![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!
(সামাজিক অবিচার, রাষ্ট্রীয় অনুপস্থিতি এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঠামোর মধ্যে সাধারণ মানুষ কীভাবে হারিয়ে যায়।)
মানুষ যখন বারবার অবিচারের শিকার হয়, যখন তার আশপাশে ন্যায়বিচারের কোনো দৃশ্যমান কাঠামো থাকে না, তখন সে ধীরে ধীরে সমাজের প্রেত হয়ে ওঠে—চোখের সামনে থেকেও অদৃশ্য। উপকূলীয় অঞ্চলে এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা রাষ্ট্র, সমাজ এমনকি নিজেদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একরকম ‘হারিয়ে’ যায়। কেউ হয় ডাকাতের হাতে নিহত, কেউ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি, কেউ আবার ট্রলার মালিক বা মহাজনের ঋণ জালে আটকে আর ফিরে আসতে পারে না।
ট্রলার ডাকাতি এই অঞ্চলের জন্য কোনো কাল্পনিক বিষয় নয়। সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া প্রতিটি ট্রলার যেন এক অজানা যাত্রা, যেখানে ফেরার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অনেক সময়ই গভীর সমুদ্রে ডাকাত দল হানা দেয়। তারা শুধু মাছ কিংবা জাল লুট করে না, জীবনের নিরাপত্তাও ছিনিয়ে নেয়। কেউ কেউ ফিরে আসে নিঃস্ব হয়ে, কেউ বা আর কখনোই ফেরে না। এসব ডাকাতি কেবল দস্যুদের সীমিত আগ্রাসন নয়, এটি একটি বৃহত্তর অনুপস্থিত রাষ্ট্র কাঠামোর চিহ্ন। কোথাও যেন তদারকি নেই, কেউ নেই যিনি বলবেন: “এই সমুদ্রও কারও বাবা নয়।”
আরেকটি বড় সমস্যা হলো মহাজনের শোষণ। দাদন নেওয়া যেন এক রকম সামাজিক অভিশাপ। এই ঋণ একবার নিলে তার সুদের বোঝা এতটাই ভারী হয়ে দাঁড়ায় যে একজন জেলে দিনের পর দিন কাজ করেও কখনো সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারে না। মহাজন তার ট্রলার দেয়, দাদন দেয়, কিন্তু মুক্তি দেয় না। এই শোষণের কাঠামো এমনই জটিল যে আইনের চোখেও এটি প্রায় অদৃশ্য। যারা এই চক্রে ঢোকে, তারা আর নিজের জীবন ফিরিয়ে আনতে পারে না।
এই ধরনের নিপীড়নমূলক বাস্তবতা থেকেই জন্ম নেয় লোককাহিনী, গুজব আর অলৌকিক গল্প। বেলাল সরদারের মতো বহু মানুষ ছিল যারা একদিন হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে গেলো। কেউ বললো সে নাকি ডাকাত হয়ে গেছে, কেউ বললো জলদস্যুদের হাতে ধরা পড়ে গেছে। আবার বহু বছর পরে কেউ বললো, “বেলাল ফিরছে,”—একটা প্রেতের মতো। এই ফিরে আসা আর বাস্তব থাকে না, হয়ে ওঠে এক ধোঁয়াটে অলৌকিকতা, যেন ন্যায়বিচারের জায়গায় কল্পনার ছায়া এসে বসে।
মানুষ যখন দেখে, তাদের বিচার কেউ করে না, তাদের গল্প কেউ শোনে না, তখন তারা সমাজের প্রান্তসীমায় ঠেলে যায়। কোনোদিন তারা নিখোঁজ হয়, কোনোদিন তারা ফিরে আসে—প্রেতের মতো, ভয়ের মতো, প্রশ্নের মতো। তখন আর তারা মানুষ থাকে না, হয়ে ওঠে একেকটা সামাজিক ভূত—যারা কেবল প্রমাণ করে, বিচারহীনতার সমাজে মানুষ বেঁচে থাকলেও, বেঁচে থাকে না।
১২ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৯
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার এই মন্তব্যটা যেন লেখার ঠিক পরেই একটা আত্মার মতো ভেসে এল—নিরব কিন্তু দাগ রেখে গেল।
“বাস্তব জীবনের ছবি”—এই কথাটাই যেন লেখাটির সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি। কারণ, আমরা আসলে সবাই কোনো না কোনোভাবে বিচারহীনতার সেই অদৃশ্য ভোরের প্রেতরূপ বয়ে চলেছি।
আপনার পড়া, অনুভব করা আর এত গভীরভাবে মন্তব্য করা—সবকিছুর জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
