![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ এগারো শেষ। আমার সমস্যা গুলি নিম্নরূপঃ
১. পড়ালেখা করিনি এই কদিন। পরীক্ষা আসছে। আমার ক্রমশঃ...
নাহ। ভাবছিলাম ছোটখাটো ব্যাপারগুলি নিয়ে লিখব। প্রস্তুতি নিইনি, পরীক্ষায় বসছি তবু, হয়তো জীবন ধ্বংস(!) করে দিচ্ছি খামখেয়ালি করে - এইসব। কিন্তু আসলে এসব কিছুই না। আমি মরে যাচ্ছি ভেতরে ভেতরে - এটাই হচ্ছে মূল কথা।
খুব নাটুকে, গা-জ্বালানো রকম ক্লিশে শোনাচ্ছে কথাটা।
কিন্তু ক্লিশে আসে তো বাস্তবের উদাহরণ থেকেই, নাকি? আমি ভুলে যেতে চেয়েছি শেষদিন গুলির সাথে সম্পর্কিত সকল খুঁটিনাটি বাস্তব এবং স্মৃতি, এবং কিছুটা সফল যে হইনি তা নয়। মৃত্যুদিবস ভুলে গেছি যেমন। এইমাত্র মনে করার চেষ্টা করলাম, ধোঁয়াশা মনে হচ্ছে। ঊনত্রিশ ডিসেম্বর, নাকি তিরিশ? দুই হাজার চোদ্দ, নাকি পনেরো?
চোদ্দ। চোদ্দর ডিসেম্বরে। পনেরো সালটা গ্যাছে ঘুমের ঘোরে। আমার সহদোরেরা কাজে ডুবে ভুলতে চেয়েছে হতাশা। আমি পারিনি। কি করেছি পনেরোতে? শুধু মনে আছে কলেজে অনেক ঝামেলা করে পুনঃভরতি হলাম। ক্লাস করতে গেলাম, সিলেবাস আলাদা। ইংরিজির এক সিনিয়র সার বিরক্তমুখে বললেন - তুমি ক্লাস করে কি করবে? টেস্ট পাস করে শুধু ইন্টার পরীক্ষাটা দাওগে। জ্বালিও না।
এটা কেবল একটা দিক, একমাত্র নয়। সাররা অনেক সাহায্য করেছেন। বাংলা সার ও ম্যাডাম দুজন বিশেষতঃ। ম্যাডাম আমাকে ছেলে বানিয়ে নিলেন। তিনি না থাকলে আবার ভরতিই হতে পারতাম না। এখনো কল দেন, খবর নেন। সার ছিলেন ক্লাস টিচার, পরীক্ষায় বা ক্লাসে সবসময় নজরে রাখতেন। তাকে কম কষ্ট দিই নি। ক্লাসে যাই নি, পরীক্ষা মিস করেছি, তিনি সব সামাল দিয়েছেন।
টেস্ট দিলাম। হলে এক সার এসে বললেন - কি, পাস করতে পারবে? আমি মাথা নাড়লাম, 'জি সার, পারবো।' এই প্রকার প্রশ্ন শুনে কিছুটা বিষাদ জাগা উচিত ছিল। আমার আত্মীয়রা এখন যেরকম বিষাদ প্রকাশ করেন - 'ইস, পোলাটা ভালো ছাত্র ছিল, আর কি হইছে এখন দেখো।' কিছুই মনে হলো না। বরঞ্চ মাথার ভেতরে কেউ বলল, এটাই কি স্বাভাবিক নয়?
এবং স্বাভাবিকতার ধারা বজায় রেখে চলেছি তারপর থেকে। টেস্টের পর পরীক্ষা, পরীক্ষার পর...ঘোরে কেটেছে সবকিছু। কিভাবে প্লাস পেলাম বলতে পারবো না। প্রশ্ন ফাঁসের বিশাল অবদান আছে নিশ্চয়ই। আমি বলতে পারবো না যে চোদ্দ-র আগস্টের পর থেকে একবারও বই ভালমত আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। এখন ষোলোর অক্টোবর চলছে। দুই বছর দুই মাস। কিছুই টানে না। না ক্যারিয়ার, না চাকরি, না লেখাপড়া।
সেই আগস্টে ইচ্ছে ছিল বুয়েটে ঢোকার। এখন ইচ্ছে নেই কোনখানেই যাবার। যথেষ্ট ইচ্ছে না থাকার কারণে প্রয়োজনীয় মেধাও নেই। তবু কিছু মনে হচ্ছে না। আমি কি জড়বস্তু হয়ে যাচ্ছি??
