নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অলস, আমাকে ঘুম থেকে ডাকবেন না

বন্যলোচন

অনর্থক জীবন ধারণ, বিতৃষ্ণার মূল কারণ।

বন্যলোচন › বিস্তারিত পোস্টঃ

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ও চৌর্যবৃত্তির ইতিবৃত্ত

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৩২

চোর দেখেছেন কখনো? চোর?

নিশ্চয়ই দেখেছেন। একটু ভায়োলেন্ট টাইপের মানুষ হলে নিশ্চয়ই গণপিটুনির সময় ফাঁকফোকরে দুতিন বার লাথ মেরেও এসেছেন। এই চোরের মুখে চুরি করার সময় ইতিউতি তাকানোর একপ্রকার "চোট্টা লুক" থাকে, আমি নিশ্চিত, তার সাথেও সবাই পরিচিত।

আচ্ছা, যাক। এবার বলেন, চোরদের গণসম্মেলন দেখেছেন? শত শত চোর একত্রে চুরি করছে - এরকম দেখেছেন আজ অবধি?

না দেখলে আপনার হাতে সুবর্ণ সুযোগ। এইচএসসি পরীক্ষা হচ্ছে জানেন তো? পরীক্ষার ঘন্টাখানেক আগে হাতের কাছে কোন কলেজ থাকলে তার সামনে চলে যান। দেখবেন শত শত কচি চোর হাতে বই-মোবাইল নিয়ে চুরি করছে। তাঁদের মাথার ওপরে ছাতা ধরে উদ্বিগ্নমুখে দাঁড়িয়ে আছেন অভিভাবক চোরেরা; এবং চৌর্যবৃত্তি-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করছেন তারা। এবং সবার মুখে সেই "চোট্টা লুক"। আমার আশঙ্কা, কেউ পুলিশ পুলিশ বলে হঠাৎ চিৎকার করে উঠলে এরা সত্যিই হয়তো জান নিয়ে অলিম্পিক লেভেলের দৌড় লাগাবেন।

স্বভাবতই, তাঁদের সবারই চুরির পেছনে যুক্তি আছে। সব চোরের যেমন থাকে।

#খারাপ ছাত্রের যুক্তি- সারা বছর পড়ি নাই, এখন গোল্ডেনের চান্স পাইসি, আমি কি পাগল নাকি যে ছাড়মু?
#মাঝারি ছাত্রের যুক্তি- সারা বছর মোটামুটি পড়ছি, এখন গোল্ডেন পাওয়ার গ্যারান্টি আসছে, মিস করমু ক্যান?
#ভাল ছাত্রের যুক্তি- সারা বছর পড়ছি, এখন রিস্ক নিমু ক্যান?
#অভিভাবকের যুক্তি- সব বাচ্চারা প্রশ্ন পাচ্ছে, নব্বুই ভাগ নম্বর পাচ্ছে, আমার বাচ্চাটা পিছিয়ে পড়বে কেন?

আমি স্বয়ং এই অসংখ্য চোরদের মাঝে একজন। এটা নাটকীয়তা করে লেখা নয়, স্রেফ ফ্যাক্ট। আমি মানসিকভাবে এইটুকু শক্ত হতে পারি নি যে হাতের কাছে বারংবার প্রশ্ন পেয়ে চোখ বুজে চলে আসব।

প্রথমবার আসা যায়।
দ্বিতীয়বারও।
কিন্তু তারপরেও যদি প্রশ্ন ফাঁস হতে থাকে, তবে এড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে।

এই যে চোর বলছি নিজেকে, এটা কি আপনাদের ধারণা খুব আনন্দ নিয়ে বলছি? বুকে দাগ কেটে বলতে হচ্ছে কথাটা। আমাদের পরিবার আমাদের চুরি করা শেখায় নি, শিখিয়েছে দায়িত্ববানেরা, শিখিয়েছে আমাদের শিক্ষাবোর্ড, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। শিখিয়েছেন আপনারা।

প্রশ্ন ফাঁস হলে, আমরা প্রথমে সেটা কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করেছি, ছবি সহ মেইল করা হয়েছে বোর্ডের কাছে, কয়েকজন শিক্ষাবোর্ডের সদস্যের কাছে, বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের কাছে। হ্যাঁ, আমরা, ছাত্ররা করেছি। কিসসু হয় নি। পরীক্ষা বাতিল হয় নি।

আমরা শিখেছি, অতএব, পরীক্ষা মাত্রই টাকা দিয়ে প্রশ্ন কেনাবেচার একটি উপলক্ষ্য।
অতএব, পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাবার আশায় বসে থাকা আদর্শ ছাত্রের কর্তব্য।
অতএব, সারাবছর পড়ালেখা করে কি লাভ?

