নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলো ও আঁধার.....

আলো ও আঁধার....আমি ই..............

পরিনীতি

আলো ও অন্ধকার, আমি ই.....

পরিনীতি › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাহার সমীপে (পর্ব ৬)

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৯

মেঘা চুপ করে নদীর দিকে তাকিয়ে বসে রইলো। অয়নও নির্বাক। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো।

“সন্ধ্যার আকাশটা দেখতে অনেক সুন্দর তাই না ? “ জিজ্ঞেস করে অয়ন।

“হ্যাঁ” জবাব দেয় মেঘা।

“না চাহিলে যারে পাওয়…তেয়াগিলে আসে হাতে…দিবসে সে ধন হারায়েছি, আমি পেয়েছি আধাঁর রাতে…”
নিচু গলায় গায় মেঘা।

“বাহ, তুমি তো অনেক চমৎকার গাও। তুমি গান গাও, বলোনি তো কখনও।” বলে অয়ন।

“অয়ন, বাসায় যাওয়া উচিৎ। চলো উঠি।“

“চলো” সে উঠে দাঁড়ায়। মেঘার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় সে। মেঘা অয়নের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়। গাড়িতে উঠে পড়ে তারা। অয়ন খুব ধীর গতীতে গাড়ি চালাতে থাকে।

“Are you okay? “ মেঘাকে প্রশ্ন করে সে

“হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। “ উত্তর দেয় মেঘা। চুপ করে থাকে তারা দুজনই
“আচ্ছা, আমরা কি কোনো Funeral এ যাচ্ছি ? “ বলে মেঘা

“What? না ! “

“Then why are we mourning ??? “ চিৎকার করে বলে মেঘা

“স্যরি, আমি ভুলেই গেছিলাম কার সাথে আছি আমি। ওকে ম্যাডাম, আর নীরবতা না।“ অয়ন হাসতে শুরু করে।
হাসতে হাসতে মজা করতে করতে তারা বাসায় চলে আসে। মেঘা গাড়ি থেকে বের হয়।

“Okay অয়ন, thanks a lot এতো সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে যাবার জন্যে।“ হাসিমুখে বলে মেঘা।

“Are you okay ?” মেঘার দিকে তাকিয়ে থাকে অয়ন।

“Absolutely। আমি একটু ক্লান্ত। পরে কথা হবে। “ মেঘা লিফটের দিকে চলে যায়।

রাত ১২টার বেশি বেজে গেলো, কিন্তু অয়নের কোনো ফোন আসেনি। মেঘা একটু চিন্তিত হয়ে যায়। কখনও এমনটা হয়নি অয়ন মেঘার সাথে রাতে কথা না বলে ঘুমিয়েছে। হঠাৎ করে কি হলো ছেলেটার। সে নিজেই অয়নকে ফোন করলো।

“হুম, হ্যালো”

“ কি ব্যাপার আজ ফোন করলে না যে ? “ প্রশ্ন করে মেঘা।

“স্যরি, একটু ব্যাস্ত আছি। হসপিটালে যাওয়া হয়নি, অনেক কাজ পেন্ডিং ছিলো। এখনই ফোন করতাম তোমাকে। “ বলে অয়ন

“সত্যি বলছো ? শুধু কি এটাই কারন ছিলো ফোন না করার ?

“পরী, আর কি কারন থাকতে পারে তোমাকে ফোন না করার ? অয়ন বলে

“আচ্ছা, একটা গান গেয়ে শোনাওনা প্লিজ। অয়নকে অনুরোধ করে বলে মেঘা।

“কি গান গাবো ? তাও আবার এখন ? “

“সবসময় তো এই সময়েই গান শোনাও, আজ নিজ থেকে শুনতে চাইলাম বলে এই ভাব ! যাও শুনাতে হবে না। “

“ আরে রাগ করে না। আচ্ছা কি গান শুনতে চাও বলো। “

“ এক কাজ করো তো, গীটারটা নিয়ে বারান্দায় আসো, জলদি। “ বলে সে বারান্দায় চলে যায়।

অয়ন তার গীটারে সুর তোলে। মেঘা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাবে, খুব লাকি হবে সেই মেয়েটা যাকে আয়ন ভালোবাসবে। খুব ভালো একটা ছেলে অয়ন।

“ কি ব্যপার কোথায় হারিয়ে গেলে?”

“ না কোথাও না” বলে মেঘা

“আচ্ছা মেঘা, ধরো কেউ তোমাকে অনেক ভালোবাসে, তোমাকে অনেক হ্যাপি রাখতে চায়, তোমার সাথে, তোমার পাশে থাকতে চায়, তুমি কি তাকেও এক্সেপ্ট করবে না ?”

