নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অলস, আমাকে ঘুম থেকে ডাকবেন না

বন্যলোচন

অনর্থক জীবন ধারণ, বিতৃষ্ণার মূল কারণ।

বন্যলোচন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাঁচের জানালা

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪

প্লেটো বলেছিলেন - নথি সঅ-টন। নিজেকে জানো।

এই মহামানবের কথা অনুসরণ করেই আজ আমাদের এই অবস্থা। নিজেকে জানতে গিয়ে আমরা আত্মপ্রেমে এতই মত্ত হয়ে গেছি যে অন্য কারো ব্যাপারে ভাবার কথা মাথায় আসে না। নিজেকে এড়িয়ে তার বাইরে আরেকটা যে বিশ্ব আছে, সেই বিশ্ব ভরা মানুষ আছে - সেটা মনে থাকে না। আমরা ঘ্যানঘ্যান করি, আজ ভাল লাগছে না। বাসায় এই সমস্যা, সেই সমস্যা। এটা স্বাভাবিক। মানুষের প্রজাতিগত অভ্যাস। কিন্তু তারপর সে ব্যক্তিগত ব্যাপার এমনভাবে মানুষের কাছে সেটা তুলে ধরি যেন এগুলো জাতীয় গুরুত্ব বহন করে; অতিসত্ত্বর এর প্রতি নজর না দিলে বঙ্গভবন ধসে পড়বে, সীমান্ত হাতছাড়া হয়ে যাবে, কেয়ামত নেমে আসবে দুনিয়ায়। তোমার পা ভেঙ্গেছে তাতে কি, আমার পা চুলকায় সেটা তো দেখলে না। তোমার বাসায় ডাকাতি হয়েছে? আরে আমাকেও তো রিক্সাঅলা পাঁচ টাকা ঠকিয়ে দিয়েছে, কি দুর্ভাগ্য আমাদের!

নারসিসাস আমাদের দেখলে লজ্জা পেত এখন।

অবশ্য প্লেটোর দোষ দেই কি করে। তিনি তো বলেছিলেন আরেক দিক চিন্তা করে। আমি কিরকম মানুষ, সেটা যদি ঠিকমতো বের করতে পারি, তাহলে সমাজে নিজের অবস্থান, দায়িত্ব বুঝতে পারব। তারপর সচেতন ব্যক্তি থেকে ক্রমে ক্রমে আদর্শ সমাজের উত্থান। আমাদের আত্মপ্রেমি ব্যক্তি দিয়ে শুরু, সমাপ্তিও আত্মপ্রেমি সমাজে। ফলতঃ আত্মপ্রেমিদের প্রথম বৈশিষ্ট্য এখন পরিণত হয়েছে সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্যে। যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের পেছনে আগুন না লাগছে, ততক্ষণ চোখ বুজে বসে থাকো। তোমার পাছা অক্ষত আছে তার মানে ধরে নাও জগতের সবার পাছা অক্ষত, পোড়া গন্ধ-চিৎকার যতই নাকে-কানে আসুক, চোখ খুলে দেখার দরকার নেই। কিছু করার দরকার নেই। অন্য কেউ করুক। অন্য কেউ এগিয়ে যাক। এসব ঝামেলায় তুমি কেন নাক গলাতে যাবে? যদি খারাপ কিছু ঘটে? যদি তোমার কোন ক্ষতি হয়? শুধু শুধু ঝুঁকি নিয়ে কি লাভ?

হয়তো ভুল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি ব্যাপারটাকে। হয়তো আত্মপ্রেমের দোষ নয়, এটা ভীতির কারণে হয়। সাহসের অভাবে। হয়তো আমাদের সাহস কমে যাচ্ছে, তার ফলেই ক্রমশ বাড়ছে আত্মপ্রীতি।

হতে পারে।

এটা ঠিক, আমাদের এখন দলবেঁধে শারীরিক হুমকি মোকাবেলা করতে হয় না। হাজার বছরের প্রচেষ্টায় একটা মোটামুটি সুস্থিত সমাজব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলেছি, যেটা কোনোমতেই ন্যায্য নয়, কিন্তু টিকে থাকার জন্য কার্যকর। একজন মানুষ বর্তমান সমাজে জন্মগ্রহণ করার পর থেকেই তার সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ ঠিক হয়ে যায়। একই বা অনুরূপ দায়িত্বে অসংখ্য মানুষ কাজ করে যাচ্ছে। একটা বিশাল যন্ত্রের পরিবর্তনযোগ্য অসংখ্য যন্ত্রাংশের মত। আমরা দেখছি, সমাজের অংশ হয়েও একাকি থাকা সম্ভব। গোষ্ঠীগত জীবনযাপন বাদ দিয়ে দ্বীপ হয়ে যাচ্ছি আস্তে আস্তে। ফলে নিজের গোত্রকে রক্ষা করার জন্যে যে অদম্য সাহসের দরকার ছিল একসময়, সেটার প্রয়োজন কমে আসছে সময়ের পরিবর্তনের সাথে। এতে খালি জায়গাটা দখল করছে আত্মপ্রেম। স্বার্থপরতা। সমাজের আগে নিজের ভাল বোঝা। নিজেকে আগে রাখা।

ব্যতিক্রম আছে। সৌভাগ্যক্রমে। কম, অনেক কম, কিন্তু আছে। এরাই টেনে নিয়ে চলেছে আমাদেরকে সামনে। এরা যখন থামবে, পুরো সমাজ, পুরো মানব সভ্যতা থমকে যাবে একসাথে। এই বিশাল প্রাচীন মহাযন্ত্র তখন মরচে ধরে অচল হয়ে যাবে। মানুষের ভেতরের অন্ধকার বের হয়ে আসবে তখন। আমাদের সভ্যতার মুখোশের পেছনে যে আদিম অস্থিরতা আছে, সেটা বিস্ফোরিত হবে সেই সুযোগে। পৃথিবীর বুকে নামিয়ে আনবে প্রাচীন আঁধার।

আর বিশ্বাস করো, ভীতু আত্মপ্রেমিকেরাই মরবে সবার আগে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৫

এহসান সাবির বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:০১

বন্যলোচন বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২

আমি ময়ূরাক্ষী বলেছেন: আত্মপ্রেম বিকশিত হোক জীবে ও অন্যত্র।

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৪

বন্যলোচন বলেছেন: সতত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.