সারাদিন ঘরে বসে থাকি। মনে হয় না একবার পড়ি, বা কিছু করি, বা বাইরে যাই। শুই, ঘুমাই, জাগি। দুঃস্বপ্ন দেখি। কোনটা স্বপ্ন কোনটা বাস্তব ভুলে যাই। নিজেকে উপদেশ দেই। মাথা নত করে উপদেশ শুনি। তারপর আবার ঘুমাই।
ব্যায়াম করলাম কদিন। জিমে যাব, সকালে উঠে দৌড়াবো এই সেই আরও কত কিছু। মাসখানেক পর আবার যে কে সেই। ঘুরাঘুরি করলাম এখানে ওখানে, ভ্রমণে নাকি মন পরিষ্কার হয়। সব জায়গা একই লাগে। বোন বুদ্ধি দিল - প্রেম কর। রোবট হয়ে যাচ্ছিস। ভালো কথা। ভেবে দেখলাম। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা এতো ফাঁপা এবং ছেলেমানুষি মনে হল যে, সম্ভবতঃ জীবনে আমার আর কখনো প্রেম তো দূর, ভালো লাগাও বেশিদূর এগোবে না। প্রেম কনসেপ্ট-টার ওপরে বিরক্তি এসে গেলে বুঝতাম, সেটা মানা যেত, কিন্তু আমার ভক্তি এসে গেছে। এখন মনে হয়, যাকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি চাইব, ভালবাসি তাকেই। সময় দেব তাকেই। স্রেফ 'টাইম পাস' বা 'কথা বলার মানুষ' হিসেবে প্রেম করব না। সমস্যা এ জায়গায়। এমন কেউ আসে নি যাকে নিয়ে এরকম তুমুল ভালো লাগা জন্মে। এবং, আমার দৃঢ় সন্দেহ আছে আদৌ এমনটা হবে কি না কখনো।
আমি শুয়ে শুয়ে গান শুনি সঞ্জীবের, সুমনের, রেডিওহেডের, অলম্যান ব্রাদার্সের। দুঃস্বপ্ন দেখি, জেগে উঠে বুঝতে পারি না কোনটা বেশি ভয়ানক। বই পড়ি গল্পের, লিখি আবর্জনার। মনে হয়, এইভাবে আর দশ বছর বেঁচে মরে যাব; যত পারি বই আর গান আর ছবি আছে দুনিয়ার চেখে যাব। তেতো কফি খাই, লাল চোখে প্রমাণ করার চেষ্টা করি আমার মতন সুখি দুনিয়ায় কম আছে। এবং কথা সত্যি। মাথার ওপর ছাদ, হাতে বই, যাবতীয় প্রয়োজনীয় উপাদান, দামি মোবাইল, নেট, মোটা মাসোহারা - আর কি চাইতে পারি আমি? শরীরের একটা পেশিও না নাড়িয়ে ভোগ করে যাচ্ছি দুনিয়া। রাজার হালে থাকি। সম্রাটের হালে খাই।
তবু জীবন অনর্থক লাগে। এবং, সবচে অস্বস্তিকর ব্যাপার হচ্ছে, আমি জানি এই সমস্যার সমাধান কি। কাজ। কাজে নিজেকে জড়িয়ে নিলে ভুলে থাকা যায়। তখন আমার আসগর ভাইয়ের কথা মনে পড়ে। আমি গান গাই-
আসগর ভাই, ও আসগর ভাই
তুলনা নাই, আপনার তুলনা নাই।।
আসগর ভাই হাটেন যখন, স্যুট টাই প্যান্ট দারুণ রকম, স্মার্ট কায়দায় চলেন-ফেরেন-খান।
আমরা সবাই তাকিয়ে থাকি, আসগর ভাই কত্ত লাকি, আসগর ভাই মনে ঈর্ষা জাগান।
ভাইয়ের দুই-তিনটে গাড়ি, ভাবিকে দেন কিনে বাড়ি, বন্ধুরা গায় তাঁর গুণগান।
আসগর ভাই, ও আসগর ভাই
তুলনা নাই, আপনার তুলনা নাই।।
আসগর ভাইয়ের একটা ছেলে, ভালো হয় আরেকটা হলে, ভাবি নাকি মেয়ে চান।
ছেলেটা দুষ্টুমি করে, বাপকে পেলেই ঘোড়ায় চড়ে, তিনি টগবগে ঘোড়া হয়ে যান।
তিনজন তারা ভীষণ সুখি, আমরা দেখি মেরে উঁকি, আসগর ভাই দেখে আমোদ পান।
আসগর ভাই, ও আসগর ভাই
তুলনা নাই, আপনার তুলনা নাই।।
আসগর ভাই কত সুখি
আসগর ভাই কত ভালো
আসগর ভাই আড্ডার প্রাণ।
তাই একদিন তিনি ঘরে ফিরে, পিস্তলের নল মাথায় ধরে, ট্রিগার টিপে বেঁচে যান।।
আসগর ভাই, ও আসগর ভাই,
তুলনা নাই।
আপনার তুলনা নাই।।
১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৯
বন্যলোচন বলেছেন: হা হা তাই নাকি!
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:২৫
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
পুরোই দার্শনিক দার্শনিক ভাব আছে লেখাটায়।