![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ব লেখকের। এখানকার কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপানো বা অনুলিপি করা অগ্রহণযোগ্য। সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © হারুন আল নাসিফ [email protected] [email protected]
আমি এক সামান্য খরগোশ। নামগোত্রহীন।
এই পাহাড়ের ঢালে সবুজ ঝোপের ভেতর
লতা-পাতা ঢাকা এক ছোট্ট গর্তে অামার জন্ম।
পাহাড়ের খাড়া ঢাল, চূড়া, চড়াই-উৎরাই,
গর্ত, শৈলশিরা এসবের মাঝেই আমার বেড়ে ওঠা।
ক্ষীপ্রতা আমার সহজাত।
মায়ের পেটে থাকতেই ক্ষীপ্রতার দুরন্ত বীজ
উপ্ত হয়ে গিয়েছিল আমার রক্তে।
বিপদে সুরক্ষার সুবর্ণমন্ত্রও।
আমাকে জন্ম দেয়ার আগ মুহূর্তেও
দুরন্ত গতিতে লাফিয়ে বিপদ পেরোতে হয়েছে মাকে।
গতিই হলো খরগোশের মতো নিরীহ
প্রাণীর একমাত্র হাতিয়ার, শ্বাপদসংকুল বনে।
গতির গরিমা, অার ম্যাজিক
মায়ের গর্ভে থাকতেই টের পেয়েছি চমৎকার।
গতির বিদ্যুচ্চমক আর ঝিলিক
উপভোগও করেছি দারুণ!
তাই ক্ষীপ্রতা নিয়ে এক ধরনের অহংকার
আমার খরগোশ জন্মের মহার্ঘ্য উত্তরাধিকার।
একে নিশ্চয়ই দাম্ভিকতা বলা চলে না!
আমার গর্ব আমি খরগোশ-
যত ক্ষুদ্রই হই, গতিময় এক উচ্ছ্বল প্রাণ।
কিন্তু আমার এই গতিই অন্যদের ঈর্ষার কারণ..
অহংকার বা গর্ব করার মতো তেমন কিছুই
আমার নেই-
হরিণের পটল-চেরা চোখ কিংবা শাখাময় শিং,
জিরাফের সুদীর্ঘ গলা,বাঘ বা জেব্রার দর্শনীয় ডোরা,
সিংহের রাজসিক কেশর, ময়ুরীর বাহারী পেখম,
কোকিলের সুললিত কণ্ঠ, প্রজাপতির বর্ণিল পাখা,
এমনকি শেয়ালের মতো একটা
পশমদার ঝাঁকড়া লেজও নেই আমার।
চোখে পড়ার মতো আছে কেবল দুটি কান-
বিপদের আশঙ্কায় সবসময় খাড়া!
আর আছে ঈর্ষনীয় গতি,
যা অাসলে আমার আত্মরক্ষার কবচ।
কিন্তু আমার এই সামান্য গতিই
অন্যদের অসামান্য ঈর্ষার কারণ...
শৈশব থেকেই মা আমাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে।
ভাদ্রের অসহ্য গরমে লতাগুল্মের ছায়ায় বসে
মা আমাকে কত না গল্প শোনাতো!
জীবনের গল্প, যৌবনের গল্প,
মর্যাদা-মহত্বের, নীচতা-হীনতার গল্প।
ঈর্ষা, চক্রান্ত আর হিংসা ও হিংস্রতার
নানা রং-রূপ পটে আঁকা ছবির মতো
মেলে ধরতো আমার চোখের সামনে।
শুনতাম অবাক হয়ে।
গল্পের ফাঁকে আমাকে রূপকথা শোনার
বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করতেও ভুলতো না।
বলতো বাচা, গল্পের পেছনেও গল্প থাকে...
কখনো সেই আড়ালের গল্পই আসল!
তাই বহুরূপী রূপকথার ছলনায় ভোলো না।
ভুলিই বা কি করে?
কি করে বিশ্বাস করি এঁদো ডোবার এক
কচ্ছপের কাছে খরগোশের পরাজয়ের গল্প?
তাও আবার বেচারা খরগোশটাকে ঘুম পাড়িয়ে!
তা না হলে যে কচ্ছপের দুর্মর দূরাকাঙ্ক্ষা
স্বপ্নের সিঁড়িই ছুঁতে পারতো না এ জন্মে!
আসলেই কি বাজি ধরতে চেয়েছিল সে
পলকেই যে খরগোশ এঁকে দেয়
কচ্ছপের অনতিক্রম্য পথরেখা, তার সাথে?
আর বজ্জাত সেই খরগোশটা কি কারণে
গোটা খরগোশ জাতের কলঙ্ক হতে গলো?
স্বজাতির মান-মর্যাদা জন্মের মতো ভুলুন্টিত করলো?
মাঝে মাঝে ভাবি খুব কি বেকায়দা
দোটানায় পড়েছিল সে?
রাজি না হলে বলবে- কেমন আমার খরগোশ
একটা কচ্ছপের সাথেই কিনা
হেরে যাবার ভয়ে দৌড়ে রাজি হয় না!
আর জিতলে?
জিতলে তো লজ্জাই বরং বেশি হবে!
সবাই বলবে ছিঃ দেখো কাণ্ডখানা!
একটা খরগােশের বাচ্ছা হয়ে
এসেছে কচ্ছপের সঙ্গে জেতার বাহাদুরি ফলাতে!
হারলে হারই, এ বাজি জিতলেও যে হার!
সে তো হেরে গেছে বাজিতে রাজি হয়েই!
হা কপাল! একেই বুঝি বলে শাঁখের করাত!
ফাঁদে পড়ে ফেঁসে যাওয়ার কষ্ট কিম্বা
কচ্ছপের সঙ্গে দৌড়ে জেতার অগৌরবই কি তাকে
শেষ পর্যন্ত গাছের তলায় বিষণ্ন
ঘুমে ডুবিয়ে দিয়েছিল?
এলোমেলো দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে
আচমকা দিয়েছিল ভোঁ দৌড় সম্মুখে!
নাকি হার নিশ্চিত জেনেও
কেবল গন্তব্য ছুঁতে চেয়েছিল সে?
বলতে ছেয়েছিল গন্তব্যে পৌঁছাই আসল জিৎ?
নাকি বেচারা কচ্ছপকে জিতিয়ে দিতে
চোখ বুঁজে ঘুমের ভান করেছিল মাত্র?
ভেবেছিল খরগোশ তো খরগোশই
শুধু আজ একদিন না হয় কচ্ছপ জিতুক!
আর এভাবে কচ্ছপকে জিতিয়ে দিয়েই
জিতেছিল সেই কিংবদন্তী!
২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৫৯
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
কবিতার মত হলেও ছিল তো গল্পই। ভাল লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৪৬
প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার কবিতা। খুব ভালো লাগল।