নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জলে মিটেনি পিপাসা তাই চললাম পানশালায়

চাঁদের দিকে হাত বাড়ালে তার আলো কিছুটা লেগে যায় চিত্তে

লী এনজেল

প্রথার ভাঙ্গন নয়, চাই শুদ্ধিকরণ

লী এনজেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সকল শিশুই স্বপ্ন দেখুক

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৫





বড় হয়ে কি হতে চায় এমন স্বপ্ন সব শিশুকেই দেখতে বলা হয়। বিষয়টি এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য বইয়ে আবশ্যকীয় করা হয়েছে। দ্বিধা-দ্বন্দে ভোগা মানুষগুলোর লক্ষ্য নির্ধারন করতে শিশু বয়স থেকে স্বপ্ন দেখতেই হবে। মনছবি মিশাইলের মতো লক্ষ্য ভেদ করে! শিশু বয়স থেকে দেখা স্বপ্নগুলো মনছবি হয়ে একদিন লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানালেন তার স্কুলের শিশুরা ডাক্তার হয়ে জনসেবা করতে চায়, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গরিবি দূর করতে চায়, পুলিশ হয়ে আইন-শৃঙ্খলা ও জজ-ব্যারিস্টার হয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। আবার অনেকে মানুষের ভালবাসা পেতে শিক্ষক হতে চায়। সেই শিক্ষক আরো জানালেন শিক্ষকরা এখনও সবার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা পায়, যতটা অন্য পেশায় গিয়ে কেউ পায় না।



কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্রের পোড়ার চর। এই চরে প্রায় ৩ শত পরিবারের বাস। লোকসংখ্যা প্রায় ২ হাজার। স্কুলগামী শিশুর সংখ্যা ৬ শতের মতো। কিন্তু চরটিতে মাত্র একটি এনজিও প্রাথমিক স্কুল চলছে, মাত্র ৫ বছর আগে শুরু করেছে স্কুলটি। ভাঙ্গা নড়বড়ে বেঞ্চ-চেয়ার ও ঘরটির ২ টি কক্ষে ৫০ জন শিশু গাদাগাদি বসতে পারে। তাই স্কুলভাগ্য সবার হয় না। মাত্র ২ জন শিক্ষকের এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণী পযর্ন্ত পড়া শেষ করে শিশুরা দেখে দেখে বানান করে বাংলা পড়তে শেখে। এর বেশী শেখার কোন সুযোগ নাই। চরটি উচ্চ বিদ্যালয় নাই। শুধু পোড়ার চর কেন, জেলার আরো প্রায় ৪ শত চরের কোথাও উচ্চ বিদ্যালয় নাই। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মাত্র ৪ টি। তাই অধিকাংশ চরের শিশুরা বড় হয় বইয়ের গন্ধ হাতে না লাগিয়ে। এই শিশুরাও স্বপ্ন দেখে, মনছবি দেখে। তাদেরও দু’চোখে জ্বলজ্বল করে জ্বলে স্বপ্ন। যে স্বপ্ন তাদের ঘুমাতে দেয় না সারা রাত। সে স্বপ্ন কি পূরন না হয়ে পারে? তারা তো আর আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখে না, দেখে না পাতাল ফুঁড়ে হিরা-মুক্তা জহরত আহরনের স্বপ্ন। তবে তারা বড় হয়ে রিক্সাওয়ালা হতে চায়। চরে কোন রাস্তা-রিক্সা না থাকায় তারা শহরের রাস্তায় রিক্সা চালার স্বপ্ন দেখে। মনে মনে রিক্সা প্যাডেল, শহরের রাস্তা কল্পনা করে সুখ বোধ করে। রিক্সাওয়ালা বাবা আবুবকরের মুখ থেকে শুনে শুনে শাহাজালাল এমন মনছবি দেখা শুরু করেছে। আবুবকর জেলা শহরে ভাড়ায় রিক্সা খাটে। এরশাদুল পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ছে। বাবার নাম সন্তোষ আলী বানান করে লিখতে না পারলেও সে এবার কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হতে চায় । এটাই তার অক্সফোর্ড! এখানে পড়তে তার পাড়ি দিতে হবে ব্রহ্মপুত্র। ডাঙ্গার কাছে যাত্রাপুরে এমন একটি মাদ্রাসা আছে। যেখানে চরের ছেলে শিশুরা পড়ে। পড়া বলতে কোরআন মুখস্ত পাঠ। এভাবে কয়েক বছরে শিশুরা তাদের ভাষায় আলেম হয়ে ওঠে। তার জন্য এই শিশুদের কম কষ্টও করতে হয় না। ১০/১২ বছরের এই শিশু গুলোকে মাদ্রাসার কাছাকাছি কোন সামর্থবানের বাড়িতে আশ্রিত থাকতে হয় পরিবার ছেড়ে। সেই সামর্থবানের ভাতের বদলে তাদের ফরমায়েশ খাটতে হয়। এক সময় কোরআন মুখস্ত হলে তারা এই শিক্ষা নিয়ে পেশায় নেমে পড়ে। মসজিদের মুযাজ্জিন, ইমাম ও গ্রামের মক্তব থেকে তাদের সম্মানের আয় হয়। এই চরের এরশাদুল স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে একজন আলেম হবে। তার মতো কুদ্দুস আলীর পুত্র বানিজ উদ্দিন (১০) ও আমজাদ আলীর পুত্র ইউনুস(৯) হাফিজিয়া মাদ্রাসায় কোরআন পড়ে আলেম হতে চায়। এমন স্বপ্ন তাদের বয়সী অধিকাংশ ছেলে শিশুদের। কারন তারা তাদের চরের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা পাওয়া মানুষদের দেখেছে আলেম হিসেবে। কিছু শিশু আবার চৌদ্দ পুরুষের পেশা উষর বালুতে শ্রম-ঘামের সিক্ততায় ফসল ফলাতে চায়, কেউ কেউ রোদ-বৃষ্টিতে পুড়ে পুড়ে কয়লা রঙের বাবার শরীর ছুইয়ে স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে বাবার মতো নৌকা ও জাল নিয়ে উত্তাল নদকে বশিভুত করে ধরবে মাছ।



