথা। অজ্ঞান মানুষ পানির মধ্যে কেমনে বাচল? কেমনে মৌলভী সাহেব এর বাড়িতে গেল? তা জীবতি? নাকি প্রেত্মাত্মারা বলছে -
'নিজেদেরকে আবিস্কার করলাম'।
১১ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৫
আহলান বলেছেন: বিনোদনকে এতো সিরিয়াসলি নিলে চলে ব্রাদার!
৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৮
বিজন রয় বলেছেন: হ্যারিকেনে মাছ ধরে রাত্রি বেলা,........ আমাদের এলাকায় আছে।
গল্পে কাঁপুনি আছে।
++++
১১ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৪১
আহলান বলেছেন: ধন্যবাদ ... আমাদের এলাকাতেও কুপি/হ্যারিকেন/এখনতো টর্চ/চার্জারও ব্যবহার হয়।
৪| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:২৫
মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: গল্পঃ হিসেবে ভালো হয়েছে। পড়ে মজা পেলাম।
১২ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:০৫
আহলান বলেছেন: ধন্যবাদ ...
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:০০
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: বাপরে কি ভয়ানক
সত্যিই নাকি