“আমি জানিনা অয়ন। আমি জানিনা আমাকে কেউ এভাবে ভালোবাসে অথবা ভালোবাসবে কিনা। আমি কিছু জানিনা, আমি কিছু জানতে চাইও না” বিচলিত হয়ে যায় মেঘা

“শান্ত হও। এতো উত্তেজনার আবশ্যকতা নেই। আচ্ছা তুমি যাও, ঘুমাও। আমার কিছু কাজ বাকি আছে, ওগুলো সেশ করে আমিও শুয়ে পরবো। কাল খুব সকালে হসপিটালে যেতে হবে। গুডনাইট।” বলে অয়ন চলে গেলো

অয়ন মেঘা ডেকেছে, পরী না। ব্যপারটা মেঘার খটকালো। কোথাও কিছু তো হচ্ছে যা তাকে বঝতে দেয় হচ্ছে না, বা সে বুঝতে পারছে না। অয়নের আচরণ স্বাভাবিক না। এসব ভাবতে ভাবতে সে শুয়ে পরলো।
শুক্রবার সকাল, মেঘার ছুটি।সকালে উঠে আজ তার কিছু ভালো লাগছে না। ঘুম থেকে উঠেই সে অয়নকে ফোন করলো। অয়ন এর ফোন বন্ধ! সে ফ্রেশ হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে চলে এলো। নাস্তার তেবিলে মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে সে অয়নকে মেসেজ পাঠাচ্ছিলো।

“ফোনটা হাত থেকে রাখো। breakfast and dinner time, family time.” কড়া কন্ঠে বলে মেঘার বাবা

“স্যরি বাবা” ফোন রেখে দেয় সে।

“অফিস কেমন চলছে?”

“ভালো বাবা, বেশ ভালো। তবে কাজের চাপ একটু বেশি” উত্তর দেয় মেঘা

“তা তো থাকবেই। you must learn controlling work pressure। স্মার্টলি ডিল করতে হবে সব প্রেসার। আমিও করি। eventually সবাই ই করে” উত্তর দেয় মেঘার বাবা

“হুম, ঠিক বলেছো” “আম্মু আমি রুমে যাচ্ছি। কফি পাঠাও” নাস্তার টেবিল ছেড়ে উঠে যায় সে। আজ সে সম্পূর্ণ নাস্তাও করেনি। তার মন ভালো নেই। রুমে এসে সে মমোকে ফোন করে।

“কিরে পাজি মেয়ে, এতোদিন পর বোন এর কথা মনে পরলো বুঝি?” রাগান্বিত কন্ঠে বলে মমো

“কেমন আছিস?” জিজ্ঞেস করে মেঘা

“কি হয়েছে রে তোর ? তোকে এতো আপসেট শোনাচ্ছে কেনো? মন খারাপ?”

“উহু, কিছুনা, তোর কথা বল। ভাইয়া কেমন আছে?”

“মেঘা, কি হয়েছে বলবি ?”

“এমনি। মনটা ভালোনা রে। বাদ দে।“

“অয়ন সাহেবের কি অবস্থা?” জিজ্ঞেস করে মমো

“ভালো আছে” ঠান্ডা কন্ঠে জবাব দেয় মেঘা।

“ভালো আছে? জাস্ট ভালো আছে ?”
চুপ করে থাকে মেঘা। কিন্তু তার নীরবতা অনেক কিছুই বলে দেয় যা মমোর বুঝতে বাকি থাকে না।

“কি হয়েছে অয়নের সাথে?”

“কিছুনা। ওর সাথে কি হবে আবার”

“দেখ, আমার সাথে মিথ্যা বলার কোনো দরকার নেই। কিছুতো একটা অবশ্যই হয়েছে। কিন্তু সেটা কি ?” জিজ্ঞেস করে মমো

“ও কিছু একটা লুকোচ্ছে আমার কাছ থেকে। আমি বুঝতে পারছি না। আর ও আমাকে সরাসরি কিছু বলছেও না। ওর এই আচরণটা একদমই স্বাভাবিক না। আমার ভালো লাগছে না অকে এভাবে দেখতে। আমি বুঝতে পারছি না কি করলে…” “ও বুঝতে দিচ্ছে না, নাকি তুই বুঝতে চাচ্ছিস না ?” মেঘা কে থামিয়ে দিয়ে বলে মমো।

“আমি বুঝতে চাচ্ছি না মানে ? অ আমার বন্ধু, কেনো আমি ওকে বুঝতে চাইবো না?” বিস্ময় ঘীরে ফেলে মেঘা কে

“শুধুই বন্ধু ? তোর মনে হয় ও শুধুই বন্ধু তোর? এর বেশি কিছু না ?”

