![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
*ছোট্ট অন্তু (#১-#৩)
#৪
আব্বু খবরের কাগজ পড়ছেন মনোযোগ দিয়ে, চোখে চশমা আঁটা। অন্তু হাঁটতে হাঁটতে ঘরে এলো, তারপর আব্বুর প্যান্ট ধরে টানতে লাগল।
''আব্বু আব্বু, মুক্তচিন্তা আর চিন্তার স্বাধীনতা কি?''
আব্বু ব্যাখ্যা দিলেন, 'এর মানে হচ্ছে মানুষের যেকোনো চিন্তা, যেকোনো অনুভূতি স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারা। আমাদের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এইটা।'
অন্তু বলল, 'তাঁর মানে তুমি নিজে যেসকল আইডিয়া বা চিন্তাকে রুচিহীন, বিকৃত মনে করো, সেইগুলাকেও সেন্সর করা সমর্থন করো না? সব প্রকাশিত হতে পারবে?'
আব্বু মাথা নাড়লেন, ' ঠিক তাই। আসলে স্বাধীনতার ভাল-খারাপ দুই দিক-ই তো থাকবে, বাবা। আমাদের ভাল-মন্দ মিলেই চলতে হবে।'
অন্তু হাত নেড়ে কথাটা সরিয়ে দিল, 'বুঝলাম বুঝলাম, কিন্তু আসল কথায় আসো। তার মানে- ওই রুচিহীন, বিকৃত চিন্তা প্রকাশের ফলে যদি আমার প্রভাবিত হবার ভালরকম সম্ভাবনা থাকে, তাও তুমি মানা করবে না?'
আব্বু এবার ভুরূ কুঁচকে ফেলেন, তিনি তাড়াতাড়ি বললেন, 'আসলে তাঁর আগে তোমাকে একজন দায়িত্বশীল শিক্ষিত মানুষ হওয়া লাগবে, যে কি না সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় সকল আঙ্গিক বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত নিবে কোন চিন্তা বিকৃত কি না; সেটার সংস্পর্শে যাওয়া বা তা প্রকাশ করা উচিত হবে কি না। তোমার তো বয়স হয় নাই বাবা...'
অন্তুর তখন আব্বুর কথায় কান দেওয়ার সময় নেই, ও হোহ হো করে হাসছে আর হাঁটা দিয়েছে বাইরের দিকে, আর চিৎকার করে গাইছে, 'মুক্তচিন্তা জিন্দাবাদ! ফ্রি থিঙ্কারস জিন্দাবাদ!!'
#৫
অন্তুর আজকে মন খারাপ। স্কুলে আজকে মিস ওকে সবার সামনে কি ঝাড়িটাই না দিল! মান-সম্মান একেবারে ড্রেনে ভেসে গেছে সব। তারপর আবার আসার সময় একগাদা বাড়ির কাজ। উফফ!
আম্মু ঘরে এলেন তখন, 'অন্তু, বাড়ির কাজ করেছো?'
অন্তু গাল ফোলাল, 'আমি শিশু শ্রমে বিশ্বাসী না।'
আম্মু বই-খাতা বের করলেন, 'দেখি, আসো শেষ করো বাড়ির কাজ। বেশিক্ষণ লাগবে না।'
-'বেশিক্ষণ লাগবে না?? দশ দশটা মিনিট আমি অঙ্ক করেছি, আম্মু! দঅঅঅশ মিনিট! আমার জীবনের দশটা অমূল্য মিনিট শেষ, নষ্ট করেছি এই বিরক্তিকর কাজে!'
আম্মু কথায় আমল না দিয়ে অন্তুর বাড়ির কাজ দেখছিলেন, একটা জায়গায় আঙুল দিয়ে থামলেন, 'এখানে দেখ। সাত যোগ পাঁচ সমান কত, এটার উত্তর লিখেছ চার!? তুমি তো ভাল করেই জানো উত্তর চার না।'
- 'অঙ্ক কি কাজে লাগে জীবনে?'
'পাঁচ আর সাত যোগ করলে যোগফল কি পাঁচ বা সাতের চেয়ে ছোট হবে কোনদিন? বলো?'
-'হবে! হান্ড্রেড পারসেন্ট হবে! স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক আমি, আমার কি স্বাধীনভাবে অঙ্ক করার কোন অধিকার নাই?'
আম্মু ওর হাতে পেন্সিল ধরিয়ে দিয়ে উঠে পড়লেন, 'বাড়ির কাজ শেষ করো বাবা। বিশ মিনিটে শেষ করলে তারপর চকোলেট ড্রিঙ্ক বানিয়ে দেব তোমাকে, আচ্ছা? লক্ষ্মী আব্বু। পড়ো।'
অন্তু গরগর করতে করতে দ্রুত হাতে অঙ্ক করতে লাগল, 'ঘুষ! ঘুষ দেয় আবার আমাকে! কোন নৈতিকতা নাই, কি হবে এই দেশের!'
#৬
অন্তু আজকে সারাদিন খেটেছে। আম্মুর চোখ এড়িয়ে একটা কার্ডবোর্ডের শিট ঘরে এনেছে ও, আব্বুর ড্রয়ার থেকে নিয়েছে কাঁচি। তারপর খচখচ খচখচ, খচখচ খচখচ!
ঘেউ অনেকক্ষণ ধরে দেখছিল ওকে, এখন জিজ্ঞেস করল, 'কি করছো?'