আশা করি, আপনি সাথে থাকবেন বাকিগুলোতেও। সামনে আরও কিছু অন্ধকার অপেক্ষা করছে, আলো খোঁজার আশায়।
২| ১২ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:২৭
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর করে বাস্তবতার প্রতিছবি এঁকেছেন। ভালো লাগল।
১২ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২১
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: এই মন্তব্যটা যেন লেখাটির আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটুকরো প্রশান্তি দিল।
"বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি"—এই শব্দদুটোই লেখার উদ্দেশ্য ছিল। কারণ বাস্তবতা অনেক সময় গল্পের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর হয়, আর তাকে সুন্দরভাবে আঁকা মানে পাঠকের হৃদয়ে ছুঁয়ে যাওয়া।
আপনার ভালো লাগা আমার লেখার শক্তি বাড়ায়। কৃতজ্ঞতা জানাই।
আশা করি, এই পথে আপনি সাথেই থাকবেন।
৩| ১২ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:৩১
নকল কাক বলেছেন: ++++
১২ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২২
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
৪| ১২ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৭
যামিনী সুধা বলেছেন:
আপনার বাড়ী কি উপকুল এলাকায়?
এখন দাদনের অবস্হা কি?
১২ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৫
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মনোযোগী মন্তব্যের জন্য।
না, আমার বাড়ি উপকূল এলাকায় নয়, তবে উপকূলের মানুষের জীবনসংগ্রাম, বিশেষ করে দাদন ব্যবস্থার অমানবিকতা, আমার ভাবনায় গভীর ছাপ ফেলেছে।
"দাদন" এখনো আছে—রূপ বদলেছে, কাঠামো বদলেছে, কিন্তু শোষণটা রয়ে গেছে আগের মতোই।
আমরা যতোই উন্নতির কথা বলি, কিছু মানুষ এখনো দাদনের অদৃশ্য শিকলে বাঁধা পড়ে থাকে।
আপনার আগ্রহকে স্যালুট। আলোচনা চলুক, যেন গল্প নয়—বাস্তবটাও বদলায়।
৫| ১২ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৮
যামিনী সুধা বলেছেন:
চট্টগ্রামে হাজার হাজার মাছধরার পরিবার ধনী মালিক থেকে ট্রলার ( মাছ ধরার কাঠের ট্রলার ) ভাড়া নিয়ে নিজেদের ভাগ্য গড়েছে; কক্সবাজারের জেলেরা তেমন ভালো করতে পারেনি।
পটুয়াখালীর জেলেদের কি অবস্হা?
১২ ই মে, ২০২৫ রাত ৮:২১
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: খুব গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন আপনি—ধন্যবাদ এমন অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ মন্তব্যের জন্য।
চট্টগ্রামের অনেক মৎস্যজীবী পরিবার বোটের মালিকানার দিকে এগোতে পেরেছে, কিন্তু সেটা হয়েছে অবকাঠামোগত সহায়তা ও নৌবাণিজ্যিক পরিবেশের কারণে। কক্সবাজার কিংবা পটুয়াখালীর চিত্র ভিন্ন।
পটুয়াখালীর অনেক জেলে এখনও দাদনদার, মহাজন ও ট্রলার মালিকের করুণ অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল। ট্রলার ভাড়া, জ্বালানি খরচ, মাছ বিক্রির দাম—সবকিছুতেই তারা একটা ‘ঋণের চক্রে’ আটকে থাকে, যেখান থেকে বের হওয়াটাই তাদের কাছে অলৌকিক মনে হয়।
এই ব্যবস্থার মধ্যেই থেকে তারা প্রতিদিন সমুদ্রের সাথে লড়ছে—শুধু পেটের জন্য নয়, অস্তিত্বের জন্যও।
এই ব্লগের মূল বেদনা সেখানেই।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:২৩
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন । লেখাটিতে বাস্তব জীবনের ছবি ফুটে উঠেছে ।