“মমো, কি বলছিস এগুলো, বুঝে বলছিস?” অবাক হয়ে যায় মেঘা।

“আমার যা বোঝার অনেক আগেই আমি বুঝেছি। তুই বুঝতে চাচ্ছিস না। কেনো তা তুই ই ভালো জানিস। মেঘা, ফাহাদ ডাকছে। আমি এখন রাখি রে।আশা করি খুব দ্রুত বেটার ফিল করবি” বলে মমো ফোন রেখে দেয়।

মেঘা মনে মনে ভাবে ফাহাদ এর ডাকার কথা না মমো কে যখন সে জানে সে তার সাথে কথা বলছে। ফাহাদের বাহানা করে মমো ফোন রাখতে চেয়েছে। সে অয়নকে আর ফোন করেনি।
২ দিন পার হয়ে গেছে, অয়নের কোনো খোঁজ নেই। অয়নের সাথে মেঘার দেখা হচ্ছে না। সে মেঘাকে ফোন করে না। মেঘাও তাকে ফোন করেনা।
অফিস শেষে মেঘা বাসায় ফিরছিলো, পার্কিং এ অয়নের সাথে তার দেখা হয়, কিন্তু সে না দেখার ভান করে অয়নকে এড়িয়ে সোজা লিফটের দিকে চলে যায়। অয়ন তাকে দেখে ডাক দেয়।

“পরী…এই পরী”
মেঘা হেটে যেতে থাকে। “এই ডাকছি না আমি? কথা কানে যায়না নাকি? বলে অয়ন।

“Excuse me ! আপনি আমাকে বলছেন? স্যরি, এখানে পরী নামের কেউ নেই আপাতত। আর আপনি কে? আমি আপনাকে চিনিনা” বিরক্তির কন্ঠে বলে মেঘা।

“রাগ করে আছো আমার ওপর? স্যরি বাবা, আমি অনেক ব্যাস্ত ছিলাম এই কয়েকদিন। শ্বাস নেবারও সময় পাইনি। নাহলে এমনটা কি হতো? আমি কখনও আমার পরীর সাথে রাতে কথা না বলে ঘুমিয়েছি?” বিনয়ের সাথে বলে অয়ন

“আমি তো সেটাই জানতে চাচ্ছি অয়ন। কি হয়েছে তোমার? আমি খেয়াল করেছি বেশ কিছুদিন যাবৎ। যেই অয়ন আমাকে সারাদিন মিনিটে মিনিটে ফোন করতো সে অয়ন হঠাৎ করে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। কেনো? এমন কি হয়ে গেলো? বলো আমাকে। কি সেই পরিবর্তন, যা আমি খেয়াল করতে পারছি, কিন্তু তুমি স্বীকার করতে চাইছো না। বলো আমাকে” জিজ্ঞেস করে মেঘা।

“ওকে বাবা স্যরি। আমি আপনার অপরাধী। এবার আপনিই বলেন কি শ্বাস্তি হওয়া উচিৎ আমার। আমি তাই মাথা পেতে নেবো”

“ব্যপারটা শ্বাস্তির না, অপরাধেরও না। তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছো ভিষন” বলে মেঘা

“চলো তো আমার সাথে”

“আমি এখন কোথাও যেতে পারবোনা”

“আরে চলো তো” বলে মেঘার হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে নিয়ে আসে।

তারা একটি রেস্টুরেন্টে আসে। মেঘা বেশ অবাক হয়। অয়ন গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। সে মেঘার সিটের দরজা খুলে দেয়।

“একটু বেশি সিনেমাটিক হয়ে যাচ্ছে না এগুলো?”

“Madam, please…আপনার সেবার সুযোগ দিন” বলে অয়ন

“সেবার সুযোগ? সিরিয়াসলি? অয়ন এ কোন অবতার তোমার?" হেসে ফেলে মেঘা। গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে সে।রেস্টুরেন্টের গেটের সামনে মেঘাকে আটকায় অয়ন।

“এখানে একটু দাড়াও। আমি না আসা পর্যন্ত ভেতরে আসবেনা কিন্তু” বলে অয়ন

“মানে? তুমি না আসা পর্যন্ত আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো ?”

“প্লিজ, একটু দাড়াও, আমি আসছি।“ বলে ভেতরে চলে যায় অয়ন।

মেঘা দাঁড়িয়ে থাকে। নিজেক বড় অসহায় মনে হয় তার। সে ভাবতে থাকে অয়ন কেনো তাকে এভাবে বাইরে দাড় করিয়ে রাখে। মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে থাকে সে।
৫ মিনিট পর অয়ন আসে। মেঘার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে সে বলে “এসো”

মেঘা অয়নের হাতে হাত রেখে রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢোকে। ভেতরে গিয়ে মেঘা খানিকটা অবাক হয়। এতো বড় রেস্টুরেন্ট অথচ, মানুষ কতো কম। একটু ভেতরের দিকে গেলো তারা। মেঘা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অয়নের দিকে। অয়ন তাকে বলে “ম্যাডাম…এসব কিছু আপনার জন্যে…"



চলবে.....












মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.