অন্তুর সৃষ্টিকর্ম ততক্ষণে শেষ। ও জিনিসটা হাতে ধরে বলল, 'দ্যাখো তো কেমন হয়েছে ঘেউ!'
ঘেউ অলস চোখে দেখল। কার্ডবোর্ডের শিট, তাঁর মাঝে চারকোণা একটা গর্ত। অন্তু এটাকে মুখের সামনে ধরে রেখে দাঁত বের করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
'কি এটা?'
অন্তু হাসিমুখে বলল, 'এইটা টিভি চ্যানেল! আমার টিভি চ্যানেল! দারুণ হয়েছে না?'
ঘেউ কিছু না বলে হাই তুলল। অন্তুর তাতে উৎসাহের কোন ঘাটতি দেখা গেল না, ও বর্ণনা দিতে লাগল, 'এই চ্যানেল কখনো বন্ধ হয় না, চব্বিশ ঘণ্টা চলে! এখানে গান হয়, বিতর্ক হয়, নাটক-সিরিয়াল হয়, দেখবে?' বলে উত্তরের অপেক্ষা করল না, গম্ভীর কণ্ঠে বলতে লাগল, 'ইওর অনার, পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে আমার ক্লায়েন্ট নির্দোষ। তাঁকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে, ফাঁসিয়েছে আর কেউ নয়, আমার বিরোধী উকিল!'
ঘেউ মুখ বাঁকাল। অন্তু ওকে গুরুত্ব না দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কোর্টে লড়ল, এবং প্রমাণ করে ছাড়ল যে, হ্যাঁ, সত্যিই বিরোধী উকিল ওর ক্লায়েন্ট (ঘেউ) এর পকেটে (থাবার ভেতরে) রক্তমাখা ছুরি ( লাল ক্রেওনে রঙ করা গাছের ভাঙ্গা ডাল) গুঁজে দিয়েছে। নাটকের এ পর্যায়ে পর্যায়ে ঘেউ খেপে গিয়ে ওকে ধাওয়া দেওয়ায় বিচারকের রায় প্রকাশ সম্ভব হয় নি। তবে অন্তু নিশ্চিত, ও-ই জিততো কেসটা।
অন্তু কিছুক্ষণ উঠোন দিয়ে ঘুরে ফিরে ঠিক করল আম্মুর কাছে যাবে। গিয়ে উজ্জ্বল মুখে বলতে লাগল, ''আম্মু আম্মু, টিভি বানিয়েছি!
আম্মু রান্না করছিলেন, কিচেন থেকে মুখ বের করলেন, 'কই?'
অন্তু কার্ডবোর্ড দেখাল, 'এইযে! দ্যাখো আমি রেস দেই, গাড়ির রেস, ভ্রুমমমমমম...'
আম্মু খুশি হলেন দেখে, অন্তুর চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললেন, 'যাও আব্বুকে দ্যাখাও।'
আব্বু টিভি দেখে খুশি হলেন, তবে অভিযোগ করলেন যে গাড়ির ভ্রুম ভ্রুম শুনে তাঁর মাথা ধরে যাচ্ছে। তিনি অন্তুর কান ঘুরিয়ে চ্যানেল চেঞ্জ করে দিলেন। দুঃখের ব্যাপার, পরের সবগুলো চ্যানেলে ফকিরা বাউল গান হচ্ছিল। প্রথম বাইশ বার অন্তুর চিকন গলায় 'তোমার দিল কিইই দয়াআআআআ হয় নাআআআআআ' বেশ শান্তভাবেই সহ্য করলেন আব্বু; কিন্তু তেইশ বারের বেলায় তাঁর ধৈর্যের বাঁধে টিএনটি বিস্ফোরণ ঘটল।
'বাপ মাফ চাই। কি চাস তুই? তোর টিভি মিউট কর।'
অন্তু জানাল- এক্সপার্টরা বলেছেন, আইসক্রিম খেলে টিভি মিউট হয়।
আব্বু বিদ্যুৎবেগে পকেট থেকে টাকা বের করে ওর হাতে দিলেন, 'যাও বাবা। বাইরে গিয়ে খেলো, আইসক্রিম খাও, গান গাও। যা ইচ্ছা করো, কিন্তু বাইরে গিয়ে করো।'
পাঁচ মিনিট পরে কাছের কনফেকশনারি দোকানে একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল- একটা ন'দশ বছরের ছেলে হেঁড়ে গলায় প্রাণ খুলে খাঁচার ভিতর অঅচিন পাখি ক্যাম্নেএএএ আসে যায় গাইছে, আর ফাঁকে ফাঁকে হাতে ধরা আইসক্রিমে তৃপ্ত মুখে চাটন দিচ্ছে।
০৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩২
বন্যলোচন বলেছেন: সাথে থাকার জন্যে কৃতজ্ঞতা আপ্নাকে জানাই!
২| ০৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:৩৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
মুক্তচিন্তার ডেফিনেশন ভুল।
০৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:১৩
বন্যলোচন বলেছেন: মানলাম্না।
৩| ০৭ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৭:১৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
"লেখক বলেছেন: মানলাম্না। "
-তালগাছ আপনার, লিখতে থাকেন!
০৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:১৮
বন্যলোচন বলেছেন: এতক্ষণে বুঝলেন
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:১৩
হাসান মাহবুব বলেছেন: হাহা! সেইরকম একটা ক্যারেক্টার।