আপনারা নতুন প্রজন্মের নৈতিক অবক্ষয় নিয়ে কথা বলবেন, আপনারা বলবেন এদের কোন বিবেকবোধ নেই, এরা হোপলেস, হোপলেস জেনারেশন।

আপনারা বলবেন না সেই কর্মকর্তার কথা, যিনি ঘন্টাখানেক আগে প্রশ্ন খোলার সময় এক ফাঁকে মোবাইলে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন বুভুক্ষু ছাত্র তথা ক্লায়েন্টের কাছে, আর কামিয়ে নিচ্ছেন টাকা।

আপনারা বলবেন না সেই শিক্ষকের কথা, যিনি দশ মিনিটে সব নৈর্ব্যক্তিক দাগাতে না পারলে নাক সিটকে বলছেন, সমস্যা কি? মেসেঞ্জার হোয়াটসঅ্যাপ নাই?

এখনো পর্যন্ত সাতটা পরীক্ষার পাঁচটাতেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস করে যেসব "লিংক", তারা বলছে পরের ছ'টার প্রশ্নও ফাঁস হবে। গত বছর যেমনটা হয়েছিল।

আমরা মরে যাচ্ছি এভাবে। আমরা টাকা দিয়ে পরীক্ষা পাশ করব, টাকা দিয়ে ভার্সিটিতে ঢুকব, টাকা দিয়ে পদ নেব। তারপর বাকি জীবন সেই টাকা উসুল করার জন্যে মানুষ ঠকিয়ে যাব। আমাদের কোন প্যাশন থাকবে না, পরিশ্রম আমাদের সইবে না, নীতিকথা শুনে আমরা চোখ বুজে হাসব, সোজা মানুষ দেখলে মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাব। এইটুকু বুঝতে জ্যোতিষ হওয়া লাগে না।

প্লিজ, একটা কিছু করুন। বন্ধ করুন এই প্রশ্ন ফাঁস।

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, নইলে পদত্যাগ করুন আপনি আর আপনার পুরো মন্ত্রণালয়। আপনারা ব্যর্থ। শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড করে তুলতে পারেন নি। মেরুদন্ড ভেঙ্গে গুঁড়ো করে নাকে টেনে নিয়ে টাল হয়ে পড়ে আছেন। অন্ততঃ দায় স্বীকার করুন। কিছু একটা পদক্ষেপ নিন।

নইলে, এই জাতির শ্রেষ্ঠতম সম্পদ, নিকৃষ্টতম বোঝায় পরিণত হবার খুব বেশি দিন বাকি নেই আর।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৪১

মোল্লা রিফাত রায়হান বলেছেন: সুন্দর ছিল! আমরা সবাই চোর চোরের রাজত্বে!

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৪২

বন্যলোচন বলেছেন: সুন্দর হৈলেও কি লাভ! কোন প্রতিকার নাই। আমি হতাশ।

২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৩৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


নাহিদ সাহেবকে আরো বুদ্ধিমান হতে হবে।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:০৩

বন্যলোচন বলেছেন: বুদ্ধির মান উপরে না উঠালে মান থাকবে না যে!

৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: নাহিদ সাহেব কৈছে, "প্রশ্নফাঁস ঠেকাবো কীভাবে?"

তো কী আর করা!

মুদ্রাস্ফীতি, মেধাস্ফীতি উদরে জমা হতে হতে কবে যে ফাটায় দিবে তাই ভাবি বসে!

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫২

বন্যলোচন বলেছেন: বুক ভরে বাতাস টেনে নিয়ে তারপর বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া -- এইটাই আমার ভবিষ্যৎ প্লান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.