নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নাজুদের বাসায় গেলে কখনো তাদের বাসাকে বাসা বলে মনে হতো না। মনে হতো মেস। আমি প্রায়ই বিভিন্ন সময়ে ওদের বাসায় যেতাম। কিছু দিন পরপরই পুরানো কিছু মুখের সাথে নতুন কিছু মুখের উপস্থিতি। আমি প্রথম প্রথম খুব অবাক হতাম। বলতাম তোদের বাসায় এতো মানুষ কারা? ও খুব উৎসাহ নিয়ে উত্তর দিতো উনি আমার মামা, উনি আমার মামত ভাই, উনি আমার ফুপাত ভাই, চাচাতো ভাই ... চাচাতো ভায়ের মামা ... ব্লা ব্লা ব্লা। নাজুদের বাসাটা ছিলো অনেকের জন্য একটি ট্রানজিট পয়েন্ট। যখন যে পেরেছে যতদিন পেরেছে তা ব্যবহার করেছে। আমি জিজ্ঞাসা করতাম তোদের বাসায় এতো মানুষ! খাওয়া দাওয়া বা ঘুমাস কিভাবে? এখানেও নাজু খুব উৎসাহের সাথে বলতো যা রান্না হয়, তাই সবাই মিলে ভাগ করে খাই। রাতে বিছানা-তোশক মেঝেতে বিছিয়ে যে যার মতো শুয়ে পড়ে। আর বাথরুম? সেটাতো মোটে একটা .... তাতে কি? ওই ম্যানেজ হয়ে যায়। নাজুকে জিজ্ঞাসা করতাম এই যে এতো এতো মানুষ তোদের বাসায় এসে থাকে খায় দিনের পর দিন অর্থাৎ পার্মানেন্ট গেষ্ট আর কি - তোর বাবা কিছু বলে না? নাজু হেসে হেসে উত্তর দিতো - নাহ। আমার বাবা কখনোই কাওকে এখানে থাকতে নিষেধ করে না। বরং কেউ থাকতে চাইলে উনি খুশিই হন। অনেকে নিজের আপন ভাই ভাবির বাসা রেখে আমাদের বাসায় এসে থাকে। কারণ তাদেরকে সেখানে থাকতেও দেয় না। খেতেও দেয় না। কোন আপ্যায়নই হয় না। বরং কটূ কথা শুনতে হয়। কেউ কেউ চলে যেয়ে আবার তাই ফিরে এসেছে। তাই সবাই আমাদের বাসাতেই এসে থাকে। এসবের ভেতর দিয়েই আমার আর নাজুর লেখা পড়ার পাট চুকে যায়। আমি এশহর ছেড়ে চলে যাই মফস্বলে। তার পর চাকরি বাকরির সুবাদে নাজুর সাথে আর যোগাযোগ তেমন একটা হয়নি।
অনেক দিন বাদে খুজতে খুজতে আবার নাজুদের বাসায় যাই। দেখি নাজুর বৃদ্ধ মা বাবা ছাড়া ঐ বাসায় আর কেউ নেই। নাজুর বাবার সাথে কথা হলো। নাজু থাকে ইউএসএ। কথায় কথায় জিজ্ঞাসা করলাম, আঙ্কেল একটা সময়ে আপনাদের বাসায় পা ফেলানোর মতো জায়গা দেখিনি। আজ তো পুরো বাড়ি শুন শান নিরব। ফাকা। তারা কই যারা সে সময় আপনাদের বাসাটাকে মাতিয়ে রাখতো? নাজুর বাবা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বল্লেন, সবাই যার যার মতো নিজ পায়ে দাড়িয়ে গেছে। এই বাসার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে বাবা! দু,একজন বাদে বছরে একবার কেউ খোঁজও নেয় না যে আমরা কেমন আছি। অথচ একটা সময় ছিলো যখন আমাদের ছাড়া তারা চলতেও পারেনি। নাজুর মা আগ বাড়িয়ে বলেন, শুধু তাই নয়! এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ অন্যায় ভাবে তোমার আঙ্কেলের সাথে জমি জমা নিয়ে বিরোধও করে এখন। অথচ তাদেরকেই আমরা মানুষ হতে দিনের পর দিন স্বার্থহীন ভাবে সহায়তা করেছি। আজ তাদের অনেকেই আমাদের সাথে অকারণে তাদের পতিপত্তি দেখায়। পাছে পুরানো দিনের কথা মনে পড়ে যেতে পারে ভেবে আরো বেশি করে খারাপ ব্যবহার করে। বুঝতে দিতে চায় না যে এক সময় আমাদের কারণেই তারা এখন উচ্চ পর্যায়ে এসেছে।
আমি নাজুর মোবাইল নাম্বার নিয়ে চলে এলাম। ভাবলাম তাহলে আমার বাবা মা ভালোই করেছে। তারা কখনোই এসব আত্মিয় স্বজনের দায় দায়িত্ব কাঁধে নেয়নি। নইলে আজ নাজুর বাবা মায়ের মতো বসে বসে আফসোস করতে হতো। অধিকাংশ মানুষই বেঈমান। অকৃতজ্ঞ। পুরোনো দিনের উপকারের কথা কখনোই মনে রেখে সদ্ব্যাবহার করে না।
২| ০২ রা জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭
সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: এটাই নিয়ম।
৩| ০২ রা জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪
কামাল১৮ বলেছেন: আগে যৌথ পরিবার ছিলো।এটা ছিলো সামন্তবাদী সমাজের শেষের দিক।এখন পূজীবাদী সমাজ।নিজের চিন্তায় অস্থির।
৪| ০২ রা জুন, ২০২৪ রাত ৯:১৮
ঢাকার লোক বলেছেন: নাহল তরকারি লিখেছেন,
"আব্বুর চাচাত্বো ভাই এর মামাত্বো ভাই এর বউ এর বড়ভাই এর স্ত্রীর ছোট ভাই" আপনাদের বাসায় আসতেন ! উনি আপনার কি হন, সমীকরণ করে বলবেন? জানতে ইচ্ছে হচ্ছে !
৫| ০৩ রা জুন, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫
আরাফআহনাফ বলেছেন: চরম বাস্তবতা।
কেন যে মানুষ এমন হয়?!!
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:৪১
নাহল তরকারি বলেছেন: আমাদেরও একই অবস্থা ছিলো। আমাদের বাসা ছিলো মুন্সীগঞ্জে। আমার আব্বু যখন কর্মসূত্রে ঢাকায় পোস্টিং ছিলো তখন মামা, খালা, চাচা সহ আরো আত্নীয়গণ আমাদের বাসায় আসতেন। আব্বুর চাচাত্বো ভাই এর মামাত্বো ভাই এর বউ এর বড়ভাই এর স্ত্রীর ছোট ভাই জাতীয় আত্নীয়গণ ও আমাদের বাসায় আসতেন। এখন অনেকের প্রয়োজন শেষ। তাই এখন কেউ আসে না।