কিন্তু এই চরের মেয়ে শিশুদের স্বপ্নের কোন ভিন্নতা নাই। এদের চোখ কোন স্বপ্নের কথায় জ্বলজ্বল করে না। যেন আবছা অদৃষ্ঠ তাদের চোখে মুখে ঘোলাটে করে রাখে। নিলিপ্ত মুখে বলে পঞ্চম শ্রেণী পড়া শেষ হলেই তাদের বিয়ে হবে । নুর ইসলামের কন্যা লুৎফা (৯) ও জামালের কন্যা পারুল (১০) কছিমের কন্যা কেয়া(৯) জানায় তারা নিজেরা কোন স্বপ্ন দেখে না। এই চরের মেয়েদের বেশী বয়স হওয়ার সুযোগ নাই। সর্বোচ্চ প্রাইমারী স্কুলটা শেষ করতে যতদিন দেরী। তারপর তাদের বিয়েই হয় পরিণতি। মেয়ে শিশু বলে তাদের নিয়ে বাবা-মা ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে পড়া লেখার কথা ভাবে না। তাই এই শিশুদের আলেম(!) হওয়ার সুযোগও জোটে না।



শিশুরা তাদের চারপাশ দেখে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। সকল শিশুর জন্য সাম্যতার পরিবেশ থাকলে সকলে লক্ষ্য নির্ধারন করতে পারবে সহজে, যে লক্ষ্য তাদের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা দেবে।তবুও সকল শিশু স্বপ্ন দেখুক, ছুঁয়ে ফেলুক তাদের আপন লক্ষ্য, চরের শিশুদের জন্য এমন প্রত্যাশা করছি।



সালেহা ইয়াসমীন লাইলী

লেখক, সাংবাদিক

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: মঙ্গল হওক চরের শিশুদের। আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠুক তারা।

২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪০

লী এনজেল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনােক

৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: স্বপ্নটা দেখবে কি দিয়ে? কি নিয়ে?

এইরকম একটা দুইটা পোষ্টে! একটা ভম্রন পথের হঠাৎ ফটো সেসনে হয়তো ব্যক্তিক আত্মতৃপ্তির সুযোগ আছে, এসি রুমে বসে- অনুভবের গভীরে গিয়ে আফসোসের আহা উহু ঝড়ানো যাবে!!!

কিন্তু বাস্তবতা! হা হতুম্মি!!!

এনজিও গুলো নিজেদের আখের গুছাতে যতবার বিক্রি করা লাগে ততবারই বিক্রি করে এমন ছবি? বিক্রি করে দরিদ্রকে, দারিদ্রতা দূরিকরনের নামে!!!
কিন্তু এনজিওর ফান্ড হয়, ভিসিক্স হয়, এসি অফিস, প্রেস কনফারেন্স.....

কিন্তু সেই জনতা আবারও অজান্তেই অন্য কারো হাতে বিক্রি হবার আশায় বসে থাকে নিয়তির হাত ধরে!!!!

ভাল লাগেনা । একদম ভাললাগে না। !!!

তাদের স্বপ্ন দেখানোর স্বপ্ন নিয়ে কথাকেও তাই মস্করাই মনে হয়!

৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০২

মামুন রশিদ বলেছেন: সকল শিশু স্বপ্ন দেখুক, ছুঁয়ে ফেলুক তাদের আপন লক্ষ্য,


সহমত ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.